পরের দিন মানস স্থির করেই নিলো আজ যা হয় হবে, হয় এস্পার, নয়তো ওস্পার। অতো দেমাগ দেখানো কিসের! নিজেকে কি মনে করে রানী ভিক্টোরিয়া? আজ যদি চৈতি বেশী মুড মারে, সেও মুড দেখাবে। বন্ধুকে সাথে নিয়েই চৈতির কলেজে গেলো। কিন্তু মানসকে অবাক করে দিয়ে চৈতি সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আজ কোনো গিফট নেই?’ মানস রীতিমতো একটু ভাব নিয়ে বললো, ‘তুমি কি মনে করো আমি ফালতু ছেলে? এই আমি জিন্দেগীতে কাউরে পাত্তা দেই নাই, বুঝছো?’ চৈতি বুঝেছে যে গতকাল ওর ভাইকে দেখে মানস ক্ষেপেছে, ‘শোনো গতকাল আমার ভাই এসেছিলো সাথে, ও দেশের বাইরে থাকে।’ মানস বুঝেছে চৈতির মন নরম হয়েছে। সে বললো, চৈতি একটা কথা বলি, আকাশ-মেঘ আলাদা হতে পারে, এন্টার্কটিকার সব বরফ পানি হয়ে যেতে পারে, মাগার এই সম্পর্ক কোনদিনই আলাদা হবে না। আমি কথা দিলাম।’
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আর দেরী করলো না মানস। পরেরদিনটাকেই ঈদ বানিয়ে ফেলে। ঈদ তো কোলাকুলি ছাড়া হয়না। পার্থক্য একটাই, ঈদের কোলাকুলি হয় জেন্ডার মেনে সকলের সামনে আর এই কোলাকুলিটা ইয়ের সাথে ইয়ের চিপাচুপায়। আর কোলাকুলি যেহেতু রোবটের সাথে হয়না, ভিন্ন জেন্ডারের সাথে, তাই আরোও অনেক কিছুই পাওয়ার ইচ্ছে তৈরী হয়। মানুষের ধর্মই হলো দাঁড়াতে দিলে, বসতে চায় আর বসতে দিলে…।
তা ওই কোলাকুলির পর কি হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা? কাঠঠোকরার মতো ঠোঁট ঠোকরাঠুকরি চলতে থাকে অবিরাম। লেখাপড়া থেকে শুরু করে যে কোনো কাজই পনেরো মিনিট পর বোরিং লাগে, এই এক ক্ষেত্রে সমীক্ষার ফলাফল উল্টো। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও চুমুতে লোডশেডিং নামে না। মানস আর চৈতি দুজনেরই মন দারুণ ফুরফুরে, ‘আমি ইহাকে পাইলাম’ এই টাইপ আর কি!
তারপর কি? ভালবাসার সুতা বাধা ঘুড়ি মনের আকাশে ঘুরতে থাকে বোঁ বোঁ করে। কখনো ডাইনে কাত হয় কখনো বাঁয়ে। এই ওড়ায় যে কি সুখ! ফাস্ট ফুডের বিল আর গিফট দেবার জন্য বাবার মানিব্যাগ, মায়ের ভ্যানিটি ব্যাগ শেষ ভরসা। সেই ভরসায় ব্যাগ ফরসা করতে একটুও বাধে না। বাধে অন্য জায়গায়। হঠাৎ সাথের সঙ্গীর মোবাইল যখন পোঁ পোঁ শব্দে বাজতে থাকে আর সঙ্গী অস্থির হয়ে লাইন কাটে বুকটা কেন জানি ভার হওয়া শুরু হয়। যে ঘুড়ি সকালে বোঁ বোঁ শব্দে ঊড়তে থাকে বিকেলে সেটা গোঁ গোঁ শব্দে গোত্তা খাওয়া শুরু করে। মান-অভিমানের পালা চলতে থাকে সারা রাত। পরদিন ভোর হয় দুপুরে। তারপর ছোট্ট মেসেজ ভাসে মানসের ফেসবুক স্ট্যাটাসে- “ভ্যালেন্টাইন ডে শেষ, একাই আছি এইতো বেশ।” ওদিকে চৈতি লেখে, ‘ভুল সবই ভুল!’
নাহ ফেব্রুয়ারি মাস সাতদিনের প্রেমের জন্য নয়। এ প্রজন্মকে আমরাই তো শিখিয়েছি, ওদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হয় খাবার টেবিলে। যদিও হয়, কোন কোন গল্প করা হয় ওখানে? অথচ আমরা পরিবার থেকেই শুনেছি, দেশের গল্প, পৃথিবীর গল্প, মজার ছলে কতো কি যে জেনেছি! এখন আমরা কী বলি আমাদের সন্তানকে যে, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য অনেক গৌরবের মাস? পড়ার বইয়ে যা শেখা হয়, তা শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য, আমার মতে জানার জন্যে নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি আসছে, সেই গল্প এখানে নয়, আলাদা ভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে।
হ্যামিল্টন, কানাডা
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং।
ফেব্রুয়ারির যতো দিবস (তৃতীয় পর্ব) : সাতদিনে প্রেম শেখা
২৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
লেখার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হয়ে লিখলেই হয়ত এমন সুন্দর করে লেখা যায়,
আকাশের ঠিকানায় চিডি-চুডি লেখাই নিরাপদ দেখছি,
একুশের অপেক্ষায় রইলাম,
নীলাঞ্জনা নীলা
অবশ্যই! আপনি নিজেই লেখার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ বলেই তো বুঝতে পেরেছেন কি মন্তব্য দেয়া যায়!
