আকাশে মেঘবাহিনীর যেনো যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিচিত্র ধারায় ঝরে পড়ছে। একবার ঝমঝম করে, তো আরেকবার ঝিরঝির করে আবার টিপটিপ করে। শুধু কি তাই! বিদ্যুতবাহিনীও কম যায়না, একই গর্জনে আকাশ চৌঁচির করে দিচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় বাড়ীর বাইরে কি শখে যায় মানুষ? মৃত্যু আছেই, তা এমন আবহাওয়ায় কেন মরে মানুষ— বিড়বিড় করে বলছে তুষার। বাজেভাবে বলতে না চেয়েও বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে ‘ধুর শালা মরার আর দিন পেলোনা।’ অটো-সিএনজি তো দূরের কথা, একটা রিক্সার দেখাও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর মাথার উপরের ছাতা কি আর কাজ করে এমন বৃষ্টিতে! কি যে করবে এক হাটু জল। ভরা বৃষ্টি হলে এই শহর আর শহর থাকে না, হয়ে যায় গ্রাম। শহর তো শুধু অট্টালিকা, দামী গাড়ী আর আধুনিক প্রাচুর্যে। যারা মধ্যবিত্ত তাদের জন্য পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো শহর নেই। ‘ধুর! কতোক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায়?’ শহরের এ মাথা থেকে একেবারে অন্যদিকে যেতে হবে, হেঁটে যাওয়ার চিন্তা করলে রাত বারোটা বাজবে আর ততোক্ষণে লাশ অলরেডি জাহান্নামে পৌঁছেও যাবে। অবশ্য ওই লোকের কি আর বেহেস্ত নসিব হবে? হুর-পরী তো বেঁচে থাকতেই পেয়ে গিয়েছিলো। তুষার আজকের মতো এতো অসহায় অবস্থায় কখনোই পড়েনি। দেশকে ভালোবেসে ছাত্র রাজনীতিতে ঢুকে এখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া গতি নেই। দেশপ্রেমিক তুষার হয়ে গেছে সুবিধাভোগী দালাল। রাজনীতির পথ ওয়ান ওয়ে, একবার ঢুকলে আর বের হবার পথ নেই। আর যদি বের হবার ইচ্ছে জাগে, তাহলে নিথর দেহ হয়ে মাটিতে মিশে যেতে হবে। তুষার বাঁচতে চায়। পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড তাকে ছাড়া অচল। দুই বোনের বিয়ে, বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, আর মা কোনোভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। ভাবনাতে সুরসুরি দিয়ে সেলফোন লুঙ্গি ডেন্স গান গেয়ে উঠলো, ‘কিছুই তো পাচ্ছিনা, কিভাবে আসি বল? নেতাকে আর কতোক্ষণ রাখা হবে?’ সেলফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন কি জানি বলছে, আর তুষার শুধু হুম হুম বলে ঘাড় দোলাচ্ছে। ফোন কাট হয়ে গেলো। যথেষ্ট দেরী হয়ে যাচ্ছে। আজ যে করেই হোক হাসপাতালে যেতেই হবে। তুষারের ওখানে যাওয়াটা অনেক জরুরী। পার্টির দলনেতা আসবে, আজ উপস্থিত থাকতে পারলে দলে একটা শক্ত অবস্থান করে নেয়াটা কঠিন হবেনা। তা নইলে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তুষারকে পৌঁছাতেই হবে। অথচ এই নেতার জন্যেই দেশপ্রেমিক তুষারের মৃত্যু ঘটেছিলো। হঠাৎ দেখলো দূর থেকে একটা গাড়ী ছুটে আসছে, ওটাকে যে করেই হোক দাঁড় করাতেই হবে। কোমরে গুজে রাখা পিস্তলটা দেখলো ঠিক আছে কিনা! সোজা আঙুলে কখনো যে ঘি ওঠানো যায়না!
হ্যামিল্টন, কানাডা
২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং।
২০টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
এই হল বর্তমান রাজনীতির অবস্থা। ভাল থাকতে চাইলেও তা হয় না। তবে প্রথম দিকের বর্ননাটা অসাধারন লেগেছে। পুরোটা মিলে বেশ চমৎকার বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখাটির জন্ম কিন্তু আমার নিজের অপেক্ষা থেকে। ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থেকে লিখেছিলাম। তারপর সম্পাদনা করিনি। ওভাবেই দিয়েছি।
ধন্যবাদ গল্পটির পাশে থাকার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
অনু গল্প কি এই প্রথম পড়লাম তোর?
