
পাখির প্রতি ভালোবাসা আমার অনেক পুরানো। সেই ছেলে বেলায় এক ময়না ছিল আমার। আমার নাম ধরে পিলু পিলু করে ডাকতো সে আমায়। হঠাৎ একদিন আমাকে চোখের জলে ভাসিয়ে সে নিথর হয়ে গেলো। ছোটবেলার পাড়ার বন্ধুদের ডেকে তাকে গোসল করিয়ে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে কবর দিয়েছিলাম। ঘুমের মাঝেও তার পিলু এসেছে, পিলু ভালো আছো? ডাক শুনতে পেতাম। এরপর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের পরিবারের ভাসমান জীবন ময়নাকে ভুলিয়ে দিলো।
বড় বেলায় যখন একটু লেখা লেখি করতাম, রাত জেগে কলেজ ছাত্রাবাসের বন্ধুদের লুকিয়ে লিখতাম কিছু একটা, তখন সেই ময়নার ডাক আবার শুনতে পেতাম। একা একা কথা বলতাম আমার ময়না, আমার পাখির সাথে। আমার ভিতরে থাকা একজন আমিই যেন সেই পাখি। কিছু লেখাও আছে আমার সেই পাখি নিয়ে এই সোনেলায়।
দুই তিন বছর আগেও খাঁচায় পাখি রেখেছি। হঠাৎ একদিন সব মুক্ত করে দিলাম। পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ার ইচ্ছেয় বেশ কিছু গাছ লাগালাম, আর এই সব গাছের মাঝেই বানালাম আমার বিশ্রামাগার। যতক্ষন থাকি ওখানে বিভিন্ন পাখির গানে মগ্ন থাকি। আজ খাঁচায় না রেখেও অনেক মুক্ত পাখি আমার। এরা ভয় পায় না আমাকে। জানালার একদম পাশে এসে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। লেজ নাড়িয়ে ঠোট মুখ দুলিয়ে কথা বলে।
একদিনঃ
জেস- কি ব্যাপার তুমি আমার বিছানায় বসে?
পাখিঃ হ্যা, তুমি নাইত তাই বিছায় ঘুমাই আমি।
জেস- মনে হচ্ছে এই বিশ্রামাগার তোমাদের জন্যই বানিয়েছি?
পাখি- হ্যা আমাদের জন্যই তো বানিয়েছ 😀
জেস- তুমি ভিতরে ঢুকলে কিভাবে?
পাখি- তুমি দরজায় তালা দিলেও দুটো জানালা কিছুটা খুলে রাখো, আমরা যাতে ভিতরে আসতে পারি, ভেবেছ আমরা তা বুঝিনি? 😍
জেস- বুঝছি সবজান্তা হয়েছ। তোমাকে একটু ধরি?
পাখি- আচ্ছা ধরো, ব্যাথা পাইনা যেন, তাহলে আর আসব না।
জেস- আরে না, ভালবেসে আদরেই ধরব।
=============================
কিছুদিন আগেও পাখির ডাকে ঘুম হতো আমার। চিরচেনা পাখিটা হঠাৎ অচেনা হয়ে চলে গেলো আমার অজানা গন্তব্যে। যে পাখি যায় সে আর ফেরেনা।
==============================
স্বপ্নে দেখি একরাতে- রাত জেগে কথা বলছি প্রিয় একজনের সাথে। প্রসংগের কোন অভাব নেই। হঠাৎ আজানের আগে জানালার পাশের আম গাছে থাকা পাখিটা ডেকে উঠলো টুহু টুহু করে। অবাক বিশ্ময়ে শুনলাম মোবাইলে অন্য প্রান্তে থাকা প্রিয়জনের কন্ঠের সাথে পাখির ডাক। আমার আর তার কাছে একই পাখি ডাকছে। স্বপ্ন থেকে জেগে শুনি পাখিটি ডাকছে আমার কানের কাছেই। এটি স্বপ্ন ছিল না বাস্তব তা এক রহস্য আমার কাছে আজো।
==============================
সেহেরীর জন্য জাগি আজকাল রাত তিনটায়। প্রতিদিন একটি পাখির মিস্টি ডাক শুনি৷ তিন চারদিন পরই লক্ষ্য করি, ঠিক তিনটা সাইত্রিশ মিনিটে পাখিটা ডেকে ওঠে। এক সেকেন্ডও এদিক সেদিক হয়না।
কোনো পাখির কি ভোরে ভোর হয় আর?
