আপনাদের আগেই বলে রাখি এই কাহিনী এক সত্যিকারের গ্রামের ঘটনা । আপনারা পড়লেই বুঝতে পারবেন এটা একদম জীবন্ত। এক গ্রামে বকুল বলে এক মেয়ের জীবনকাহিনী । এক কথায় স্বচ্ছ চিত্রই প্রকাশ করা হয়েছে।
বকুলের বাবা একজন চাষী। চাষবাস করে কোনরকম সংসার চলে । নিজেদের জমিজমা অল্প কিছু আছে কিন্তু সেটা খুবই অল্প সেইকারণে অন্যের জমি ভাগে নিয়ে চাষবাস করেন এবং কোনক্রমে দিনযাপন করেন ।
সংসার অসার । কথায় আছে গরিবের সংসার করা খুবই কষ্টের । নুন আনতে পান্তা ফুরায় তবুও সংসার করতে হবে । বৌ বাচ্চা পালতে হবে । রথের মেলা গিয়ে নাগরদোলাতে ঝুলতে হবে? পাঁচশ গ্রাম জিলিপি কিনে ছেলে মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে হবে?
বকুল আর বকুলের ভাই আর তাঁর বাবা মা এই নিয়ে ছিল তাঁদের সংসার । বকুল গ্রামের মেয়ে হলে কি হবে খুব বুদ্ধিমান ও খুব সুন্দরী ছিল। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে সে ফার্স্ট হত । ঠিকমতো টিউশনি দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর বাবার ছিল না । ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া ও দিতে পারত না তবুও বকুল নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করত বন্ধুদের সংগে খেলা করত ।
কিন্তু বকুলের বয়স যখন ষোল হল তখন থেকে বকুলের জীবনটা ঘোর আঁধারে ভরে যেতে লাগল । বকুলের আশপাশ যেন তাঁকে গ্রাস করে গিলে ফেলতে উদ্যত।
বকুল মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করল । বাবা বলল বকুল আর পড়াশোনা করে কাজ নেই এবারে বিয়ের পিড়িতে গিয়ে বোস !
বকুল কোনদিন বাবার মুখের উপর কথা বলেনি । কিন্তু আজ নিজেকে সামলাতে পারল না । বলেই ফেলল— বাবা আমি তোমার বোঝা হয়ে আছি না? নামাতে পারল বঁাচো?
রুনা আমার থেকে পড়াশোনাতে কত খারাপ তবু দেখো তাঁর বাবা আটটা বইতে আটটা টিউশনি দিয়ে স্টার পাওয়ালো !আর তুমি আমাকে গণিত ইংরেজি তে দুটো টিউশান দিতে পারলে না? উল্টে আমাকে বাড়ির রেশন তোলা জল তোলা মাঠে ধান তোলা এইসব কাজ করিয়ে আমার রেজাল্ট খারাপ করে দিয়েছ? আমি বিয়ে করতে পারব না ! যদি জোর করে বিয়ে দাও তাহলে গলায় দড়ি দেব !
বাবা– এরম বলতে নেই বকুল ! গরিবের ঘরে জন্মেছিস সহ্য তো করতেই হবে!
বকুল— না বাবা আমি নার্সিং পড়তে চাই । তুমি আমাকে নার্সিং পড়াও । আমি চাকরি পেলে তোমাদের সব দুঃখ দুর করে দেবো!
বাবা— ঠিক আছে । আমি তোদের মাষ্টারের সংগে কথা বলে দেখছি । কম পয়সাতে কোথায় সুযোগ পেলে তোকে সেখানেই ভর্তি করে দেবো।
বকুল- ঠিক আছে বাবা এখন যাই । মা কিজণ্য ডাকছিল দেখে আসি । আজকাল মায়ের শরীর ভালো যাচ্ছে না । বাতের ব্যথা সময় সময় খুব বাড়ে । আজকে সকাল থেকে বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারে নি । মনে হচ্ছে আজকে আমাকেই রান্না করতে হবে ।
বাবা আমাকে খড়ের গাদা থেকে কয়টা শুকনো খড় এনে দেবে আমি রান্নাটা চড়াবো উনুনে।
বাবা— তোর মা দেখবেখন । তুই পড়তে বোস । নার্সিং র জন্য প্রস্তুতি নে । আমার মাঠে অনেক কাজ পড়ে আছে রে চললাম!
বকুল—– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে । তুমি যাও । কিন্তু একটা কথা বলে দিলাম বাবা রাতের বেলা মদ খাওয়া জুয়া খেলা চলবে না । আমার দিব্যি । পারলে ওই পয়সায় মার জণ্য ওষুধ কিনে নিয়ে আসবে !
বাবা—– আচ্ছা দেখছি । তুই যা তো এখান থেকে !পাকা বুড়ি হয়ে গেছে !
