রাত ন’টায় ফ্লাইট, ঘণ্টা তিনেক সময় হাতে নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। জিসান সাহেবের সাথে, বুড়োদের সুবিধে নিয়ে লেগ-স্পেস ছিট পেয়ে গেলাম, মাপা-মাপি ছাড়াই পুটুলিও, বোর্ডিং-ফোর্ডিং এভাবেই শেষ করে গায়ে-গতরে ফুঁ দিয়ে দেখাদেখি, তাকাতাকি করে প্রায় শুয়ে-বসে টাইম পাস, সদা পদচারণময় বিড়ালটির সাথে সখ্যতা হতে-হতেও কিছুই হলো না (সব সময় সব কিছু হইতে হইতেও না হওয়া থিওরিতে ফেললাম)।
কিঞ্চিত ক্ষুধার উদ্রেক হওয়াতে দু’জনে একটি ফাইন রেস্টুরেন্টে ঢুকে হাল্কা নাস্তা সেরে নিলাম, সাথে কিছু হাল্কা খাবারও নিয়ে নিলাম, আবার যদি লেগে যায়, সে হিসাব করে, উল্লেখ্য যে এখানে একটি হাল্কা উষ্টা খাওয়ার ব্যাপার চেপে গেলাম।
এ-সব করে-টরে বিমানে ওঠার জন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গন্তব্য চাংগি এয়ারপোর্ট। টাইগার এয়ার। হঠাৎ বিশ্রী-বিকট চিক্কুর, যাদের কাছে খাবার ও পানি আছে খেয়ে ফেলুন বা ফেলে দিন, ভিতরে নেয়া যাবে না। এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে দ্রুত মজাদার খাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেয়ে নিলাম, তাও আবার সব-না, আহারে, এবার পানি!! এক বোতল খেলাম আর এক বোতল ফেললাম, আরও অনেক-কেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখে স্বস্তি পেলাম, বাজেট এয়ারে এই প্রথম তাই হতচকিত অবস্থা। (ফেরার পথে খাবার ও পানি সাথে ছিল কেউ কোথাও কিছু জিজ্ঞেস করেনি)
আকাশ-পরীদের কাগুজে নিক্তি-মাপা হাসিমুখ দেখে (মন্দ লাগে-নি) আকাশ-জানে উঠে পা-হাত ছড়িয়ে বিজয়ীর বেশে আরাম ছিটে বসে আড়মোড়া ভেঙ্গে কৃত্রিম হাই-হুই তুলে ট্যাবে কোবতে পড়তে শুরু করে দিলাম, তারপর সব ইতিহাস কিচ্ছু মনে নেই, হাল্কা কিন্তু নিটোল নিবিড় নিঁদ। ঘড়ি দেখে বুঝলাম ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে, আরও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাকী। হাল্কা পিপাসা অনুভূত হলে জিসান কে বললাম, সে বলল একটু অপেক্ষা করে দেখতে, জরুরি হয়ে গেলে অবশ্যই পানি খেতে হবে। আধা ঘণ্টা পর আওয়াজ দিলাম, পানি চাই-ই।
আকাশ-পরীরা খুশবুদার খাবার ট্রলি নিয়ে এ-মাথা-ও-মাথা করছে, থামিয়ে পানি নিলাম তিনশত লিটারের ফাইন টলটলে ফরাসি খাবার পানি, দাম দিতে দিয়ে হাল্কা মশকরাও হয়ে গেল, পাঁচ ইউ এস ডলার, ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, তুমি ভুল বলছো নাতো, পাঁচ সিংগাপুর ডলার কিনা প্লিজ দেখে বল, সে কিছু বলে না, খালি হাসে।
সুন্দরী চলে যেতেই তৃষ্ণা ফালিয়ে উঠল। বোতল খুলে এক ঢোক যেই না গিলে শান্তি-শান্তি ভাব এসে যাচ্ছিল ঠিক তখন-ই নিয়ম ভেঙ্গে একটি কথা মনে পড়ে গেল, বিজ্ঞ জনেরা বলেন ভ্রমণে প্রতি ডলার-কে তিরাশি টাকা দিয়ে গুন করতে নেই। এক এক ঢোকের দাম প্রায় একশত পরে যাচ্ছে ভেবে পিপাসা নাই হয়ে গেল, জিসান নিয়ে খেতে শুরু করলে কায়দা করে প্রায় ছিনিয়ে এনে ছিটের পেছনে সযত্নে রেখে দিলাম, বিশ্বাস করুন প্লেন থেকে নামা পর্যন্ত আর একবারও তৃষ্ণার্ত হইনি।
রাত প্রায় একটার দিকে চাংগিতে নেমে শান্তি পেলাম, সুনসান কিন্তু অসম্ভব সুন্দর এই পোর্ট, হঠাৎ জিসান পানি খেতে চাইল,
হায় হায় আকাশ ভেঙ্গে খান-খান, বোতলটি প্লেনেই ফেলে এসেছি!!
