তোমার চোখ এত লাল কেন?

জিসান শা ইকরাম ১২ জানুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ০২:৩৭:৩২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, রম্য ৪২ মন্তব্য

picsart_01-12-02-34-09

– তোমার চোখ এত লাল কেন?
* আমার ইউভিআইটিস হইছে,তাই লাল।
– ইউভিআইটিস কি? জীবনে এই প্রথম শুনলাম।
* তোমার জীবনের কথা বলেছ? আমার বাপ, দাদা, দাদার দাদার জীবনেও কেউ শোনেন নাই।
– চোখ লাল হবার কারণ বিশ্বাস করিনা।
* কেন?
– যা কোনদিন শুনি নাই তা বিশ্বাস করিনা।
* তাহলে আমার চোখ লাল কেন?
– তুমি মাল খাইছো, মাল খাইলে চোখ এমন লাল হয়।
* এছাড়া বুঝি চোখ লাল হতে পারেনা? মালের কথা বললে কেন? মাল আবুল আত্মীয় নাকি তোমার?
– আরে নাহ, বাঙালীদের ধন হলে থ্রী W তে আসক্ত হয়। লাল হবার আর কি কারণ থাকতে পারে?
* চোখে ময়লা ঢুকলে লাল হয়, পোকা ঢুকলে চোখ আচ্ছা মত ডলি প্রথমে, এতে লাল হয়। রাগে কটকট করলে রক্তচোখ হয়।
– ময়লা, পোকা ঢুকতে পারেনা তোমার চোখে কারণ তুমি চশমা/ সানগ্লাস ইউজাও। ব্যাক পেইনের কারণে তোমার মটরবাইক রাইড করা নিষেধ, জানি আমি, হু।
* আরে ধুর, সব জান্তা আইছে, রাগে এখন চোখ আরো লাল হইছে, গেলাম, বাই।
– আচ্ছা আচ্ছা যাও বাই, উচিৎ কথায় রাগ তো করবাই। এমন তো না যে মাল জীবনেও খাওনি।
**********************************
সদা সত্য কথা বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব নাঃ
হুম খেয়েছি মাল, সদা সত্য কথা বলিব। ২০০৩ এ চমৎকার এক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক তৈরী হয় বিএনপির একজন উপমন্ত্রীর সাথে। বীরউত্তম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর, ব্যারিস্টার। প্রচন্ড জামাত বিরোধীতার জন্য পূর্ন মন্ত্রী হতে পারেননি। নিজামি, সাইদি গংদের সামনা সামনি রাজাকার বলতেন। অত্যন্ত কড়া মেজাজের জন্য সবাই ভয় করতেন তাকে। যদিও আমার সাথে এমন ব্যবহার করেননি কখনো। ১৯৭১ এ তার অধীনে যে সব মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছেন, তাদের প্রতি গভীর মমতা ছিল তার। বড় ধরনের আর্থীক সহায়তা দিতেন তিনি তাঁদের। কমিটমেন্ট রক্ষায় তিনি ছিলেন আদর্শ, এবিষয়ে তার মত রাজনীতিবিদ আমি আর দেখিনি। ওস্তাদ ডাকেন সবাই তাঁকে।
লীগ পরিবারের একজন হওয়ায় বিএনপি ক্ষমতায় আসায় চরম ব্যবসায়ীক বিপর্যয়ে পরি আমি। অনেক ভেবে তার কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। পরিচিতজনদের মাধ্যমে বাসায় যাবার আমন্ত্রণ পাই এক রাতে। দেখা হবার পরে বসতে বললেন, একে একে দর্শনার্থীরা চলে গেলে থাকলাম ৫ জন। খুব সহজ ভাবে নিলেন আমাকে। একই জেলায় বাড়ি হওয়ায় চেনেন আমার ৪ মুক্তিযোদ্ধা ভাই সহ সবাইকে। কিছুক্ষন পরে অত্যন্ত সুদৃশ্য বোতল এবং গ্লাস আসলো। অল্প পরিমান গ্লাসে নিজে ঢেলে বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। কি করব বুঝতে পারছিলামনা। প্রশ্ন চোখে পুর্ব পরিচিত একজনের দিকে তাকালে উনি কানে কানে বললেন ‘ সবাইকে উনি অফার করেননা, এটি একধরনের অনার, আপনি না নিলে ওস্তাদকে অসম্মান করা হবে। ‘
