
এই যে! এই শুনছেন?
জ্বী আমাকে বলছেন?
এখানেতো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই, আপনাকেই বলছি।
বললাম- জ্বী বলুন?
আমার কয়েকটি ছবি তুলে দেবেন?
আমি? আমি কেন?
কারন ঐ যে বললাম, এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই তাই।
এটা কি চন্দ্রমল্লিকা?
হুম, কেন?
একটা ফুল নিতে পারি? খোঁপায় পরবো?
মুখের উপর বলে দিলাম – না!
ক্যামেরাটি দিন, আপনার ছবি তুলে দিচ্ছি।
চন্দ্রমল্লিকা
সেই প্রথম দেখা, ক্লিক ক্লিক শব্দ। পুরো উঠোনে পায়েলের মৃদু ধ্বনি। একবার এভাবে তো আরেকবার অন্যভাবে। ছবির পোজের বাহারে তাকানো যায়না তার দিকে।
বাহ! সুন্দর ফুলতো!
এটা পেঁয়াজ ফুল।
আজ প্রথম দেখলাম এই ফুল। এতো সুন্দর কেন?
বললাম কে আমি?
না, পেঁয়াজ ফুল!
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সুন্দরীরা বোধহয় এভাবেই মুখের উপর না বলে।
পেঁয়াজফুল
বাহ এটাও দারুনতো, টকটকে রঙ!
এটা কি ফুল?
বললাম- হলুদ পর্তুলিকা
একটা ছিঁড়ে নাকফুল বানাই? কিংবা দিননা আমার কপালের টিকলি বানিয়ে?
আমি কি তার নাগর? যত্তসব! বিরক্ত মুখে আমি সাফ না করে দিলাম। তার মুখে কি লাল আভা ছড়িয়েছিলো? কি জানি।
হলুদ পর্তুলিকা
আশ্চর্য মানুষ আপনি, একটা ফুল দিলেননা?
ফুল তাদের জায়গাতেই সুন্দর, অন্যখানে নয়। তার মুখে ঝাপটা লাগলো আমার কথাগুলি কি ?
দিন আমার ক্যামেরা দিন, চললাম।
এই যে! চলে যাচ্ছেন যে বড্ড?
নিন আমার তরফ থেকে সামান্য উপহার, একটা ডায়ন্থাস।
ফুল হাতে নিয়ে উল্টোপথে হাঁটা, কোমর দুলিয়ে কেউ হাঁটলে এত ভাললাগে আগে দেখিনিতো! প্রেমে পরলাম নাকি? ধুর! ধুর! প্রেম ট্রেমে আমি নাই।
ডায়ান্থাস
একটা ধন্যবাদও নেই, এতগুলো ছবি তুলে দিলাম!!
ফুলটা দিলেননা আবার ধন্যবাদ? সরুনতো, যান। আমি হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম।
ডায়ান্থাস
দুই বসন্ত পর….
এই বসন্তে আমার উঠোনে দাঁড়িয়ে পায়েচারি করছি। মৃদু ঝুম ঝুম শব্দে বুকের বাঁ পাশটা কেমন ধ্বক ধ্বক করে উঠলো। সেই পরিচিত শব্দ!!
আসতে পারি?
বললাম -ঢুকেইতো পরেছেন, অনুমতি নেয়ার দরকার মনে করলেন না?
বললাম – আপনি এখানে কেন?
কি আশ্চর্য! আমি ছবি তুলতে এসেছি, দিননা কয়েকটা ছবি তুলে। দেবেন?
বললাম- ফুলের ছবি তুলতে পারেন, তবে আপনার ছবি তুলে দেবোনা।
কেন কেন?
নাহ! ছবি তোলার পরে আবার নাকফুল চাইবেন। এই ফুল আমি কিছুতেই ছিঁড়বোনা। বড্ড বেরসিক আখ্যা দিয়ে আবার সেই মুখ ঝামটানি। অসহ্য!
তার চলে যাওয়ায় লাল আর সাদা বাগান বিলাসটা দুলে উঠলো যেন! নাকি আমার বিপি বেড়ে গেলো? মাথা ঘুরছে।
লাল এবং সাদা বাগানবিলাস
এগুলো কি ফুল? পর্তুলিকা।
বাহ! বেশ, একটা নেই? নেব?
