গোল কাঠের মাপের সকল সূত্র
লেখাটি মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক, তবে এই হিসাবটি সাধারণ মানুষদেরও কাজে আসতে পারে৷
তাই শিখে রাখলে ক্ষতি নাই৷
বিভিন্ন সময় দরজা, জানালা, খাট, বা কাঠের কাজ করতে হলে কাঠ স মিল থেকে কিনতে হয়৷
হিসাব জানা থাকলে ঠকবার সম্ভাবনা কম থাকে তাই হিসাবটা জেনে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ৷
কাঠের পরিমান বের করার প্রচলিত এবং গানিতিক সুত্র দুইটা নিয়েই এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে৷
একটু সময় নিয়ে পড়লে আপনিও হিসাবটা ভালোমতো বুঝতে পারবেন৷
যেহেতু হিসাবের ব্যাপার স্যাপার তাই লেখাটি একটু কাঠখোট্টা লাগতে পারে৷
তবে চলুন শুরু করি৷
গোল কাঠের সিএফটি, বা গাছের সিএফটি বের করা নিয়ে অনেকের ভিন্নমত আছে
বাজারে প্রচলিত
ইঞ্চি × ইঞ্চি × ফিট ÷ ২৩০৪
এই সুত্রের কোনটা কোথা থেকে আসলো?
বা গানিতিক ভাবে
πr^2×h
সুত্রে বাজারের প্রচলিত মাপের সাথে মেলে না কেন?
তবে চলুন সরাসরি চলে যাই মূল বিষয়ে৷
ইংরেজ সার্ভেয়ার এডওয়ার্ড হপ্পাস 1736 সালে তার ব্যবহারিক গণনার ম্যানুয়ালটিতে এই পরিমাপটি প্রবর্তন করেছিলেন।
তো এই হপ্পাস সাহেব মনে করতেন প্রসেসিংয়ের পরে কোন বৃত্তাকার লগের ভলিউম কতটুকু ব্যবহারযোগ্য কাঠ হবে তা অনুমান করার জন্য৷ লগটিকে গোলাকার থেকে বর্গাকার আকৃতি কল্পনা করতে হবে৷ এবং এই আকৃতি পরিবর্তনের জন্য কিছু কাঠের অপচয় ধরে নিতে হবে৷
ওনার মতে
অপচয় ২১.৫% এবং ব্যাবহার উপযোগী কাঠ পাওয়া যাবে ৭৮.৫%
আমরা যদি সরাসরি ওনার সুত্র ব্যাবহার করি তাহলে অপচয় বাদ দিয়ে ব্যাবহার উপযোগী কাঠের পরিমান সহজেই বের করতে পারবো৷
আর যদি আমাদের প্রচলিত নিয়মে
πr^2×h = আয়তন
এই সুত্র ব্যবহার করি তাহলে প্রাপ্ত আয়তন থেকে ২১.৫ % বাদ দিতে হবে বা সর্বোমোট আয়তনের ৭৮.৫% ধরতে হবে তাহলে, ব্যাবহার উপযোগী নিট কাঠের আয়তন জানা যাবে৷
এখন আমরা বাজারে বহুল প্রচলিত সুত্র গুলোকে নিয়ে আলোচনা করবো৷
কাঠের আয়তন বের করতে হপ্পাস সাহেবের সুত্রটা কি ছিলো?
Formula
V = (G ÷ 4)² * L ÷ 144
যেখানে,
V = volume in Hoppus feet
G = girth measured mid point of the log in inches ( গাছের মাঝ বরাবর অংশের পরিধি)
L = length of log in feet ( গাছ বা লগের দৈর্ঘ্য)
আমাদের দেশে প্রচলিত সুত্র দুইটা কিন্তু এই সুত্র থেকেই আসছে৷
সুত্র ১ = {(পরিধি × পরিধি) ফিটে × দৈর্ঘ্য (ফিটে)} ÷ ১৬ = সিএফটি
সুত্র ২ = {(পরিধি × পরিধি) ইঞ্চিতে × দৈর্ঘ্য (ফিটে)} ÷ ২৩০৪ = সিএফটি
সুত্র ১
এই সুত্রটা হপ্পাসের সুত্র থেকে সরাসরি আসছে ৪ এর স্কয়ার করলে ১৬, আর ১৪৪ দিয়ে ভাগ করা হয়নি কারন সরাসরি ফিটে পরিধির মাপ লেখা হয়েছে৷
সুত্র ২
সুত্র ২ সুত্র ১ থেকে আসছে, এখানে পরিধি ইঞ্চিতে লেখার কারনে শেষে ১৬×(১২×১২)= ২৩০৪ দিয়ে ভাগ দিতে হয়েছে৷
সুত্র ২ সবচেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার কারন এটায় হিসাব সহজ এবং দ্রুত করা যায়৷ হিসাবও নির্ভুল আসে৷
সুত্র ১ কম জনপ্রিয় হওয়ার কারন এটায় ফিটে লিখতে হয়, গাছের পরিধি ইঞ্চিতে পরিমাপ করা সহজ৷ তবে এই ইঞ্চি কে ফিটে নিতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই সুুত্র ২ বেশী প্রচলিত এবং জনপ্রিয়৷
এখন আমরা দুইটা সুত্র উদাহরণসহ চেক করবো৷
প্রশ্ন
লগের পরিধি ৬০” লগ দৈর্ঘ্য = ৮ ফুট৷
সুত্র ২ অনুসারে
৬০×৬০×৮÷২৩০৪= ১২.৫ সিএফটি
প্রচলিত গানিতিক সুত্র অনুসারে
πr^2×h
এখানে r= 9.549″ বা ( 0.79575 ‘)
[ r এর মান বের করতে 2πr সুত্রটি ব্যাবহার করা হয়েছে ]
এখন উপরের সু্ত্র অনুসারে
πr^2×h
22/7×(0.79575)^2×8
= 15.914 × 78.5% ( হপ্পাস এর সুুত্র অনুসারে)