আর ঠিক ওভাবেই মন্তব্য দিয়েছেন।
একুশের অপেক্ষায় থাকবেন? থাকুন। দেখি একুশে’তে কি হয়! 😀
জিসান শা ইকরাম
চার পর্বের সারে তিন পর্বই পড়া বাকি। আগের গুলো পড়ে নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা সাড়ে তিন পর্ব পড়া বাকী তো কি হয়েছে!
বরং নতূনই পড়ো, নতূনগুলোই দেখো। কেমন?
ফাল্গুনী শুভেচ্ছা নানা। ভালুবাসা দিবসে কি কি করলে? 😀
ওহ শোনো বায়রনিক শুভ্রর লেখা ‘ফেরা’ পোষ্ট সরিয়ে নেয়াতে আমার অদেখা মন্তব্য যাচ্ছেনা। কিছু একটা করো। বড়ো জ্বালা, উফ! ^:^
ইকরাম মাহমুদ
এই হলো সাপ্তাহিক প্রেম। ঠোঁটঠোকরা প্রাণিদের আবার দিবস লাগে কোনো? ওরা সকল কালের,সকল দিবসের ঊর্ধ্বে উঠে আবার টাইটানিকের মতো ডুবে যায়।
ভালো লাগলো, জানলামও অনেক।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভ্যালেন্টাইনের পরের দিনকে আমি বলি ঝগড়া ডে, তারপরদিন বিচ্ছেদ ডে। 😀
লেখাটির শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু, সুন্দর গল্পের ছলে দেশের পারিবারিক, সামাজিক ও অন্দর মহলে যে আদব কায়দা নতুন প্রজন্ম ছেলেমেয়েদের শিখান উচিত তা এক গল্পকারের লেখায় উঠে আস।
শুভেচ্ছা নিরিন্তর।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই আমার কাছে মনে হয়, এ যুগের ছেলে-মেয়েদেরকে শেখানোর সহজ উপায় হলো খাবার টেবিলে বসে গল্প করা। যা আমি আমার ছেলের সাথে করে থাকি। একই জিনিস আমার বাবা-মাও করেছে। সেটাই আমি তীর্থর উপরও প্রয়োগ করেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
আমি শিখছি আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ মজিবর ভাই।
নিহারীকা জান্নাত
ছবিগুলা কি কিউট! আমি ছবি দেখেই মুগ্ধ।
দিবস নিয়ে কি বাঁচে জীবন? প্রতিটি দিবসই হোক প্রতিদিনের।
দারুন উপস্থাপন। ভালো লেগেছে আপা।
নীলাঞ্জনা নীলা
গুগল মামু আছে না, ওখান থেকে ছবিগুলো নিয়েছি আপা।
আপনার এই মন্তব্য আমায় মুগ্ধ করলো।
ধন্যবাদ।
রিফাত নওরিন
অনেক ভালো লাগলো ৷ ইস্ কিভাবে এতো সুন্দর করে লিখেন ৷ 🙂 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
নওরিন প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মিষ্টি জিন
ভ্যালেনটাইন ডে শেষ , একাই আছি এইতো বেশ। দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ সম্পক গুলোর পরিনতি এমন ই হঁয় ।দারুন লিখেছো।
ছবি গুলো ও খুব সুন্দর হয়েছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার মালাই আপু আজকাল এমন প্রেমই তো দেখি ফেসবুকে।
তবে এরই মধ্যে এমনও আছে যারা বছরের পর বছর ভালোবেসে গেছে একে-অপরকে। এমনই কয়েকটি জুটিকে বিয়ে করতে দেখেছি। কি যে ভালো লেগেছে! ফেসবুকে পরিচয় গত আট বছর থেকে এমনই কয়েকজন আছে যারা আমাকে দিদি বলে ডাকে শুধু নয়, মানেও।
ওদের দেখে মনে হয় ভালোবাসা এখনও আছে পৃথিবীতে।
অনেক ভালো থেকো আমার মিষ্টি আপু।
আবু খায়ের আনিছ
নাহ ফেব্রুয়ারি মাস সাতদিনের প্রেমের জন্য নয়। এ প্রজন্মকে আমরাই তো শিখিয়েছি, ওদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হয় খাবার টেবিলে। যদিও হয়, কোন কোন গল্প করা হয় ওখানে? অথচ আমরা পরিবার থেকেই শুনেছি, দেশের গল্প, পৃথিবীর গল্প, মজার ছলে কতো কি যে জেনেছি! এখন আমরা কী বলি আমাদের সন্তানকে যে, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য অনেক গৌরবের মাস? পড়ার বইয়ে যা শেখা হয়, তা শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য, আমার মতে জানার জন্যে নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি আসছে, সেই গল্প এখানে নয়, আলাদা ভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে।
