আমি দূর থেকে আধুনিক পৃথিবীর দুষিত নগরায়ন দেখে যাচ্ছি দিনের পর দিন। যেখানে বিছানায় চোখ মুদলেই আরাম ঘুমে কেটে যায় গোটা রাত কিন্তু ভোরে চোখ মেললে সজীব বিশুদ্ধ বাতাসের সেই ঝাঁঝাঁলো ঘ্রান আর নাকে প্রবেশ করেনা ইদানীং। স্মৃতিভাণ্ডারের হাজারো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। এ যেন এক অন্য জগত! বুকের সংগোপনে লুকিয়ে রাখা এক অনন্য ‘স্বপ্নপুরি’। যেখানে আরেকটিবার ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল আকুতি আমার। কিন্তু চাইলেই কি সব হয়?
যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের অবাধ স্বাধীনতার চিন্তাহীন নির্মল এক অধ্যায়। তাই মাঝে মাঝেই ফিরে তাকাই, ফিরে তাকাতে হয়। ভাবতে হয় সেই সব দিনের কথা। কখনোবা ভাবতে ভাবতে ছলছল করে উঠে চোখ,কখনোবা অকস্মাৎ ফেটে পড়ি হাসিতে। তবুও সেসব মুহূর্তকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে ভালোই আছি,ভোলাতো যায়না আর।
আমি কিন্তু মহাকালের স্রোতে হাড়িয়ে যেতে চাইনি,হতে চাইনি নাটাই ছাড়া ঘুড়ি। অথচ সবাই অবুঝ এক মায়ায় ঘেরা বন্ধনের সুতোখানি আঁকড়ে ধরে আছি খড়কুটো ভেবে। আমি কখনো হতে চাইনি মহাশুন্যতার এক নীথর কম্পন। সেখানে বিরাজমান এক অসহ্য নীরবতা আমাকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয়- একদিন আমারো সোনালি অতীত ছিল।
মাঝেমধ্যে মুখোশের পেছনে মানুষগুলোর প্রতি তীব্র ঘৃনা চলে আসে। তাদের উপর হামলে পড়তে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় থুথু ছিটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই,কিন্তু পারিনা। পারিনা তাদের প্রতি ঘৃণা নিক্ষেপ করতে। কারণ,তাদের সাথে যে সুখময় স্মৃতিটি জড়িয়ে আছে তা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মধুর স্মৃতিগুলো আলিঙ্গন করে। তখন আর মুখোশধারীকে দোষ দিতে পারিনা। আমি নিজেও যে মুখোশধারী! তখন নিজেকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলি- ইশ্বর! আমাকে কেন দেখালেনা বিশ্বস্ত মানুষ?
প্রিয় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে শেষবারের মতন আর দেখার ইচ্ছে করেনা আমার। মনেহয় কি দরকার? তার হাস্যজ্জল মুখের স্মৃতিটুকুই না হয় বেঁচে থাকুক আমার মাঝে। মানুষ যখন মারা যায় তখন তার মৃতদেহের সৎকার কিভাবে হবে তা নিয়ে তার নিকটজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কবরস্থ করা বা ভস্ম করার চেষ্টা হয়। কেউ ভাবেননা যাবার বেলায় তার মনে কী ছিল? কী আশা বা কষ্ট নিয়ে সে চলে গেল? মাটি কিংবা আগুন তার দেহকে গ্রাস করে,নিঃশেষিত করে- কিন্তু মন? সে তখনো অধরাই থেকে যায়। হায়!তার মনের খবর কেউই নিলোনা।
তখন উপরওয়ালাকে প্রশ্ন করি- হে বিধাতা! আমার যদি মনে হয় যে উপরে কেউ আছেন তাহলে তোমারো কি মনে করা উচিত নয় যে নীচে কেউ আছে?
বিশ্বাসে মেলায় প্রেম তর্কে বহুদূর! প্রেম বিশ্বাসের উপর নাকি বিশ্বাস প্রেমের উপর গড়াগড়ি করে তা আজো রহস্যময়। মিশরের রানী রাজা পঞ্চম ফারাওয়ের ছোট স্ত্রী লসট্রিস যেদিন প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিলো সেদিন তার প্রেমিক ট্যানাস,প্রেমের দেবী হাপী’র যোনী থেকে প্রবাহমান নীলনদের তীরে বসে মদ গলাধঃকরণ করছিলো। অথচ ফারাও সেই সন্তানের জন্মদাতা পিতা ছিলেন না।
বিরহী ট্যানাস প্যাপিরাসের পাতায় লিখেছিলেন-
লসট্রিস,প্রিয়তমা আমার! লাল গোলাপের কাঁটার আঘাতে যতফোঁটা রক্ত ঝড়েছিলো,তার প্রতিটি ফোঁটায় আমার নাম লিখে তোমার স্বপ্নে পাঠিয়ে দিলাম। উত্তর দিও কেমন?
