আমেরিকা সম্পর্কে আমার বরাবরের ধারনা ছিল ঐখানে বার মাস ই শীত থাকে। তাই প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার বাজারে যত ধরনের শীত বস্ত্র পাওয়া যায় সব কিনে চার লাগেজ ভরে ফেললাম। কোথায় কী , জন অফ কেনেডি বিমানবন্দর নামার পর দেখি চৈত মাসের দাবদাহ। চারিদিকে সব স্বল্পবসনাদের ভীড়ে আমি ভারী জ্যাকেট পরে দরদর করে ঘামছি। খুবই লজ্জার বিষয়। তার উপর আমাদের রিসিভ করার জন্য যার আসার কথা তার কোন হদিস নাই। আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় যাকে আমি আগে কোনদিন দেখিনি আর তার ফোন নম্বর ছাড়া আর কিছুই জানিনা। টেলিফোন বুথ থেকে কী ভাবে ফোন করতে হয় তা জানা না থাকায় ওটা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে হল। চরম উদ্বেগ নিয়ে এক কোনায় ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম।
এমন সময় একজন ভদ্রলোক আমদের কাছে এসে পরিষ্কার বাংলায় কুশল জানতে চাইল। ডুবন্ত মানুষ পুরো একটা লাইফ জ্যাকেট পেলে যেমন খুশি হয় আমরাও তেমন ই খুশী হলাম ওনাকে পেয়ে। লোকটা জানতে চাইল আমদের কোন সাহায্য লাগবে কিনা। আমদের সমস্যার কথা বলতেই লোকটা তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিল। আমাদের আত্মীয়কে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তারা খুব কাছাকাছি ই আছে। বুক থেকে মনে হল একটা পাথর নামে গেল। ধন্যবাদ দিয়ে ভদ্রলোককে ফোনটা ফেরত দিতেই সে বলল তাকে এক ডলার দিতে হবে কলের জন্য। প্রথমে বুঝতেই পারেনি লোকটা কী বলছে,পরে বুঝলাম ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ই ভাঙ্গে। লোভী বাঙ্গালী এখানেও মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে। আমার ঐ আবস্থায় একটা ফোন কলের জন্য পাঁচ ডলার খরচ করতেও রাজী ছিলাম তবে এমন করে ভিন দেশে আমার নিজের মানুষের ব্যবহার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরেই আমার আত্মীয় চলে এল। আমরা লাগেজ,ব্যাগ নিয়ে রওনা হলাম নতুন গন্তব্যে। পিছনে ফিরে দেখলাম ঐ লোকটা আর এক দল যাত্রির সাথে কথা বলছে।
আমি লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। এই লজ্জা আমার দেশের এই লজ্জা আমার পরিচয়ের।
১৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আপু লজ্জা হবার কথা।
কিন্তু বিপদে সাহায্য করে টাকা চাওয়া কি খুব বেশি অপরাধ?
মানুষের কল্যাণ করে তাঁর রোজগার করা , আর কি।
তাঁর চেয়েও বেশি খারাপ আমাদের সমাজে আছে বৈ কি?
তারপরও এটা উচিত নহে স্বীকার্য।
শুভেচ্ছা। রইল ভাল থাকুন বিদেশ ভুইয়ে।
ব্লগার সজীব
জ্যাকেট গায়ে গরমে সিদ্ধ হচ্ছেন, এ পর্যন্ত পড়ে মজাই লাগছিলো। খারাপ লাগলো ফোনের জন্য এভাবে ডলার চাওয়াতে। তবে আপনার উপকারের তুলনায় এক ডলার সামান্যই বলা যায়। জীবিকা খুব খারাপ, দেশী হিসেবে ক্ষমা করে দিন। নিয়মিত লিখুন আমেরিকা সম্পর্কে। ওখানে প্রবাস জীবন সম্পর্কে। আপনার প্রথম লেখা ভালো লেগেছে।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম।
অজানা এবং দুরের দেশে গেলে এমন পরিস্থিতি হয়।
আজকাল অবশ্য নেটে জানা যায় কোথার টেম্পারেচার কত, গরম না শীতকাল।
এমন লোক প্রায় সব স্থানেই আছে। উনি এমনই জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন।
খারাপ লাগলেও মেনে নিতে হয় অনেক কিছু।
ভালো লিখেছেন। নিয়মিত লেখুন।
ভালো থাকুন প্রবাসে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ই ভাঙ্গে
অজানা পরিবেশে জানার একটু পরশ স্বর্গের চেয়েও বেশী তাই নয় কি?
ছাইরাছ হেলাল
অভিনন্দন এখানে লেখার জন্য। লিখুন নিয়মিত এবার থেকে।
বিচিত্র কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত ঘটনাবলির পথ মাড়িয়েই আমাদের চলতে হয়।
লেখা ভালই হয়েছে।
স্বপ্ন
আমেরিকার প্রথম অভিজ্ঞতা ভালোনা দেখছি আপু।
কবীর হুমায়ুন
আমরা কি পরিবর্তন হব না ?
স্বপ্ন নীলা
স্বার্থপরতায় ভরা জীবন —
ভাল লাগলো লেখাটা—— নিয়মিত লিখুন আপনার আমেরিকার জীবনগুলো নিয়ে — শুভকামনা রইল
নাঈমা নাসরিন নিপু
আপনাকে ধন্যবাদ। চেষ্টা করব নিয়মিত লিখতে। তবে হবে কিনা জানিনা্…
মরুভূমির জলদস্যু
বিব্রত অবস্থায় সবারই কখনো কখনো পরতে হয়, তখন কেউ পাশে এসে দাড়ালে বেশ লাগে, তবে আপনার টা অন্যরকম হয়ে গেছে।
মোঃ মজিবর রহমান বলেছেনঃ
কিন্তু বিপদে সাহায্য করে টাকা চাওয়া কি খুব বেশি অপরাধ?
আমার মতে অপরাধ। টাকাটা আগে চেয়ে নিয়ে সাহায্য করাটাই উচিত ছিলো।
রিমি রুম্মান
লোকটি খারাপ কিছু করেনি, আমার মতে। সে আপনার আত্মীয় না… স্বজন না। টাকার বিনিময়ে ফোন করতে দিয়েছে… এটাই হয়তো তার পেশা। তবে এমন মানুষও আছে, যারা কোন বিনিময় ছাড়াই অন্যের উপকারে এগিয়ে আসে। ভাল থাকবেন।
নাঈমা নাসরিন নিপু
পেশাটা বেআইনি তাই খারাপ। এটা এক ধরনের প্রতারনা। বিমানবন্দরে এই ধরনের পেশা নাই তা আপনিও জানেন।
সীমান্ত উন্মাদ
ঐ টা তার ব্যাবসা এটা করে তার জীবিকা চলে এতে খারাপ এর কি আছে। উনিতো আপনাকে বিপদে ফেলেননি উল্টো উদ্ধার করেছেন। আর একবার দেখা হলে ধন্যবাদ দিয়ে দিভে ন বড়ো করে। পিলিজ লাগে। অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর
মেহেরী তাজ
আমার স্বপ্নের আমেরিকা নিয়ে লিখলেন। ধন্যবাদ আপনাকে।