প্রায়ই কিছু লিখতে গেলে আমাদের ‘র’ আর ‘ড়’ নিয়ে বেশ সমস্যা হয়। নীচে ‘র’ আর ‘ড়’ এর কিছু ব্যবহার দিয়ে এ জাতিয় সমস্যা সমাধানের কিছু চেষ্টা করলাম।
কিছু প্রচলিত বানান-বিভ্রাট:
* কখনো, বিশেষত পার্কের সাইনবোর্ডে, লেখা দেখেছেন কি, “এখানে গরু চড়ানো নিষেধ”? চড়ে শব্দের অর্থ আরোহণ করে। যেমন দোলায় বা গাছে চড়ে। তাহলে কি গরুকে দোলায় বা গাছে চড়াতে নিষেধ করা হচ্ছে? আমরা কেন ভুলে যাই, গরু চরে (বিচরণ করে এর সংক্ষিপ্ত রূপ); তাই লেখা উচিত, “এখানে গরু চরানো নিষেধ”। অবশ্য গল্পের গরু কিন্তু গাছেও চড়তে পারে।
ভুল= আমি হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম
ঠিক= আমি হাঁটতে বেরিয়েছিলাম (বের হয়েছিলাম এর সংক্ষিপ্ত রূপ)
ভুল= পড়নে ঢাকাই শাড়ি
ঠিক= পরনে (পরিধানে এর সংক্ষিপ্ত রূপ) ঢাকাই শাড়ি
ভুল= মুখটি বেজাড় কেন?
ঠিক= মুখটি বেজার কেন?
ভুল= আজ কী শাড়ি পড়েছ?
ঠিক= আজ কী শাড়ি পরেছ (পরিধান করেছ এর সংক্ষিপ্ত রূপ)?
ভুল= আজ কী বই পরেছ?
ঠিক= আজ কী বই পড়েছ?
ভুল= কখনোই দরকার পরবে না
ঠিক= কখনোই দরকার পড়বে না
ভুল= ধরে পানি পেলাম
ঠিক= ধড়ে পানি পেলাম
ভুল= ঘুরে বেরানো আমার হবি বলতে পার
ঠিক= ঘুরে বেড়ানো আমার হবি বলতে পার
ভুল= আজকাল সবকিছুর দামই চরা
ঠিক= আজকাল সবকিছুর দামই চড়া
প্রায়-সমোচ্চারিত শব্দে ‘র’ ও ‘ড়’ এর অর্থজনিত পার্থক্য:
অসার === বাজে, ফালতু
অসাড় === সাড়হীন, অনুভূতিহীন
আর ==== এবং, ও, কিংবা
আড়= === তেরছা (আড়চোখে চাওয়া)
আমরা === আমি সর্বনামের বহুবচন
আমড়া === অম্লজাতীয় ফলবিশেষ
ওরা ==== তারা
ওড়া ==== শূন্যে বিচরণ
ওরে === সম্বোধনসূচক শব্দ
ওড়ে === শূন্যে বিচরণ করে
পার === পার হয়ে যাওয়া
পাড় === নদীর বা পুকুরের ধার
পারা === কিছু করতে পারা
পাড়া === এলাকা- পাল পাড়া, পায়ের চাপ, ডিম পাড়া, গাছ থেকে ফল পাড়া
বের === ভেতর থেকে বাইরে আসা (ঘর থেকে বের হওয়া)
বেড় === কিছু দিয়ে ঘিরে ফেলা
মোর === আমার
মোড় === কয়েকটি রাস্তার মিলনস্থল
ধর === কিছু হাত দিয়ে ধরা
ধড় === কাঁধ হতে কটি পর্যন্ত দেহভাগ
* এছাড়াও প্রচুর উদাহরণ আছে কিন্ত সময়ের অভাবে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে পারলাম না। সেজন্য সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন বাংলা সাইট।
৪১টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
মন দিয়ে পড়লাম, দরকারী পোস্ট
নিহারীকা জান্নাত
কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
অনবদ্য পোষ্ট। আসলে নিহারীকা আপা আমাদের ভুলের কারণটার জন্য আরেকটা ব্যাপার দায়ী। সে হলো উচ্চারণ। আমরা ‘র’ এবং ‘ড়’-এর উচ্চারণ একইভাবে করি। অনেকেই বলতে পারেনা। উচ্চারণ এমন একটি বিষয়, যারা লেখালেখির সাথে যুক্ত তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি কষ্ট করছেন অনেক।
পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
ওহ একটা গান শুনুন। https://www.youtube.com/watch?v=z27Y4ud0xAU
ভালো থাকুন।
নিহারীকা জান্নাত
