
আমার আমিকে কি আর লিখে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা সম্ভব? নিজের খেয়ালে আমার অপ্রকাশিত কিছু কথা আজ সোনেলার পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।
একঃ
আমি এখন ভীতু গিনিপিগ –
আগে হাতীর মত চলাচল ছিলো আমার, তাই বনের বাঘও ভয় পেয়ে পাশ কাটিয়ে যেতো। আর আজ যখন নিজের রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে থাকতে চাইছি তখন বাঘতো দূরে থাক নিজের বাসার মিনি বেড়ালটাও আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে ফোঁস ফোঁস করে দাঁত ভেংচায়। অপারেশন ক্লীন হার্টের দৌড়ানি আর রাজনৈতিক কারনে জেল, জরিমানা, পুলিশের টর্চার সেল সব শেষে এখন একজন ভীতু গিনিপিগ আমি। তাই বলে নিশ্চুপ নই। অন্যায় দেখলেই আমার মাথা সবসময় গরম।
দুইঃ
আমি অর্থে সুখ পাইনি-
শুনেছি টাকার ভিতরে নাকি সুখ লুকিয়ে থাকে। আমার আবার সুখ দেখার খুব শখ। তাই একবার আমি অনেকগুলি টাকাকে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি সুখটা কোথায় লুকানো? কিন্তু আপসোস! আমি টাকার ভিতরে কোন রকম সুখ খুঁজে পাইনি, উল্টো টাকাগুলি অচল হয়ে গিয়েছিলো। নিজ হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা উড়িয়ে এখন আমি দিন আনি দিন খাই অবস্থায় পড়ে আছি।
তিনঃ
আমার অপূরণীয় সব স্বপ্ন-
ছোটবেলায় খুব স্বপ্ন দেখতাম- মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা এসব আর কি! এখনো দেখি; তবে ছোটবেলার মতো নয়। অনেক অনেক স্বপ্ন, সব স্বপ্ন কি আর মনে আছে? সেই স্বপ্নগুলোই ভালো ছিল। জানতাম কোনদিন পূরণ হবে না। তবে এখনকার স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে চাই, কিন্তু হয়না। তখন বেশি বেশি হতাশা কষ্ট আর না পাওয়ার বেদনা কাজ করে। তাই চাহিদার পরিমাণটা কমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও ন্যূনতম চাহিদা নিয়েও বাঁচাতে পারছি কই?
ইদানিং নিজেকে খুব একা, অসহায় মনে হয়। মনের জোরটা অনেকখানি কমে গেছে। কথায় আছে সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত, পরে সেটা করলেও ফল তেমন করে পাওয়া যায়না। অনেকগুলো দিন সময় মুহূর্ত কাটিয়ে এসেছি তার সবকিছুই তবে কি ভুল ছিল?
ছোটবেলার স্বপ্নগুলো ছিল সব আকাশ কুসুম; এটা বড় হয়ে বুঝেছি। আরও বুঝতে পারলাম আমি কত বোকা! বোকারাইতো আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে। এরপরও সৃস্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি- আমার জন্য যা কিছু পাঠিয়েছো এটারই হয়তো প্রাপ্তি আমার। এর চেয়ে বেশী কিছু পাওয়ার অধিকার আমার নেই।
আসলে মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই। আমিতো মানুষই নাকি?
চারঃ
আমার মাথায় এখনো ছেলেবেলার দুষ্টু বুদ্ধি-
যদি কখনো পরিচিত কারো উপর খুব রাগ হয় আর তা প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে একটি কাজ করতে পারেন। কাগজে তার উদ্দেশ্যে যতগুলি গালি, বকাঝকা করবেন সব লিখে সে কাগজটি মুড়িয়ে সিনা টান টান করে গোপনে তার দিকে ছুঁড়ে মারুন যেন সে বুঝতে না পারে।
এবার আড়াল থেকে তাকে লক্ষ্য করুন। সে যখন কাগজের ভাঁজ খুলে আপনার গালিগুলি পড়তে থাকবে তখন তার মুখের অভিব্যক্তিগুলি দেখুন আর আপনি অমরেশ পুরী টাইপ হাসি হাসুন। হি হি হা হা হা!
এর ফলে আপনার দুটো লাভ হবে-
প্রথমত, যার উপর রাগান্বিত হয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেননা, তার কাছে মনের কথা প্রকাশ হয়ে গেল। সে জানুক আর না জানুক আপনি কে।
দ্বিতীয়ত, বেশি রাগ হলে মানুষ যেমন জিনিসপত্র ছোড়াছুঁড়ি করে তার বদলে কাগজ ছুঁড়ে মারলেন। এতে আপনার মুল্যবান মোবাইল কিংবা কাঁচের জিনিসপত্র নষ্ট হবার হাত থেকে বেঁচে গেলো।
এতে নিশ্চিই মন ভালো হবে আপনার। বিপিও কমে যাবে আপনার নিশ্চিত। এটা আমার পরীক্ষিত পন্থা ।
বি:দ্র:- পরিবারের আপনজনের উপর এ পদ্ধতি প্রয়োগ করবেননা। এতে হিতে বিপরীত হলে আমি দায়ী নই।
পাঁঁচঃ
আমি বেয়াদব অনেকেই বলে –
এবার আসল কথা বলি- আমি বেয়াদব। যদিও আমার আপনজনেরা বলেনা। তারা জানেন আমি কেমন। এমনকি ফেসবুকে কোনওদিন দেখা হয়নি, কিন্তু অতি আপন তারাও বলতে পারবেনা আমি বেয়াদব। কিন্তু যারা বলে তারা কেন বলে ?
