ঐকান্তিক সংস্কৃতি

প্রলয় সাহা ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার, ১০:২৪:১০অপরাহ্ন সাহিত্য ১২ মন্তব্য

60_Fotorletter_Fotor
প্রিয় অস্ট্রিক,
জানিনা কেমন আছিস? তাই ভ্রান্ত চিন্তার পরিবেশটা মধ্যরাতে শশ্মান হয়ে আছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে মানসিক ও শারীরীক অসুস্থতার কারণে আত্মগোপনে ছিলাম। কিন্তু কি আর লাভ হলো? এতে কয়েকটা হৃদয়ে ধরেছে মরিচা, কয়েকটাতে পশুজাত ব্যবহার আর কয়েকটাতে মানবতার মানসিক চিন্তার অমানবিক অভাব। তাতে আমার মোটেও বোধ নেই, চিন্তা নেই-নেই কোন পুনঃসংস্কার করার ইচ্ছে। তবে কি জানিস, ইচ্ছে শক্তিটা-না ইদানিং বড্ড ছেলেমানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে বুঝাতেই লেগে যায় রাত-ভোর। তাই নিজ সান্ত্বনার জমিতে হাল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, নিজেই বারংবার বেহাল অবস্থার কাঠগরায় অবচেতনহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। গাছমানুষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শেষ যে কবে হবে তা ঠিক জানা নেই।

এতকিছুর মাঝেও তোকে নিয়ে ভাবাটা আমার মৌলিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাঁড়িয়েছে বলাটাও ঠিক যায় না; দাঁড় করিয়েছি। কেন করেছি তাও সত্যি জানিনা। কিছু কিছু কাজ করার লক্ষ্য থাকে, থাকে কারণ। কিন্তু তোর ব্যাপারে কারণের চাইতেও খবর পাওয়াটা অতি জরুরী। রাতের এখন চলমান মধ্যবয়স। নিভু আলোতে নিকোটিন আর ধোঁয়ার সঙ্গম দেখছি, অবাক অনুভব। হঠাৎ বুকের বাম পাশের ঘড়িটা ঘন্টা বাজিয়ে তোর নামটা স্মরণ করিয়ে দিল। ভয় হচ্ছে, চিন্তা হচ্ছে। কোথায়,কিভাবে,কোন আকার ধারণ করে আছিস কে জানে! এতোই চিন্তা হচ্ছে যা ঘড়ির কাটার ভাষায়ও বোঝাতে পারবো না। মুঠোফোনটা হাতে নিয়েছিলাম; লাভ হলো না। অর্থ অপদার্থ হয়ে মেজাজ খারাপ করার নতুন টালিখাতা খুলেছে। তোকে ভেবে এমনিতে আমি হয়ে আছি বেসামাল এর মাঝে হঠাৎ হাউ মাউ করে ভেসে আসা মর্মস্পর্শী শব্দের করুণ ডাকটা একদম স্তম্ভিত করে তোলে আমাকে। নিজের মাঝে নিজে ঠিক কতক্ষণ ছিলাম না তার হিসেব করিনি তবে পুরো শরীরটা মুঠোফোনের মত বারবার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে।

মনে হচ্ছে তোর মাঝে অপরিবর্তনশীল পোষা কষ্টগুলো বাচ্চাদের মত দুগ্ধ স্বাদ না পাওয়ার তৃষ্ণায় চিৎকার করে, এ-বাড়ির ও-বাড়ির সবার ঘুম হাটে তুলেছে। পৌষের এই কণকণে ঠান্ডায় আমার শরীরটাকে মনে হচ্ছে, উনুনে বসানো প্রক্রিয়াজাতকরণের পাত্র। যা বিন্দু বিশেষ হাজারটা উত্তপ্ত জল ফোঁটা; একটু পরেই বাষ্প হয়ে যাবে তা ঠিক, তবে চিন্তার থার্মোমিটারে চিন্তাগুলো এখনও একশ তিন চার-এ ওঠা-নামা করছে। কথা বলার ভলিউম শূন্যে ঘুমিয়ে আছে, আমাকে রেখে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে, যা পাপ-পাপিষ্ঠ খেলা ছাড়া আর কিছুই না। এদিকে নিজের অবস্থা ষোল ঘাটের জল খাওয়ার মত, তার উপর আরও ষোল ঘাটের জল খাওয়াটা শুধু বাকি…
জল খাব কি! ভাবতে ভাবতে, বিধাতার গতানুগতিক ডাক এলো কানে। আহ্‌ কি মনোরম তাঁর ডাক! ক্ষণিকের মধ্যে নিজের বায়বীয় ফ্লাক্সটি শীতল হয়ে গেছে। চিন্তার তাপমাত্রাটাও ঋনাত্মক থেকে ধনাত্মক হতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেখানেই থাকিস-না কেন সান্ত্বনার চাদর পড়ে আছিস। তোর মাঝে ক্রমাগত বাড়ন্ত আবর্জনার স্থুপটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিস ঢের, পারিস বসবাসরত পোষা কষ্টগুলোকে একটু-একটু করে সুখ ভাবতে, আর তা করা ছাড়া উপায় নেই বললেই চলে। যদিও এসব আমি একাই ভাবছি; তোর জায়গায় নিজেকে আংশিক স্থান দিয়ে, আর তা ভ্রান্তিমূলক না বলে আমি মনে করি।

তুই পারবি, এসব গুছিয়ে চলাটা তোর দ্বারা সম্ভব। এছাড়া এটাও তোর দ্বারা সম্ভব ‘নিজের মাঝে নিজেকে হত্যা করে বেঁচে থাকা’ যদিও কথাটা বিষ্ময়সূচক কিন্তু তোর দ্বারা তা সম্ভব। এভাবে বেঁচে থাকা যায়; শুধু যায় না নিজের চিন্তা চেতনায় জট পাকিয়ে, পরাজয় মেনে নিজের কাছে নিজেকে মিথ্যে-মিথ্যে বিক্রি করাটা…

তুই একদিন ঠিক জয়ী হয়েই ছাড়বি নিজের জীবনের হাল। পরাজয় শব্দটা তোর জন্য না। আশা করি যা যা ভাবছি ঠিক ঠিক তা তা-ই হবে। আমি তোর আত্মায় আত্মবিশ্বাসী; এছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চাচ্ছি না, ভাবতে রাজিও না। কথা আর বাড়ালাম না। ভালো থাকিস। যোগাযোগ করিস। আর হ্যাঁ চিঠির উত্তর খুব দ্রুত দিবি।
অপেক্ষমান
প্রলয় সাহা
১৭-১২-১৫ইং
রাতঃ ৩:৪০ থেকে ভোর ৫:১৫ মিনিট।

৪২২জন ৪২৩জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