চলিবে…………
একান্ত অনুপ্রেরণা ভ্রমণকাহিনীকালাকার জান্নাতি বেগম!!
২৩টি মন্তব্য
নীহারিকা
এইতো এইতো লাইনে এসে গেছেন 🙂 আচ্ছা তাহলে আমার দোয়া কবুল হয়েছে? বিদেশ যেতে পেরেছিলেন তাহলে? আর পানি নিয়ে কি বলবো….প্লেনে পানি খেতে চাইছি বলে কর্তা দাম শুনে আমাকেই উলটা ধমক। ভাই বলেন, এতে আমার কি দোষ? আমি তো আপনার ঘটনা শুনে হাসতে হাসতেই শেষ। এ তো পানি নয় যেনো ডলার চিবোচ্ছি অবস্থা! তাও আবার প্লেনে ফেলে এলেন? আমি হইলে নিজে হারাতাম কিন্ত পানির বোতল হারাতে দিতাম না 🙂 বেশ মজার করে লিখেছেন কিন্ত তবে ফডু কই? ফডু ছাড়া ল্যাহা পড়তাম না 🙁 শিগগীর ফডু দেইন কইলাম।
নীহারিকা
ও নিচে কার নাম ল্যাকচুইন চিনি না ক্যারে?
ছাইরাছ হেলাল
আমিও চিনি না, হায় কপাল!!
নীলাঞ্জনা নীলা
নীহারিকা আপু ধন্যবাদ, থ্যাঙ্ক্যু, শুকরিয়া, আরিগাতোগজাইমাশিতা, Merci(আসল উচ্চারণ লিখে পারিনা), সিয়েসিয়ে, ডাঙ্কিয়ে, গিরাসিয়াস। 😀 -{@
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই আপনার দোয়া কবুল হয়েছে, তবে স্বপ্নে, এতো স্বপ্ন-ভ্রমণ!!
ইসসিরে কারবালায় পানির জন্য ধমক!!
ইচ্ছে করে কী কেউ কিছু হারায়!! হারিয়ে যায়। আবার ইচ্ছে করেও হারাতে হয়, কাহিনী কমুনে!!
ভাইরে ফডু পামু কৈ!! হপ্পনে কী ফডু তোলা যায়!!
নীহারিকা
এত কিছু জানি না। ফডু ছাড়া ভ্রমণ কাহিনী মানি না :@
হারানোর কাহিনি শোনার জন্য টাইট হয়ে বসলাম। তাত্তারি দিয়ে ফেলেন।
ছাইরাছ হেলাল
হাজার গল্পের এক রাত্রি, বসতে বসতে পায়ে খিল ধরে গেলে
আমার কুন দোষ দেয়া যাবে না,
মহা সুন্দ্রিদের ছবি দেয়া ঠিক হবে না,
মিষ্টি জিন
আগে অনুপ্রেণা দেনাকারিকে ধন্যবাদ। নইলে এত সুন্দর ভ্রমন প্রায়ম্ভর কাহিনি শুনতে পেতাম না।
তা প্রথম উষ্টা কাহিনি এডিয়ে গেলেন যে?
টাইগার এয়ারে বার দুইয়েক আমি ট্রাভেল করেঁছি । টাইগার এয়ারের আকাশ পরী এবং তাদের ড্রেস খুব সুন্দর । আমি তো টাইগারে পানি ফ্রি পেয়েছিলাম। পাঁচ ডলার একটা পানি !! সিংগাপুরে হাফ লিটারের একটা পানি ৫০ সেন্ট জায়গা ভেদে ১ ডলার।
আর খাবার ,পানি ব্যাগে নিয়ে গেলে কিছু হয় না। হাতে রাখতে হয় না।
ভ্রমন কাহিনি ভাল হইছে, চলুক
ছাইরাছ হেলাল
কত্ত কাহিনী যে এড়িয়ে যে যেতে হয় তার হিশেব রাখাও কঠিন।
আপনাকে যে দিছে সে পরী না জ্বীন ছিল। সবাইকে ফ্রি দেয় না। প্রথম বার বাজেট এয়ার তাই এমন হয়েছে,
এরপর পানি সহ কিছু খাবার সব সময়-ই সাথে রেখেছি, চাংগি থেকে ফ্লাই করার সময় কিছু মেয়ে সহ যাত্রীকে
দেখি বোতলে করে পানি নিচ্ছে, ব্যাস, আর যায় কোথায় পানি নিয়ে নিলাম।
জ্বী জ্বী চলিবেক।
খুব কম খাটুনিতে ল্যাহা নেমে যায়!!