একদম ঠিক বলেছেন আপা। ভুল উচ্চারণ ভুল বানানের সহায়ক। তাই সঠিক উচ্চারণ জানলে বানান ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
আর গানটাতো অসাধারণ। একদম পোস্টের সাথে মিলে গিয়েছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মুভিটাও দেখবেন, কমেডি। বেশ লাগে। উত্তম কুমারের সর্বশেষ সিনেমা ‘ওগো বঁধু সুন্দরী।’
ভালো থাকুন।
নিহারীকা জান্নাত
অনেক আগে দেখেছিলাম। এটি সম্ভবত উত্তম কুমারের শেষ মুভি। তবে পোস্টের সাথে গানটি এমনভাবে মিলে গেছে দেখে খুব ভালো লেগেছে আপা।
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের সময়ের অভাব নেই,
চালু রাখতেই হবে,
অনেক উপকারী লেখা আমার জন্য।
নিহারীকা জান্নাত
দেখি কতদিন চলে। মাঝে মাঝে চোখে অন্ধকার দেখি। আপনার মত হতে পারলেতো কথাই ছিলো না।
আপনি ওস্তাদ মানুষ, আপনার উপকার হবে বলে আর লজ্জ্বা দেবেন না 🙂
ভালো থাকুন, রাত্রি আপুকে নিয়ে বেশি বেশি ভাবুন -{@
রুম্পা রুমানা
দরকারী পোস্ট। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, আপু।
নিহারীকা জান্নাত
কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আপা।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ। মনে পরে নাকি পড়ে? কোনটা ঠিক?
নিহারীকা জান্নাত
আমি যতটুকু জানি তাতে “মনে পড়ে” সঠিক।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
নতুন করে ঝালায় করলাম।
সকলের প্রয়োজন আছে।
নিহারীকা জান্নাত
ভাই, বানানে গন্ডগোল হয়ে গেলো আপনার। এটা “ঝালায়” নয় “ঝালাই” হবে 🙂
কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
পোস্ট পড়ে যদি কারো বিন্দুমাত্র উপকার হয় তবেই লেখা স্বার্থক।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু মনে করার কিছু নাই, শিখতে চাই শিখছি।
নিহারীকা জান্নাত
ধন্যবাদ ভাই।
মৌনতা রিতু
ও দিদি ভাই, আপু গো, লক্ষি আপু, তোমাকে হাজার কোটি সালাম। আমাকে বাঁচাইছে। এই নিয়ে প্রতি মূহুর্তে আমি বিব্রত থাকি।
খুব ভাল একটা পোষ্ট। কপি করে রাখলাম।
নিহারীকা জান্নাত
হাহাহাহা ডাকগুলো শুনে হেসেই শেষ। আর এত কোটি সালাম আমি রাখি কই 🙂
দোয়া কইরেন আপা।
রিমি রুম্মান
ভাগ্যিস আজ সোনেলায় এসেছিলাম। এটি আমার জন্যে বেশ জরুরি ছিল। র আর ড় নিয়ে বেশ বিভ্রান্তিতে থাকি। প্রিয়তে নিলাম।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নিহারীকা জান্নাত
আপা আপনার মন্তব্যে বেশ সাহস পেলাম। বানানের সমস্যা নিরসনে অনেকদিন থেকেই কিছু করতে চাচ্ছিলাম। এতদিনে শুরু করেছি।
দোয়া করবেন।
আবু খায়ের আনিছ
নীলা আপু একটা সুন্দর বিষয় বলেছে, উচ্চারণ এ ভুলের জন্য অধিকাংশ সময় বানানে ভুল হয়। আর এই ভোগান্তিতে আমিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি পড়েছি বিশেষত আঞ্চলিক শব্দে। এখন পর্যন্ত কোন গল্পেই আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করতে পারি নাই এই কারণে।
আাপনার এই পোষ্ট গুলো আমার অনেক উপকার করছে, আর নিয়মিত ফলো করছি পোষ্টগুলো।
নিহারীকা জান্নাত
আমার পোসটগুলো আপনার বেশ কাজে লাগছে শুনে বেশ ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
বাংলা ভাষার বানান এত কঠিন কেন?
