
কোলাহল সযত্নে এড়িয়ে নদী-মুখো পার্কের কোণ ঘেঁসে সে বসে আছে একাকীর বেঞ্চিতে,
আড়াল হারানো দৃশ্যমানতায়, ত্বরিৎ আলোর সীমায়। চুপচাপের নিবিষ্টতায়।
লোকারণ্যেও কাছ-দূর থেকে চোখ আঁটকে গেল!
বাহারী পিঠ-ঝোলা থেকে ফোন বের করে তুমুল মনোযোগে নদী-বুকের ছবি তুলে যাচ্ছে,
কুট্টি নৌকা থেকে জেলেদের যান, পেল্লায় জাহাজ থেকে ট্যাংকার কিছুই পার পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
মায়ের হাত ধরে ঘুরতে আসা হাঁটি হাঁটি করে বেড়ানো শিশুটি কী জানি কী ভেবে/মনে করে মায়ের হাত
ছেড়ে টলমল পায়ে কাছে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরে মুখ উঁচু করে উলু-বুল করে কী যেন বলছে/বলতে চাইছে,
বেঞ্চিতে উঠতে চাইছে, ওকে উঠিয়ে পাশে বসিয়ে দিল, ছবি তোলা বন্ধ করে, শিশুটি এবারে ঘসে ঘসে
একদম পাশে এসে গা লাগোয়া হয়ে বসে আছে, আনন্দ চিত্তে। উপহারের চকোলেট খাচ্ছে মুখ লেপ্টে।
শিশুটির মা, এই অপরিচিতাকে জ্বালাচ্ছে মনে করে খানিক অপ্রস্তুত হতে হতে কাছে এসে নিজ জিম্মায়
নিতে চাওয়ায় বিপত্তি ঘটে গেল, বিকট চিৎকারে, এবারে ধরে বসে আছে, কিছুতেই সে তাঁকে ছেড়ে যাবে না।
এখন ই যেতে হবে না বুঝতে পেরে কুট কুট করে কী যেন বলছে বলে মনে হচ্ছে।
ছবি তোলার বিরতি নিয়ে, ব্যাগ থেকে বের হয়ে এলো ছবি আকার ছোট্ট খাতা, শুরু হলো কী সব
আঁকাআঁকি, এঁকে যাচ্ছে এঁকে যাচ্ছে;
এই দঙ্গলে সাত-আট জনের ছোটদের একটি দল ঘিরে দাঁড়িয়ে গভীর-মনে দেখছে দেখছে, এবারে প্রত্যেকে
কাগজ বা খাতা এগিয়ে দিচ্ছে, তাদের ও কিছু না কিছু এঁকে দিতে হবে! বিরক্তি ছাড়াই শুরু হলো ম্যারাথন
ছোট ছোট আঁক, নির্বিকার ভঙ্গিতে।
এবারে একটু বড় চার/পাঁচটি মেয়ে দূর থেকে দেখে কিছু একটি আবিস্কার করে ফেলেছে আরাধ্য কোন কিছু
এমন করে আঙুল উঁচিয়ে এঁকে অপরকে দেখাচ্ছে, ঔ ঐ ঐঐঐ…………………
কে কার আগে পৌঁছুবে এই প্রতিযোগিতায় দে ছুট, সম্ভ্রমপূর্ণ ভালবাসার অনুসরণে ছুটে গিয়ে ঘিরে দাঁড়ালো।আপুউউউউউউউউউ…………………… তুমি এখানে, এইখানে বসে কী করছো! সে শুধু ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতে তাকাতে ই কে কোথায় তাকে ধরবে এই নিয়ে হাল্কা ধাক্কাধাক্কি, কেউ হাত কেউ বাহু কেউ গলা কেউ কাঁধ…
এবার সবাইকে খাওয়ানো, চটপটি ফুচকা আইসক্রিম উৎসব।
কলম সহ অনিন্দ সুন্দর রাইটিং প্যাড ও একটি ছোট্ট বই বেড়িয়ে এলো!