এত ছোট গল্পই তাহলে অনুগল্প 🙂
দেশ প্রেমীক তুষারদের মৃত্যু হয় বেঁচে থাকার যাতনায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা ভুলে গেছো। ফেসবুকে বহু আগে অণুগল্প লিখে পোষ্ট দিয়েছি। ২০০৯/’১০ সালের দিকে তো প্রচুর গল্প লিখে দিয়েছিলাম। তারপর চিঠি এরপরে পূর্ণাঙ্গ গল্প। নানা বুঝেছি তুমি আসলেই বুড়ো হয়ে গেছো। :p 😀
ভালো থেকো। জন্মদিনের শুভেচ্ছা। -{@
জিসান শা ইকরাম
বুড়া হইছিনা? জন্মদিনের কততম শুভেচ্ছা দিলি জানি? :p
আরো অনুগল্প দে সোনেলায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি কি জানি! তুমি তোমার জন্মের বছর কও আগে, আমি তারিখ বলমু। আর জনগণ বয়স। 😀
ছাইরাছ হেলাল
শুরুতেই মৃত্যু!!
যদিও বাস্তবতা গল্পটিতে ভালই ফুটে বেরুচ্ছে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
তাই তো! মৃত্যু তো আপনার প্রিয় বিষয়!!! 😀
তুষার অপেক্ষা করছিলো পরিবহনের, আর আমি ডাক্তারের। তুষার হলো ক্যাডার আর আমি রোগী। তফাৎটা এইটাই। 😀
মৌনতা রিতু
সত্যি রাজনীতির পথ হলো অনওয়ে। একবার ঢুকলে আর বের হবার পথ নেই।
বাঁকা আঙ্গুলে ঘি উঠাতে গেলে যে এমনি মৃত্যু হতে পারে।
বেঁচে থাকতে হুরপরি পেয়েছে! এদের কপাল তো ভালোই আপু।
শুভেচ্ছা নিও।
নীলাঞ্জনা নীলা
মৌনতা আপু আসলেই ওইসব নেতাদের কপাল খুবই ভালো। দেখোনা রাজাকারদের ফাঁসী হবার পর কবরে নাম লেখা হয় শহীদ অমুক।
এই তো আমাদের দেশে গো শান্ত-সুন্দরী।
ভালো থেকো মিষ্টি মেয়ে। -{@
ইঞ্জা
রাজনীতি হলো মরণের নীতি আর এই মরণটা হয় খুবই হৃদয় বিদারক, এযে ওয়ান ওয়ের গল্প, ভালো লেগেছে অনু গল্পটি। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া রাজার নীতি মানে রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা ইতিহাস থেকে কিছুই শেখে না। শিখলে সাধারণ জনগণের এমন দুর্গতি কি আজ আর হতো? তুষারদের জন্ম হতো না।
গল্পটির প্রতি আপনার ভালো লাগা অনুপ্রাণিত করবে আরোও লিখতে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
সহমত আপু সাথে ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
🙂 -{@
মোঃ মজিবর রহমান
সোজা আঙুলে কখনো যে ঘি ওঠানো যায়না!
এটাই বাস্তবতা।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
আবু খায়ের আনিছ
রাজনীতি ওয়ান ওয়ে, বেরুনোর উপায় নেই বেচেঁ থাকতে। আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতি দেশপ্রেমিক অনেক ছাত্রকে নোংরা ছাত্ররাজনীতিতে টেনে নিয়ে এই তুষারদের মত অবস্থা করছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া একসময় রাজনীতির মাঠে সঠিক নীতি বিরাজ করতো। আর এখন কোনো নীতি-ই নেই।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ্যাকসনধর্মী অনুগল্প।আচ্ছা দিদি হঠাৎ এমন সন্ত্রাসী টাইপের লেখা লিখলেন তার কারনতো কিছু একটা আছে।সুন্দর ধারা বর্ণনা। (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই কোনো কারণ নেই। আজকাল মাথার মধ্যে হাজারো কাহিনী জিলিপির মতো প্যাঁচিয়ে আছে। মাঝে-মধ্যে প্যাঁচ থেকে মুক্ত হয় কোনো কাহিনী, তখন লিখে ফেলি। এটাও এমন একটা।
আমার একটা বড়ো বাজে স্বভাব রোজ পত্রিকা না পড়লে পেট মোচড়াতে থাকে। 😀 আর পত্রিকা মানেই তো রাজনীতি-খুণ-হত্যা ইত্যাদি।
ভালো থাকুন মনির ভাই। -{@