সুখ-শান্তি,ক্ষমতা,ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে লসট্রিস ফিরে এসেছিলো ট্যানাসের কাছে তবে ততদিনে ফারাওয়ের মমিকৃত দেহের আর্তনাদ ঢাকা পড়ে গিয়েছে কংক্রিটের আস্তরে, পিরামিডের গর্ভে!
আহা প্রেম! যুগ যুগ ধরেই বেদনাবিধুর তুমি। অন্তরাত্মাদের এসব আর্তনাদ শুনতে কি পাও?
১৫টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
। ইচ্ছে হয় থুথু ছিটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই,কিন্তু পারিনা। পারিনা তাদের প্রতি ঘৃণা নিক্ষেপ করতে। কারণ,তাদের সাথে যে সুখময় স্মৃতিটি জড়িয়ে আছে তা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মধুর স্মৃতিগুলো আলিঙ্গন করে। তখন আর মুখোশধারীকে দোষ দিতে পারিনা।
কিন্তু যে শরসের তেলে মাছ ভাজবেন তাতেই তো ভুত আপনার কথাই আমার তাই।
তাই কার কাছে চাইব আশ্রয় কে দেবে ভবিতসত বা আগামি দিনের জন্য সুশীতল নিরমল বায়ু প্রবাহিত রাখার নিয়াহচউওয়া।
তৌহিদ
জ্বী ভাই, আশেপাশেই থাকা ভুত গুলি নিয়েই যত সমস্যা। ভবিষ্যৎ অন্ধকার আমাদের।
শুভকামনা জানবেন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
হইত নেই মুক্তি আমাদের এউ জঘন্য ব্যাবস্থা থেকে।তবুও আশায় বুক বাধি।
ছাইরাছ হেলাল
আহা আহা্ ,এতো অমর প্রেমের মহা কাব্য!!
আসলে প্রেম বলে কিচ্ছু নেই, সব ফক ফকা!!
ট্যানাসের কাহিনীটি এই প্রথম জেনে ভাল লাগল।
তৌহিদ
প্রেম বলে কিচ্ছু নেই, যা আছে সব প্রয়োজন। কেন যে একে প্রেম বলে ভাবে সবাই!!
সাবিনা ইয়াসমিন
বিশ্বাসে মেলায় প্রেম তর্কে বহুদূর! প্রেম বিশ্বাসের উপর নাকি বিশ্বাস প্রেমের উপর গড়াগড়ি করে তা আজো রহস্যময়।…… এই ব্যাপারটা আমার মাথায়ও ঘুরতে থাকে। কোনটা আগে?
তৌহিদ
উত্তর খুঁজে পেলে জানিয়েন আপু, আমিও জানতে চাই। বিশ্বাসকে হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজছি ☺
জিসান শা ইকরাম
প্রিয় কারো মৃত্যু হলে আমিও তাঁকে দেখতে যেতে চাইনা,
ভিতর থেকে দেখতে না যাওয়ার প্রবল আপত্তি আসে,
তারপরেও দেখতে যেতে হয়।
ডায়েরী ভালো লেগেছে।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সময় যেতে হয় ভাই, সামাজিক রেওয়াজ যে! তবে পারতপক্ষে আমি মৃত মানুষটাকে দেখিনা। স্মৃতিতে হাসিমাখা মুখই না হয় থাকুক।
ধন্যবাদ ভাই।
রেহানা বীথি
নিয়মরক্ষার্থে শেষবারের মত প্রিয়জনের নিষ্প্রাণ মুখের মুখোমুখি হওয়া ভয়ানক কষ্টকর।
আর প্রেম, সে তো রহস্যের চাদরে মোড়ানো সবসময়। আর রহস্যের প্রতি টান দুর্নিবার। বিশ্বাস টলে যাবে জেনেও বিশ্বাস করি।
তৌহিদ
জ্বী আপু, বিশ্বাস করতে হয় তবুও। এই নিয়েই বেঁচে আছি সবাই।
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই। গানটা শুনেছেন?
তৌহিদ
হ্যা শুনেছি আপু। প্রেম আছে তবে বিশ্বাসের বড্ড অভাব যে!!
ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রেম একধরণের ভয়ংকর বোমা!
আবার প্রেম একধরণের প্রতিমূর্তি স্বরূপ। প্রেমের প্রতিমূর্তিকে যত সাজাবে ততো মনের মিলন ঘটবে। আবেগ ব্যতীত মনের মিলনে যে প্রেম সৃষ্টি হবে সেই প্রেম শ্রেষ্ঠ।
আজকাল আবেগ ছাড়া প্রেম হয়না।
আবার প্রেমে আবেগ বলতে কিছু নেই।
অতএব কিছু প্রেম সত্য এবং কিছু প্রেম মিথ্যা।
….
ভিন্ন মতামত…
তৌহিদ
মতামত পছন্দ হয়েছে দাদা। অনেক ধন্যবাদ।