
ফাইনাল কল হওয়ার পর অনিক সবাইকে নিয়ে এরোপ্লেনের ভিতর প্রবেশ করার পর অনিক ওর বাবা মাকে জোর করে ওদের বিজনেস ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে এগুলো ইকোনমি ক্লাসের দিকে, সামনে এয়ার হোস্টকে পেয়ে বললো, আজকের ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন কে?
মি, হো চিন স্যার।
ওহ রিয়েলি, সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওকে আমার রিগার্ডস দেবে প্লিজ। (ইংরেজিতে)
সিউর স্যার মিঃ?
অনিক।
থ্যাংক ইউ।
অনিক আর আফরিন গিয়ে বসলো ইকোনমি সিটে।
ফ্লাইট টেকঅফ করার পনের বিশ মিনিট পর এয়ারহোস্ট এসে বললো, স্যার, আপনারা হ্যান্ডব্যাগ গুলো নিয়ে আসুন প্লিজ, আপনাদেরকে কম্পলিমেন্টারি বিজনেস ক্লাস অফার করা হচ্ছে আমাদের থাই এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে, ইট’স ক্যাপ্টেন কল।
ধন্যবাদ বলে অনিক আফরিনকে নিয়ে এয়ারহোস্টকে ফলো করে বিজনেস ক্লাসে ফিরে এলে অনিকের মা বাবা খুশি হয়ে উঠলেন।
কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন সয়ং এলেন দেখা করার জন্য, অনিক উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বন্ধুকে, ইংরেজিতে বললো, কেমন আছো তুমি, খুব খুশি হলাম তোমাকে দেখে।
অনিক ক্যাপটেনের সাথে ওর বাবা মা আর আফরিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, হো চিন আর আমি এক সাথে পড়তাম আমেরিকাতে, পরে ও পাইলট ট্রেনিং নিয়ে থাই এয়ারে জয়েন করে, এখন সে ক্যাপ্টেন হয়ে গেছে।
ক্যাপ্টেন হো চিন অনিকদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ফিরে গেলো ককপিটে, কিছুক্ষণ পর অনিকদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হলো।
ডিনার শেষে ক্যাপটেন হো চিন এসে অনিকের বাবা মাকে আমন্ত্রণ জানালো ককপিট ঘুরে দেখার জন্য, এয়ারবাস A380 এই প্রজন্মের আধুনিক বিমানের একটি, ফলশ্রুতিতে এর ককপিট দেখা আসলেই সৌভাগ্যের ব্যাপার।
উনারা ক্যাপ্টেনকে ফলো করে ককপিটের দিকে এগিয়ে গেলে আফরিন ও অনিককে শ্যাম্পেন দিয়ে গেলো এয়ারহোস্ট।
সকাল সকাল ছায়া ঘুম থেকে উঠে পুরা ঘর পরিস্কার করে নিয়ে শাওয়ার সেরে নিলো, এরপর ব্রেকফাস্ট রেডি করে রওশনের বাবাকে ডাকতে গেলো।
রুমে নক করে বললো, বাবা আপনি জেগে আছেন?
দরজা খুলে ধরে উনি বললেন, হাঁরে মা, ব্রেকফাস্ট রেডি, আসবো?
জ্বি বাবা আসুন।
উনি এসে ডাইনিংয়ের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলেন, আজ কি তৈয়ার করলি মা?
বাবা তেমন কিছু না, রুটি আর মিক্সড ভেজিটেবল করেছি।
ভালোই করেছিস, তা আজ কি বাজারে যাবি, আজ না অনিকের বাবা মা আসবেন?
হাঁ বাবা, আপনি খান এখন।
ভালো কথা, অনিকের বাবা বাচ্চা মুরগী খেতে পছন্দ করেন, কয়েকটা পেলে নয়ে আসিস।
ঠিক আছে বাবা, এই দেশে বাচ্চা মুরগী পাবো কিনা তাও তো জানিনা?
