
অনিক আর আফরিনের বিজনেস সিট দেখিয়ে এয়ারহোস্টেস বললো, আপনাদের কিছু লাগলে আমাদেরকে জানাবেন প্লিজ (ইংরেজিতে)।
থ্যাংকস, জবাবে অনিক বললো, আফরিন তুমি উইন্ডো সিটে বসবে?
সিউর, বলেই আফরিন উইন্ডো সিটে বসলে অনিক আইল (চলাচলের পথ) সিটে বসলো, কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্লাইট টেক্সিং (চলতে শুরু করা) করা শুরু করলো।
ফ্লাইট টেইকঅফ করার একটু পর এয়ারহোস্টেস এসে দুজনকে শ্যাম্পেন ও ব্রেকফাস্ট মেনু দিয়ে এগিয়ে গেলো বাকি বিজনেস ক্লাস প্যাসেনঞ্জারদের শ্যাম্পেন দিতে।
অনিক শ্যাম্পেনে চুমুক দিয়ে মেনু চেক করে আফরিনকে জিজ্ঞেস করলো ও কি নিতে চাই?
আমি অমলেট সাথে চিকেন নেবো, আফরিন বললো।
হুম আমিও তাই নেওয়ার চিন্তা করছিলাম, আচ্ছা আমাদের হোটেল রিজার্ভেশন করেছো?
জ্বি, মামা লুসি বললো তুমি হিলটন প্রেফার কর, তাই হিলটনেই করেছি।
গুড।
অনিক উঠে গিয়ে ওভার হেড বিন (হাত ব্যাগ রাখার জায়গা) থেকে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে নিজের পেন্ডিং কাজ গুলো করা শুরু করলো, ইতিমধ্যে এয়ারহোস্টেস সবার ব্রেকফাস্ট চয়েজ জেনে গিয়েছিলো, এখন এসে সবার ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেলো।
অনিক ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্রেকফাস্টে মন দিলো।
এমিরেটেসের ব্রেকফাস্টের জবাব নেই, আফরিন বললো।
কেমনে বুঝলে?
আমি আগেও এই রুটে অন্য এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করেছি, ওদের ব্রেকফাস্ট গুলো এতো সুবিধার না, এদের হোয়াইট বিন্সটা ওয়েল প্রিপার্ড, চিকেন, বানটাও সফট, অমলেটটাও বেশ।
এই জন্যই এমিরেটস এখন নাম্বার ওয়ানদের একজন, অনিক মিষ্টি হেসে বললো।
পরদিন সন্ধ্যায় হংকংয়ে পোঁছালে অনিকের ব্রাঞ্চ অফিসের গাড়ী ওদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে হোটেলে ড্রপ করে দিলো, অনিক রিসেপশনে নিজের পরিচয় দিয়ে দুজনের পাসপোর্ট দিয়ে বললো, কতক্ষণ লাগবে (ইংরেজিতে)?
স্যার প্লিজ আপনারা বসে ওয়েলকাম ড্রিংক ইঞ্জয় করুন, আমি দ্রুত ব্যবস্থা করছি।
অনিকরা সামনের সোফায় বসলে সার্ভিস থেকে লোক এসে দুজনের জন্য ওরেঞ্জ জুস দিয়ে গেলো।
আফরিন জুসে চুমুক দিয়ে বললো, অনিক স্যার তোমার বাবা মা তো পরশু এইখানে পোঁছুবে?
হাঁ, তুমি কাল সকালে খবর নাও তো উনাদের কোন হোটেলে রাখবে এয়ারলাইনস?
ওকে, উনাদের সাথে কত বছর পর দেখা হবে?
এই দুবছরের বেশি হবে।
তা অনেকদিন।
হাঁ।
তুমি তো উনাদের সাথেই রাখতে পারো?
অনিক তখন অনেক দূরে চলে গেছে যেন, ওর বাবা মাকে চেয়েছিলো নিজের সাথে রাখার জন্য, উনারা বলেছিলেন অনিক বিয়ে করলে তখনই উনারা আসবেন, থাকবেন, এর আগে নয়, কারণ অনিক বিয়ে করতে রাজিনা, কেমনেই বা রাজি হবে, ওর মন তো পড়ে ছিলো ছায়ার কাছে, যদিও সে জানতো ছায়া আর কখনোই তার হবেনা, অথচ এখন সে ছায়া এখন ওর বাসাতে থাকে।
অনিক স্যার, কিছু বললেনা?