পুরো লেখাটাকে ছাপিয়ে গেলো এই কয়টা লাইন, আত্ম উপলব্দি, দেশ মানুষ ভাষা সব প্রেম এখানেই।
খাওয়ার টেবিলে বসা হয় কিন্তু গল্প হয় না, কথা হয় শুধু তাও গুনে গুনে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া আমাদের ছোটবেলা থেকেই খাওয়ার টেবিলেই যতো গল্প, আড্ডা, আনন্দ। কতো কিছু যে জেনেছি খেতে খেতে।
বাপি-মামনি আর আমি। খাবার সময় কথা বলা নাকি ভালো। হজম হয় তাড়াতাড়ি। আর এখানে আমি আর তীর্থ খেতে বসেই তো দুনিয়ার গল্প করি। দুজনেই সমান তালে পটর-পটর। আর একা যখন খাই, বই পড়ে পড়ে, নয়তো অনলাইন খবর অথবা গান।
ভালো থাকুন।
আবু খায়ের আনিছ
আমি একা থাকি আপু গত চারবছর, আর এই সময়ে এমন কোন দিন নেই যে আমি খেতে বসেছি আমার সামনে বই/ডকুমেন্টরি বা এই ধরণের কিছু চলছে না। চেষ্টা বেশিরভাগ সময় ভিডিওর সাথে থাকতে, অন্য সময় ভিডিও দেখার সময় পাই না।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমিও ভাবছিলাম আপনি একা খেতে বসার মতো মানুষ না, অবশ্যই সাথে বই থাকবে।
একা খেতে বসলে আমিও বই পড়ি, তবে বেশী গান শুনি।
ভালো থাকুন আনিছ ভাইয়া।
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
পিছনে যাচ্ছি….
নীলাঞ্জনা নীলা
আচ্ছা। পড়া হলো? জানাবেন কিন্তু।
শুন্য শুন্যালয়
আহা এই কিউট ছবিগুলো কোথা থেকে পেলে? উলে উলে টাইপ। ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষেই এত্তো ভালবাসা? মেকীটা সবাই বুঝতে পারে একসময়। তাই টেকেনা তা। হ্যাঁ আমরাই শিখিয়েছি এসব, তবে সময় ও কিছুটা। আমি আমরা ছাড়াও ছেলেমেয়েরা এখন বাইরে থেকে অনেক কিছুই শেখে।
ভালো লিখেছ নীলাপু। ভালো আছো তুমি?
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখার চেয়ে বেশী কষ্ট হয়েছে ছবি নির্বাচনে। ওগো আপু মাথা খারাপ করে দিয়েছিলো এতো সুন্দর সুন্দর ছবি, মনে হচ্ছিলো সবগুলো দিয়ে দেই। ‘সাতদিনে প্রেম শেখানো হয়’ এমন একটি প্রতিষ্ঠান হলে মন্দ হয়না কিন্তু! :p
বিন্দাস আছি, এই ‘বিন্দাস’ শব্দটা আমার খুব ভালো লাগে।
তোমার কথা বলো তো তিলোত্তমা। ভালো রেখো কিন্তু। -{@
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ওরে নীলাদি, তোমার এই পর্ব পড়ে অন্যগুলো পড়ার লোভ জেগেছে। বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে আগে বাকীগুলো পড়ে নেই। এখনকার সময়ের হালকা প্রেম প্রেম খেলা দেখে মানুষগুলোকে এখন একবার রোবট আরেকবার বোধশক্তিহীন পুতুল মনে হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু ঠিক বলেছো। তোমার মন্তব্যটা মন ছুঁয়েছে।
ভালো থেকো।
মৌনতা রিতু
নীলাআপু, মজা লাগলো। এখনকার প্রেমিকদের জন্য প্রযোয্য। ঠোকাঠুকির পরে কি হয় :p
ঠিকই বলেছো ঘুড়ির মতোই এদের প্রেমের আবেগ।
ছবিগুলো ফাটাফাটি হইছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
হাহাহাহাহাহাহাহাহা। ঠোকাঠুকির পরে ঘুড়ির নাটাই কার হাতে কিভাবে থাকে, সেটার উপর নির্ভর করে কি হতে পারে! :p 😀
আমার আবার ওইসব বিষয়ে জ্ঞান যথেষ্ট বেশী, কিন্তু ভালো মেয়ে না আমি, তাই বলবো না। 😀
ছবিগুলো দিয়েই তো উৎরে গেলো পোষ্টটা। এই ধারাবাহিকটা আমার নিজেরও মন ছোঁয়নি।
ভালো থেকো গো ভালো মেয়ে। -{@