মডুরা কোথায়?

নীলাঞ্জনা নীলা ২১ আগস্ট ২০১৬, রবিবার, ০৩:০৭:২৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৬ মন্তব্য
মডুদের জন্য স্পেশ্যাল খাওয়া...
মডুদের জন্য স্পেশ্যাল খাওয়া…

জীবন যে কখন, কি করায়, দেখায় আমরা জানিনা। কিন্তু আমরা তবুও চলি। প্রতিদিন কতো অচেনা মুখ দেখি, আবার সেই মুখের নাম জানিনা। আবার কারো নাম জানি, কিন্তু চেহারা জানিনা। একসময় পত্রমিতালী দেখতাম, জীবনে আমার একজনও পত্রবন্ধু নেই। আমার বর তরুণেরও নাকি পত্রবন্ধু ছিলো। আমার কি আফসোস! সেই আফসোস অন্যভাবে মিটিয়ে দিলো ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। তরুণ দেশের বাইরে যাবে আমার ই-মেইল এড্রেস খোলা হলো ২০০২ সালে। কম্পিউটারে লেখা মানেই ইংরেজী ভেবে নিতাম। তরুণ মেইল করতো ইংরেজীতে, আমিও রিপ্লাই দিতাম ইংরেজীতে। মনের অনেক কথাই ভাষার জন্য আটকে যেতো। বাংলা নিয়ে অনার্স-মাষ্টার্সের পরে ইংরেজীর জগতটা একটা বিশাল আতঙ্কের জায়গা হয়ে গিয়েছিলো।

যাক জাপান গেলাম, ই-মেইল খুলতেই ভাই রানার মেইল। আবার ছোট বোনের বর অপু জার্মানী থেকে মেইল। একদিন তরুণ বললো, “তুমি তো চ্যাট করতে পারো ম্যাসেঞ্জারে?” এ কি দারুণ জগৎ! অপু, জয়, রানা, শোভনদা মোটামুটি প্রিয় সব ভাইদের সাথেই কথা হচ্ছে। আবার বাপি-মামনিরও খবর নেয়া যাচ্ছে। একদিন হঠাৎ অন্য একজনের ম্যাসেজ চ্যাট অপশনে। তরুণ এলো জিজ্ঞাসা করলাম সে চেনে কিনা! বললো আমি কি কথা বলতে চাই? বললাম না চিনে কথা কি বলবো? মজা হলো ভাই-বোনদের বাইরে প্রথম অনলাইন বন্ধুর নাম বাবলু। খুব ভালো একটা ছেলে। অনেক গল্প করতাম। কতো যে হাসাতো। মজা হলো আমি এবং বাবলু আমরা দুজনেই দুজনার ছবি দেখেছি ২০১৫ সালে। অথচ পরিচয় সেই ২০০৪ সালে। কতো সুন্দর একটা পরিচ্ছন্ন বন্ধুত্ত্ব। আবার ওই ইয়াহুতেই দীপু ভাইকে পেয়েছিলাম। আজও মেইল করে জিজ্ঞাসা করবে, “ও দিদিভাই ভাইয়াকে মনে আছে?” এখন আর ইয়াহুতে বসিনা। অফিসিয়াল মেইল ছাড়া আর কোনো মেইল আসেনা। কিন্তু দীপু ভাইয়া এখনও মেইল করে। দীপু ভাইয়াকেও দেখেছি এই বছরখানেক আগে। অবাক লাগে চেহারা না দেখে এতোগুলো বছর এতো সুন্দর একটা সম্পর্ক কি করে টিকে আছে? এর উত্তর আজও পাইনি। এই ইয়াহুতেই পরিচয় হয়েছিলো তানিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে। বিয়ের পর জাপান এলো। কি ভয়ঙ্কর অবস্থা! মেয়েটি আমার ঠিকানা জানতো, একদিন হঠাৎ করে বাসায় উপস্থিত। বরের থেকে পালিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় তার বর তো এসে আমাদের শাসানো। তারপর কোনোভাবে মিটমাট করিয়ে পাঠিয়ে দেয়ার পর আবারও পালিয়ে গেলো। পরে শুনলাম মেয়ে বিয়ে করেছিলো বিদেশী ছেলে, টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু জাপানে এতো কষ্ট করে থাকা, কাজ করতে হবে তাই থাকেনি। এই ইয়াহুতেই বন্ধু রনিকে পেয়েছিলাম। দেশে গেলাম ২০০৮ সালে দেখা করতে এলো বৌ-বাচ্চা নিয়ে। আবার অন্যদিকে ভাই জয় গুগলে অরকুট আইডি খুলে দিলো।