এই বলে বকুলের বাবা পাশ কাটিয়ে চলে গেল । বকুলদের টালির ছাউনি দিয়ে বাড়ি । স্যাঁতসেঁতে মাটির দেওয়াল । রান্নাঘরটা একদম ছোট্ট। গরমকালে বাইরে উনুন পেতে রান্না করে ওর মা । বর্ষাকালে কাঠ ,ঘুঁটে দিয়ে রান্না হয়।
মাঝেমধ্যে টালির ফাঁক দিয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে । বকুলের মার অনেক বার বলা সত্ত্বেও বকুলের বাবা ঘর সারানোর কোনো ব্যবস্থাই করে নি।
এরকম করেও দিন কাটায় বকুল ও তাঁর পরিবার । গ্রামের মধ্যে যারা বাইরে কাজ করতে যায় বা নদীতে মাছ ধরাতে ট্রলারে আড়তে থাকে তাঁদের অবস্থা খানিকটা ভালো।
বকুলের কিন্তু খুব বড় স্বপ্ন ছিল । রঙিন স্বপ্ন। সে নার্স হয়ে গ্রামে ফিরে আসবে । মায়ের সেবা করবে । বাবাকে বেশকিছু জমি কিনে দেবে । তখন বুড়ো হয়ে যাবে চাষবাস করতে পারবে না তাই বাজারে একটা ছোট্ট মুদীর দোকান খুলবে পাশে একটা ওষুধ দোকান ! ব্যস আর কিছু লাগবে না দোকানপাট আর টুকটাক কাজ করেই আরামসে দিন কেটে যাবে!
গরিবের আশা আকাশকেও ছুঁতে পারে । কিন্তু আকাশে থেকে টিকতে পারে কি? আসলে আপনাকে যতই অন্ধকারে রাখা হোক না কেন আপনার আলোর দিকে আসার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবেই? কেউই অন্ধকারে পচে মরতে চায় না!
কিন্তু বকুলের জীবনে একটা ঘটনা ঘটে গেল যা খুবই অপ্রত্যাশিত । বকুল গ্রামের মধ্যে পাঁচটা ভালো মেয়ের মধ্যে একজন । তাই গ্রামের বকাটে ছেলেদের নজর তো থাকবেই। কথায় আছে না মূর্খের অশেষ দোষ । কিছু একচেটিয়া বাঙালীদের ধর্মই হল ওই । যতই উপরে যাক উনারা উনাদের নজর সেই নিচের দিকে থাকবেই? উনাদের ভাগাড়টাই খুব পছন্দের আর পরচর্চার জায়গা?
ইতিমধ্যে বাড়িতে ছেলেদের যাতায়াত ও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কথায় আছে না ঘরে যদি দুধওয়ালা গাভী থাকে তাহলে রাস্তাঘাটে ষাঢ়েদের উৎপাত?
বকুল ছেলেদের পাত্তা দিতই না । কারণ তাঁর একটা আলাদা আ্যমবিশন ছিল । বড় হওয়ার লক্ষ্য ছিল । এরজন্য গায়ের আর পাঁচটা মেয়ের কম টিকাটিপ্পনী শুনতে হয়নি!
তারমধ্যেই একসময় এক বজ্জাত অর্ধশিক্ষিত ছেলের নজর পড়ল বকুলের উপর।
———– চলবে
অরুণিমা মন্ডল দাস
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
১০ জুলাই,২০১৬
৯টি মন্তব্য
বিমান
. বিষাক্ত পরকীয়া ২ এর আশায় থকলাম। :=
ছাইরাছ হেলাল
অপেক্ষা করবো অবশ্যই।
শুন্য শুন্যালয়
বিরাম চিহ্ন ব্যবহারে আরেকটু সচেতন হবে আপু। প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ব্যবহারে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রত্যেক বাক্যে দাঁড়ির আগে স্পেস হবেনা। দাঁড়ির পরে একটি স্পেস হবে।
কত বকুলের স্বপ্ন, আকাংখা নষ্ট হয়ে যায় কিছু বাজে মানুষের জন্য, সে হিসাব অগুনিত। অপেক্ষা করবো পরের পর্বের জন্য অরুনিমা আপু।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল লাগলো দিদি।
এভাবেই আমাদের সমাজের জন্ম এভাবেই বকুলদের জীবন বিসিয়ে যায়।
পরের পরবের জন্য…………।
সঞ্জয় কুমার
পরবর্তী পর্ব চাই
জিসান শা ইকরাম
বকুল কাহিনীর শুরুটা পড়লাম,
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
অপেক্ষার পালা ,,,,, সত্য জানার ইচ্ছা খুব ভালোলাগলো।
আবু খায়ের আনিছ
গল্প হলেও সত্য। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।