
বাঙালি সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ট থেকে দশম দিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা।
একে বলা হয় দেবীপক্ষ। আর এ দেবীপক্ষের সূচনা হয় মহালয়া দিয়ে।
দুর্গাষষ্টী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী মোট এই পাঁচ দিন চলে পূজার আয়োজন। তবে আশ্বিন মাস মলমাস থাকায় এইবার কার্তিক মাসে পূজা হচ্ছে। কেননা ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে এ মলমাস বিশেষ করে পূজার্চনা করা হয় না। তাই এবার শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে হেমন্তে।
সনাতন হিন্দুরা বিভিন্ন শক্তির পূজারী।
তাই অসুর নিধনে রামচন্দ্র দেবী দুর্গাকে অকাল বোধনে আহ্বান করেছিলেন।
শরতের মহালয়া তিথিতে মহিষাসুর মর্দিনীকে বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা।
আসুন আজ জানি কে এই অসুরবিনাশিনী, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা।
অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বীই জানেন না যে, আমাদের আরাধ্যা জগন্মাতা দেবী দুর্গার প্রকৃত রূপ কেমন।
কেন তাঁকে দশভুজা বলা হয়।
আজকাল দেবী প্রতিমা অনেকের কাছে মনোরঞ্জনের বিষয়বস্তু এবং আধুনিক শিল্পকলা প্রকাশের অশ্লীল প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।
দুর্গাপুজো এখন “দুর্গাপুজো”তে নেই, “দুর্গোৎসবে” পরিণত হয়েছে!
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্য থেকে অনেকটাই উঠে যাচ্ছে ধর্মচর্চা। বরং প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের থেকে ধর্মাচারের সাথে অশালীন আচরণের মিশ্রণ দেখতে দেখতে তৃতীয় প্রজন্ম সেইগুলোকেই ধর্মাচার মনে করে বেড়ে উঠছে।
কিন্তু আমাদের জানা উচিত এবং জানানো উচিত যে, যখন “পূজো” বলা হবে, তখন এর সাথে নিশ্চয়ই থাকবে শাস্ত্রীয় নিয়ম আর নির্দিষ্ট মন্ত্রের অনুসরণ, যা সর্বদাই অপরিবর্তনীয়।
দেবী দুর্গা অনন্ত অসীম।
এই অসীমকে ভক্তির বাঁধনে অর্চনা করার জন্য চাই তাঁর রূপের কল্পনা, যাঁকে শাস্ত্রে বলা হয় “ধ্যান”। আসুন আজ দেখি শাস্ত্রে দেবী দুর্গার ধ্যানের বর্ণনা –
ওঁ কাত্যায়নীং প্রবক্ষ্যামি রূপং দশভুজাত্মকাং।
হ্রীং জটাজুটসমাযুক্তাং অর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয় সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্।।
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
(তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।)
নবযৌবন সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ ভূষিতাম্।।
সূচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দ্দিনীম্।।
মৃণালায়াত সংস্পর্শ দশবাহুসমন্বিতাম্।
ত্রিশুলং দক্ষিণেধ্যায়েৎ খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ।।
তীক্ষ্ণবাণং তথাশক্তিং দক্ষিণেন বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশং অঙ্কুশমেবচ।।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্থান্মহিষং তদ্বদ্ধিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ।।
শিরোশ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়্গপাণিনম্।
হৃদিশূলেন নির্ভিন্নং নির্য্যদন্ত্রবিভূষিতম্।।
রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটিভীষণাননম্।।
সপাশবামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধিরবক্ত্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিদূর্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।
স্তুয়মানঞ্চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকাম ফলপ্রদাং।।
উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডগ্রা চণ্ডনায়িকা।
চণ্ডাচণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা।।
অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততঃ পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাম্।।
বঙ্গানুবাদ:
কাত্যায়ন ঋষির কন্যা দশভুজা দেবী দুর্গার রূপের বর্ণনা এইরূপ-
দেবীর মাথায় জটা, অর্ধচন্দ্রের মত কপাল।
পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ, অতসীফুলের মত (তপ্ত স্বর্ণের মত) তাঁর গায়ের রঙ। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্তা এবং তাঁর সর্বাঙ্গ নানারকম অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত। তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, বক্ষদেশ উন্নত।
তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্য নিধন করছেন। পদ্মফুলের বোঁটার মত তাঁর দশটি হাতে রয়েছে নানারকম অস্ত্র। ডানদিকের উপরের হাতে আছে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়ে খর্গ এবং চক্র। ডানদিকের সর্বনিম্ন দুই হাতে আছে ধারালো তীর এবং বর্শা।
দেবীর বাম দিকের সবচেয়ে নিচের হাতে আছে ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। এর উপরের হাতে আছে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)।
দেবীর পায়ের কাছে মহিষাসুরের মাথার অবস্থান। মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিষাসুরের দেহ অর্ধেক বেরিয়ে এসেছে, হাতে তাঁর খর্গ এবং বুকে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ। তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ অসুরের দেহকে বেষ্টিত করেছে। তবে উত্থিত ভ্রূ’তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর।
দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা তাঁর বাহন সিংহের উপরে এবং বাম পা সামান্য উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থিত।
প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন।
নবদুর্গা ( দেবনাগরী: ) বলতে আভিধানিক ভাবে দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপের নয়টি রূপকে বোঝানো হয় হিন্দু পুরাণ অনুসারে এগুলো দেবী পার্বতীর নয়টি ভিন্ন রূপ ৷
এই নয় রূপ হল যথাক্রমে – শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী ৷
উপনিষদে আছে, দেবী পার্বতী মহাশক্তির আধার। সব দেবতা দেবী পার্বতীর শক্তির মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবনত মস্তকে স্বীকার করেন যে ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবসহ সব দেবতা পার্বতীর শক্তিতে বলীয়ান।
১) ব্রহ্মচারিণী : দেবী দুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী, দেবী ব্রহ্মচারিণীর মূর্তি খুবই চাকচিক্যমণ্ডিত। দেবীর ডান হস্তে পদ্মফুল, বামহস্তে কমণ্ডলু। দেবী ব্রহ্মচারিণী আনন্দময়ী, সুখের আধার। দেবী ব্রহ্মচারিণী তার পূর্বজন্মে ছিলেন হিমালয় কন্যা দেবী পার্বতী-হেমবতী।
২) চন্দ্রঘণ্টা : দেবী দুর্গার তৃতীয় রূপ হচ্ছে চন্দ্রঘণ্টা। তার কপালে অর্ধাকৃতি চন্দ্র শোভা পায়। দেবী চন্দ্রঘণ্টা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং মোহময়ী। গাত্রবর্ণ স্বর্ণোজ্জ্বল, ত্রিনয়নী দেবী চন্দ্রঘণ্টার দশ হাত।
