ঈদ তো চলেই এল। দরজায় কড়া নাড়ছে। আমিও তাই বেশ উত্তেজিত হচ্ছি। উত্তেজিত বেশ ঢিলে ঢালা তালে হচ্ছিলাম। কিন্তু রাত একটার সময় শপিং করতে যেয়ে যেই মূহুর্তে ভদ্রলোক গুলি বিদ্ধ হলেন তখন আমি নড়েচড়ে বসলাম। আরে ঈদ তো চলেই এল। মার্কেট গুলি এখন আর রাত আটটার মধ্যে বন্ধ হচ্ছে না।
আজ গেলাম তাই বেশ রাত করেই বাজারে। আমার এখানে বেশ রাত মানে সন্ধ্যা নয়টা। প্রচন্ড ভিড়। কে বলে মানুষের হাতে টাকা নাই। টাকাতো মনে হয় শুধু আমার হাতেই নাই। কি কিনি ভাবতে ভাবতে একটা কসমেটিক্স এর দোকান ফাকা দেখে ঢুকে পরলাম। হাতের ব্যাগটা ডেক্স এর উপর রেখে গভীর মন দিলাম চুড়ি ফিতার দিকে। এক ছেলে সালাম দিল আমি চিনলাম না। সে চিনে বেশ হাসি মুখে —-আপা ভাল আছেন ?জিজ্ঞাসা করলো।
বেশ কিছুক্ষন মন দিয়ে চুড়ি ফিতা দেখে শ্যাম্পু, চুড়ি ফিতা হাবিজাবি কিনে মোট দাম দুইহাজার টাকা হলো।
টাকা দেবার সময় ব্যাগের ভেতরে যে টাকার ছোট ব্যাগটা থাকে তা পেলাম না। মহা চিন্তিত হয়ে ব্যাগের এদিক ও দিক হাতাতেই বেশ কিছু হাজার টাকার নোট পেয়ে গেলাম। খুব খুশি বাহ আমার কাছে এত টাকা আছে? পরিচিত দোকানদার একবার বললো —-আপা টাকা না থাকলে পরে পাঠায় দিয়েন। আমি উতসাহের সাথে বললাম —নানা টাকা পেয়েছি। টাকা দেবার পর গুনে দেখি আমার কাছে আরও আট হাজার আছে। ছোট মফস্বল শহর। সবাই আমাকে চেনে। আমি বাসন পত্রের দোকানে গেলাম। নিজের জন্য কড়াই , প্রেসার কুকার, চাএর কেটলি,এমন টুকিটাকি আর বাচ্চাদের মাষ্টারের জন্য ঈদ গিফট কিনলাম।
কাপড়ের দোকান থেকে বাসার কাজের লোকদের কাপড় ও কিনলাম। শেষ পর্যন্ত হাতে শুধু রিক্সা ভাড়া রেখে যেই বাসন পত্রের দোকানে এসেছি বাসনগুলি নিয়ে রিক্সায় চড়ব, সাথে সাথে সেই ছেলে আবার আমার সামনে এসে হাজির। —–আপা আমার বড় বোন ভুল করে আপনার ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল। নিন আপনার ব্যাগ দেখুন সব ঠিক আছে কিনা।? পুরাই টাসকি। বলে কি? আমার ব্যাগে তো বড়জোড় তিন হাজার থাকতে পারে। আর আমি এই টাকা পাবার খুশিতে এ কি করলাম।
খুশির গুনগুন এখানেই শেষ। বোকার মত চোর চোর ভাব নিয়ে ব্যাগের দিকে তাকালাম।আসলেইতো ব্যাগটা আমার না। কিন্তু আমার ব্যাগের মতই। আমার ব্যাগ আড়ং এর। এই ব্যাগে কোন আড়ং সিল খুজে পেলাম না। আমারটা একটু কফির সাথে সবুজ মিশ্রিত রং কিন্তু হাতের টা কালচে। ভিতরের ডিজাইন টাও আলাদা।
মিন মিন করে বললাম—– ভাই আমি তো টাকা খরচ করে ফেলেছি। আপনি বাসায় চলুন আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি। সেই ছেলে ধমকের সুরে বলল —-আশ্চর্য আপনি ব্যাগ চেনেন না। লজ্জার আমি নত মুখ। আমাকে ধমকাতে দেখে দোকানদার এগিয়ে এল। আমাকে এখানে এলিট শ্রেনীর মানুষ কেন যেন মনে করে। —–কি হইছে আপা?। আমি কি জবাব দেব সম্পূর্ন বোবা।
ছেলেটা বেশ মেজাজ নিয়ে বলল— কি মুশকিল দেখুন উনি আন্যের ব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন আর এখন বলছেন টাকা শেষ করে ফেলেছেন ওনার বাসায় যেতে হবে টাকা নেবার জন্য। চারিদিকে কেমন করে যেন ভীড় জমে গেল। আমি মান সম্মান সব খুইয়ে বোবা হয়ে রইলাম। দোকানদার তার ক্যাশ বাক্স থেকে দশ হাজার টাকা বেড় করে দিয়ে বলল—- যান টাকা নিয়ে যান। মানি লোকের মান রাখতে হয়। আমি দিলাম আপার টাকা। বুইঝেন কারে কাঁদাইলেন । আসলে তখন আমার অপমান ও দোকানদারের মমতায় চোখে পানি চলে এসেছে।
সেই ছেলে টাকা গুলি পরিক্ষা করে বলে —-এই চারটা নোট নকল। লেগে গেল আর এক গ্যাঞ্জাম। কসমেটিক্স এর দোকানদার ও এসে হাজির। —-আমার কাছে দুইটা নকল পাইছি। আপা দিছেন যে দুইটা নোট।
ত্রান কর্তা কসমেটিক্স এর দোকানদার ঐ ছেলেকে ধরলো —-এই তোমার বোন কই?
