এক,
সিগারেটে কষে এক টান দিয়ে রেশমীর কাছে জানতে চায় ইদ্রিস কী রে, কয় টুকরা করুম ?
এইগুলা তুমি কি কথা কও ? একটু আগেও মানুষ টা আমার সোয়ামী আছিলো।
আরে, ব্যাক্কল ছেমড়ি, সোয়ামী মইরা গেলে বেগানা পুরুষ হইয়া যায়। বিশ -বাইশ টুকরা কইরা ফালাই, কি কছ?
তুমি যা ভাল বুঝো, তাই করো আমি ভিত্রে গেলাম।
হারামজাদী, ভিত্রে গেলে ক্যামনে হইবো ? সব কাম কি আমি একলা ই করুম নাকি?
আমার এমনেই অনেক ডর করতাছে, কাডাকুডি দ্যাখতে পারুম না।পেট মোচড়ায়া বমি আইবো।যা করোনের তুমি একলাই করো।
রেশমীর কথা শুনে মেজাজ পুরো খিচড়ে যায় ইদ্রিসের। সদ্য ধরানো সিগারেট টা আঙুলের টোকায় ছুঁড়ে ফেলে রেশমীর চল্লিশোর্ধ্ব স্বামীর রোগা পটকা মৃতদেহটা কাটার জন্য মাটিতে বসে পড়ে।
হ্যার লাইগাই মাইয়া মানুষ দিয়ে কুনু কাম হয়না।পত্থমে প্যাঁচ লাগাইবো, পরে প্যাঁচ ছুডানোর লাইগ্যা পুরুষ মাইনষেরে আইতে হইবো। রাগে গজগজ করতে করতে রমজান মিয়ার হাতের ডানা বরাবর একটা কোপ দেয় ইদ্রিস ” থপ “!
ক্যাডায় কইছিলো এই বুইড়া ব্যাডার লগে বিয়ে বইতে ? হুদাই হালার পুতেরে খুনডা করতে হইলো।
কইলাম, চল পলাইয়া যাই।না, মহারানী পলাইবো না। বুইড়ার লগে বিয়া বইসা রসের কতা কওনের আউশ উডছিল।
ক, এহন কতা ক!
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ নিয়ে এবারের কোপ টা দেয় রমজান মিয়ার কন্ঠনালী বরাবর ইদ্রিস। আবারও আওয়াজ হয় ” থপ”
দুই ঃ–
ভয়ে ঘরে বসে থরথর করে কাঁপছে রেশমী।রমজান মিয়া নামের মানুষ টা দুনিয়াতে নেই, এটা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। একটু আগেও যে মানুষটা তার কাছে পানি খেতে চেয়েছিল।এখন তার খন্ড- বিখন্ড শরীর বাইরে বিছানো তেরপলটার উপর পড়ে আছে। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে রমজান মিয়ার বলে যাওয়া শেষ কথাটা এখনও রেশমীর কানে বাজছে,– ” বউ” বড় তিয়াস লাগছে, রে।এক গেলাস পানি দে “।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে আসার পর ইচ্ছে করেই ঘরের দরজায় খিল দেয়নি রেশমী।ইদ্রিস পা টিপে টিপে ঘরে এসে হাতের শাবলটা দিয়ে জোরে একটা আঘাত করেছিল রমজান মিয়ার মাথায়। এক আঘাতেই কাজ হয়ে গেছে। গলগল করে বেরিয় আসা তাজা রক্তের স্রোতে ভিজিয়ে দিয়েছিল পুরো বিছানা। আহারে! মরার আগে মানুষটা একটু পানিও খেয়ে যেতে পারেনি, ভাবে রেশমী।
ভোর হবার আগেই সব ধুয়ে, মুছে পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
আচ্ছা, যদি ওরা ধরা পড়ে যায়৷? রমজান মিয়ার আত্মীয় স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই। যারা আছে, তারাও দূর – দূরান্তে ছড়িয়ে,ছিটিয়ে রয়েছে। আপাতত তেমন কেউ খোঁজ করতে আসবে বলে মনে হয়না। যতদিনে রমজান মিয়ার খোঁজ পড়বে , ততদিনে ইদ্রিসের হাত ধরে বর্ডার পার হয়ে ভারতে চলে যাবে রেশমী।
ইদ্রিস ছিল রেশমীদের এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কেউ পছন্দ
করতো না ওকে। প্রথমদিকে রেশমীও করেনি। তারপর, কখন, কিভাবে, এক সময় মন দিয়ে বসেছে।তা, সে নিজেও বলতে পারবে না। তারপর কিছুদিন পরে ইদ্রিসের কাছে নিজের শরীর টাও সঁপে দিতে বাধ্য হয়। দিন – দিন ইদ্রিস ওর শরীরের নেশায় উম্মাদ হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই তার রেশমীকে প্রয়োজন হতো।
এলাকায় ইদ্রিসের সাথে রেশমীর সম্পর্কের কথা জানাজানি হতে খুব বেশী সময় লাগেনি। পুলিশি একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায়, কয়েকদিন গা ঢাকা দেয়। আর ঠিক সেই সময়েই রেশমীর বাবা, মা জোর করেই চল্লিশোর্ধ্ব এক পাত্রের হাতে তুলে দেয়। রেশমী তখন মাত্র সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পড়েছে।