দেখ, মার্কেটে একবার খুঁজে দেখিস।
সেলফোন নোটিফিকেশনের সাউন্ড হওয়াতে ছায়া এগিয়ে গিয়ে সেলফোন চেক করে দেখতে পেলো মেইল আসছে, ছায়া ক্লিক করে মেইল ওপেন করে পড়লো, এরপর রওশনের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা মেইল এসেছে, ওরা দেখা করতে বলছে।
কি বলিস, তাহলে তো তোর যেতেই হয়।
হাঁ বাবা।
তাহলে এক কাজ কর, আগে দেখা করে আয়, আসার পথে গ্রোসারি নিয়ে আসিস।
ঠিক আছে বাবা, আপনার জন্য খাবার রেডি করা আছে ফ্রিজে, আমার দেরি হলে খেয়ে নেবেন।
ঠিক আছে মা, তুই রেডি হয়ে নে।
ছায়া কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।
ঘন্টা দুইয়েকের ভিতর ছায়াকে ফিরে আসতে দেখে রওশনের বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে মা এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলি, কেন ডেকেছিলো ওরা?
ছায়া বললো, বাবা আসছি, গ্রোসারি গুলো কিচেন টেবিলে রেখে আসছি।
একটুপর ফিরে এসে বললো, বাবা ওরা কয়দিন আগে রিপোর্ট করতে দিয়ে ছিলোনা।
হাঁ দিয়েছিলো তো?
ওই রিপোর্টের রেজাল্ট জানাতে ডেকেছিলো।
তা কি অবস্থা এখন?
ছায়া এগিয়ে গিয়ে বাবার হাত তুলে ধরে বললো, বাবা ওরা বললো আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
রওশনের বাবা একটু কেঁপে উঠলেন, খুশিতে উনার আনন্দাশ্রু চোখে এলো, উনি উঠে দাঁড়িয়ে ছায়াকে জড়িয়ে ধরে বললেন, মা, মারে আমি জানতাম, আমি জানতাম, তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি।
ছায়ার চোখেও আনন্দাশ্রু, বাবাকে ধরে বসিয়ে দিয়ে বললও, বাবা আমি খুব লাখি, আপনি না থাকলে আমি হয়ত আজ বেঁচে থাকতাম না।
কিছুক্ষণ পর ছায়া উঠে গিয়ে গ্রোসারি গুলো ফ্রিজে তুলে রেখে রান্নার ব্যবস্থা শুরু করলো।
বাবা কিছু খেয়েছেন কি?
না মা, একেবারে রান্না হলে খাবো, ততক্ষণ আমি টিভি দেখি।
ছায়া দুপুরের জন্য অল্প কিছু রান্না করে রওশনের বাবাকে ডাইনিংয়ে ডেকে নিয়ে খেতে বসলো।
বাবা আপনি খেয়ে উঠে মেডিসিন নিয়ে নিন, আমি রাতের জন্য রান্না করে এরপর একটু রেস্ট করবো।
ঠিক আছে মা।
ছায়া খাওয়া শেষ করে বললো, বাবা আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি, চলুন এখন দেশে ফিরে যায়।
রওশনের বাবা বেসিনে হাত ধুয়ে টেবিল টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে বললেন, হাঁরে মা, আর দেরি নয়, অনিকরা ফিরে আসছে যখন আমি টিকিট কেটে ফেলবো কয়েকদিনের মধ্যেই।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৮টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
সাবলীল সুন্দর উপস্থাপন । ,বেশ ভালো লাগলো ।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, আপনাকে মিলনমেলায় পেলাম না কেন?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন। যদিও আগের পর্ব গুলো পড়া হয়নি। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
আপু আগের পর্ব গুলো আমার ব্লগে পাবেন আর গল্প পড়ার নেশ থাকলে আরও ভালো ভালো গল্প পাবেন আমার ব্লগে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া অবশ্যই পড়বো। ভালো থাকুন
আরজু মুক্তা
অনেকদিন পর—–
ভালো লাগলো
ইঞ্জা
আপু মাঝখানে খুব ঝামেলায় ছিলাম, এখন নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি।
মনির হোসেন মমি
আবারো শুরু করলেন ধারাবাহিক এক মুঠো ভালবাসা সে জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।এবারের পর্বে ছায়ার অসুখের রিপোর্টি মনে হয় না ছায়া সত্য কথা বলেছেন তার বাবাকে।অনিকরাও আসছে দেখা যাক পরের পর্বে কী হয়।
ইঞ্জা
না ভাই, সত্যই বলেছে ছায়া, যদিও একটা কিন্তু আছে যা আগামীতে জানা যাবে।
ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মনির হোসেন মমি
ভাইজান প্রতি পর্বের সাথে প্রকাশিত পূর্ব পর্বের লিংকটা দিয়ে দিয়েন তাতে ব্লগাররা এখান হতেই পূর্বের পর্বগুলোর ধারণা নিতে পারবেন।ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
আহা! কতদিন পরে আবার ছায়া অনিক আফরিন, নাহ ভুলে যাই নি।
এবারে ভাল করে প্যাঁচ কষুন!
