ও মেয়ে তোর বয়স কতো?
– কী জানি গো! মা থাকলে বলে দিতো!
সেই যে বারে দাঙ্গা হলো,
শ‘য়ে শ‘য়ে লোক মরলো,
হিন্দুদের ঘর জ্বললো, মুসলমানদের রক্ত ঝরলো,
তখন নাকি মা পোয়াতী!
দাঙ্গা আমার জন্ম তিথী!
ও মেয়ে তোর বাবা কোথায়?
– মা বলেছে, গরীবদের বাবা হারায়!
কেউ তো বলে বাপটা আমার হারামী ছিলো,
মায়ের জীবন নষ্ট করে অন্য গাঁয়ে ঘর বাঁধলো!
মা বলতো – শিবের দয়ায় তোকে পেলাম,
শিবকেই তাই বাপ ডাকলাম!
ও মেয়ে তোর প্রেমিক আছে?
ছেলেরা ঘোরে ধারে কাছে?
– প্রেমিক কী গো?
মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে
স্বপ্ন দেখায় দিন দুপুরে?
চুড়ি কাজল মেলাতে কেনায়?
ঝোপের ধারে জামা খোলায়?
ওসব নন্দ কাকা করেছে দু‘বার,
প্রেমিক ওকেই বলবো এবার!
ও মেয়ে তোর পদবী কি?
বাপই নাকি দেয় শুনেছি!
– পদবী থাকলে ভাত পাওয়া যায়?
বাপের আদর কাঁদায় হাসায়?
ওটা কি বাজারে মেলে?
কিনবো তবে দু-দশে দিলে!
দামী হলে চাই না আমার,
থাক তবে ও বাপ ঠাকুরদা‘র!
ও মেয়ে তুই রূপসী?
– লোকে বলে ডাগর গতর সর্বনাশী,
রূপ তো নয় চোখের ধাঁধাঁ,
যৌবনেতে কুকুরী রাঁধা!
পুরুষ চোখে ইশারা আসে!
সুযোগ বুঝে বুকে, পাঁছায় হাতও ঘষে!
রূপ কী শুধুই মাংসপেশী?
তবে তো আমি খুব রূপসী!
ও মেয়ে তোর ধর্ম কি রে?
– মেয়ে মানুষের ধর্ম কী গো! সবকিছু তো শরীর ঘিরে!
সালমা বলে ধর্ম ওই সমাজ বানায়,
সন্ধ্যে বেলায় যখন বাঁড়া দাঁড়ায়,
কেউ তো বলে না, হিন্দু নাকি?
সবাই বলে, কতোয় যাবি?
বিছানা নাকি ধর্ম মেলায়,
শরীর যখন শরীর খেলায়!
তাই ভাবছি এবার থেকে ধর্ম বলবো,
শরীর কিংবা বিছানাকে।
_-_—_——+++-+++———– শ্বতাব্দী রায়
২৯টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জব্বর একখান লেখা সত্য কথাগুলো এত সুন্দর করে লিখেন আপু? -{@
খসড়া
শুধু লেখা না এটাই বাস্তবতা।
ইলিয়াস মাসুদ
শ্বতাব্দী রায়ের কবিতা খানি দারুণ !!! আমার খুব পছন্দের একটি কবিতা, অনেক অনেক বার শুনেছি পড়েছি।
ধন্যবাদ আপু কবিতাটি শেয়ার করার জন্য 🙂
খসড়া
যদি ক্ষমতা থাকত তবে নারীকে শক্তিশালী ও নৃশংস করে দিতাম।
জিসান শা ইকরাম
এই প্রথম পড়লাম কবিতাটি।
অসাধারন
মেয়েদের প্রতি তো এমনই ধারনা,
মেয়ের অবস্থান ভেদে হয়ত শব্দ কিছুটা পালটে যাবে।
সমাজ বাস্তবতায় মেয়েদের ধর্ম আসলে নেই, মেয়েদের ধর্ম সে মেয়ে, শরীর সর্বস্ব একটা কিছু,
” তাই ভাবছি এবার থেকে ধর্ম বলবো,
শরীর কিংবা বিছানাকে।” —— কষ্টের হলেও এটিই বাস্তবতা।
ইলিয়াস মাসুদ
দারুণ সাউন্ড ভাইয়া, আমি মুগ্ধ, অনেক বার শুনলাম, আপ্নি দারুণ আবৃতি করতে পারেন -{@
জিসান শা ইকরাম
আরে সর্বনাশ, এখানে আবৃত্তি পেলেন কোথায়?
