আমেরিকা

নাঈমা নাসরিন নিপু ১৩ অক্টোবর ২০১৪, সোমবার, ০৭:৪৭:৩৯পূর্বাহ্ন বিবিধ ১৪ মন্তব্য

আমেরিকা সম্পর্কে আমার বরাবরের ধারনা ছিল ঐখানে বার মাস ই শীত থাকে। তাই প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার বাজারে যত ধরনের শীত বস্ত্র পাওয়া যায় সব কিনে চার লাগেজ ভরে ফেললাম। কোথায় কী , জন অফ কেনেডি বিমানবন্দর নামার পর দেখি চৈত মাসের দাবদাহ। চারিদিকে সব স্বল্পবসনাদের ভীড়ে আমি ভারী জ্যাকেট পরে দরদর করে ঘামছি। খুবই লজ্জার বিষয়। তার উপর আমাদের রিসিভ করার জন্য যার আসার কথা তার কোন হদিস নাই। আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় যাকে আমি আগে কোনদিন দেখিনি আর তার ফোন নম্বর ছাড়া  আর কিছুই জানিনা। টেলিফোন বুথ থেকে কী ভাবে ফোন করতে হয় তা জানা না থাকায় ওটা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে হল। চরম উদ্বেগ নিয়ে এক কোনায় ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম।

এমন সময় একজন ভদ্রলোক আমদের কাছে এসে পরিষ্কার বাংলায় কুশল জানতে চাইল। ডুবন্ত মানুষ পুরো একটা লাইফ জ্যাকেট পেলে যেমন খুশি হয় আমরাও তেমন ই খুশী হলাম ওনাকে পেয়ে। লোকটা জানতে চাইল আমদের কোন সাহায্য লাগবে কিনা। আমদের সমস্যার কথা বলতেই লোকটা তার পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দিল। আমাদের আত্মীয়কে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম তারা খুব কাছাকাছি ই আছে। বুক থেকে মনে হল একটা পাথর নামে গেল। ধন্যবাদ দিয়ে ভদ্রলোককে ফোনটা ফেরত দিতেই সে বলল তাকে এক ডলার দিতে হবে কলের জন্য। প্রথমে বুঝতেই পারেনি লোকটা কী বলছে,পরে বুঝলাম ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ই ভাঙ্গে। লোভী বাঙ্গালী এখানেও মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে। আমার ঐ আবস্থায় একটা ফোন কলের জন্য পাঁচ ডলার খরচ করতেও রাজী ছিলাম তবে এমন করে ভিন দেশে আমার নিজের মানুষের ব্যবহার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরেই আমার আত্মীয় চলে এল। আমরা লাগেজ,ব্যাগ নিয়ে রওনা হলাম নতুন গন্তব্যে। পিছনে ফিরে দেখলাম ঐ লোকটা আর এক দল যাত্রির সাথে কথা বলছে।

আমি লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। এই লজ্জা আমার দেশের এই লজ্জা আমার পরিচয়ের।

৪০৫জন ৪০৫জন

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