কিছু চাওয়া আর কিছু পাওয়া

মামুন ২৭ নভেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৬:২৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৮ মন্তব্য

অনুভূতিগুলো সব যেন গাছের পাতায় পাতায় ছুঁয়ে আছে। আর যেখান থেকে এর উৎপত্তি, সেই অদৃশ্য স্থানটি গাছের মগডাল থেকে মাটির বহু নীচে শেকড়ের সূচ-বিন্দুতে আসা যাওয়া করছে। থেকে থেকে ‘ইলেক্ট্রিক ব্লু’ বেদনাকে জাগিয়ে তোলা… সসীমের ভিতরে অসীমকে ধারণ করা… ক্ষুদ্র বীজের ক্রোশ বিস্তৃত বটবৃক্ষকে ডিসপ্লে করার এক চিরন্তন অতিমানবীয় কর্মকান্ডে ইর্ষনীয় নির্লিপ্ততায় ডুবে থাকা।

অতঃপর পেছনে ফিরে দেখা।

নস্টালজিক অতীত কষ্টকর বর্তমানকে ডিঙিয়ে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাপূর্ণ ছানিপড়া দৃষ্টির ঝাপসা দৃশ্যপটকেও হাজির করাতে ব্যর্থ। অতীত নিয়ে পড়ে থাকা। কত কিছু মনে পড়ে! সাদা-কালো ফ্রেমে কিছু জীবন্ত রঙিন ছবি! বুকের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা কিছু মায়াবী দীর্ঘশ্বাস, সোনালী সময়গুলোর প্রতিনিধি হয়ে উঠে।

সেই কবে কোন তন্দ্রালু মুহুর্তকে ঘিরে নেত্র চতুষ্ঠয়ের মিলনমেলা! দুরুদুরু বক্ষে অপার বেদনা জাগিয়ে ক্ষণিকের প্রগলভতায় নেই হবার অনুভূতি লাভ। সাময়িক বিচ্ছেদ… পুড়ে ক্ষয় হওয়া হৃদয়ের কার্ণিস… আর সেখানে ঝুলে থাকা ভালোবাসা- নিখাদ ভালোবাসা! একে একে সব মনের চোখে ভেসে বেড়ায়।

মনে পড়ে সবুজ ব্যান্ড মাথার সেই অষ্টাদশীর কথা! যে হাজারো ভীড়ের ভিতরে দৃষ্টিকে সহস্র সূর্যের রশ্মিতে অন্ধ করে দিয়ে আলো জ্বেলেছিল। দীপ জ্বালানোর প্রত্যয় নিয়ে সাথে থাকার লিখিত এক অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে চেনা-অচেনার পুলসিরাত একসাথে পার হবে বলেছিল। সেই আলোর অমোঘ আকর্ষণে বারবার নিজেকে ধ্বংস করার এক মহোৎসবে মেতে উঠেছিলাম। এরই মাঝে সুসময়গুলো পংখীরাজে সওয়ার হয়ে রুক্ষ্ণ প্রান্তরকে পেরিয়ে এনে দেয় দুঃসময়! পরিচিত মুখগুলো অচেনা হয়ে উঠে… নাকি নিজেই অচেনা মুখ হয়ে আবির্ভূত হই পরিচিত চোখগুলোর সামনে?

মনে পড়ে… প্রথম স্পর্শ!… মরণের উপত্যকায় জীবনের স্বাদ লাভ! এরপর বারবার মরে যাওয়া… ডুবন্ত মানুষের খড়-কুটো আঁকড়ে ধরে তীব্র স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়… সোনার শিকলে দৃঢ় ধাতব আলিঙ্গনে দমবন্ধ হয়ে খাবি খাওয়া।