ইঞ্জা
জ্বি ভাইজান, ব্যস্ততা কাটিয়ে আবার শুরু করলাম, প্যাঁচ এখন শুরু হবে।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধারাবাহিক গল্প বলে কথা
পাঠক ধরে রাখার কৌশলে
সুন্দর করে এগিয়ে যাওয়া।
চালিয়ে যান ভাইজান।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অবিরত দাদা, আপনার প্রার্থণায় রাখার অনুরোধ রইলো।
বন্যা লিপি
আসছে ফিরে আবার একমুঠো ভালবাসা। উঠুক জমে। ব্লগ কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। একটু কড়া লিকারের চা দরকার। কি বলেন ভাইজান?
ইঞ্জা
আপু কই ঝিমুচ্ছে, আমি তো দেখি আমার বোনটার ঘুম লেগে আছে চোখে, আরও বেশি বেশি লিখুন এই কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
এইটা ঠিক ধরছেন ভাইজান,আসলেই আমার চোখে ঘুম ধরছে ইদানীং খুব বেশিরকম।দোয়া করেন ভাইজান বেশ কিছু লেখা বাকি পরে আছে। ওগুলো শেষ করতে হবে।
ইঞ্জা
আপু আপনার লেখাগুলোর জন্য অপেক্ষায় রইলাম। 😊
হালিম নজরুল
আগে কয়েকটি পর্ব পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।
ইঞ্জা
জ্বি ভাই, আপনার গ্রুপে দিয়েছিলাম, পরে পাঠক না পাওয়ায় ইস্তফা দিয়েছিলাম। 😃
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক শুভ কামনা রইল কবি দা
ইঞ্জা
ভাই আমি কবি তো মোটেও নই, কবিতা বুঝি কম, দোয়া রাখবেন।
রেহানা বীথি
ভাইয়া, প্রফেসর আব্দুল হাই সাহেবকে নিয়ে লেখা শুরু করতে হয়েছিল সেসময়। তাই আপনার এ গল্পের মাঝের কিছু পর্ব মিস করে গেছি। আবার ব্লগে নতুন পর্ব শুরু করেছেন দেখে ভালো লাগলো খুব।
ইঞ্জা
আপ্লুত হলাম আপু, আমিও অনেদিন ধরে লিখতে পারছিলামনা, এখন আবার শুরু করেছি, পাশে থাকবেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
কতদিন পর শুরু করলেন। আগে করলে ছায়ার রিপোর্টটা আরও আগেই পেতাম। তবুও ভালো লাগছে। এবার কিন্তু থামা চলবে না। উপন্যাস কম্পিলিট দেখতে চাই। 🙂
ভালো থাকুন ভাইজান,
শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
আপু চেষ্টা করবো লিখে যেতে, কিন্তু উপন্যাস হবে কিনা সন্দেহ আছে।
জিসান শা ইকরাম
অনেকদিন পরে একমুঠো ভালোবাসা নিয়ে আসলেন,
সাবলীল বর্ণনায় ধারাবাহিক গল্পটি পাঠকমনে বিশেষ রেখাপাত করেছে।
লিখতে লিখতে হাত পেকে গিয়েছে লেখকের 🙂
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি পরের পর্বের জন্য।
ইঞ্জা
হাত পেকেছে কিনা জানিনা ভাইজান, জানি আপনাদের ভালোবাসা আমাকে টনিকের মতো উৎসাহ যোগায়, ধন্যবাদ।