এ জীবনে পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া মানুষ একজন আমি। তাই প্রতিটি আইডির পাসওয়ার্ড প্রিয় মানুষদের কাছে থাকে। তেমনি অরকুটের পাসওয়ার্ড জয়ের কাছে, ইয়াহু তরুণের কাছে। আর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কয়েকজনের কাছে। যাক অরকুটে পেয়েছিলাম দেবাশীষকে, এমন এক বন্ধু ২০০৯ সালে বাপির ওপেন হার্ট সার্জারীতে সে রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছিলো। কি আফসোস ও রক্ত দিতে পারেনি বলে। অনলাইনে পরিচয়, অথচ ব্যবহার দিয়ে আপনেরও আপন হয়ে গেছে। চেহারা আসলে কিছু না। ফেসবুক আইডি খুলে দিয়েছিলো ভাই দীপ। ফেসবুকে প্রথম যে স্ট্যাটাস লিখেছিলাম সেখানে কোনো মন্তব্য/লাইক নেই। কারণ ভাই-বোন ছাড়া আর কেউই ছিলোনা। তাও যারা নিয়মিত তারা তখন শুধু পড়েই চলে যেতো, মন্তব্য করতো ই-মেইলে। তারপর একসময় ফেসবুকে বোকার মতো অজস্র মানুষ এড করেছি, ৫০০০ বন্ধু। এখন এড রিক্যুয়েষ্ট তালিকা দেখি-ই না। পরিচিত কেউ যদি ম্যাসেজ দেয় তাহলেই অনুরোধের তালিকা খুলি। এখন পরিচিত ছাড়া কাউকেই তালিকায় স্থান দেইনা। ওহ এখানে একটা কথা বলে নেই, সেদিন এক প্রিয় মানুষকে ভুল করে রিমোভ করে ফেলেছি। আসলে এখন হয়েছে কি কাউকে রিমোভ করতে গেলে, যখন স্ক্রল করা হয় তখন অটোমেটিকভাবে চলে আসে এমন করে ছবিটি দিচ্ছি।

এভাবেই রিমোভ হয়ে গেছে প্রিয় বান্ধবী...
এভাবেই রিমোভ হয়ে গেছে প্রিয় বান্ধবী…

আর তখনই দেখি যাকে করবো তাকে রিমোভ করিনি, প্রিয় মানুষটি রিমোভ হয়ে গেছে। যাক চেষ্টা করেছি বোঝানোর, একদিন ভুল ভাঙ্গবে। আমি যদি সত্যি হয়ে থাকি অবশ্যই ফিরে আসবে। তা নইলে বুঝে নেবো আমাদের বন্ধুত্ত্ব আসলে ছিলোনা।

যাক এতো কথা বলছি। পরিচিত থেকে অপরিচিত নিয়ে বলতে গিয়ে কোথায় চলে এলাম। বলছিলাম কাউকে চিনি নামে, কাউকে চেহারায় আবার কাউকে নামে-চেহারায় দু’ভাবেই। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছে যাঁদেরকে নামে কিংবা চেহারায় কোনোভাবেই চিনিনা। কিন্তু উনারাই কলকাঠি নাড়ছেন। বিশেষ বিশেষ বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, সাহায্য করছেন। আবার কোনো ভুল হলে সেসব ধরিয়েও দিচ্ছেন। বুঝতে পারছেন কাদের কথা বলছি? হুম ব্লগ সঞ্চালকের কথা বলছি। জানিনা এই ব্লগের মডু কারা! আজ বড়োই প্রয়োজন, তাই উনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার অদেখা মন্তব্য আটকে গেছে, কিছু একটা করুন প্লিজ। বড়ো জ্বালায় আছি। কখনো ভাবিনি মডুদের খোঁজার জন্য এমন পোষ্ট দিতে হবে। আর তাও এতো এলোমেলো কথা বলে।

অদেখা মন্তব্য ঝুলে আছে এভাবেই...
অদেখা মন্তব্য ঝুলে আছে এভাবেই…
৬৪৭জন ৬৪৭জন
0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