র এবং ড় নিয়ে লেখা আমার শব্দগুলো ৯০% ভুল হয়,
এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি বুঝতে পারছি না,
নতুন করে যে মুখস্থ করবো আবার, তার বয়স নেই আর।
মেমোরি কার্ড ফুল। ফরমেট দিলে কার্ডই বিগড়ে যেতে পারে।
আমার জন্য অত্যন্ত জরুরী পোষ্ট,
ধন্যবাদ আপনাকে
শুভ কামনা।
নিহারীকা জান্নাত
হার্ডডিস্ক ফুল, আবার কিছু শিখতেও পারবেন না তাইলে আর কি….আমি বান্দা হাজির আছি জিজ্ঞেস করে লিখতে বইসেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অপার্থিব
ভাল পোস্ট। শব্দগুলো ও তার বানান মোটামুটি জানাই ছিল , যাই হোক তারপরও চর্চা সবসময়ই উপকারী।
নিহারীকা জান্নাত
আমাদের অনেকেরই র/ড় নিয়ে সমস্যা হয়। তাই একটু মনে করিয়ে দেয়া।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
বেশ কিছু জানলাম কিন্তু অনেক কিছু জানার বাকি রয়ে গেল দাদীজান, অপেক্ষায় রইলাম আরো জানার।
নিহারীকা জান্নাত
শুধু জানলেই হবে না, কাজে লাগাতে হবে কিন্ত 🙂
অনেক ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
চেষ্টা অবশ্যই থাকবে দাদী
অনিকেত নন্দিনী
সময়োপযোগী পোস্ট। আজকাল আমাদের বাংলা লেখার যা ছিরিছাঁদ! এই পোস্ট পড়ে কাজে লাগালে বানান ভুলের পরিমাণ ঢের কমে আসবে আশা করা যায়।
আপু, বাংলা একাডেমীর নিয়ম অনুযায়ী নিচে লিখতে হ্রস্ব ই কার এবং জাতীয় লিখতে দীর্ঘ ঈ কার ব্যবহারের কথা বলা আছে। একটু দেখবেন কি?
নিহারীকা জান্নাত
সময় করে দেখে জানাবো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শুন্য শুন্যালয়
দুটো শব্দই এতো বেশি দেখি যে কোনটা ভুল আর কোনটা নয়, সেটাই ভাবার বিষয়। নিচে/নীচের কথা বলছিলাম। বেশি আর বেশী এই দুইটাও।
নিহারীকা জান্নাত
উত্তর ১। আজকাল নিচ, নীচ দুটোকেই সঠিক হিসেবে ধরা হলেও এর আভিধানিক অর্থ ভিন্ন। যেমনঃ
নিচ = টেবিলের নিচ/নিচে
নীচ = হীন, নিকৃষ্ট
উত্তর ২। প্রচলিত সঠিক শব্দ ‘জাতীয়”
উত্তর ৩। উচ্চারণ অভিন্ন হলেও বানান ও অর্থ ভিন্ন।
বেশি = অনেক, আধিক্য
বেশী = বেশ, সজ্জা
শুন্য শুন্যালয়
বেশী র উদাহরণ তবে ছদ্মবেশী তাইনা আপু? তবে ছদ্মবেশি এইটাও ইউজ করতে দেখি।
বেশি কথা কইবানা। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশি শব্দটা ইউজ হবে, বেশী নয়।
আর নীচ তো প্রচুর ইউজ করে নিচে বোঝাতে।
অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
নিহারীকা জান্নাত
এইতো বুঝতে পেরেছো। একদম সহজ। খুব কঠিন কিন্ত নয়। 🙂
গুড গার্ল :c
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভালই হচ্ছে নতুন কিছু অজানা শিখছি।ধন্যাবাদ।
নিহারীকা জান্নাত
আমিও শিখছি ভাই।
ধন্যবাদ 🙂
শুন্য শুন্যালয়
প্রিয়তে নিয়ে লাভ নেই, কপি/পেস্ট করে রাখলাম। বলা যায়না, আপুর মাথা বিগড়ে গেলে আবার যদি পোস্ট সব মুছে দেয় :p
অনেক উপকারী, এই র/ড় নিয়েই আমার সবচাইতে প্যাঁজ বাঁধে। কষ্ট করে দিচ্ছেন বলে ধন্যবাদ ম্যালা আপু।
নিহারীকা জান্নাত
হাহাহা আমার মাথার রোগটি দেখছি ভালোই মনে আছে তোমার। দোয়া করো সেই রোগ যেন আর না ফিরে আসে 🙂
বানান নিয়ে আমারও অনেক কনফিউশন আছে। তাই ভাবলাম নিজে জানার পাশাপাশি সবাইকেই জানাই। অনেকের উপকারে লাগলেও লাগতে পারে।
কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমায়। -{@
আমির ইশতিয়াক
মূল্যবান পোস্ট। সংগ্রহ করে রাখলাম।
নিহারীকা জান্নাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।