বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকে বউ দেখে এসে জামাই বা তার আত্মীদের বলে, ‘জিতছেন। বউ তো মাশাল্লাহ’। কথাগুলো আমার কাছে খুব অসভ্য লাগে। প্রথমত মনে হয় কোরবানীর গরু। কম দামে এত ভাল গরু! জিতছেন ভাই। দ্বিতীয়ত সবাই নতুন বৌয়ের মেকআপ মাখা মুখ আর শরীরের মাপ দেখে। তারপর বলে, ‘ভাই, বৌ/ভাবী তো জোস। সেখানে বৌয়ের যোগ্যতা মাপা হয় শরীর-রূপ-লাবণ্য দেখে। সর্বশেষ: বৌয়ের বাপের বিশাল টাকা-পয়সা-সম্পত্তি-ক্ষমতার তথ্য জানতে পেরে বলে, ভাই জিতছেন।
আমি খুঁজতে থাকি এখানে সেই নারীটা কোথায়! সেই নারীর মধ্যে যে মানুষটা সেটা কোথায়? সেটাকে কিভাবে বিচার করছে!
শুরুতেই সবাই ছেলেটাকে জিতিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে কি দিচ্ছে! কিছুই না। সবকিছু ভালভাবে চলার একটা লম্বা সময় পেরোনোর পর, মেয়েটা শুধু একটা কমপ্লিমেন্ট পায়। তবে সেটাও ছেলেকে জিতিয়ে দিতে। আর তা হচ্ছে: ভাই খুব ভাল একটা বৌ পেয়েছেন। সবকিছু কি সুন্দর আগলে রেখেছে। কিংবা আরেকজনকে বলছে: আরে এই বৌটা ছিল বলে রক্ষা। তার যত পাগলামী সব সহ্য করে সংসার টিকিয়ে রেখেছে অথবা তার বৌ শক্ত ছিল বলে বিপদগুলোকে অতিক্রম করতে পেরেছে। অর্থাৎ এখানেও ছেলেটা জিতে গেছে।
কিন্তু সেই মেয়েটা কি জিতেছে কোথাও? বাচ্চাদের বড় করা, তারপর একদিন বাচ্চারা বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া পড়ালেখা বা চাকরীর জন্য। চোখের পানি জমা করা। সন্তান একদিন সফল হবে। সেই সফলতায় আবার চোখে পানি আনা। তখন যদি কেউ বলে, এমন বাবা-মা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তখন হয়ত সেই নারী জিতে। কিন্তু তাও যৌথভাবে। এককভাবে কি জিততে পারে কখনো!
অনেকে হয়ত পারে। বড় বড় হোল্ডিং বোর্ড, পত্রিকায় ছবি, বিলবোর্ড। সেখানে কি আসলেই জয় থাকে! নাকি ভেতরে বলতে না পারা কান্না। আপোষের কান্না, বিলিয়ে দেয়ার কান্না, হারিয়ে যাওয়ার কান্না।
অন্যদিকে নানা কারণে একলা চলা নারীর ছুটে চলা কিংবা সন্তানের দায়িত্ব পালনে সিঙ্গেল মাদারের কথা তো আছেই। একলা নারী মানে সবার হক। সে গল্প আরেকদিন।
নারী তোমাকে ভালবাসি। দমনে, অবদমনে, স্নেহে, ভালবাসায়, প্রেমে, কামে, আবেদনে, চিৎকারে, কান্নায়, হাসিতে, ঠাট্টায়, লিপস্টিকে, কাজলে, ভাবনায়, বুদ্ধিতে, মেনে নেয়ায়, মানিয়ে নেয়ায়, হাত বাড়িয়ে, হাত ছেড়ে, গভীরে, গোপনে, প্রকাশ্যে, বৃষ্টিতে, রোদে, মেঘলা কিংবা নীল আকাশে সবভাবেই ভালবাসি।
আমাদের সমাজে এখনো এই অবিভক্ত মানুষ পদ্ধতি কেউ মানতে চাইবে না। তবে নারীকে যদি আমরা একজন নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষের অর্ধাঙ্গ হিসেবে দেখি- তবে এই রেষারেষি কিছুটা হলেও কমবে বলে আমার বিশ্বাস।
কিছুটা বের হতে পেরেছিলাম মনে হয় এই জয়-পরাজয় থেকে কিছু টা সময়ের জন্য কিন্তু ইদানিং যা দেখছি তাতে মনে হয় আবার সেই আদিম, বর্বর যুগে চলে গিয়েছি। এই ডিজিটাল যুগে নারীকেই বেশি হেয়প্রতিপন্ন করার হচ্ছে , ব্যবহার করা হচ্ছে সর্বোচ্চ নিকৃষ্ট জঘন্য উপায়ে। সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
নারী-পুরুষ উভয় পক্ষই ইদানিং নারীদের ফেসবুক পেজ/পোস্টে নিজের সকল না-পাওয়াগুলোর স্বাদ মেটায় নোংরা কথায়। তাদের হতাশা আর অবদমনের ক্রোধ মেটানোর জায়গা যেন সেটা।
