বৃষ্টিকে অপছন্দ করার কোন কারণ নাই বরং একটা সময় ছিলো যখন নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টির জন্য মনে মনে প্রার্থনা করতাম। ঈশ্বর তখন বেশীর ভাগ সময়ে আমার অনুকূলে ছিলেন বলেই শুল্ক ভ্যাট ছাড়াই আমার প্রার্থনা কবুল হয়ে যেতো। ক্লাস টু পড়ুয়া কোন অবোধ ছেলের প্রার্থনা ফিরিয়ে দেবার মতো ধৃষ্টতা ঈশ্বর অত সহজে দেখাতেন না। পেট ব্যাথা বলে আর ক’দিন স্কুল কামাই করা যায় তারচে বৃষ্টি এলেই ঘর বন্দি হয়ে থাকা যায় স্কুল যাবার জন্য পথে নামতে হয়না।
এখন সময় পাল্টে গেছে পা বাড়ালেই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি। ফুটপাতে পান সিগারেটের অস্থায়ী দোকানের মতো ভার্সিটির দোকান গুলোও যে থরে থরে সাজানো যেন তারা ডিগ্রির পসরা সাজিয়ে বসে আছে। কার কোনটা লাগবে টাকা দাও আর বেছে বেছে নিয়ে যাও কিন্তু টাকা দিয়ে ডিগ্রি কেনার ব্যবস্থা আগে ছিলো না বলে মাইল খানেক পথ চলার পর স্কুলের সন্ধান মিলত, সেই স্কুলে স্যারের বেতের বাড়ি সহ্য করে যে টিকে যেত সে-ই ডিগ্রি অর্জন করার সামর্থ্য রাখতো। আমি অত কষ্টের পক্ষে ছিলাম না বলেই ডিগ্রির চাইতে বৃষ্টি আমার কাছে আরাধ্য। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন প্রেমপত্র লেখার যোগ্যতা অর্জন করি তখন প্রেম পত্রের প্রতিটা লাইনে প্রিয়া বন্দনার সাথে থাকতো বৃষ্টি বন্দনা। বৃষ্টি আর প্রিয়ার মধ্যে কোন তফাৎ ছিলোনা যেন একে অন্যের পরিপূরক। লেখি বলে লেখতে হয়! সাগর নদী আকাশ মেঘ বৃষ্টি ছাড়া কি আর প্রেম পত্র জমে ? সেসময় বৃষ্টিতে ভেজাও হয়েছে অনেক তবে বৃষ্টির ভালোবাসায় সিক্ত হতে নয় বরং অভিমানী চোখের জলকে লুকানোর জন্য।
প্রযুক্তির সুবাদে আকাশের বৃষ্টি এখন আমার পকেটে খেলা করে, আমার মোবাইলে কেউ কল দিলে বৃষ্টির পড়ার শব্দ যে শোনা যায়! তেমনি একদিন আমার পকেট বৃষ্টি ঝরছিলো আমি আস্তে আস্তে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দেখলাম প্রিয়া ফোন করেছে। এবার আর আমার রক্ষে নেই। ও জন্মান্তরের ঘর ভেঙ্গে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে নতুন ঘর বাঁধার আশায়। আমিও বেরিয়ে পড়ি ঘর থেকে পথে তখন ঈশান কোণে লালের আভা বৃষ্টিকে প্রণোদিত করে চলেছে। বৃষ্টির জল আর কাঁদা মাড়িয়ে যতক্ষণে প্রিয়ার দেখা মেলেছে ততক্ষণে কাজি সাহেব অফিসে তালা ঝুলিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে পালিয়েছে। কি আর করা চারটি হাত এক সাথে মিলে গেলো এবার না হয় একটু বৃষ্টিতে ভেজা যায়, ভিজলাম ও ইচ্ছে মতোন। চিঠির পাতায় আর ফোনের ভেতর বৃষ্টিকে নিয়ে কম হৈচৈ করিনি কিন্তু বাস্তবের আমি ছিলাম বৃষ্টির ঘোর বিরোধী। বৃষ্টির কারণে অফিস আসতে দেরি হোল এই খোড়া অজুহাত যে বড়বাবুর কাছে ভাত পায় না। অগত্যা বৃষ্টিতে ভেজো আর অফিসে এসো আর রাতে খুক খুক করে কাশো, তার উপর প্রিয়া বকুনি। সহ্য করা যায় এও ?
