নব্য ক্যাডার (অণু গল্প)

নীলাঞ্জনা নীলা ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার, ০৯:৫৪:০৮পূর্বাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য
অঝোর বৃষ্টির রাত...
অঝোর বৃষ্টির রাত…

আকাশে মেঘবাহিনীর যেনো যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিচিত্র ধারায় ঝরে পড়ছে। একবার ঝমঝম করে, তো আরেকবার ঝিরঝির করে আবার টিপটিপ করে। শুধু কি তাই! বিদ্যুতবাহিনীও কম যায়না, একই গর্জনে আকাশ চৌঁচির করে দিচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় বাড়ীর বাইরে কি শখে যায় মানুষ? মৃত্যু আছেই, তা এমন আবহাওয়ায় কেন মরে মানুষ— বিড়বিড় করে বলছে তুষার। বাজেভাবে বলতে না চেয়েও বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে ‘ধুর শালা মরার আর দিন পেলোনা।’ অটো-সিএনজি তো দূরের কথা, একটা রিক্সার দেখাও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর মাথার উপরের ছাতা কি আর কাজ করে এমন বৃষ্টিতে! কি যে করবে এক হাটু জল। ভরা বৃষ্টি হলে এই শহর আর শহর থাকে না, হয়ে যায় গ্রাম। শহর তো শুধু অট্টালিকা, দামী গাড়ী আর আধুনিক প্রাচুর্যে। যারা মধ্যবিত্ত তাদের জন্য পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো শহর নেই। ‘ধুর! কতোক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায়?’ শহরের এ মাথা থেকে একেবারে অন্যদিকে যেতে হবে, হেঁটে যাওয়ার চিন্তা করলে রাত বারোটা বাজবে আর ততোক্ষণে লাশ অলরেডি জাহান্নামে পৌঁছেও যাবে। অবশ্য ওই লোকের কি আর বেহেস্ত নসিব হবে? হুর-পরী তো বেঁচে থাকতেই পেয়ে গিয়েছিলো। তুষার আজকের মতো এতো অসহায় অবস্থায় কখনোই পড়েনি। দেশকে ভালোবেসে ছাত্র রাজনীতিতে ঢুকে এখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া গতি নেই। দেশপ্রেমিক তুষার হয়ে গেছে সুবিধাভোগী দালাল। রাজনীতির পথ ওয়ান ওয়ে, একবার ঢুকলে আর বের হবার পথ নেই। আর যদি বের হবার ইচ্ছে জাগে, তাহলে নিথর দেহ হয়ে মাটিতে মিশে যেতে হবে। তুষার বাঁচতে চায়। পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড তাকে ছাড়া অচল। দুই বোনের বিয়ে, বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, আর মা কোনোভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। ভাবনাতে সুরসুরি দিয়ে সেলফোন লুঙ্গি ডেন্স গান গেয়ে উঠলো, ‘কিছুই তো পাচ্ছিনা, কিভাবে আসি বল? নেতাকে আর কতোক্ষণ রাখা হবে?’ সেলফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন কি জানি বলছে, আর তুষার শুধু হুম হুম বলে ঘাড় দোলাচ্ছে। ফোন কাট হয়ে গেলো। যথেষ্ট দেরী হয়ে যাচ্ছে। আজ যে করেই হোক হাসপাতালে যেতেই হবে। তুষারের ওখানে যাওয়াটা অনেক জরুরী। পার্টির দলনেতা আসবে, আজ উপস্থিত থাকতে পারলে দলে একটা শক্ত অবস্থান করে নেয়াটা কঠিন হবেনা। তা নইলে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তুষারকে পৌঁছাতেই হবে। অথচ এই নেতার জন্যেই দেশপ্রেমিক তুষারের মৃত্যু ঘটেছিলো। হঠাৎ দেখলো দূর থেকে একটা গাড়ী ছুটে আসছে, ওটাকে যে করেই হোক দাঁড় করাতেই হবে। কোমরে গুজে রাখা পিস্তলটা দেখলো ঠিক আছে কিনা! সোজা আঙুলে কখনো যে ঘি ওঠানো যায়না!

হ্যামিল্টন, কানাডা
২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং।

৫১৭জন ৫১৭জন
0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