= 12.492 সিএফটি৷
আশাকরি সবাই বুঝতে পেরেছেন৷
কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন৷
ধন্যবাদ সবাইকে৷
রেফারেন্স লিংক
২১টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
আদাব দাদা।কেমন আছেন? বহু দিন পর এলেন প্রিয় সোনেলায়। আপাত লেখাটি প্রিয়তে রাখলাম।যারা এ কাজের সাথে জড়িত তাদের জন্য বেশ উপকৃত পোষ্ট। ধন্যবাদ দাদা প্রোফাইল ছবিটা একটু দিয়ে দিয়েন। আপনার এবং আপনার পুরো পরিবারের জন্য রইল শুভ কামনা।
সঞ্জয় কুমার
মনির ভাই শুভেচ্ছা নিবেন৷
ইদানিং ব্যাস্ততা অনেক, তাই ভার্চুয়াল জগতে সময় কম দিতে পারছি৷
ছবি আপডেট করে নিবো৷
তবে নিয়মিত লিখলে এই ধরনের কাঠখোট্টা লেখা আপনাদের সহ্য করতে হবে৷ 😀
মনির হোসেন মমি
কি যে কন ভাই আপনার লেখাগুলোই হল জীবন বিত্তিক।আর আমরা লেখি কল্পনায় ভাসা নীলপরী। ধন্যবাদ লিখুন ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
অনেক দিন পর এলেন, দারুন একটি পোস্ট নিয়ে।
মোঃ মজিবর রহমান
জানার আছে অনেক বাস্তবতায় জানলাম শুভেচ্ছা সঞ্জয় দা।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ মজিবর ভাই৷
মোঃ মজিবর রহমান
🇧🇩
হালিম নজরুল
বড়ভাই কাঠব্যবসায়ী বলে ছোটবেলায় হিসাব শিখেছিলাম। আজ ঝালাই হল।
সঞ্জয় কুমার
নজরুল ভাই, কাঠের হিসাব করতে গিয়ে ঐ ২৩০৪ কোথা থেকে আসলো, এর সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়েই এই লেখার জন্ম৷
অনেক লোক কে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাইনি৷
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
সাবিনা ইয়াসমিন
সোনেলার বর্তমান সময়ে আপনাকে স্বাগতম দাদা।
ব্লগে অনেকদিন পরে ফিরলেও আপনি সোনেলার সাথে থাকেন সব সময়, আপনার উপস্থিতি আমরা গ্রুপে অনেকবার দেখেছি। আশা করছি এবার নিয়মিত লিখবেন।
অনেক ভালো থাকুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
★ প্রোপিক এড করে দিন প্লিজ 🙂
সঞ্জয় কুমার
প্রোপিক আপডেট করে নিবো৷
তবে কাঠখোট্টা টাইপ লেখা কিন্তু চলবে 😁
এস.জেড বাবু
বাহ্
বিস্তারিত তথ্যে চমৎকার পোষ্ট
অভিনন্দন
সঞ্জয় কুমার
অনেক ধন্যবাদ
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার পোস্ট
এ যেনো সত্যিই কাঠখোট্টা টাইপের
তবে বেশ উপকারী
ধন্যবাদ অশেষ
সঞ্জয় কুমার
আসলে লেখাটায় সাহিত্যের রস একদম নেই বললেই চলে,
কাঠের হিসাব কাঠের মতই কাঠখোট্টা৷
অনেক ধন্যবাদ৷
ছাইরাছ হেলাল
বহুদিন পর হলেও সুন্দর অ প্রয়োজনিয় বিষয় নিয়ে এসেছেন,
ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
আসলেই সুন্দর অ প্রয়োজনীয়, বিষয়৷ 😀
আপনাকেও ধন্যবাদ৷
জিসান শা ইকরাম
ইঞ্জিনিয়ার এবং ঠিকাদারদের কাজে লাগবে।
স্ব মিলেই সাধারণত গোলাকার কাঠের হিসেবে করা হয়, কাঠের দৈর্ঘ্যে ইঞ্চি হিসেবে করা হয় না। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চিকে ধরা হয় ৬ ফুট। এরপর গাছে যদি বাকল থাকে তবে গাছের পরিধি যত ফুট, তত ইঞ্চি বাকল বাদ দিয়ে গাছের পরিধি ধরা হয়। এরপর ছোট একটা বইতে সব দেয়া থাকে দৈর্ঘ্য এবং পরিধি কত হলে কত ঘনফুট কাঠ হবে এটিতে।
সাধারণত হিসেবে করা হয় গোল গাছ যতটা হবে সাইজ হবে তার চারভাগের তিন ভাগ।
ভালো পোষ্ট।
শুভ কামনা।
সঞ্জয় কুমার
ঠিক বলেছেন এই লেখা ইঞ্জিনিয়ার এবং ঠিকাদারদের বেশী কাজে লাগবে৷ঢাকা গাজিপুরের বেশীরভাগ স মিলে উপরের সিস্টেমে কাঠ হিসাব করে৷
সহজে হিসাবের জন্য আমি একটা এক্সেল ফাইল বানিয়ে নিয়েছি, যেন দ্রুত সবং সহজে কাজটা করা যায়৷
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার পোষ্ট দাদা ,
প্রয়োজনিয় বিষয় তথ্য।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ দাদা৷