উৎসর্গ: শামীম চৌধুরী ভাইকে।
৩১টি মন্তব্য
রাফি আরাফাত
কোনো পাখির কি ভোরে ভোর হয় আর? মনে ধরেছে লাইন খানা। ব্লগে ভালোই পাখি প্রেমি আছে দেখছি 😍
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, আমাদের আসল পাখি প্রেমি ভাই হচ্ছেন, শামিম চৌধুরী 😃
রাফি আরাফাত
তা তো জানি ভাই। সেটাই বলতে চাইলাম। সেখান থেকেই অনুপ্রানিত নাকি ভাই? ☺
জিসান শা ইকরাম
আমি এর আগে আট নয়টা পাখির পোস্ট দিয়েছি,
শামিম ভাই সোনেলায় আসার পরে আবার উৎসাহ পেয়েছি পোস্ট দিতে।
শামীম চৌধুরী
প্রকৃতিকে ভলোবাসি। আর পশু পাখি হচ্ছে প্রকৃতির অলংকার। তাই এই অলংকারের প্রতি খুব লোভ আমার।
রাফি আরাফাত
যাক ভালো লাগলো আপনাদের ব্যাতিক্রম ধর্মী ইচ্ছে দেখে। ধন্যবাদ ভাই
তৌহিদ
ছবিব্লগ আর সাথে সুন্দর স্মৃতিচারণ নিয়ে অনেকদিন পরে লেখা দিলেন ভাই। আসলে পাখিরা বনেই সুন্দর। সেই যে ময়নাটা চলে গেল আর আসেনি ফিরে। যে যায় সে যেন ভূল করে যায়। কভু পিছে ফিরে চায় না😞
ভোরে যে পাখিটি ডাকে সেও মনে হয় আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। জিসান ভাই উঠবেন তার মধু কন্ঠে এরপর সেহেরি খাবেন এটাইবা কম কিসে। তারপর দেখবেন একদিন সেও চলে যাবে, হয়তো অন্য কেউ আসবে গান শোনাতে।
এই হয় আসলে। মাঝে পরে রয় কিছু ব্যথাতুর স্মৃতি।
লেখা ভালো লেগেছে ভাই। শুভকামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা তৌহিদ ভাই, সেই ময়নাটি আর ফিরে আসেনি। সেই ময়নাটি ছিল আমার আনন্দ। আমার আনন্দ অনুভুত হলেই আমি পাখিকে অনুভব করি। আমার আনন্দ মানেই পাখি।
এই পাখি কোনো নির্দিস্ট পাখি নয়, যে কোন আনন্দেই আমার ভিতরের পাখি আনন্দে নেচে ওঠে। যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের জয়ে আমার ভিতরকার পাখি রুপে আনন্দ নেচে ওঠে। আমি হয়ত লেখায় এই কথা ফুটিয়ে তুলতে পারিনি।
পাখির প্রতি টান আমার সেই ছোট বেলা থেকেই। একারনেই এখন দিনের অনেকটা সময় পাখিদের সাথে কাটাই, আনন্দে থাকি।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
জিসান ভাই,
আমি কৃতজ্ঞ,অভিভুত, আপ্লুত আপনার দেয়া সম্মান পেয়ে। পাওয়া সম্মানে চোখের কোনটা অজান্তেই ভিঁজে গেল।
দোয়া করবেন এই সম্মানটুকু যেন সবার মাঝে ধরে রাখতে পারি। একজন ভালো মানুষ হিসেবে সবার কাছে যেন আমার মূল পরিচয় হয়।
শুভ কামনা রইলো আপনার ও আপনাদের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
আপনি অত্যন্ত বিনয়ী তাই এমন বলছেন। আপনি যে মাপের মানুষ, তাতে আপনাকে দেয়া সন্মানের কয়েকশত গুন আপনার প্রাপ্য। আমার সামর্থ ক্ষুদ্র, তাই এভাবেই দিলাম।
আপনি আমার সন্মান ও ভালোবাসায় আসিন থাকবেন সারাক্ষন।
শুভ কামনা।
শাহরিন
পাখি আমারও খুব পছন্দ। ২/১ বার কিনেছিলাম ও কিন্তু একবার গোসল করালাম তার পরে দেখি রং পরিবর্তন। তার কয়েকদিন পরে মারা গেছে। পরের বারের পাখি টাও বাচাতে পারিনি। 😥
জিসান শা ইকরাম
তাহলে পাখি ভাগ্য তোমার নেই, পাখি পালা খুব কঠিন। কবুতর পালতে পারো। পাখিকে খাঁচায় আবদ্ধ না করাই ভালো।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি যেভাবে যত ভাবেই বলুন না কেন, পাখিদের ও আছে মন্দ স্বভাব!
এক ডালে বেশিদিন থাকে না, বসে না, একটি ডালে বসেই অন্য ডালে সুইচ করার প্লান আঁকে!
