ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা কবিতাটি কিছু কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে। নিজেকে সবার সামনে ইকটু “স্টাইলিশ ” দেখানোর জন্য প্রায়ই আমরা ইংরেজী বলে ফেলি। হতে পারে সেটা আন্তর্জাতিক ভাষা, কিন্তু যখন একটা বাচ্চা Disney বা Nick এর কার্টুন দেখে দ্রুত হিন্দি বলে এবং বাংলা বললে ভ্যাটকাইয়া তাকাইয়া থাকে তখন মনে হয় শহীদ রা বোকা ছিলেন। কেননা না পারি আমরা ভাষা কে শ্রদ্ধা করতে না পারি তাদের। তাদের রক্ত দিয়ে আমাদের এই উপহার আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছি না। সকাল বেলা ফুল দিয়া একটা সেলফি তারপর ফেসবুকে আপলোড। with my buddy, shohid minar e ful dia aslam. It was great. যদি শ্রদ্ধা ই দেখাতে যান তাহলে শহীদ বেদিতে পা রেখে মাথা নিচু করে রাখতেন, একটা শূণ্যতা অনুভব করতেন। সেলফির কথা মাথাতেই আসতো না। তারপর আবার বিকৃত অঙ্গভঙ্গি। আপনাদেরই বা দোষ কি? কারণ আপনারা সঠিক ইতিহাস জানেন না অথবা আপনাদের জানানো হয় নি। সন্মান আসবে কোথা হতে? কিছুদিন আগে সময় টিভিতে একটা ভিডিও দেখেছিলাম, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারি তে কি হয়েছিল, কেও কেও বললো এই দিনে যুদ্ধ হইসিল, কেও জানেই না, কেও বলে মারামারি হইসে, কেও বলে এই দিনে দেশ বিজয় লাভ করে। এসব শুনে কার না লজ্জা লাগবে? শুধু এই মাসটা আসলেই ভাষার প্রতি প্রেম উতলাইয়া পরে। যা বললাম তা সবই চোখের সামনে ঘটলো আজকে। বাংলা ভাষার চর্চা চাই, বাংলা সংস্কৃতি কে অন্তরে ধারণ করতে চাই। একটি ব্লু আইজ হিপনোটাইজ এবং তুম হি হো মুক্ত জাতি চাই।
২৩টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
যারা বাংলার সাথে ইংরেজি আর হিন্দি মিশিয়ে কথা না বলতে পারে তাদের “ভাষা প্রতিবন্ধী” নামক ঘৃনা প্রকাশের উপাধী দেয়া যেতে পারে।
আপনার লেখাটা পড়ে ভাল লাগল।
হিলিয়াম এইচ ই
কথা না বলতে পারে???
আপনার মন্তব্য টা আরেকবার পড়াবেন কি!!!???? O.O
শুন্য শুন্যালয়
দারুন একটা লেখা শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইংরেজির বিকল্প নেই, তবে কথা থাকে যখন দেখি এদেশে আসা লক্ষ লক্ষ চাইনিজ রা এক বর্ণ ইংরেজিও বলতে পারেনা। এদেশে ন্যাশনাল ক্যালেন্ডারেও চাইনিজ নববর্ষ পালন করা হয়, তখন প্রশ্ন থেকেই যায় ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কতোটা আমাদের রয়েছে, যেখানে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সবাই বাংলাকে জানুক, এ প্রার্থনা ছাড়া আর কি-ই বা বলতে পারি।
হিলিয়াম এইচ ই
শুধু চাইনিজ রা কেন?? স্প্যানিশ আর ফরাসিরাও ইংরেজি বলতে পারে না। ওদের শহরের কোথাও ইংরেজির কোন কিছুই পাবেন না। ওরা সবাই মিলে নিজেদের ভাষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
জিসান শা ইকরাম
দারুন লিখেছেন হিলিয়াম
আমিও একটা পোষ্ট দেব এ নিয়ে ভাবছিলাম
দিয়ে দিলেন আপি।
ধন্যবাদ, থ্যাংক্স বলি নি কিন্তু 😀
হিলিয়াম এইচ ই
থ্যাঙ্কস মনে মনে বলসেন, আমিও মনে মনে নিয়া নিলাম। 😛
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
একুশে নিয়া আমার মতে অহংকার দরকার নাই। এরচেয়ে অল্প একটু মায়া থাকুক, সেটাই অনেক।
দরকার ইংলিশেরও আছে, কিন্তু আমাদের উচিত এইটা নিশ্চিত করা যে আমাদের শিশুরা তাদের চিন্তাগুলো বাংলাতেই করতেছে… এটুকুই যঠেস্ট।
হিলিয়াম এইচ ই
ইংরেজির কোন বিকল্প নেই। তবে সবার আগে বাংলা, কারণ আমরা বাংলাদেশী বাঙ্গালী।
ধন্যবাদ।
একজন আইজুদ্দিন
আজকে কিন্তু ভাষা দিবস, মাইন্ড ইট ম্যান!