৩) কুশমণ্ডা : দেবী দুর্গার চতুর্থ রূপ কুশমণ্ডা। দেবী কুশমণ্ডা অমিত শক্তির অধিকারী, তার মৃদু হাসির রেশে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেবী কুশমণ্ডার আট হাত, আট হাতের সাতটি হাতে শত্রুনিধন মারণাস্ত্র শোভা পায়, ডান পাশের এক হাতে ধরা থাকে পদ্মফুল। দেবী কুশমণ্ডার বাহন ‘সিংহ’।
৪) স্কন্দমাতা : দেবী দুর্গার পঞ্চম রূপ হচ্ছে দেবী স্কন্দমাতা। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা তিনি, শিবের ঘরণী। তার পুত্রের নাম ‘স্কন্দ’, স্কন্দ দেবতাদের সেনাবাহিনীর অধিনায়ক। স্কন্দদের মা, তাই স্কন্দমাতা।
৫) কাত্যায়নী : দুর্গার ষষ্ঠতম রূপটি হচ্ছে দেবী কাত্যায়নী। ঋষি কাত্যায়নের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গাকন্যা ‘কাত্যায়নী’ রূপে ঋষি কাত্যায়নের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
দেবী কাত্যায়নীর আট হাত, প্রতি হাতে ধরে আছেন শত্রু নিধনের জন্য মারণাস্ত্র।
দেবী কাত্যায়নী ত্রিনয়নী, তাঁর বাহন সিংহ।
৬) দেবী কালরাত্রি : দুর্গার সপ্তম রূপ হলো ‘কালরাত্রি’। দেবী কালরাত্রির গায়ের রং নিকষ কালো, মাথার চুল খোলা। গলার মালায় বিদ্যুৎ চমকায়। দেবী কালরাত্রি ত্রিনয়নী অর্থাৎ তিনটি চোখ এবং তিনটি চোখের গড়ন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মতো গোলাকার।
৭) মহাগৌরী : দুর্গার অষ্টম রূপের নাম ‘মহাগৌরী’। আট বছর বয়সী দেবী মহাগৌরীর গাত্রবর্ণ শঙ্খ, চাঁদ অথবা জুঁই ফুলের মতো সাদা। শুধু গাত্রবর্ণই নয়, তার পরিধেয় বস্ত্র, অলঙ্কারও শ্বেত-শুভ্র। দেবী মহাগৌরীর বাহন ষাঁড়, ষাঁড়ের পিঠে উপবিষ্ট অষ্টমবর্ষী মহাগৌরী দেবী ত্রিনয়নী, প্রতি পাশে দুই হাত মিলিয়ে তার হাতের সংখ্যা চার।
৮) সিদ্ধিদাত্রী-মহাশক্তি : দুর্গার মায়ের নবম রূপটি সিদ্ধিদাত্রী হিসেবে পুজিত হয়।
সিদ্ধির আট প্রকার : অনিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ঈষিতভা, (ঈষিত্ব) ভাষিতভা (ভাষিত্ব)। মহাশক্তি এই আটটি সিদ্ধি পূরণ করেন। ‘দেবীপুরাণে’ বলা হয়েছে, স্বয়ং শিব দেবী মহাশক্তির সাধনা করে সকল সিদ্ধি লাভ করেছেন, সিদ্ধিলাভের পর দেবী মহাশক্তির ইচ্ছায় শিবের দেহের অর্ধেক নারীত্ব লাভ করে, যে কারণে শিব ঠাকুর ‘অর্ধনারীশ্বর’ রূপে বিখ্যাত।
৯) দুর্গা শৈলপুত্রী : শৈলপুত্রী মানে পাহাড়ের কন্যা। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হচ্ছেন শৈলপুত্রী, দেবী দুর্গার নয় রূপের প্রথম রূপ। শৈলপুত্রী তার পূর্বজন্মে ছিলেন দক্ষরাজার কন্যা, নাম ছিল সতী, ভবানী। সতীদেবীর বিয়ে হয়েছিল ভোলানাথ শিবের সঙ্গে। ভোলানাথ শিব বেখেয়াল, সংসারে মন নেই, তাই সতীদেবীর পিতা দক্ষরাজ জামাতার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন না। পিত্রালয়ে স্বামীর অপমান সতীদেবী সইতে পারেননি, যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন।
পরের জন্মে সতীদেবী হিমালয় রাজের কন্যা হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, নাম হয় পার্বতী-হেমবতী। এই জন্মেও শিবের সঙ্গেই পার্বতীর বিবাহ হয়।
উপনিষদে আছে, দেবী পার্বতী মহাশক্তির আধার। সব দেবতা দেবী পার্বতীর শক্তির মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবনত মস্তকে স্বীকার করেন যে ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবসহ সব দেবতা পার্বতীর শক্তিতে বলীয়ান।
প্রতি শরৎকালে নবরাত্রির নয় দিনে প্রতিদিন দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপের এই নয় রূপের এক একজনকে পূজা করা হয় ৷
কোন দেবতার তেজ বা শক্তিতে মহাদেবী দুর্গার দেহের কোন অঙ্গ গঠিত হয়েছিল তার ইতি কথাঃ-
সনাতনী বন্ধুগণ মহাদেবী দুর্গার ধরাধামে আগমনের আর খুব বেশী সময় বাকী নেই। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সায়ংকালে বিল্ববৃক্ষে বোধন পূজার মাধ্যমে মহাদেবী দুর্গা মহাপূজার শুভাম্ভ হবে।
কোন দেবতার তেজে মহাদেবী দুর্গার দেহের কোন অঙ্গটি গঠিত হয়ে ছিল। তা ছাড়া কেনই বা সকল দেবতাগণ মহিষাসুরের বিপক্ষে অবস্হান গ্রহন করেছিলেন।
সে বিষয়টি আমাদের সকলের জেনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
মহিষাসুরের জঘন্যতম অত্যাচার যখন দিনের পর দিন আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হতে হতে লাগলো। ঠিক সেই সময়ে মহিষাসুরের এ হেন নির্মম অত্যাচার দেবতাগণ কোন ক্রমেই আর সহ্য করতে পারলেন না। অবশেষে অত্যাচারী মহিষাসুরের প্রতি সকল দেবতাগণ অতিশয় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলেন। অতঃপর অত্যাচারী মহিষাসুরকে নিধন করার নিমিত্ত ক্রমান্বয়ে সকল দেবতাগণেরই মহিষাসুরের প্রতি একে একে রুষ্টতার প্রতিফলন ঘটতে আরম্ভ হলো। যার ফলশ্রুতিতে সকল দেবতাগণের স্ব স্ব বদন থেকে একে একে স্বীয় তেজ অর্থাৎ শক্তি নির্গত হতে লাগলেন।
অত্যাচারী মহিষাসুরের প্রতি যে সমস্ত দেবতাগণ অতিশয় ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন।
সে সমস্ত দেবতাগণের মধ্যে সর্ব্ব প্রথমেই রুষ্টতা প্রকাশ করলেন ভগবান শ্রীমহাবিষ্ণু। ভগবান শ্রীমহাবিষ্ণু রুষ্ট হওয়ার ফলে তাঁর ভ্রূকুটি-কুটিল মুখ থেকে প্রথম তেজ নির্গত হতে লাগলো। অতঃপর রুষ্টতা প্রকাশ করলেন ভগবান শ্রীমধুসূদন । তিনি মহিষাসুরের প্রতি রুষ্ট হওয়ার ফলে ভিষণ কোপ প্রকাশ করতে লাগলেন। ফলে তখন ভগবান শ্রীমধুসুদনের ভ্রূকুটি-কুটিল মুখ থেকে তেজ নির্গত হতে লাগলো।
তারপর মহিষাসুরের প্রতি কুপিত হলেন ভগবান শম্ভু ( দেবাদিদেব মহাদেব ) ।
তখন ভগবান মহেশ্বরের মুখ থেকে অতিশয় তেজ নির্গত হতে লাগলো। অতঃপর অতিকোপ পূর্ন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মুখ থেকে এবং ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতাগণের শরীর থেকে মহৎ তেজ নির্গত হতে লাগলো। সেই তেজ একত্রীত হয়ে এক সময়ে মহাশক্তিরূপিনী মহাদেবী ভগবতী দুর্গার শরীরের এক একটি অঙ্গ গঠিত হয়েছিল।
পাঠক বন্ধুগণের জ্ঞাতার্থে কোন দেবতার তেজে মহাদেবী দুর্গার দেহের কোন অঙ্গটি গঠিত হয়েছে,
তার পূর্ন বিবরন নিন্মে প্রদান করলাম–
( ১ ) দেবাদিদেব মহাদেবের তেজে মহাদেবী দুর্গার মুখ গঠিত হয়েছিল।
( ২ ) ধর্মরাজ বৈবস্বত যমের তেজে মহদেবী দুর্গার কেশ গঠিত হয়েছিল।
( ৩ ) ভগবান শ্রীমহাবিষ্ণুর তেজে মহাদেবী দুর্গার বাহু সমূহ গঠিত হয়েছিল।
( ৪ ) চন্দ্র দেবের তেজে মহাদেবী দুর্গার স্তনদ্বয় গঠিত হয়েছিল।
( ৫ ) দেবরাজ ইন্দ্রের তেজে মহাদেবী দুর্গার দেহের মধ্যভাগ গঠিত হয়েছিল।
( ৬ ) বরুণ দেবের তেজে মহাদেবী দুর্গার দেহের জঙ্ঘা ও ঊরূ গঠিত হয়েছিল।
( ৭ ) পৃথিবীর তেজে মহাদেবী দুর্গার নিতম্ব গঠিত হয়েছিল।
( ৮ ) প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবের তেজে মহাদেবী দুর্গার পদযুগল গঠিত হয়েছিল।
( ৯ ) বসুগণের তেজে মহাদেবী দুর্গার করাঙ্গুলি গঠিত হয়েছিল।
