হরি /ছোঁয়া ছুয়ি
গ্রামের দামাল ছেলেদের সাতার শেখা ও পুকুরে মাছের মত ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবা ডুবি করে গোসল করা এ এক নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজ। তবে তা কিন্তু শুধু গরমের সময়। শীতে এই পানি পোকাদের পুকুরে তো দেখাই ভার। তখন সপ্তাহে ২-৩ দিন কোন রকমে পুকুরে নামা আর উঠা। ঠাণ্ডা জলে গোসল করে পুকুর পাড়েই আগুন জ্বালিয়ে গা গরম করে নেওয়া এ এক চিরায়ত গ্রামের দৃশ্য।
গরম কালে স্কুলে যাবার আগে দল বেঁধে পুকুরে গোসল করতে যাওয়া স্কুল পড়ুয়াদের নিত্য কাজ। আর পুকুরে নামলে আর উঠার নাম করতে চায় না পলাপানেরা। আর সেই আনন্দের ডবাডুবিতে আরও আনন্দ আনতে তাদের মাঝে চলে হরি/ ছোয়া ছুয়ি খেলা। এই খেলাটি স্থান ভেদে নানা নামে পরিচিত। আউডডোর খেলা হিসেবে গ্রামের পিচ্চি ছেলে মেয়েদের নিকট খুব প্রিয়।
@খেলোয়াড় সংখ্যা: ৫/৭জন হলে ভাল হয়।
@খেলার ঋতু: গ্রীষ্ম ও বর্ষা
@খেলার সময়: সকাল–বিকাল (গোসলের সময়)
@খেলার স্থান: পুকুর, বিল, জলাশয়, নদী।
@খেলার প্রকৃতি: মূলত সাঁতার চর্চা ও ব্যক্তিগত জলনৈপুণ্য প্রদর্শন।
>>খেলার নিয়ম কানুন<<
@প্রথম নিয়মঃ পুকুরেগোসলকরতেনেমেএখেলাখেলাহয়।স্বাক্ষীবেটে
একজন চোর/গাই নির্ধারণ করা হয়। এই জন্য প্রথমে বৃদ্ধা আঙ্গুল ও তর্জনী আঙ্গুল এর সাহায্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানিতে ( ক্যারাম খেলার মত আমরা যে ভাবে স্টাইক মারি সেই ভাবে তর্জনী আঙ্গুল কে পানিতে মারতে হয়। এতে এক ধরনের টুপ শব্দ হয়। ) মেরে শব্দ তৈরি করতে হবে। যার শব্দ হবে না সেই চোর । এক সাথে দুই জন বা তিন জনের শব্দ না হলে তাদের মধ্যে আবার হয় উক্ত পরীক্ষা।
এবার চোরকে একটু দূরে রেখে বাকি সবায় “হরি”বলে, ডুবদিয়েজলের
মাঝেলুকিয়েপড়বেএবংসাঁতারকেটেকেটেনিরাপদদূরত্বেঅবস্থাননিতে চেষ্টা করবে। আর চোরও তাদের যে কোন একজনকে ছুয়ে দেবার/ধরার জন্য ডুব দিয়ে বা সাঁতার দিয়ে এগিয়ে যাবে। কেও কেও খুব দক্ষতার সঙ্গে ডুব সাঁতার দিয়ে চোরের ঠিক পিছনে ভেসে উঠে চোরকে প্রলুব্ধ করে— বলে নে ছুয়ে দে,চোর যেমনি তাকে ছুয়ে দিতে চায় তেমনি সে আবার ডুব দিয়ে অন্য জায়গায় ভেসে উঠে। এ ভাবে এই খেলায় যেমন কিছু টেকনিক ও বুদ্ধিদিপ্ত কাজের ফল তেমনি ভাল সাতারু হয়ে উঠার ট্রেনিংও। তেমনি চোর তার উপস্থিতবুদ্ধি, সাঁতারের
দক্ষতা, গতিওকৌশলকেকাজে লাগিয়ে অন্যজনকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে ।চোর যতক্ষণ না অন্য কাওকে ছুয়ে দিতে পারছে ততক্ষণ খেলে চলবে।
@সতর্কতাঃ তবে সতর্কতা পুকুর পাড়ে উঠা যাবে না, বা খুব বড় পুকুর হলে মাঝ পুকুরের ওপারে যাওয়া যাবে না। পাড়ে উঠলে কিংবা মাঝ পুকুর পার হলেই সে চোর হবে বর্তমান চোরের জায়গায়।
চোর কাওকে ছুয়ে দিলে/ ধরে ফেললে আবার ঠিক প্রথম থেকে খেলে শুরু হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সময় থাকে বা বড় কেও পুকুরে এসে ধমক না দেয় উঠে যাবার জন্য।
@ দ্বিতীয় নিয়মঃ অনেক এলাকায় আবার এই খেলা নিচের পদ্ধতিতে খেলা হয়ে থাকে। প্রথমে ঠিক আগের পদ্ধতিতে একজন কে নির্বাচিত করা হয়। যাকে বলা হয় জলরাজ। কারন এবার খেলার ধরন ঠিক উল্টা। এবার চোর বা জলরাজকে উল্টো ছুঁতে হয়।এই পদ্ধতিতে জলরাজ হরি দিয়ে পালায় আর অন্য সবাই তাকে ছুঁতে চায়।
একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে জলরাজ হরি বলে ডুব দিয়ে পালাতে থাকে আর সঙ্গীখেলোয়াড়রা তাকেধাওয়াকরেছুঁয়েদেয়ারচেষ্টা করতে পিছু নেয়।
ধাওয়া খেয়ে রাজা পানি ছেড়ে শুকনা পাড়ে উঠে পড়লে সে হবে ডিসকলিফাই।এমিশনে সে এক জনের হাতে অথবা সকলের হাতে ধরাপড়লে তার রাজত্ব শেষ হবে।অর্থাৎ যে কেও জলরাজকে ছুয়ে দিলে খেলা শেষ।ধরার মিশনের নায়ক বা প্রথমে যে জলরাজকে প্রথমে ছুয়ে দেবে সেহবে পরবর্তী জলরাজ।এভাবে একের পর এক জলরাজ বদল হতে থাকবে।দক্ষতার প্রমাণ রেখে একজনই বারবার জলরাজ হতে পারবে।হরি খেলা মূলত শারীরীক কসরৎ চাতুর্য ও দমের খেলা।খেলোয়াড়কে সাঁতারে অবশ্যই পটু হতে হবে।খেলোয়াড়রা তাদের উপস্থিত বুদ্ধি, সাঁতারের দক্ষতা, গতি ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে রাজাকে অনুসরণ করবে এবং এক সময় ধরে ফেলে নতুন রাজা হবার আনন্দ প্রকাশ করবেএবং “হরি” বলে সে নতুন ভাবে খেলা শুরু করবে।
@বিপদ সংকেতঃ সাঁতার না জেনে এ খেলায় অংশ নেয়া উচিৎ নয়।
৫টি মন্তব্য
পুষ্পবতী
এই খেলাটা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না।
নতুন কিছু জানলাম।
ধন্যবাদ ভাইয়া। -{@
খসড়া
নতুন জানলাম, অনেকটা এভাবেই আমরা ডাঙ্গায় কুমির কুমির খেলতাম। কাল্পোনিক পুকুরে কুমির থাক্তো।
স্বপ্ন নীলা
দারুন তো
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম ছেলে বেলার দূরন্ত পনা
মরুভূমির জলদস্যু
ওরেএএ্এএএ আমি তো সাঁতারই জানিনা। :Cry-Out: