বারশত-গোবাদিয়া সংযোগ সড়ক। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলীর লাশ কবর থেকে তুলে টেনেহিঁচড়ে এই সড়ক দিয়ে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার এই সড়কটি তাঁর নামে করার দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। সেই দাবি পূরণ হয়নি। নামকরণ হয় আবদুল গণি চৌধুরী সড়ক। এই গণি শহীদ রুস্তমের লাশ টেনেহিঁচড়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন বারশত ইউনিয়ন ‘শান্তি কমিটি’র চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়িতে ছিল রাজাকার ক্যাম্প। আর সড়কটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সাংসদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী।
আনোয়ারা: একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থের লেখক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কতভাবে বিকৃত ও কলঙ্কিত করা হয়েছে, এ ঘটনা তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এক রাত। বেতারে প্রচারিত হচ্ছিল ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। সেই রাতে সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ করেন সমুদ্র উপকূলীয় পশ্চিম আনোয়ারার রাজাকার ক্যাম্পগুলো। এই মুক্তিসেনা দলের একজন ছিলেন ২০-২১ বছরের তরুণ রুস্তম আলী। তাঁদের লক্ষ্য ছিলেন আবদুল গণি চৌধুরী ও আবদুল জলিল নামের দুই রাজাকার, যাঁরা তখন ওই এলাকায় হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতনসহ হেন কোনো দুষ্কর্ম নেই, যা করেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হলেও আবদুল গণি ও জলিল মাছ ধরার নৌযানে পালিয়ে যান। সেই রাতের অভিযান শেষে বারশত কালীবাড়ি এলাকার সুরমা পুকুর পাড় দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকা রাজাকারদের গুলিতে মারা যান রুস্তম। সহযোদ্ধারা সেই ঝড়বৃষ্টির রাতে রুস্তমকে পুকুরপাড়ে দাফন করে ফিরে যান ক্যাম্পে।
পরদিন খবর পেয়ে রাজাকার কমান্ডার জলিল ও গণির নেতৃত্বে স্থানীয় রাজাকাররা ছুটে আসেন সুরমা পুকুর পাড়ে। তাঁরা কবর খুঁড়ে বের করেন রুস্তমের লাশ। সেই লাশ দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যান প্রায় তিন মাইল দূরে মেরিন একাডেমির পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে। দীর্ঘ সড়কটিতে রুস্তমের লাশ রক্ত-কাদায় একাকার হয়ে গিয়েছিল। শোনা যায়, খোদ পাকিস্তানি মেজর এই বীভৎস দৃশ্য দেখে ভর্ৎসনা করেছিলেন রাজাকারদের। লাশটি পুনরায় একই স্থানে কবর দেওয়ার নির্দেশ ছিল তাঁর।
সুরমা পুকুর পাড়ে শহীদ রুস্তমের স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বারশত-গোবাদিয়া সড়কটি সংস্কার ও রুস্তমের নামে করার দাবিও তাঁরা জানিয়ে আসছিলেন। কোনো সরকারই তাঁদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আশান্বিত হয়েছিলেন সবাই। কিন্তু ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার সড়কটির নাম উল্লেখ করা হয় ‘আবদুল গণি চৌধুরী বারশত-গোবাদিয়া লিংক রোড’। এ খবরে প্রতিবাদ সভা, প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আখতারুজ্জামান চৌধুরী এই সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলে হতাশায় মুহ্যমান হয়ে পড়েন এই মুক্তিযোদ্ধারা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রশিদ আহমদ বলেন, ‘বাবু ভাইকে (আখতারুজ্জামান চৌধুরী) অনেক অনুনয় করে বলেছি, আপনি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে এভাবে বিকৃত করবেন না। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