( ১০) কুবেরের তেজে মহাদেবী দুর্গার নাসিকা গঠিত হয়েছিল।
( ১১) ব্রহ্মা দেবের তেজে মহদেবী দুর্গার দন্ত গঠিত হয়েছিল।
( ১২) সন্ধ্যার তেজে মহাদেবী দুর্গার ভ্রূদ্বয় গঠিত হয়েছিল এবং
( ১৩) পবন দেবের তেজে মহাদেবী দুর্গার কর্ণদ্বয় গঠিত হয়েছিল।
অত্যাচারী ব্যাক্তি যত প্রবল শক্তিধরই হোক না কেন তার ধ্বংশ অনিবার্য।
আমাদের সকলের দাম্ভিকতা পরিহার করে সহজ সরল জীবন যাপন করা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় শেষ পরিনতি কি ভয়ানক হতে পারে এই জাগতিক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে মহিষাসুরই তার প্রকৃষ্ট প্রমান রেখে গেছেন। এমনি ভাবেই সময়ের বিশেষ প্রয়োজনে অত্যাচারী পরম বিক্রমশালি মহিষাসুরকে বধ করার নিমিত্তে, সকল দেবতাগণের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় মহাশক্তিরূপিনী দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়েছিল। সেটিও আবার সকল দেবতাগণের স্ব স্ব শক্তি বা তেজের সমন্বয়ের মাধ্যমেই তিনির শুভাবির্ভাব হয়েছিল।
জয় মা আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী ভগবতী দুর্গা। পূনরায় ধরাধামের অসুর নিধনে আবির্ভূত হও মা।
তুমি সকলের মঙ্গল করো, রক্ষা করো এ জগত সংসার।
সকলকে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
১৫টি মন্তব্য
ইঞ্জা
তুমি সকলের মঙ্গল করো, রক্ষা করো এ জগত সংসার।
অগ্রিম শারদীয় শুভেচ্ছা দাদা।
অসাধারণ ভাবে দেবি দূর্গার বন্দনা করলেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শারদীয় শুভেচ্ছা, দাদা।
ভালো থাকুন সবসময়।
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকবেন দাদা
রেহানা বীথি
সুন্দর দেবীবন্দনা। শারদীয় শুভেচ্ছা রইল ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শারদীয় শুভেচ্ছা, দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
মনির হোসেন মমি
অনেক কিছুই জানা হল-ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন।শুভেচ্ছা শরদীীয় দূর্গাৎসব।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
আপনাকেও শারদী শুভেচ্ছা।
ছাইরাছ হেলাল
এত গুছিয়ে এই প্রথম জানলাম।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
জাস্ট অসাধারণ, অনবদ্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা। মায়ের পূজো এখন উৎসব তাইতো সবকিছুই শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধ না মেনেই চলছে, আমিও এর ঘোর বিরোধী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সাথে অন্য ধর্মাবলম্বীরা ও ভুল শিখছে, জানছে। আরো লিখুন। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো। শারদীয় শুভেচ্ছা রইলো
আরজু মুক্তা
শারদীয় শুভেচ্ছা
রোকসানা খন্দকার রুকু
শারদীয় শুভেচ্ছা রইল দাদা।
শামীম চৌধুরী
শারদীয় শুভেচ্ছা দাদাভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক অনেক অনেক কিছু জানলাম, যদিও বেশিরভাগই বুঝিনি। মল মাস হবার কারনে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে হেমন্তে! শুভেচ্ছা রইলো প্রদীপ। এমন করে আরো লিখো।
শুভ কামনা 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
তুমি সকলের মঙ্গল করো, রক্ষা করো এ জগত সংসার।
।দাদা, শারদীয় শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
শারদীয় দূর্গা পুজার শুভেচ্ছা রইলো দাদা। ভালো থাকুন সবসময়।