নীলাঞ্জনা নীলা
পাঁচ ডলার বোতল!!! গ্লাসে জল দেয়না চাইলে? আজব দেখি! অবশ্য টাইগার এয়ার সম্পর্কে আমার আইডিয়া নেই। এয়ার ইন্ডিয়াতে চড়ে কলকাতা গিয়েছিলাম, কই জল তো কিনতে হয় নাই! শুনুন ভ্রমণ কাহিনী ছবি ছাড়া চলবে না, চলবে না।
দিতে হবে ছবি,
এই আমার দাবী।—-শ্লোগান তৈরী করলাম। ভালোই ঘোরাঘুরি করতাছেন, আমি হিংস্রিত! 😀
ছাইরাছ হেলাল
সব বাজেট এয়ারেই কিচ্ছু দেবে না,
দাঁত কেলিয়ে হেসে দেয়, সব কিছুর দাম আকাশ-ছোঁয়া। ইট ফিক্কা মারতে ইচ্ছা করে।
এখন আপনাকেও কিচ্ছু দেবে না, টাইম শ্যাষ!!
ছবি পামু কৈ!!
ঘোরতে আর পারলাম কৈ!!
নীলাঞ্জনা নীলা
না, না দেবে। এমিরেটস ৩৫ ঘন্টার ভ্রমণে শুধু জলের গ্লাস না, ভারী পানীয়ও দেয়। লাঞ্চ-ডিনার, পানীয়(জুস, জল, ওজনদারী পানীয়) এসবও ভালোই দেয়। তাছাড়া আমি তো এখন স্পেশ্যাল প্যাসেঞ্জার কুবিরাজ ভাই। আর ঢঙের কথা রাখেন। ছবি দিয়ে পোষ্ট দেবেন। তা নইলে খবর আছে। আমাকে সাপোর্ট করার জন্য মিষ্টি আপু, নীহারিকা আপু আছে কিন্তু। 😀
ছাইরাছ হেলাল
এবারের ভ্রমণ ছিল বাজেট এয়ারে লিখেছি-তো, একটু গুগল করুন, বুঝতে পারবেন,
ওজন-পানি অবশ্যই দেয়, আমরা নেই-ও, এই ফ্লাইট গুলোতে তা থাকে না।
মাত্তর দু’জন, আর নেই!!
সঞ্জয় কুমার
সুন্দর উপস্থাপনা । ছবি থাকলে আরও জমতো । মাঝে মাঝে কবিতা ছাড়া এমন সহজ সরল লেখা দিবেন ।
পড়তে ভাল লাগে
ছাইরাছ হেলাল
চেষ্টা করছি এমন কিছু লেখার, দেখি কতটা কী লিখতে পারি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
চাংগি নাকি চেংগি এয়ারপোর্ট হবে এখনো তা ভাবি। চেংগি হলে এই নাম শিওর বাংগালি কেউ রাখছে 🙂 নামকরনের ইতিহাস খুজুম নাকি ভাবতাছি।
শুরু করলেন তাহলে লেখা। আমি তো ভুলেই গেছি কোথায় কোথায় গেছিলাম।
ভাল লাগছে লেখা।
ছাইরাছ হেলাল
.অবশেষে দেখাদেখি শুরু করেই দিলাম, দেখি-না কী হয়, কতদূর যায়,
আপনিও শুরু করে দিন।
ইঞ্জা
দারুণ এক ভ্রমন কাহিনী, ভালো লাগলো প্রথম কাহিনী, চলুক না আরো। 😀
ছাইরাছ হেলাল
দারুণ কী না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে, তবে এগুলো চলবে মাঝে মাঝে।
আপনি-তো ঘুরুক্ক মানুষ!! শুরু করে দিন।
ইঞ্জা
আপনার লেখা দেখেই তো অনুপ্রেরণা পাচ্ছি, মনে করুন শুরু করলাম বলেই। 😀
ছাইরাছ হেলাল
দেরি করতে পারছি না,
শুরু করে দিন।
ধুর, এগুলাইন আমি ভাল লিখি-না কিন্তু!!
শুন্য শুন্যালয়
বিড়ালের জন্য সমবেদনা 🙂
আমার জিসান ভাউকে আপনি পানি দ্যান নাই? আল্লাহর বিচার হইছে।
দুইন্যার সব সুন্দ্রী পরীরা দেখি আপনার চারপাশেই ঘোরে, সামান্য পানির ভুল ও হতেই পারে। আর কী কী ফেলে এসেছেন সেটাই বিবেচ্য। মস্তক হৃদয় যথাসাধ্য সামলে রাখবেন এই সব আকাশভ্রকমণে। ফিরে এসে আবার পরীক্ষায় বসা লাগতে পারে। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা বিড়াল-বেদনা ভাগাভাগি করে নিলাম।
আল্লাহ মহান, তাই বিচার শেষে পুরস্কারের ডালি-উপছে-পড়া প্রতিদান দিয়েছেন, আমিন আমিন;
সে সবই আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে জানান দিচ্ছি।
দেখুন শুধু আমার চারপাশেই সুন্দ্রী ঘোরে না, আরও কারও পাশেও ঘোরে,
কেউ বলে কেউ না-বলায় রাখে, আর দেখুন অ-সুন্দ্রী বলে কিচ্ছু নেই (বানী-জিসান ভাউ),
অচিরেই আসিবে।
ভ্রমণে সঙ্গী শুধুই হৃদয়, মস্তক নয়!!
পরীক্ষা ডরে না বীর!!