তার সমবয়সী দু’জন হেঁটে যাচ্ছিল, একেবারে ছানাবড়া চোখে উত্তাল আনন্দ, ঠোঁটে হাত ঠেকিয়ে
নিঃশব্দতার ইঙ্গিতে পা টিপে টিপে পেছন থেকে চোখ-চাপা একজন, অন্যজন বমাল জড়িয়ে ধরা, কষে।
জীবন্ত চাঁদ-ঋতু উষ্ণতার শান্ত কোলাহলে ঝকঝকে হৃদয় আলোর আনন্দ উত্তোলিত বিচ্ছুরণ, বাতাসে ভেসে যাওয়া হাওয়ারা যেন থমকে দাঁড়ালো, বৃন্দ গানের উচ্ছলতায়;
দীর্ঘ দিনের না দেখা চুলের দৈর্ঘ্য এখন এবারে মাটি ছুঁয়েছে কী-না তার ও পরীক্ষা! প্রবল আপত্তির মুখে।কলকল ছল ছল, যেন বহু যুগের না দেখাকে দেখা। এবারে আবার খাওয়া দাওয়ার দস্তুর মত ঝড়। সেলফি বন্যা।
গাড়ীর হর্নে থমকে গেল সব কিছু, বিউগলের সুরে সুরে।
এতক্ষণ ধরে দেখে দেখে অবাক বিস্ময়ে মেয়েটিকে বাক প্রতিবন্ধী বলেই মনে হচ্ছিল। নাহ্! ভুল, বড্ড ভুল।
বি-শূন্য নীরবতা ভাঙ্গল ভেসে আসা একটি ডাকে, “ আব্বু বৃষ্টি এসে গেল তো”
১০টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
অন্যরকম স্বাদ পেলাম কবি হেলাল দা ভাল থাকবেন
হালিমা আক্তার
কথা না বলা মেয়েটি নিরবতা ভাঙ্গল অবশেষে। নিরবতা অনেক সময় অনেক ভালো কিছু উপহার দেয়। আপনার প্রতিটি লেখাই অসাধারণ। শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
নিরব নিরবতা অনেক সময় ই অনেক কথা বলে দেয়।
শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ দিচ্ছি।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অতুলণীয় বর্ণনায় সুন্দর কাব্যিক নিবেদন।
বেশ হৃদয়গ্রাহী ক্রমান্বয় পঙক্তি!
মুগ্ধতা ও শুভ কামনা রাখলাম অশেষ পাতায়।
ছাইরাছ হেলাল
পড়ার জন্য আপনাকেই শুভেচ্ছায় রাখছি।
ধন্যবাদ।
বন্যা লিপি
কোনো দেখা দৃশ্যের গল্প। স্পষ্ট দেখতে পেলাম জেনো। কেমন আছেন এখন? অনেকদিন দেখা হয়না আপনার! অভাব বোধ হয় এ তল্লাটে।
ছাইরাছ হেলাল
হ্যা, দৃশ্যগুলোর সামান্য বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা নিয়েছি।
এই তো হাজিরা দিলাম, অভাব বিদেয় করে, ভাল থাকবেন আপনি।
সাবিনা ইয়াসমিন
মেয়েটি বহুদিন পরে ফিরেছে তার অদুর-চেনা জগতে। কিন্তু যে জগৎ তাকে চেনে তার মাঝে নির্বাক থাকার উপায় ছিলো কী!
ধুর, বেরসিক বৃষ্টি এসে সব বরবাদ করে দিলো। বৃষ্টিটা না এলে পিতৃচোখে আরও কত-কী ধরা দিতো। আর আমরা আরেকটু বাড়িয়ে চড়িয়ে একান্ত অনুভূতির গল্প পড়তাম।
ছাইরাছ হেলাল
শুনুন, ঘটনা কিন্তু অনেকখানিই সত্য, অপটু বর্ণনায় কতটুকুই বা বলা যায়, বলতে পেরেছি।
আপনি মন দিয়েই পড়েন, সব সময়।
ভাল থাকুন।