উহ্! বিরক্তিকর।
এই আপনি যানতো। চলে যাবার শব্দে আবারও আমার বুকে মৃদু কম্পন!
নাহ! বিপিটা সত্যিই বড্ড জ্বালাতন করছে ইদানিং। কই অন্য সময়তো এরকম হয়না।
মাল্টিকালার পর্তুলিকা
দুজনে হাত ধরে হাঁটছি পাশাপাশি, এই ফুলটা খোঁপায় দিয়ে দেবে?
জিজ্ঞাসু নয়নে তাকালো- কি ফুল?
বললাম এটা লিলি, এম্যারিলিস লিলি।
আচ্ছা দাও পরিয়ে দেই।
বাহ! বেশ লাগছে।
রমনীর টোলপড়া গালের আভায় স্ফীত হাসিতে আমার বুকে হাহাকার।
এম্যারিলিস লিলি
প্রেম কি এমনই হয়! তা নাহয় মানলাম কিন্তু ছবি তুলতে এসে একেবারে বিয়ে?
ফুলের বাহানায় আমার ফাঁসিয়েছে বনলতা সেন। না হলে কি আর বাসর রাতে নিজের বাগানের নীল অপরাজিতা তার হাতে দিয়ে বলতাম- তুমিই অপরাজিতা হৃদয়হরণী।
নীল অপরাজিতা
বাবা এটা কি ফুল?
কসমস বলে এটাকে মামনি।
আর এটা?
এটা স্নোবল।
বাবা আমি নেই?
আচ্ছা নাও মা।
মেয়ের আবদারে ফুলগুলিকে গাছে রাখতে পারলামনা। এমনই হয় বুঝি? ফুলের ভালোবাসাকে আজ দ্বিধাবিভক্ত করেছি মা মেয়ের কাছে।
কসমস
স্নোবল
এই শুনছো? বাগান এই বিলাসটার পাশে ছবি তুলে দেবে?
আবার সেই ছবি? এই ছবি কি আমার পিছু ছাড়বেনা?
বাবা, দাওনা মায়ের একটা ছবি তুলে।
আচ্ছা ক্যামেরা দাও।
মাল্টিকালার বাগানবিলাস
বনলতা নেই, অনেক বছর পরে সেই ধুলোমাখা উঠোনেই দাঁড়িয়ে আছি।
বাবা? দেখো ভ্রমর এসেছে ডালিয়া ফুলে।
চশমার কাঁচদুটো পরিস্কার করে আবার লাগিয়ে নিলাম চোখে।
হুম মামনি, ভ্রমর হয়ে সে এসেছে আমাদের দেখতে। ভ্রমর কেন বাবা?
সে যে ফুল খুব ভালোবাসতো মামনি।
কে বাবা?
বিড়বিড় করে বললাম- বনলতা! নিজের দুচোখের নোনাজল লুকোতে ব্যস্ত আমি।
সাদা ডালিয়ায় ভ্রমর
প্রেম উপাখ্যান সমাপ্ত হলে কি প্রেম মরে যায়? বনলতা ফুলকে ভালোবেসে আমাকে পেয়েছিলো নাকি আমি ফুল ভালোবাসি বলে তাকে পেয়েছি সে প্রশ্ন এখন অবান্তর। সেদিনগুলিতে মিষ্টি প্রেমের সাক্ষী এই ফুলগুলো।
পর্তুলিকা
হয়তো আমি, সে কিংবা ছোট্ট মামনি কেউ থাকবোনা। শুধু লাল সবুজে মিশে থাকুক তাদের ভালোবাসাটুকু।
আমার তোলা ফুলের ছবিগুলি সেদিনের সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে সোনেলায় জমা করে গেলাম।
লাল পর্তুলিকা
২৬টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
পড়তে পড়তে ভেবছিলাম চমৎকার কোনো মন্তব্য করার সুযোগটা বুঝি পেয়েই গেলাম!! তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসেতে, জানিনা ফুল না আমাকেই ভালোবাসতে? ” শেষে এসে মুখের হাসি ম্লান হয়ে গেলো। লোনা জলে শব্দ গুলো ভেসে গেলো। এমন বাহারী ফুলের মালঞ্চেই ভ্রমর করে যাক গুঞ্জরন।
ভীষন ভালো লাগলো পড়তে। শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
এই গানটা আমার ভীষণ প্রিয় আপু। মন খারাপ করবেননা, কাল্পনিক গল্পে মন খারাপ করতে নেই।
লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। শুভেচ্ছা রইলো।
বন্যা লিপি
কেমনে জানি প্রথম হয়ে গেলাম মনে হচ্ছে???? এমন লেখা পড়ে দেরি করতে মন চাইলোনা মন্তব্য করতে। 😊😊
তৌহিদ
আপনিই প্রথম, আর প্রথম মন্তব্যদাতাকে একটা সুইট থ্যাংকস না দিলে অপূর্ণতা থেকে যায় আপু।
ভালোবাসা অবিরাম।🌹🌹
শুন্য শুন্যালয়
ওএমজি! এতো সুন্দর সব ফুল! এগুলো আপনার বাগানের! আমার সবচাইতে ভাল্লাগছে মাল্টিকালার বাগানবিলাসটা। সবগুলোই সুন্দর আসলে।
সুন্দর ফুলগুলোকে এমন চমৎকার গল্পের মধ্য দিয়ে টেনে আনলেনন যা আপনার লেখায় পটুত্ব প্রমাণ করে।
সুইট, সুইট, পঞ্চ তারকা পোস্টে। 🙂
তৌহিদ
ছবি তোলায় আপনিও কম যাননা! আমার কাছে সে খবর আছে কিন্তু আফামনি☺☺
মাল্টিকালার বাগানবিলাসটা আমারো খুব পছন্দের ছিলো, মরে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো যায়নি। এই কালারটা আর খুঁজে পাচ্ছিনা।
সব ফুল আমার উঠোন বাগানের। অবসরের সাথী আমার এরা।
এই প্রথম কেউ পঞ্চতারকা দিলো! একটা সুইট ধন্যবাদ না দিলেই যে নয়।
শুভেচ্ছা জানবেন 🌹
তৌহিদ
আচ্ছা! আমিতো পোস্টের প্রথমে মাল্টিকালার বাগান বিলাসের ছবি দেইনি, তাহলে সেখানে এলো কেমনে??
ছাইরাছ হেলাল
এত্ত সুন্দর ফুল একসাথে দেখলাম,
ফুল প্রেমি কিন্তু নাম-ধাম জানিনা, সাথের লেখাটূকুও ভালই হয়েছে।
তৌহিদ
এসব ফুলের নাম আমি নিজেই আগে জানতামনা, এখন একটু একটু জানি।
লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাই।
নীরা সাদীয়া
যেমন সুন্দর ফুল, তেমনি সুন্দর তার বর্ণনা। ছবির পাশাপাশি এমন গল্প যে হতে পারে তার কোন আইডিয়া ছিলো না। বরাবরই মনে হচ্ছিল, এ যেন সত্য, চরম সত্য।
খুব ভালো লাগলো, মন ছুঁয়ে গেলো।
তৌহিদ
মন শুধু মন ছুঁয়েছে গানটা মনে পড়ে গেলো। আমি কোন কিছু ভেবে লিখতে বসি না, মনে যা আসে লিখে যাই।
লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে নীরা।
এভাবেই উৎসাহ দেবেন আমাদের।🌹🌹
প্রহেলিকা
ছবির সাথে লেখার অপূর্ব সমন্বয় যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বেশ ভালো লেগেছে। আসলে ছবির সাথে সাথে লেখাটাও পড়ছিলাম তাই দৃশ্যকল্পটা সহজে ভেসে উঠেছে।
শুভকামনা ভাই।
তৌহিদ
আপনারা এরাম মন্তব্য করলে শরম পাই কিন্তু ভাইজান।☺☺
মাঝেমধ্যে একটু করে লিখি আপনাদের উৎসাহে। পাশে থাকবেন এমনি করে, আর ভুলত্রুটিও ধরিয়ে দেবেন কিন্তু।
লেখা ভালো লেগেছে জেনে আমারো ভালো লাগছে ভাইয়া।🌹🌹
মনির হোসেন মমি
দারুণ সব ফুল নিয়ে কথা ফুলের মালা।চমৎকার।
তৌহিদ
শুভকামনা জানবেন ভাই🌹🌹
শুন্য শুন্যালয়
আপনি কি ম্যানুয়ালি কোন ছবি ফিচার ফটো হিসাবে সিলেক্ট করেছিলেন? না করলে র্যান্ডমলি সম্ভবত একটা ছবি নিয়ে নেয় ফিচারে। ইন ফ্যাক্ট মাল্টিকালারের বাগানবিলাস টা আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে এইটা ব্লগ বুঝে ফেলছে, বুঝছেন? 🙂
তৌহিদ
র্যান্ডমলি নিয়েছে হয়তো। আপনার পছন্দের কথা সোনেলাতো জানবেই।
এখন আমিও জানলাম।☺
রিতু জাহান
এতো অসাধারণ একটা লেখা!