এখন চলার পথে কখনো পুষ্প পড়ে থাকেনা। থাকলেও তাতে জীবনের রুপ-রস-গন্ধ পাওয়া যায় না। বর্ণহীন নির্জীবতাকে পায়ে দলে নিজেকে সামনে বাড়ানো। দৃষ্টিপথে ভাংগা ব্লেড, ক্লেদাক্ত কফ আর সুয়ারেজ লাইনের ডাইরেক্ট প্রবাহ। এগুলোকে এড়িয়ে যেতে যেতে শ্রান্তিতে দৃষ্টির অবনমন। এরই মাঝে রাত নামে… নতুন সূর্য উঠে… কিন্তু পথের শেষ আর হয় না। একই পথে বারংবার ফিরে আসা! জীবনের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়া। কি, কে্‌ কীভাবে, কোথায়- মুহুর্মুহু কিছু কোশ্চেন মার্ক অনুভূতির মগজে করাত চালায়। জীবনের ওয়ান ওয়ে ট্রাকে এখন দুর্বিষহ ট্রাফিক জ্যাম…ভ্যাপসা গরমে দমবন্ধ হওয়া… নাগরিক ঝাঁঝে দেহ-মন জ্বালা করা… আর এর থেকে মুক্তি পেতে চেয়ে চেতনায় দ্রুত ধাবমান কোনো দানব ট্রাকের সামনে দু’হাত মেলে দাঁড়ানো।

এতোটা ডিস্টারবড হয়েও কেউ বেঁচে থাকতে পারে?

সব আশার সর্বশেষ বিন্দুটা যখন বাঁকা হতে হতে দ্রুত কম্পমান ভঙ্গুরতার শতভাগ কাছে পৌঁছায়… অতীতের সেই সবুজ ব্যান্ড মাথার অষ্টাদশী ‘ইলেক্ট্রিক ব্লু’ চেতনাকে সরিয়ে সময়ের আঁধার ফুঁড়ে দীপ জ্বালাতে আবারো এগিয়ে আসে… নতুনভাবে! চেতনার বহ্নিশিখায় ‘ক্রিসমাস রেড’ কেঁপে উঠে পান্নার সবুজাভ তরল বর্ণময়তায়। যদিও সেই অষ্টাদশী ইতোমধ্যে পার করেছে আরো পঞ্চদশ বর্ষ।

সপ্তাহান্তে এক নির্জন পায়ে চলা পথের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকে সে আলোকবর্তিকা হয়ে। ক্লান্ত-বিধবস্ত আমি ভারী দেহটিকে টেনে নিয়ে সেই আলোর প্রতি পতঙ্গের অমোঘ আকর্ষণের মতো ছুটে চলি।

হাজার বছর ধরে পথ চলেছি যেন!

একজন বনলতা সেন হয়ে সে আমাকে রিসিভ করে পরম উষ্ণতায়! একজন ডিজিটাল বনলতা সেন হয়েও আটপৌরে বসনে পল্লীর নির্জন এক রাস্তায় আমার ক্লান্তিকে ভালবাসার শীতল জলে সে ধুয়ে দিতে চায়। হৃদয়ের গহীন কোন থেকে একটা প্রচন্ড চীৎকার আমার ঠোঁটে এসে থেমে যায়… ‘আমি আর পারছি না… বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের এখন… আমি মুক্তি চাই’- কথাগুলো চীৎকারে রূপ নিতে চেয়েও না পেরে দু’ফোটা চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়তে উদ্যত হয়। শেষ মুহুর্তে সেই উষ্ণজল আমার বনলতা সেনের করতলে আশ্রয় পায়। পরম মমতায় আমার হাত ধরে আমাকে সে জীবনের দিকে টেনে নিয়ে যায়!

লম্বা সেই আলো-আঁধারির রাস্তায় আমাদের দু’জনের একত্রীত ছায়া ক্রমেই দীর্ঘতর হয়ে উঠে। ফেলে আসা দীর্ঘশ্বাসগুলো পাক খেতে খেতে অনেক উঁচুতে উঠে যায়। আশার নিঃশ্বাসগুলো যে নীচের অংশটাকে ঘিরে রেখেছে। মৃত্যুও বোধকরি সহসা সেই লক্ষণ রেখা পার হতে চাইবে না।

একা একা কি পথ হাঁটা যায়?

সেখানে সবুজ ব্যান্ড মাথার একজন অষ্টাদশীর বড্ড প্রয়োজন!!

৪২৭জন ৪২৭জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