শুদ্ধ করে বাংলা বলতে প্যাঁচটা লাগাও ক্যান?
দেশের প্রতি ভাষার প্রতি থাকতে হবে প্যাশান।
ভাষার জন্য জান দিয়েছে এই পুরোটা নেশান!
বাংলাটাকে হার্ট এন্ড সোল করতে হবে ধারন,
বাঙ্গালী যে, এই দিনে তাই অন্য ভাষা বারন।
এ’লেভেল বা ও’লেভেলে গ্যাজাও যতই জ্ঞান,
আজকে কিন্তু ভাষা দিবস, মাইন্ড ইট ম্যান!
টুইংকেল’টাকে শিকোয় তোল অনলি ফর এ ডে
কাল সকালে আসবে বোলো দেখতে এসব কে?
আজকে শুধু হও বাঙ্গালী শহীদ মিনার ফুল,
ইজ নট ইট ফ্যান্টাস্টিক, সো বি আ কুল!
গানটা ধর“আমার ভাইয়ের..”কালকে নাহয় জ্যাজ,
এই যে ধর, বুকে লাগাও কালো রঙের ব্যাজ।
বাঙ্গালী তো, সমস্বরে গাও বাঙ্গালীর গান,
একটি দিনের জন্য হলেও কাদুক তোমার প্রাণ!
কালকে তুমি ইংরেজিতে ভাষণ দিও কষে,
“বাঙ্গালীরা ছিঁড়ছে’টাকি হুদাই বসে বসে?
ল্যাঙ্গুয়েজটা শেষ করেছে ফরেন কালচারে,
বাঙ্গালীরা বাংলা নিয়া হুদাই’ই ফাল পাড়ে!
রুখতে হবে যেভাবে হোক ফরেন কালচার,
টুডে ওর টুমরো’তে এটাই অঙ্গিকার”।
হিলিয়াম এইচ ই
হুম। একুশের দেশপ্রেম।
ক্ষণিকের জন্য।
খেয়ালী মেয়ে
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার তার কবিতায় সত্যিটাই তুলে ধরেছে–
জীবনে চলার জন্য অনেক কিছুরই প্রয়োজন আছে,
কিন্তু জীবনে চলার জন্য বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার কী প্রয়োজন আছে সেটাই বুঝলাম না–আমাদের দেশের নাটকগুলোতে বাংলা ভাষাকে দারুনভাবে বিকৃত করা হচ্ছে..আর এই বিকৃত শব্দগুলোই সবার মুখে মুখে এখন…এসব শুনলে মনে হয় ব্যঙ্গ করা হচ্ছে ৫২কে নিয়ে, ব্যঙ্গ করা হচ্ছে সালাম বরকতদের…
হিলিয়াম এইচ ই
নাটকগুলো তে মূলত আঞ্চলিক ভাষা ব্যাবহার করা হয়। যেমন ঢাকাইয়া চাটগাঁইয়া ইত্যাদি। তবে কিছু বিকৃত ভাষাও ব্যাবহার করা হয়। যেমন খায়াম যায়াম কইরালছি!!!
রসরচনা করতে গিয়ে পরিচালকেরা কত কিছুই না করতে পারে।
লীলাবতী
একচুয়ালি আমাদের প্র্যাকটিসটা এমন হয়ে গিয়েছে।আমরা ইচ্ছে করলেই এটি এভয়েড করতে পারি। ৩ টি শব্দ লিখলাম। ভালো পোষ্ট।
হিলিয়াম এইচ ই
“এভয়েড ” করাটা কঠিন।
লীলাবতী
ভাইয়া আরো কতজনের লেখা আছে,একটু যদি পড়তেন সবার লেখা 😀
হিলিয়াম এইচ ই
হ্যাঁ আপু, অনেকজনের লেখাই পড়েছি। 🙂
প্রহেলিকা
কি বলবো বুঝতে পারছি না, এ নিয়ে কিছু বললে অনেকের গায়েই ফোস্কা পরবে। ;?
হিলিয়াম এইচ ই
ফোস্কা দিয়াও যদি কিছু হয়।!!
ব্লগার সজীব
ভালো লিখেছেন।
হিলিয়াম এইচ ই
ধন্যবাদ।
হিলিয়াম এইচ ই
কথা না বলতে পারে???
আপনার মন্তব্য টা আরেকবার পড়াবেন কি!!!???? O.O
স্বপ্ন নীলা
‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না ‘’————-অসাধারণ লেগেছে এই প্যারাটা— আমাদের শুধুই চেতনা আছে ঠিক একুশ তারিখে, কিন্তু যেই একুশ চলে যায় আমরা যা তাই হয়ে যাই —
খসড়া
আ’মরি বাংলা ভাষা