অগত্যা কি আর করা, নিশ্বাস বন্ধ করে একবারে গলায় চালান করে দিলাম। কিছুই হলো না, বরং টেস্টি খুব। একবারে নিলাম দেখে ওস্তাদে বললেন ‘ তুমি খাওনি কোনদিন, একবারে নয়, এক পেগ নিতে হবে বেশ সময় নিয়ে।’ বীফ এর পাতলা স্লাইজ সহকারে সময় নিয়ে নিলাম ২য় পেগ। পরে জেনেছি যা দিয়ে শুরু করলাম তার একবোতল এর দাম ৩৫ হাজার টাকা মাত্র। এরপর মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে ডেকে নিতেন আমাকে। উনি নিয়মিত পরিমিত ভাবে ড্রিংক করতেন, এর উপকারিতা কি তা বলতেন। ওস্তাদের শারিরিক গঠন দেখলে অবাকই হতে হয়, মেদহীন এক স্লিম মানুষ তিনি।
একদিন একসাথে ড্রিংক করছি, সিগারেট খাচ্ছি তার সামনে থেকে বেড় হয়ে অন্য রুমে গিয়ে। জোড় গলায় ডাক দিলেন আমাকে নাম ধরে, সামনে আসলে বললেন ‘ ওই খাডাস মাল খাও একসাথে আর বিড়ি খাও দূরে গিয়া? মাল বড় না বিড়ি বড়?’ এরপর থেকে সামনেই সিগারেট খেতাম।
২০০৫ সনে একবার গেলাম থাইল্যান্ড। ফেরার সময় থাই এয়ারপোর্টের মধ্যে দেখি অনেক মাল এর দোকান। ওস্তাদকে ফোন দেই, ওস্তাদ কিছু লাগবে? বললেন ‘ হ, — এই ব্রান্ড লইয়া আয়। ‘ দোকানে দাম জেনে মুর্ছা খাবার অবস্থা আমার। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কি আর করি, ভ্যাট রিটার্নে যে বাথ পেয়েছি তা সব আর সহযাত্রী ৫ জনের কাছ থেকে নিয়ে কিনলাম এক বোতল।
১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের মাল নিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলাম। বেরসিক কাস্টমস এর এক কর্মকর্তা আটকে দিল। বোতল হাতে নিয়ে বললেন ‘ এত দামী মাল আপনি খান? লাইসেন্স আছে খাওয়ার?’ বললাম না ভাই আমি খাইনা, গিফট করবো একজনকে।’ তিনি বললেন ‘ এটি নিতে পারবেন না।’ প্লিজ পুলিজ বলে অনেক অনুরোধ করলাম, কাজ হলো না। অবশেষে কি আর করা, কল দিলাম ওস্তাদকে। সব শুনে বললেন ‘ মোবাইল দে ওই দোচনারে।’ অফিসারের হাতে মোবাইল দিলাম, তার মুখের আকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকলো। কিছুক্ষণ পরে তোতলান শুরু করলেন, সুধু স্যার স্যার স্যার শব্দ বেড় হচ্ছে। কথা শেষ করে মোবাইল আমার হাতে দিয়ে বললেন, ভাই আপনি আগে বলবেননা? মাল নিয়ে স্যার আমাকেই বাসায় যেতে বললেন, প্লিজ ভাই আমি যাব না, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, প্লিজ ভাই প্লিজ।’ জিজ্ঞেস করলাম ‘ ভাই ডোজ টা কি বেশী হয়ে গিয়েছে? আপনি না গেলে আমার খবর আছে।’ তিনি বললেন’ ভাই আপনি ম্যানেজ করবেন প্লিজ, আমি যেতে পারবো না। ‘ কি আর করা মাল ব্যাগে নিয়ে বেড় হয়ে আসলাম।
# ইহা একটি মাল বিষয়ক মাল মুক্ত আবোল তাবোল লেখা।

১২৪১জন ১২৩৮জন
0 Shares

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