ইদ্রিস ফিরে এসে সব ঘটনা শোনার পরে রেশমীকে খুঁজে বের করে। তারপর নতুন করে শুরু হয় দুজনার আদিম সেই উদ্দামতা। তবে প্রতিদিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে মেলা মেশায় ইদ্রিসের মন ভরছিল না। রমজান মিয়াকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার চিন্তাটা কথা প্রসংগে রেশমীই প্রথম মাথায় ঢুকিয়ে দেয়।তারপর এটা নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনো চিন্তা করেনি ইদ্রিস। রেশমীকে সব শিখিয়ে দিয়ে সরাসরি একশনে গেছে।
তিন,ঃ–
নির্জন পাহাড়ের মাথায় ছাপরামত একটা ঘর।সেই ঘরের ভেতর আদি রসাত্মক খেলায় মেতে উঠেছে দু’জন তরুন– তরুনী। ভারতের বর্ডারে বেশ কড়াকড়ি থাকায় রেশমী ও ইদ্রিসের ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল।তাই তাদের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
রেশমীদের এলাকা থেকে কয়েক দিনের জন্য পালিয়ে এখন কয়েকটা দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছে।
ঠক! ঠক! ঠক!
বাইরে থেকে কে যেন দরজায় টোকা দিচ্ছে।ইদ্রিস কান খাড়া করে। দরজায় আবারও টোকা দেয়ার শব্দ শোনা যায়।
ঠক! ঠক! ঠক!
এবারের শব্দটা আগের চেয়ে জোরে।ইদ্রিস চৌকি থেকে উঠে লুংগি ঠিকঠাক করে গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জিটা৷ চাপিয়ে নেয়।
কি হইলো৷? তুমি কই যাও ? রেশমী উদ্বিগ্ন সুরে জানতে চায়।
দরজায় কে টোকা দিতাছে, দেখতে হইবো না?
এই ভিনদেশী জায়গায় আমরা কাউকেই জানিনা, চিনিনা।এত রাইতে না গেলে হয়না?
ধুরো, পাগলী,!ভয় পাইছ না । তুই ইদ্রিসকে চিনোছ না ?
ইদ্রিস দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়।
রেশমী চৌকিতে উঠে বসে পরনের শাড়ীর ভাজ ঠিকঠাক করে। হঠাৎ বাইরের অন্ধকার চিরে একটা আর্তচিৎকার ভেসে আসে। ওটা ইদ্রিসের গলার আওয়াজ না ?
প্রচন্ড ভয়ে রেশমীর শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে৷ ইদ্রিসের কিছু কি হয়েছে? রেশমী কি বাইরে গিয়ে দেখবে? ওর বাইরে গিয়ে দেখতে মন চাইছে, কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।রেশমী উঠে দরজার খিল টা তুলে দিয়ে, চৌকিতে ফিরে এসে বসে ভয়ে কাঁপতে থাকে।
ইদ্রিসের চিৎকার শোনার পর অনেকটা সময় কেটে গেছে।এখন বাইরে থেকে থপ- থপ আওয়াজ আসছে।রেশমীর কাছে শব্দটা বেশ পরিচিত মনে হয়।ইদ্রিস যেদিন রমজান মিয়ার শরীরটাকে টুকরো- টুকরো করে কাটছিল,ঘরের বাইরে থেকে ঠিক এরকম ই একটা শব্দ ভেসে আসছিল।
সাধারণত কসাইরা মাংস কাটার সময় অনেকটা এরকম শব্দ হয়।
একটা সময় শব্দ থেমে যায়।শব্দটা থেমে যাওয়ায় রাতের নিস্তব্ধতা যেন রেশমীর বুকে আরও জোরে আঘাত হানতে শুরু করে। দরজায় খুটখাট আওয়াজ পেয়ে রেশমী মুখ তুলে তাকায়।সে বিষ্ফোরিত ভাবে তাকিয়ে দেখে, একটু আগে তার নিজ হাতে খিল দেয়া দরজাটা আপনাআপনি খুলে গেছে। খোলা দরজা দিয়ে কনুই থেকে কাটা রক্তমাখা একটা হাত শূন্যে ভেসে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।
আচমকা ঘরের ভেতর একটা পরিচিত কন্ঠস্বর কথা বলে ওঠে ” বউ” বড় তিয়াস লাগছে,রে। আমারে এক গেলাস পানি দে। হেইদিন কইলাম চাওনের পরেও পানি দ্যাছ নাই।
রেশমী কথা গুলো শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।( অজ্ঞান হয়ে পড়লো।)।
১৪টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আহারে, এতদিন পর ব্লগে এসেই ভুতের গল্প পড়তে হলো.. ভয় পাইসি!