অনিক সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো, সে অনেক কথা, রিসেপশনে ডাকছে, চলো।
দুজনে এসে যার যার রুম কার্ড বুঝে নিয়ে বেলবয়কে ফলো করলো।
হোটেল কতৃপক্ষ ওদেরকে পাশাপাশি দুইটা রুম দিয়েছে, রুমের সামনে পোঁছে অনিক বললো, আফরিন তুমি ফ্রেস হয়ে নাও, আধা ঘন্টা সময় দিলাম, ডিনার করবো।
ওকে আমি রেডি হয়ে আসছি।
অনিক ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে নতুন এক সেট ড্রেস পড়ে নিলো, এরপর আরাম করে ডানহিল সুইচ সিগারেট ধরালো, ও শখ করে মাঝে মাঝে খায়, দুই চার টান দিয়ে স্ট্রেতে আগুনটা নিভিয়ে হুগোর পারফিউম গলার দুই পাশে ছিটিয়ে দিলো।
দরজায় নক শুনে ধীরে সুস্থে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
আফরিন হোয়াইট ব্রাইট টপসের সাথে রেড ফ্লাট ট্রাউজার পড়েছে, ওকে দেখে অনিক বললো, বাহ চমৎকার মানিয়েছে ড্রেসটা, চলো বেরোই।
দুজনে হোটেলের পাশের এক মার্কেট রেস্টুরেন্টে হেটেই চলে এলো, রেস্টুরেন্টের হেড ওয়েটার অনিককে দেখে এগিয়ে এসে নড করে বললো, মি. অনিক কেমন আছেন? (ইংরেজিতে)
হাঁ ভালো আছি, আজ ভালো একটা টেবিল দাও।
সিউর প্লিজ ফলো করুন বলেই সে পথ দেখিয়ে একটা টেবিলের সামনে এসে বললো, দিস ইজ দ্যা বেস্ট টেবেল ফর দ্যা বিউটিফুল লেডি।
আফরিন মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চেয়ারের সামনে এগিয়ে গেলে ওয়েটার চেয়ার টেনে ধরে আফরিনকে বসতে দিলো, অনিক অপর দিকের চেয়ারে বসলো।
কি খাবে বলো, এইখানকার বেস্ট হলো কোরিয়ান ফুড আর স্টেকও বেশ, অনিক বললো।
আপনার কি চয়েজ, আফরিন পাল্টা জিজ্ঞেস করলো।
স্টেক নিই, সাথে রেড ওয়াইন।
হুম খুব ভালো হবে।
ওয়েটার এগিয়ে এলে দুইটা বিফ টি বোন স্টেক, সাথে রেড ওয়াইন দিতে বললো।
অপরদিকে আমেরিকাতেঃ
অনিকরা রওনা হয়ে যাওয়ার পর ছায়া এসে ড্রয়িংরুমে বসলো, ওর শ্বশুরও টিভিতে খবর দেখছিলো।
বাবা মেডিসিন নিয়েছেন?
না মা এখনো নিই নাই।
আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।
না মা, চল আমি মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়বো।
ছায়া উনাকে ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে শোয়ায় দিয়ে বেরিয়ে এলো, এরপর সব রুমের লাইট বন্ধ করে নিজ রুমের উদ্দেশ্যে এগুলো, অনিকের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হটাৎ থমকে দাঁড়ালো, কি মনে করে অনিকের রুমে প্রবেশ করে ইতিউতি তাকালো।
কিছুক্ষণ অনিকের বিছানায় বসে থেকে টেবিলে রাখা হুমায়ুন আহমেদের গল্পের বই নিয়ে পড়তে শুরু করলো। ……………..
ছায়া গাছে ঘেরা পথে হাটছে আনমনে, কতকিছু মনে মনে ভাবছে, খেয়াল করলো রওশন হাসি মুখে এগিয়ে আসছে, কাছে এসে ছায়ার দুহাত ধরে বললো, কি এতো চিন্তা করো, আমি তো তোমার পাশে সবসময় আছি।
ছায়া মাথা নিচু করে আবার মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক হলো, রওশন নেই তার জায়গায় ছায়ার হাত ধরে আছে অনিক, ছায়ার দুচোখে অশ্রু বাধ মানলোনা, ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো…..
ঘুমের মধ্যে কান্না করে উঠতেই ছায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ফ্যালফ্যাল করে তাকালো ছায়া, বুঝতে সময় নিলো ও অনিকের রুমে।
ওয়াল ক্লকে সময় সকাল সাতটা দেখে আঁতকে উঠলো ও, দ্রুত উঠে বিছানাটা ঠিকঠাক করে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজ রুমে গেলো।
এ কি করেছে ও, সারা রাত অনিকের বিছানাতে ঘুমিয়েছি, না না এ উচিত হয়নি আর ও এমন স্বপ্ন দেখার কারণ কি, নাহ আজকাল ও বেশিই ভাবছে।
……… চলবে।
ছবিঃ কালেক্টেড।
২৮টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ছায়ার মনের অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কি যে হবে মেয়েটার! অনেক সময়েই নিজের মনের কথা বুঝতে দেরি হয়ে যায়। অনেক সময় বুঝেও কিছু করার থাকেনা।
এবারের পর্ব দিতে অনেক দেরি করলেন ভাইজান। পরের পর্বতে আর কোনো ব্যস্ততার অযুহাত শুনবো না।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন আপু, ছায়ার এই দোনোমোনোতেই হয়ত অনেক কিছুই হারাতে হতে পারে ওর।
সরি আপু, আমি আসলেই খুব ঝামেলার মাঝে থাকি, এছাড়া ইন্সট্যান্ট গল্প লেখার কি যে ঝামেলা তা আপনারা নিশ্চয় বুঝেন, দোয়া রাখবেন আপু, ধন্যবাদ। 😊
রাফি আরাফাত
সব পর্ব পরে একবারে একটা মন্তব্য করবো ভাই। আশা করি ভালো লাগার সীমা ছারাবে এবার হয়তো। ভালো থাকবেন!