আমাদের সমাজে সব কিছুতেই লাভ ক্ষতি খোজা হয়। প্রকৃতপক্ষে জীবনকে লাভ বা ক্ষতির বাটখারায় মাপতে যাওয়াটা একটা বড় বোকামি তা এই সমাজকে বোঝানো কঠিন। এখানে পড়াশোনা থেকে বিবাহ সবই প্রফিটের ট্যাগ লাগানো। কোন সাবজেক্ট পড়বেন তার আগে বিচার্য তাতে কতো টাকা! অসংখ্য বন্ধু পাবেন যারা জিজ্ঞাসা করবে- ব্লগে লিখে কামাই কতো? টাকা না পাইলে লিখিস কেন? এটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির একটি অন্ধকার দিক
১৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লেখেছেন রুবেল দা অনেক শুভেচ্ছা রইল
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ ভাই
ত্রিস্তান
আমাদের সমাজে এখনো এই অবিভক্ত মানুষ পদ্ধতি কেউ মানতে চাইবে না। তবে নারীকে যদি আমরা একজন নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষের অর্ধাঙ্গ হিসেবে দেখি- তবে এই রেষারেষি কিছুটা হলেও কমবে বলে আমার বিশ্বাস।
তির্থক আহসান রুবেল
কেন যেন আমরা দিন দিন বোধের দুনিয়া থেকে সরে যাচ্ছি। খুব খুব দরকার পারিবারিক সম্মিলন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নারীকে এখনও মানুষ ভাবা শুরু হয়নি। কবে হবে কে জানে? বাবা মা জন্ম দিয়েই তো সন্তান ভাবে না, মেয়ে ভাবে। একসময় কাটিয়ে উঠবে সময় লাগবে।
তির্থক আহসান রুবেল
সম্পর্ক-পরিবার-বোধ এগুলো মিলেমিশে এক না হলে পরিবর্তন হবে না।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কিছুটা বের হতে পেরেছিলাম মনে হয় এই জয়-পরাজয় থেকে কিছু টা সময়ের জন্য কিন্তু ইদানিং যা দেখছি তাতে মনে হয় আবার সেই আদিম, বর্বর যুগে চলে গিয়েছি। এই ডিজিটাল যুগে নারীকেই বেশি হেয়প্রতিপন্ন করার হচ্ছে , ব্যবহার করা হচ্ছে সর্বোচ্চ নিকৃষ্ট জঘন্য উপায়ে। সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
তির্থক আহসান রুবেল
নারী-পুরুষ উভয় পক্ষই ইদানিং নারীদের ফেসবুক পেজ/পোস্টে নিজের সকল না-পাওয়াগুলোর স্বাদ মেটায় নোংরা কথায়। তাদের হতাশা আর অবদমনের ক্রোধ মেটানোর জায়গা যেন সেটা।
হালিমা আক্তার
নারী কে মেয়ে মানুষ নয়। মানুষ ভাবতে হবে। তাহলে যদি এই বর্বরতার সমাধান হয়। শুভ কামনা রইলো।
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ
সৌবর্ণ বাঁধন
আমাদের সমাজে সব কিছুতেই লাভ ক্ষতি খোজা হয়। প্রকৃতপক্ষে জীবনকে লাভ বা ক্ষতির বাটখারায় মাপতে যাওয়াটা একটা বড় বোকামি তা এই সমাজকে বোঝানো কঠিন। এখানে পড়াশোনা থেকে বিবাহ সবই প্রফিটের ট্যাগ লাগানো। কোন সাবজেক্ট পড়বেন তার আগে বিচার্য তাতে কতো টাকা! অসংখ্য বন্ধু পাবেন যারা জিজ্ঞাসা করবে- ব্লগে লিখে কামাই কতো? টাকা না পাইলে লিখিস কেন? এটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির একটি অন্ধকার দিক
তির্থক আহসান রুবেল
চমৎকার বলেছেন।
নবকুমার দাস
যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে প্রশ্নগুলো সহজ উত্তরগুলো জটিল। জটিলতা পারিপার্শ্বিকতায়,আমাদের যাপিত জীবনে, নানা স্তরের চিন্তা ও ভাবনার গভীরে এবং অগভীর দৈনন্দিনের দৈনতায়।
ভালো থাকবেন ভাই। চিন্তার চর্চা চলুক অবিরত ।
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ ভাই