একান্ত অনুভূতির ডায়েরি-৪

তৌহিদুল ইসলাম ৩ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০৯:০৫:৩২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৫ মন্তব্য

আমি দূর থেকে আধুনিক পৃথিবীর দুষিত নগরায়ন দেখে যাচ্ছি দিনের পর দিন। যেখানে বিছানায় চোখ মুদলেই আরাম ঘুমে কেটে যায় গোটা রাত কিন্তু ভোরে চোখ মেললে সজীব বিশুদ্ধ বাতাসের সেই ঝাঁঝাঁলো ঘ্রান আর নাকে প্রবেশ করেনা ইদানীং। স্মৃতিভাণ্ডারের হাজারো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। এ যেন এক অন্য জগত! বুকের সংগোপনে লুকিয়ে রাখা এক অনন্য ‘স্বপ্নপুরি’। যেখানে আরেকটিবার ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল আকুতি আমার। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়?

যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের অবাধ স্বাধীনতার চিন্তাহীন নির্মল এক অধ্যায়। তাই মাঝে মাঝেই ফিরে তাকাই, ফিরে তাকাতে হয়। ভাবতে হয় সেই সব দিনের কথা। কখনোবা ভাবতে ভাবতে ছলছল করে উঠে চোখ,কখনোবা অকস্মাৎ ফেটে পড়ি হাসিতে। তবুও সেসব মুহূর্তকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে ভালোই আছি,ভোলাতো যায়না আর।

আমি কিন্তু মহাকালের স্রোতে হাড়িয়ে যেতে চাইনি,হতে চাইনি নাটাই ছাড়া ঘুড়ি। অথচ সবাই অবুঝ এক মায়ায় ঘেরা বন্ধনের সুতোখানি আঁকড়ে ধরে আছি খড়কুটো ভেবে। আমি কখনো হতে চাইনি মহাশুন্যতার এক নীথর কম্পন। সেখানে বিরাজমান এক অসহ্য নীরবতা আমাকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয়- একদিন আমারো সোনালি অতীত ছিল।

মাঝেমধ্যে মুখোশের পেছনে মানুষগুলোর প্রতি তীব্র ঘৃনা চলে আসে। তাদের উপর হামলে পড়তে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় থুথু ছিটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই,কিন্তু পারিনা। পারিনা তাদের প্রতি ঘৃণা নিক্ষেপ করতে। কারণ,তাদের সাথে যে সুখময় স্মৃতিটি জড়িয়ে আছে তা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মধুর স্মৃতিগুলো আলিঙ্গন করে। তখন আর মুখোশধারীকে দোষ দিতে পারিনা। আমি নিজেও যে মুখোশধারী! তখন নিজেকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলি- ইশ্বর! আমাকে কেন দেখালেনা বিশ্বস্ত মানুষ?

প্রিয় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে শেষবারের মতন আর দেখার ইচ্ছে করেনা আমার। মনেহয় কি দরকার? তার হাস্যজ্জল মুখের স্মৃতিটুকুই না হয় বেঁচে থাকুক আমার মাঝে। মানুষ যখন মারা যায় তখন তার মৃতদেহের সৎকার কিভাবে হবে তা নিয়ে তার নিকটজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কবরস্থ করা বা ভস্ম করার চেষ্টা হয়। কেউ ভাবেননা যাবার বেলায় তার মনে কী ছিল? কী আশা বা কষ্ট নিয়ে সে চলে গেল? মাটি কিংবা আগুন তার দেহকে গ্রাস করে,নিঃশেষিত করে- কিন্তু মন? সে তখনো অধরাই থেকে যায়। হায়!তার মনের খবর কেউই নিলোনা।

তখন উপরওয়ালাকে প্রশ্ন করি- হে বিধাতা! আমার যদি মনে হয় যে উপরে কেউ আছেন তাহলে তোমারো কি মনে করা উচিত নয় যে নীচে কেউ আছে?

বিশ্বাসে মেলায় প্রেম তর্কে বহুদূর! প্রেম বিশ্বাসের উপর নাকি বিশ্বাস প্রেমের উপর গড়াগড়ি করে তা আজো রহস্যময়। মিশরের রানী রাজা পঞ্চম ফারাওয়ের ছোট স্ত্রী লসট্রিস যেদিন প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলো সেদিন তার প্রেমিক ট্যানাস,প্রেমের দেবী হাপী’র যোনী থেকে প্রবাহমান নীলনদের তীরে বসে মদ গলাধঃকরণ করছিলো। অথচ ফারাও সেই সন্তানের জন্মদাতা পিতা ছিলেন না।

বিরহী ট্যানাস প্যাপিরাসের পাতায় লিখেছিলেন-

লসট্রিস,প্রিয়তমা আমার! লাল গোলাপের কাঁটার আঘাতে যতফোঁটা রক্ত ঝড়েছিলো,তার প্রতিটি ফোঁটায় আমার নাম লিখে তোমার স্বপ্নে পাঠিয়ে দিলাম। উত্তর দিও কেমন?

সুখ-শান্তি,ক্ষমতা,ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে লসট্রিস ফিরে এসেছিলো ট্যানাসের কাছে তবে ততদিনে ফারাওয়ের মমিকৃত দেহের আর্তনাদ ঢাকা পড়ে গিয়েছে কংক্রিটের আস্তরে, পিরামিডের গর্ভে!

আহা প্রেম! যুগ যুগ ধরেই বেদনাবিধুর তুমি। অন্তরাত্মাদের এসব আর্তনাদ শুনতে কি পাও?

৬৯৬জন ৫৬৪জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