বারশত-গোবাদিয়া লিংক রোডটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি। এখন সেই সড়কের নামফলকে উৎকীর্ণ হয়ে আছে একজন স্বাধীনতাবিরোধীর নাম।(সংবাদটি পত্রিকা থেকে হুবহু তুলে দেওয়া)।।
(সূত্রঃপ্রথম আলো,১৭ডিসেম্বর ,২০১৩ইং)
২২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
এখনই সরকার ও ঐ এলাকার জনসাধারনের নিকট জোর দাবী মানি না মানব না,
রাস্তার নাম করন পরিবরতন হোক।
নীলকন্ঠ জয়
একটাই দাবি রাস্তার নাম পরিবর্তন করা হোক। কোন রাজাকারের নাম বাংলার মাটিতে ঠাই পাবেনা।
লীলাবতী
ছি আখতারুজ্জামান বাবু , ধিক আপনার মানসিকতা । ঐ উদ্বোধনী ফলক ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলা উচিৎ এখন।
নীলকন্ঠ জয়
এই লোকটাকে গদাম দেওয়া হোক বাংলা থেকে।
মা মাটি দেশ
(y) খোজ নিলে জানা যাবে এ ভাবেই অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও নিয়েছেন
নীলকন্ঠ জয়
একদম ঠিক বলেছেন। সোজা কথা যারা বাংলাদেশে এই জঘন্য কাজগুলো করছে তাদের বাংলার মাটি থেকে বিদায় জানানো হোক।
জিসান শা ইকরাম
ঘটনা সত্য হলে বাবুর মুখে থুথু দিলাম ।
নীলকন্ঠ জয়
আমিও… 😀
মোঃ মজিবর রহমান
এই রকম আওয়ামিলীগ নেতার মুখে জুতামার।
নীলকন্ঠ জয়
তালে তালে জুতা মারা হোক।
বন্দনা কবীর
//পরদিন খবর পেয়ে রাজাকার কমান্ডার জলিল ও গণির নেতৃত্বে স্থানীয় রাজাকাররা ছুটে আসেন সুরমা পুকুর পাড়ে। তাঁরা কবর খুঁড়ে বের করেন রুস্তমের লাশ। সেই লাশ দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যান প্রায় তিন মাইল দূরে মেরিন একাডেমির পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে। দীর্ঘ সড়কটিতে রুস্তমের লাশ রক্ত-কাদায় একাকার হয়ে গিয়েছিল। শোনা যায়, খোদ পাকিস্তানি মেজর এই বীভৎস দৃশ্য দেখে ভর্ৎসনা করেছিলেন রাজাকারদের। লাশটি পুনরায় একই স্থানে কবর দেওয়ার নির্দেশ ছিল তাঁর।//
এই একটি মাত্র ঘটনা দিয়েও প্রমানিত হয় কতখানি ”হারামখোর, বেঈমান আর স্বার্থপর ছিল রাজাকার আলবদররা। ফাকিস্তানি সৈন্যদের বিভৎসতায় এদের উৎসাহের ঘি না পড়লে ৭১ এ বিভৎস ঘটনা অনেক কম ঘটতো । এই সব রাজাকারদের কেউ কি করে সাপোর্ট করতে পারে আমার মাথায় আসেনা।
আর সব তথ্য জানার পরেও একজন মুক্তিযোদ্ধা কি করে একজন রাজাকার প্রধানের নামে সড়ক উদ্বোধন করে?!
এদের প্রতি ঘৃনা জানাতেও ঘৃনা হয় :/
নীলকন্ঠ জয়
এরা বাঙালি নামের কলঙ্ক। এদের অচিরেই বিতাড়িত করা হোক।
ছন্নছাড়া
এটা লজ্জা আর এমন লজ্জা যে নিজেকেই বিশাস করা যায় না ……………।
এ ভাবে আর কতো অপমান করবো আমারা মুক্তিযোদ্ধা দের ……………… 🙁
নীলকন্ঠ জয়
যে কীট গুলো প্রশ্রয় দিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা লালন-পালন করেছে , সেই কীটগুলো ধ্বংস করার সময় এখন।
শুন্য শুন্যালয়
এই দেশে তো সবই সম্ভব এটা নয় কেনো? রাজাকার দের সাথে এক সাথে পায়েশ খাওয়া লোকদের মধ্যেও তো মুক্তিযোদ্ধা আছে। বাবুর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে থুঃ ।।
নীলকন্ঠ জয়
ঠিক বলেছেন। তবে ঐ সব পায়েস খাওয়া লোকগুলোর মুখে থুঃথুঃ ছুড়ে দিলাম।
মিথুন
এতো দেখছি মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক।
নীলকন্ঠ জয়
হুম ঠিক ধরেছেন। কুলাঙ্গার কিছু কুকুর এই কাজ করে যাচ্ছে।
ছাইরাছ হেলাল
ধিক্কার এ মান্যতাকে সহস্রবার ।
নীলকন্ঠ জয়
এই কুজাতগুলোর বিদায় দেওয়ার সময় এসেছে। বাঙালি গর্জে উঠুক আরেকবার।
বনলতা সেন
একরাশ থু থু এই ঘৃন্যতাকে ।
নীলকন্ঠ জয়
এইসব প্রেত্মাতাগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করার ব্যবস্থা করা উচিৎ। ধন্যবাদ।