আজ প্রিয়া বড্ড বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছে, ঘর সংসারে মন দিতে গিয়ে আমাকেও ভুলে বসেছে বৃষ্টির স্থান সেখানে আছে কিনা তাও জানিনা। অথচ একটা সময় আমি না চাইলেও বৃষ্টি এলেই টানা হেঁচড়া শুরু করে দিতো আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। বৃষ্টিতে ভিজে যত বারই জ্বর বাঁধিয়ে শয্যাশায়ী হয়েছি ততবারই ক্ষমা চেয়ে বলেছে এইবারই শেষ আর নয়, কিন্তু বৃষ্টি এলেই সে সব ভুলে যেতো। বড় বাবু যে চেয়ারে বসে আমাকে ধমক দিতো সে চেয়ারটা এখন আমার দখলে। ওই চেয়ারটা আমি এখন ইচ্ছে মতোন ব্যবহার করতে পারি। চাইলেই ওই চেয়ারটা ছেড়ে সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজতে পারি কিন্তু সঙ্গী পাইনা। পড়ন্ত বিকেলে প্রিয়া যখন রান্না ঘরের পাচক তখন ঝুম বৃষ্টি নামে। আমি আমার দুবছর বয়েসী ছেলের হাত ধরে বলি আয় বাবা দুজনে বৃষ্টিতে ভিজি, ও আমার চোখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আমার আর বৃষ্টিতে নামা হয়না, চোখের জলেই বৃষ্টি নামাই। এ বৃষ্টি সুখের বৃষ্টি। আমার দু বছর বয়েসি ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেই যে বৃষ্টিতে ভেজার সুখ লাভ করা যায় তা আগে বুঝিনি কখনো।
জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
১১ই জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ।
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
স্মৃতির বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা বৃষ্টি আর প্রিয়ার কথা পড়লাম । ফেলে আশা দিনগুলোর আমেজ ভিন্ন রকমের। এর সাথে বর্তমানের তুলনা হয়না।
চোখের জলের বৃষ্টি হোক আর আসল বৃষ্টি হোক ছেলে যেন থাকে হাসি আনন্দে ।
ভালো লেগেছে খুব , অন্যান্য লেখার মতই।
জবরুল আলম সুমন
ধন্যবাদ দাদু, ভালো লাগে আপনার মতো বিদগ্ধ পাঠকের প্রশংসা পেলে, অনেক উৎসাহ মেলে। ভালো থাকুন সব সময়।
লীলাবতী
আহা আজ সারাদিন আকাশ মেঘলা ছিল, ছিটেফোটা বৃষ্টিও ছিল। আপনি চমত্কার লিখেন।
জবরুল আলম সুমন
আজ আমার আকাশও মেঘলা ছিলো সারাদিন যদিও বৃষ্টির দেখা পাইনি…
ছাইরাছ হেলাল
আজকে প্রায় অসময়ের বৃষ্টিতে এমন লেখা পড়ে ভালই লাগল ।
বৃষ্টি আমারও খুব প্রিয় ।
জবরুল আলম সুমন
ধন্যবাদ হেলাল ভাই, ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো থাকুন সব সময়।
শিশির কনা
বৃষ্টি আমারও প্রিয় । এখনো ভিজি মাঝে মাঝে । আনন্দাশ্রুর আনন্দের তুলনা নেই।
জবরুল আলম সুমন
ঠিক বলেছেন। আনন্দাশ্রুর আনন্দের সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয়না কিন্তু আনন্দাশ্রু অত সহজেও বের হয়না, এটা সাধনা করে বের করতে হয়।
যাযাবর
আজো বৃষ্টি , আজো সৃতির মাঝে ডুবে থাকা …………………
জবরুল আলম সুমন
স্মৃতি ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন, স্মৃতিতে জাবর কেটেই বেঁচে আছি…
আদিব আদ্নান
বৃষ্টি অনেক পছন্দের ঋতু কিন্তু এ সময়ের বৃষ্টি ভাল লাগছে না একটুও ।
লেখা কিন্তু ভাল লেগেছে ।
জবরুল আলম সুমন
সত্যি বলছি… বৃষ্টি কখনোই আমার পছন্দের ছিলোনা। সিলেট হচ্ছে বৃষ্টি সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। টানা বৃষ্টি কাকে বলে তা সিলেট না এলে বুঝার উপায় নেই। একটানা ১৫/২০ দিন ধরে বৃষ্টির ঘ্যানর ঘ্যানর কত আর ভালো লাগে…?
Ajharul H Shaikh
Sundor laglo!
জবরুল আলম সুমন
ধন্যবাদ এজহারুল ভাই… ভালো লাগলো পোষ্টটা পড়েছেন দেখে।
নীলাঞ্জনা নীলা
বৃষ্টিকে খুব মিস করছি সুমন । কেমন আছিস ?
জবরুল আলম সুমন
আমি ভালো আছি দিদি, তবে দৌড়ের উপর আছি। তুই কেমন আছিস? গত দু দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে… পিটুর পিটুর বৃষ্টি আর ভাল্লাগেনা… আজ অগত্যা বৃষ্টির কবলে পড়ে গেলাম, ভিজেছি অনেক জানিনা কি অবস্থা হবে…