এখানে তো কোন লিংক নেই @ইলিয়াস মাসুদ
ইলিয়াস মাসুদ
হাহাহাহা……
এই খানে ঐ কমেন্ট কেমতে আইল
কমেন্ট তো করছিলাম রাজাকার বাংলা ছাড় ……. :D) :D)
খসড়া
জি দারুন সাউন্ড। নিঃশব্দে গুমরে গুমরে আর্তনা ফিরছে দারুন শব্দে তালে লয়ে।
জিসান শা ইকরাম
ভুল করে দিয়েছেন তা বুঝতে পেরেছি তখনই
রাজাকার বাংলা ছাড়ো কবিতাটি অভিনেতা গোলাম মুস্তফা আবৃত্তি করেছেন, আর নেট থেকে কিছু ছবি নিয়ে আমি এটি আপলোড করেছিলাম @মাসুদ ভাই।
খসড়া
এই কবিতা কম কষ্টে কলম থেকে নিঃসৃত হয়নি।
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম, শুনতে পারলে আরও ভাল হত।
আপনার ‘ওদিকের’ লেখা এদিকেও পেতে চায় পাঠক।
বঞ্চিতকরণ ঠিক হচ্ছে না, ভাইয়াপু!
খসড়া
কি শুনবেন? আত্মগ্লানির আর্তনাদ নাকি আত্মমর্যাদার হাহাকার।
মৌনতা রিতু
ভাবি,তুমি চমৎকার একটা কবিতা দিছ। এই প্রথম পড়লাম আমি। অসাধারন।
মানে আর কিছু বলার নেই।
খসড়া
চিৎকার কর মেয়ে যত দূর গলা যায়।
অরুনি মায়া
খুবই সুন্দর ও বাস্তবধর্মী একটি কবিতা। ধন্যবাদ ভাইয়াপু এটি শেয়ার করার জন্য।
খসড়া
চিৎকার কর মেয়ে যতদূর গলা যায়।
আবু খায়ের আনিছ
চোখ বন্ধ করে নিজের অস্তিত্বটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম। প্রথম বার পড়লাম কবিতাটা।
খসড়া
নিজেকেই জিজ্ঞাসা করুন মা আমার এই প্রতিকূলতায় জন্ম দিয়েছে লালন করেছে, এবং আর একটি পুরুষ তৈরি করেছে।
আবু খায়ের আনিছ
আমি জানি আমার প্রশ্নের উত্তর, কিন্তু আমি জানিনা আমাদের প্রশ্নের উত্তর।
শুন্য শুন্যালয়
হায় মেয়ে, জন্মেছেই খাবার হয়ে। 🙁
খসড়া
জন্মই আমার আজন্মের পাপ।
নাসির সারওয়ার
কঠিন তবে সমাজেরইতো কথা।
কবির নিজের কন্ঠ –
https://m.youtube.com/watch?v=5344yobIFTw
নীলাঞ্জনা নীলা
নারী কেবলই একটা খাদ্য। শুধুই একটা শরীর।
নাজমুস সাকিব রহমান
অনেক বিখ্যাত একটি কবিতা।
অনিকেত নন্দিনী
কঠিন সত্য উঠে এসেছে লেখায়। মেয়েদের প্রতি সমাজ আর সংসারের নির্মমতা মাত্রাহীন। 🙁
অপার্থিব
ভাল লিখেছেন।
লীলাবতী
আপু, কতটা ক্ষোভ আর ঘৃণায় এমন কবিতা লেখে কেউ সেটা ভাবছি। কিছু বলার নেই এই কবিতায় 🙁
মেহেরী তাজ
কিছু বলার নাই! অসাধারণ…!