নোংরা ডালে থাকতে বসতেও আপত্তি নেই।
ঐ সব ডাক-ডুক সব ভুয়া।
উৎসর্গ যথার্থ, শামীম সাহেব প্রকৃত-ই পাখি প্রেমি, মনে-প্রাণে।
জিসান শা ইকরাম
আমি যা বলতে চেয়েছি, সেভাবে হয়ত গুছিয়ে লিখতে পারিনি। পাখি আমার কাছে আনন্দের অপর নাম। যখনই আনন্দ ফিরে আসে আমার কাছে, আমি পাখির নাচন অনুভব করি আমার ভিতরে। নিজস্ব কিছু সমস্যা উৎরিয়ে আমি এখন আনন্দিত, তাই পাখিও ফিরে এসেছে আমার মাঝে।
হ্যা, সব কিছুতেই ভালো এবং মন্দ আছে। আমার পাখিরা ( আনন্দ) সব ভালো।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
তবে,পাখিরা মানুষের মতো না।প্রভুকে মনে রাখে।পাখিরা প্রকৃতির সন্তান।।ওদের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।আবার ওদের বাড়ি ফেরা মনে করিয়ে দেয় সন্ধ্যা হয়েছে।ঘরে ফিরতে হবে।।
ভালো লাগলো।।
জিসান শা ইকরাম
প্রকৃতির পাখিদের প্রতি নজর রাখলে অনেক কিছুই বুঝতে পারা যায়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অরুণিমা মন্ডল দাস
দারুন
পাখি উড়তে দেখতেই ভালো লাগে খাঁচাতে নয়
জিসান শা ইকরাম
মুক্ত পাখিদের দেখার আনন্দ অন্য রকম,
শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
পাখি জান পাখি। অন্তরে পাখীটিকে ভাল বেসেছিলেন। আর তাই পাখি প্রতি টান থাকবেই। তাছাড়া কথাবলে, নাম ধরে ডাকে। তার সাথে আত্বার সম্পরক গড়ে উৎবেই। ভাল লাগ্ল।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ মজিবর ভাই,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আমার এক বিরাট খাঁচা ছিলো, প্রায় একটা রুমের সমান, কত ধরণের যে পাখি পুষতাম, আরেকটা ছোট খাঁচাতে ছিলো ময়না, ও কিছু কথা শিখেছিলো যা শুনে আমরাই হাসতাম, আমাদের বাসার পাশ দিয়ে যেতো ঝাড়ুওয়ালা, ছাইওয়ালা, ওদের ডাক অবিকল নকল করতো, ” এইইইই ঝাড়ুউউউ”, ” ছাই ছাই, ছাই ছাই” 😂, আবার আমার আম্মাকে দেখলে বলতো “ভাত দাও, ভাত দাও”, ছোট বোনের নাম ধরেও ডাকতো।
পাখি প্রেম কম বেশ সবারই আছে, যেমন আপনি আমি এক কাটি বাড়া ছিলাম কিন্তু আমাদের শামিম ভাই তো ১০ কাটি বাড়া।
ধন্যবাদ ভাইজান সুন্দর লেখাটির জন্য।
জিসান শা ইকরাম
এত বড় খাঁচা ছিল আপনার!
ময়নার কথা বলা অনেক আনন্দের একটি ব্যাপার ইঞ্জা ভাই।
শামীম ভাইর কোন তুলনা হয়না,
পাখির উপর তার কাজ অসাধারন।
ইঞ্জা
খুব শখ করে বানিয়েছিলাম, ককাটেইল, লাভ বার্ড, বাজরিকা, ফিঞ্চ, মুনিয়া, কত কি যে পালতাম, এছাড়া কবুতরও অনেক পালতাম যাদের জন্য কবুতরের ঘর করে দিয়েছিলাম আর ময়নার কথা আর কি বলবো, সেতো ছিলো আমাদের জান।
জিসান শা ইকরাম
পাখি পালা একটি বড় ধরনের নেশা ইঞ্জা ভাই,
লাভ বার্ড আমিও কিছুদিন পেলেছি খাঁচায়, এরপর সব মুক্ত করে দিয়েছি।
রেহানা বীথি
বড় ভালো লাগলো লেখাটা।
জিসান শা ইকরাম
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার নতুন লেখা পড়তে চাই।
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
সুন্দর রচনাশৈলী
পড়ে অনেক ভালো লেগেছে –
চেষ্টা করি আপনাদে মত লিখতে কিন্তু সময় তা হতে দেয়নি।
ভালো থাকবেন ভাই শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
আপনি অনেক ভাল লেখেন,
কাব্য আমি পারিনা।
ধন্যবাদ আপনাকে,
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
ভাইয়া আমার যা কিছু অর্জন উপার্জন
তা কিন্তু আপনাদের থেকে শিখা।
শুভেচ্ছা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
আরো লেখুন এবং প্রচুর পড়ুন।