এক মুঠো ভালোবাসা (২২তম পর্ব)

ইঞ্জা ২ মার্চ ২০২০, সোমবার, ০৮:৩২:০১অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

ফাইনাল কল হওয়ার পর অনিক সবাইকে নিয়ে এরোপ্লেনের ভিতর প্রবেশ করার পর অনিক ওর বাবা মাকে জোর করে ওদের বিজনেস ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে এগুলো ইকোনমি ক্লাসের দিকে, সামনে এয়ার হোস্টকে পেয়ে বললো, আজকের ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন কে?

মি, হো চিন স্যার।
ওহ রিয়েলি, সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওকে আমার রিগার্ডস দেবে প্লিজ। (ইংরেজিতে)
সিউর স্যার মিঃ?
অনিক।
থ্যাংক ইউ।

অনিক আর আফরিন গিয়ে বসলো ইকোনমি সিটে।
ফ্লাইট টেকঅফ করার পনের বিশ মিনিট পর এয়ারহোস্ট এসে বললো, স্যার, আপনারা হ্যান্ডব্যাগ গুলো নিয়ে আসুন প্লিজ, আপনাদেরকে কম্পলিমেন্টারি বিজনেস ক্লাস অফার করা হচ্ছে আমাদের থাই এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে, ইট’স ক্যাপ্টেন কল।
ধন্যবাদ বলে অনিক আফরিনকে নিয়ে এয়ারহোস্টকে ফলো করে বিজনেস ক্লাসে ফিরে এলে অনিকের মা বাবা খুশি হয়ে উঠলেন।

কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন সয়ং এলেন দেখা করার জন্য, অনিক উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বন্ধুকে, ইংরেজিতে বললো, কেমন আছো তুমি, খুব খুশি হলাম তোমাকে দেখে।
অনিক ক্যাপটেনের সাথে ওর বাবা মা আর আফরিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, হো চিন আর আমি এক সাথে পড়তাম আমেরিকাতে, পরে ও পাইলট ট্রেনিং নিয়ে থাই এয়ারে জয়েন করে, এখন সে ক্যাপ্টেন হয়ে গেছে।
ক্যাপ্টেন হো চিন অনিকদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ফিরে গেলো ককপিটে, কিছুক্ষণ পর অনিকদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হলো।

ডিনার শেষে ক্যাপটেন হো চিন এসে অনিকের বাবা মাকে আমন্ত্রণ জানালো ককপিট ঘুরে দেখার জন্য, এয়ারবাস A380 এই প্রজন্মের আধুনিক বিমানের একটি, ফলশ্রুতিতে এর ককপিট দেখা আসলেই সৌভাগ্যের ব্যাপার।
উনারা ক্যাপ্টেনকে ফলো করে ককপিটের দিকে এগিয়ে গেলে আফরিন ও অনিককে শ্যাম্পেন দিয়ে গেলো এয়ারহোস্ট।

সকাল সকাল ছায়া ঘুম থেকে উঠে পুরা ঘর পরিস্কার করে নিয়ে শাওয়ার সেরে নিলো, এরপর ব্রেকফাস্ট রেডি করে রওশনের বাবাকে ডাকতে গেলো।
রুমে নক করে বললো, বাবা আপনি জেগে আছেন?
দরজা খুলে ধরে উনি বললেন, হাঁরে মা, ব্রেকফাস্ট রেডি, আসবো?
জ্বি বাবা আসুন।
উনি এসে ডাইনিংয়ের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলেন, আজ কি তৈয়ার করলি মা?
বাবা তেমন কিছু না, রুটি আর মিক্সড ভেজিটেবল করেছি।
ভালোই করেছিস, তা আজ কি বাজারে যাবি, আজ না অনিকের বাবা মা আসবেন?
হাঁ বাবা, আপনি খান এখন।
ভালো কথা, অনিকের বাবা বাচ্চা মুরগী খেতে পছন্দ করেন, কয়েকটা পেলে নয়ে আসিস।
ঠিক আছে বাবা, এই দেশে বাচ্চা মুরগী পাবো কিনা তাও তো জানিনা?
দেখ, মার্কেটে একবার খুঁজে দেখিস।

সেলফোন নোটিফিকেশনের সাউন্ড হওয়াতে ছায়া এগিয়ে গিয়ে সেলফোন চেক করে দেখতে পেলো মেইল আসছে, ছায়া ক্লিক করে মেইল ওপেন করে পড়লো, এরপর রওশনের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা মেইল এসেছে, ওরা দেখা করতে বলছে।
কি বলিস, তাহলে তো তোর যেতেই হয়।
হাঁ বাবা।
তাহলে এক কাজ কর, আগে দেখা করে আয়, আসার পথে গ্রোসারি নিয়ে আসিস।
ঠিক আছে বাবা, আপনার জন্য খাবার রেডি করা আছে ফ্রিজে, আমার দেরি হলে খেয়ে নেবেন।
ঠিক আছে মা, তুই রেডি হয়ে নে।
ছায়া কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।

ঘন্টা দুইয়েকের ভিতর ছায়াকে ফিরে আসতে দেখে রওশনের বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে মা এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলি, কেন ডেকেছিলো ওরা?
ছায়া বললো, বাবা আসছি, গ্রোসারি গুলো কিচেন টেবিলে রেখে আসছি।
একটুপর ফিরে এসে বললো, বাবা ওরা কয়দিন আগে রিপোর্ট করতে দিয়ে ছিলোনা।
হাঁ দিয়েছিলো তো?
ওই রিপোর্টের রেজাল্ট জানাতে ডেকেছিলো।
তা কি অবস্থা এখন?
ছায়া এগিয়ে গিয়ে বাবার হাত তুলে ধরে বললো, বাবা ওরা বললো আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
রওশনের বাবা একটু কেঁপে উঠলেন, খুশিতে উনার আনন্দাশ্রু চোখে এলো, উনি উঠে দাঁড়িয়ে ছায়াকে জড়িয়ে ধরে বললেন, মা, মারে আমি জানতাম, আমি জানতাম, তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি।
ছায়ার চোখেও আনন্দাশ্রু, বাবাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললও, বাবা আমি খুব লাখি, আপনি না থাকলে আমি হয়ত আজ বেঁচে থাকতাম না।

কিছুক্ষণ পর ছায়া উঠে গিয়ে গ্রোসারি গুলো ফ্রিজে তুলে রেখে রান্নার ব্যবস্থা শুরু করলো।
বাবা কিছু খেয়েছেন কি?
না মা, একেবারে রান্না হলে খাবো, ততক্ষণ আমি টিভি দেখি।
ছায়া দুপুরের জন্য অল্প কিছু রান্না করে রওশনের বাবাকে ডাইনিংয়ে ডেকে নিয়ে খেতে বসলো।
বাবা আপনি খেয়ে উঠে মেডিসিন নিয়ে নিন, আমি রাতের জন্য রান্না করে এরপর একটু রেস্ট করবো।
ঠিক আছে মা।
ছায়া খাওয়া শেষ করে বললো, বাবা আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি, চলুন এখন দেশে ফিরে যায়।
রওশনের বাবা বেসিনে হাত ধুয়ে টেবিল টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে বললেন, হাঁরে মা, আর দেরি নয়, অনিকরা ফিরে আসছে যখন আমি টিকিট কেটে ফেলবো কয়েকদিনের মধ্যেই।

………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।

৬৬৯জন ৫১০জন

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