ছবি তুলতে এসে নাকফুল চাওয়া। হঠাৎ প্রেম, পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটা,,তারপর বিষাদে মনটা খারাপ হলো।
এতো গেলো লেখার কথা।
অসাধারণ ফুলের ছবি সাথে তার পরিচয়।
চমৎকার একটা পোষ্ট।
তৌহিদ
লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগছে আপু।
শুভকামনা জানবেন।🌹
শবনম মোস্তারী
গল্পটি কিন্তু অসাধারণ লিখেছেন। আর ফুলের ছবি যে আপনি ভালোই তুলতে পারেন বোঝাই যাচ্ছে।
শুভকামনা।🌹🌹
তৌহিদ
গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে সুখি হলাম। ছবি তোলার চেষ্টা করি একট আধটু।
সোনেলায় স্বাগতম🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহ ! কত সুন্দর ফুলে ফুলে ভরা একটি পোষ্ট দিলেন তৌহিদ ভাই। কতো ফুলের নাম অজানা ছিলো, আজ ছবিসহ ফুলগুলো দেখে নামও জানা হলো।
ফুলের নাকফুল !! খুব কম মেয়েই আছে যে জীবনে একবার ফুলের নাকফুল পরেনি। আমি পরেছি বহুবার। খেলার ছলে, দুষ্টুমি করতে করতে ঘাসফুল দিয়ে নাকফুল বানিয়ে পরতাম। কেমন দেখাতো জানিনা, তবে ভিষন ভালো লাগতো। দলবাধা বান্ধবীদের সাথে সেজেগুজে চলতে।
মা-মেয়ের ভালোবাসায় পার্থক্যটা সুন্দর ভাবে এনেছেন। প্রিয় ফুল প্রিয়তমাকে না দিলেও প্রান পুত্তলিকা কন্যাকে ঠিক ঠিক দেয়া যায়। একজন বাবার কাছে তার কন্যা সমস্ত পৃথিবীর সব ফুলের চাইতেও শ্রষ্ঠ ফুল হয়।
ভালো থাকবেন তৌহিদ ভাই। শুভকামনা 🌹🌹
তৌহিদ
আপনার মন্তব্যে লেখাখানি পূর্ণতা পেলো। ছোটবেলায় যখন চড়ুইভাতি খেলতাম তখন মেয়েদের দেখতাম নাকফুল পরতো ফুল দিয়ে।
বাবার কাছে কন্যারাই সব, সেখানে আসলে অন্য কোন কিছুই বেমানান।
আপনিও ভালো থাকবেন আপু। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
একেবারে ব্যতিক্রমী, ফুল চেনা আর প্রেমালাপ শোনা একই সাথে হয়ে গেল……..ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ভাই।
তৌহিদ
আপনি ব্যতিক্রমী ব্লগার যিনি আমার পুরাতন লেখাগুলি খুঁজে নিয়ে পড়ছেন। এ এক দারুণ অনুভূতি। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
আমি বিশেষ করে ভ্রমণ ও ছবি ব্লগের ভক্ত, তাই অবসরে পুরোনেদের খুঁজে বেড়াই ভাই।