ইঞ্জা
দ্রুত পড়ে আসুন ভাই, অপেক্ষায় রইলাম।
ছাইরাছ হেলাল
এই তো ঘনীভূত হচ্ছে স্বপ্ন ঘুম!
দেরি করলে খবর আছে!!
ইঞ্জা
অবশ্যই ভাই, দেরি করলেই তো সব লেইট হয়ে যাবে। 😄
ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রথম থেকে ষোলতম পর্ব পড়ি নাই।
তাই প্রথম থেকে পড়তে হবে দাদা।
ইঞ্জা
গল্প পড়ার অভ্যাস থাকলে পড়ে ফেলুন ঝটপট। 😁
তৌহিদ
ছায়াও মনে হয় অনিকের জন্য খুব দূর্বল হয়ে পড়ছে। কি যে হবে? আর হ্যা, অনিক চলে আসার পরে ছায়া আর রওশনের বাবা মিলে কিছু একটা প্লান করতে চেয়েছিলো। সেটা কবে দেবেন। সাসপেন্স রাখতে লেখকের কি খুব ভালো লাগছে?
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
ইঞ্জা
সাসপেন্সটা কি দেবো তাই ভাবছিলাম ভাই, গল্পের সাথে সাসপেন্সটা কি দেবো বুঝতে পারছিনা। 😉
জিসান শা ইকরাম
লেখকের খাবার প্রীতি যে অনেক তা প্রতি পর্বে খাবারের বর্ণনা পড়েই বুঝতে পারা যায় 🙂
খাবারের নিখুঁত বর্ণনায় মুগ্ধ।
ছায়ার প্রতি অনিকের টান, এমন অনিকের প্রতি ছায়ার দুর্বল হওয়া দেখে ভাবছি শেষ পর্যন্ত এদেরই মিলন হবে।
তবে আফরিনকেও উপেক্ষা করা যাচ্ছেনা।
ছায়া আর আফরিন এর মধ্যে পরে দুজনের চাপেও অনিকের চ্যাপ্টা হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
সিরিজ লেখা এত দেরীতে দিলে হয়?
লেখা উপভোগ্য হচ্ছে,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, জীবনে কতো ভিন্ন স্বাদের খাবার খেলাম তার অর্ধেকের নামই তো ভুলে গেছি, কিন্তু হাঁ একটি কথা বলে রাখি, আমি খাবার খুব অল্পই খাই কিন্তু সাথে ভালোটাই চাই, সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকমের খাদ্যের স্বাদ আমি নিয়ে থাকি, এইখানেও একটা কথা আছে ভাইজান, তা হলো খাদ্যের চেহেরাটা ভালো হতে হবে। 😄
ছায়ার সাথে অনিক না আফরিনের সাথে অনিক, তাও এখনো সিদ্ধান্ত নিই নাই।
ভাইজান আপনি জানেন খুব ঝামেলাতে আছি, দোয়া রাখবেন।
জিসান শা ইকরাম
খাবার আমিও খুব একটা খাইনা, তবে স্বাদ নেই খাবারের বিভিন্ন দেশের, খাবারের চেহারা অবশ্যই ভালো হতে হবে 🙂
দোয়া করি ঝামেলা গুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাক।
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাইজান।
রেহানা বীথি
সুন্দর বর্ণনায় এগিয়ে চলছে গল্প। ছায়া তো মায়ায় পড়ে যাচ্ছে ভীষণভাবে। এই মায়া উপভোগ্য বেশ।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, গল্প ভালো লাগছে শুনে আপ্লুত হলাম। 😊
শিরিন হক
ছায়াকে ভাবনারা কোনদিকে যায় সেই অপেক্ষা পরের পর্বে।
খুব ভালো লিেন ভাই।শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ আপু, আশা করছি দ্রুতই পরের পর্ব দেবো।
মনির হোসেন মমি
ভাবতে দিন,ভাববার সময় এখন ছায়ার। চমৎকার বর্ননা ভাইজান।পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অশেষ ভাই, ইনশা আল্লাহ দ্রুতই পরের পর্ব পাবেন। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার গল্প লেখা দিনকে দিনকে সাব্লিল ও ভাল লাগছে ভাইয়া। কিন্তু কি যেন কি হ……………………
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অশেষ ভাই, দোয়া রাখবেন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
এগিয়ে যান ………………
ইঞ্জা
পাশে থাকবেন ভাই।
রেজওয়ান
অসাধারণ প্লট তৈরিহয়েছে.. পরের পর্বে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে ছায়ার মন দিন দিন অনেক চঞ্চল হয়ে যাচ্ছে..😋
ইঞ্জা
ধন্যবাদ রেজওয়ান। 😊
কামাল উদ্দিন
তারমানে ছায়াও এখন স্বপ্ন বদল করার কথা মনে মনে ভাবছে, ঠিক আছে সামনে এগোলাম……
ইঞ্জা
সময় সময় বলে কথা ভাই।