অনৈতিক সম্পর্কের জেরে এমন কতশত রমজানের টুকরো করা দেহ পোঁকায় খেয়ে মাটিতে মিশিয়ে ফেলে, কিন্তু ইদ্রিস আর রেশমীরা চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গল্পটা অতিপ্রাকৃতিক, তাই রমজান মিয়া প্রতিশোধ নিতে আসতে পেরেছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
উর্বশী
সাবিনা ইয়াসমিন আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ সালাম। নাহ! ভয় পাইয়েন না।
চমৎকার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি আপু।অনেক ভালোবাসা রইলো। ভাল থাকুন,শুভ কামনা সব সময়।
অনন্য অর্ণব
দারুন বিয়োগান্তক গল্প। সমাজের অপরাধ প্রবণতার অন্যতম প্রধান দিক এটা। খুব সুন্দর সাবলীল উপস্থাপনা।
উর্বশী
অনন্য অর্নব,
আন্তরিক ধন্যবাদ,ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনার সাথে একমত পোষণ করছি। ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
মনির হোসেন মমি
পরোকিয়া সম্পর্ক কখনো জীবনকে শান্তি দেয় না বরং উল্টো জীবন অতিষ্ট করে দেয়।রমজানের শেষ ইচ্ছাটাই তার কাল হয়ে দাড়াল।
চমৎকার উপস্থাপনা।
উর্বশী
মনির হোসেন মমি ভাইয়া,
আপনার চমৎকার বিশ্লেষণ ধর্মী মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করছি।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পাপের প্রায়শ্চিত্ত ইহকালেই অনেকটা ভোগ করে যেতে হয়।পরকীয়া এখন সমাজের বিষফোঁড়া, কত পরিবার, সম্পর্ক শেষ করে দিচ্ছে। পরকীয়ার জেরে বাপ-মা পর্যন্ত সন্তানকে খুন করে এরচেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে? খুব সুন্দর গল্প তবে এটা বাস্তব ঘটনার প্রতিফলন।
উর্বশী
সুপর্না ফাল্গুনী আপু,
আপনার চমৎকার বিশ্লেষণ ধর্মী মন্তব্য। সহমত পোষণ করছি। জ্বি হ্যা,বাস্তবতার আলোকেই লেখা আপু। বিশাল কাহিনী। ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ফয়জুল মহী
আরে বন্ধু তুমি ডর লাগার গল্প লিখাতেও অদ্বিতীয়।
উর্বশী
ফয়জুল মহী,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
যাক বুঝা গেল ডাহা ফেল করিনি,ভালভাবেই পাশ করে গিয়েছি।ভাল থেকো শুভকামনা সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
ভূতের গল্পে স্বাগত।
আরও মন দিয়ে ভাল করে লিখুন।
উর্বশী
ছাইরাছ হেলাল ভাইয়া।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জ্বি,চেষ্টা করবো মনযোগী হওয়ার।ভাল ও সুস্থ থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পানি খাওয়া আর হলো না বেচারা স্বামীর। যা হোক জ্ঞান তাড়াতাড়ি ফিরুক এবং আমরাও এমন ভূতমাখা গল্প আরো চাই।। শুভ কামনা।
উর্বশী
রোকসানা খন্দকার রুকু আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ ভালোবাসা রইলো।
জ্বি, চেষ্টা করবো আরও ভূতমাখা লেখা দেয়ার।
ভাল ও সুস্থ থাকুন শুভ কামনা সব সময়।