—–বাসায় চলে গেছে ।
—–আপা আমার দোকান থেকে পরে গেছে। তাইলে আপার ব্যাগ তুমিই নিছিলা। আপা তাই কইল আপা টাকার ব্যাগ আনে নাই। আর তুমি এখন আপার ব্যাগ ফেরত দিয়া কইতাছ টাকা গুলা নকল। তার মানে তোমার ব্যাগে নকল টাকা। এই ধর ব্যাটারে। আমার নিজস্ব ব্যগেও যে পাচটা পাঁচশ টাকার নোট ছিল তাও নকল।
মোট কথা হল আমার ব্যাগ ওরা সরিয়েছে। টাকাগুলি নিজেরা নিয়ে নকল টাকা দিয়েছে। আর তাদের ব্যাগেও নকল টাকা রেখেছে। আমি খরচ করলে ওরা বাসায় এসে টাকা নিয়ে যাবে। আর আমার ব্যাগের টাকাগুলিও নিয়ে নকল টাকা রেখেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো এই ছেলে আমাকে বেশ কিছু দিন ফলো করেছে প্রায় একই ব্যাগ বানিয়েছে আর আমাকে খুব ভাল করে চেনে। যেমন চেনে আমাকে দোকানদারেরা। এর পর আমি ছেলেটাকে আগলালাম গনপিটুনির হাত থেকে। পুলিশের হাতে ওরাই দিল তুলে।
আমি বাসনপত্রের দোকানে বসেই রইলাম।আমার আড়াই হাজার টাকার শোকে নয়, বোধ শূন্য হয়ে। সবাই হাসাহাসি করছে আর এই মুখরোচক গল্প ডালপালা ছড়াচ্ছে। আমাকে এক মগ চা দিয়েছে। জানু পুলিশ আসার আগেই এসেছে ওর হাতে চা এর কাপ দেবার জন্য দোকান কর্মচারী দাড়িয়ে । এক বাজার লোক। আমি জানুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি যা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ।
জয়তু ঈদ শপিং। ঈদ মোবারক।
১৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম আপনাকে ।
প্রথম পোস্ট দিলেন এখানে । হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না ।
ঈদের শপিং এ এই ধরনের বিরম্বনার কথা আমি এই প্রথম শুনলাম ।
ভাগ্য ভালো যে আপনাকে দোকানদার চিনে । নইলে আরো বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারতো।
অচেনা দোকানে নকল টাকা দেয়ার অভিযোগে আপনি ফেসে যেতে পারতেন।
শুভ কামনা ।
শুভ ব্লগিং ।
খসড়া
প্রথম মন্তব্য করার জন্য শুভেচ্ছা। আসলেই আজ বড় বিপদে পরেছিলান। এই ছোট্ট শহরে আমি নিরাপদ নই ভাবিই নি। কারন আমাদের এখানে অন্য চোখে দেখে সবাই যা অন্য কোথাও কেউ ভাবতেই পারে না। আমি কার ও সাথে কথা বলছি তাতেই সে কৃতার্থ হয়। এখানে মানুষ ভাবে আমরা যেন লর্ড অদ্ভুত।
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত আপনি এখানে ।
বিড়ম্বনা এড়ানোর দায়িত্ব ও আপনারই ।
খসড়া
আমি খুব আনমাইন্ডফুল ছিলাম। এ আমারই দোষ।
স্বপন দাস
দারুণ ।।আসলেই ঈদের এই কেনাকাটার বাজারে জালনোট একটা ভয়াবহ ব্যাপার ।।
আরও লেখা চাই ।।
খসড়া
আসলেই চিন্তার ব্যাপার।
মিসু
অবাক হলাম আপু । ভয়ও করছে । কত ধরনের প্রতারনা চলছে এখন দেশে । ভাগ্যিশ আপনি নিজের এলাকায় ছিলেন ।
খসড়া
ভাগ্যিস এখানকার প্রতিটি লোক আমাকে চেনে। নিজের এলাকা বলে নয়।
এই মেঘ এই রোদ্দুর
হুম………… প্রতারণায় ছেয়ে গেছে দেশ
আরো লিখবেন
খসড়া
ধন্যবাদ।
শিশির কনা
ঈদ মুবারক আপু ।
এমন প্রতারনার কথা এই প্রথম শুনলাম । লেখার গুনে , ওই সময়ে আপনার অসহায় অবস্থা , লজ্জা মাখা মুখ যেন দেখতে পেলাম । শেয়ার না দিলে প্রতারনার এই পদ্ধতিটি অজানা থেকে যেতো ।
খসড়া কেনো নাম ?
খসড়া
ঈদ মোবারক।
লীলাবতী
এতো ভয়ানক ব্যাপার স্যাপার । (y)
খসড়া
একটু সতর্ক থাকতে হবে।
প্রজন্ম ৭১
প্রতারনার নতুন টাইপ । অল্পতে রক্ষা পেয়েছেন আল্লার কাছে হাজার শুকরিয়া ।