আমি অহেতুক তর্কে জড়াইনা এটা তর্কবাজদের ইগোতে লাগে। আমি কেন কথায় কথায় তাদের মত অন্যদের বেয়াদব বলিনা, এটা তাদের সহ্য হয়না। এটাও যে বেয়াদবি এ জ্ঞান তাদের মগজে ঢুকেনাই আজও।
আমি জানি লেখকরা উদারমনা হয়। যখনই হীন মানসিকতার কোন লেখককের উল্টাপাল্টা লেখা দেখি আমি তাকে সুন্দর করে বলি। এটা তাদের পছন্দ নয়, তাই আমি বেয়াদব।
নিজেকে লেখক পরিচয় দেন। কিন্তু তারা এমনই লেখক যারা নিজের ভুল স্বীকার করতে চাননা। ফেসবুকে ফেরেশতা সেজে পোষ্ট দেন আর নীচু মানসিকতার কাজ করে বুক ফুলিয়ে অন্যকে বেয়াদব বলেন। এটাই কি তাদের আদব শিক্ষা?
আসলেই আমি বেয়াদব, না হলে তাদের আদব শিক্ষা হবে কিভাবে? ককুরকে কামড়ালে তাকে কামড় দেয়া যায়না, তাহলে নিজেই কুকুর হতে হয়। তবে বেয়াদবকে আদব শেখানোর জন্য নিজে বেয়াদব হতে হয় বৈকি।
এটাই হচ্ছে তাদের আর আমার পার্থক্য। এইজন্যই আমি বেয়াদব।
স্কুল কলেজের বন্ধুদের সাথে তেমন আর যোগাযোগ নেই। তারা রাখেনি, আমিও রাখিনা। আমার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অনেককেই ইচ্ছে করে ভুলে গিয়েছি। আবার তারাও হয়তো আমার পূর্ববর্তী লাইফ স্টাইলে অভ্যস্ত ছিলোনা বলে এখনো এড়িয়ে যায়। হাই হ্যালোতেই সীমাবদ্ধ রেখেছি তাদের। তবে বাস্তবের মতই ব্লগে আর ফেসবুকে বেশ কিছু শ্রদ্ধেয় বন্ধু পেয়েছি। এই নিয়েই আমি ভালো আছি, বেশ ভালো। অনেকের থেকে অনেক অনেক ভালো।
ছয়ঃ
যেমন আমি তেমনি আমার কবিতা-
ভালোবাসি তোমায়,
কখনো মিথ্যে আবেগী তাড়নায় কিংবা
ইবলিশের দোসর হয়ে…
নয়তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মিথ্যে আশ্বাসের
নিগুড় প্রহসনে।
হয়তো আয়নার স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবির
নিখাদ মিথ্যেয়…
তবুও ভালোবাসি তোমায়।
(এসব অনুভূতির কিছু কিছু লাইন কোনও একসময় ফেসবুকেও লিখেছিলাম।)
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মানে কি, এত রাগ অভিমান কিসের ভাই, এইসব দ্রুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কাজে মন দিন ভাই।
তৌহিদ
কোন রাগ অভিমান নেই। নিজেকে চেনার জানার চেষ্টায় আছি। অন্যকে বোঝার আগে আমি নিজে কি রকম সেটা জানা জরুরি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা☺
ইঞ্জা
আল্লাহ ভরসা ভাই
রাফি আরাফাত
যেন হাজার ধরনের মানুষের একছত্র একটা প্রতিচ্ছবি করে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন ভাই। আফসোস কখন লাগে জানেন? যখন কোন ভালো লেখা পড়ার পর মনে হয় আহ আমি কেন এমন লেখা লিখলাম না। আমার মাথায় এমন আসলো না কেন৷ আবার আজ মনে হলো এমন, আপনার লেখা পড়ে।
খুব ভালো লাগছে ভাই। ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা আগামীর জন্য৷
তৌহিদ
ধন্যবাদ রাফি লেখাটি পড়ার জন্য। আপনিও অনেক সুন্দর লেখেন ভাই।এভাবেই পাশে থাকবেন কিন্তু!
শুভকামনা রইলো।
রাফি আরাফাত
অবশ্যই ভাই। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
আপনার আমিকে জাকিছুটকিছুটা
* বাঘের ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ছবি কই? 🙂 সময়ে মানুষ ধীর স্থির হয়।
* অর্থের টান যারা উপেক্ষা করতে পারে তারাই প্রকৃত মানুষ।
* স্বপ্ন দেখা বন্ধ করবেন না।
* দুস্ট বুদ্ধি খুব ভাল গুন, যদি অন্যের ক্ষতি না হয়, তবে চলুক এটি।
* বেয়াদব বলা সঠিক শব্দ নয়। প্রতিবাদি বলায় যায়। এটি মানুষের অপরিহার্য গুন হিসেবে দেখি আমি।
পোস্ট ভাল হয়েছে,
শুভ কামনা।
তৌহিদ
বাঘের ভয়ে ফটোগ্রাফারও পালিয়ে গিয়েছিলো বলে ছবি আর তোলা হয়নি দাদা 😃😃
আমার আমিকে মুল্যায়ন করা অতীব জরুরী। নাহলে অন্যকে চিনতে পারা কঠিন। অন্যের সম্পর্কে কিছু বলার আগে নিজের মুল্যায়ন জরুরী। আমিও চাই সবাই জানুক আমার সম্পর্কে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলার সোনায় মোড়ানো ছবি দিলেন পোস্টে। এটিই এখানের প্রপিক দেয়ার প্রস্তাব করছি।
নাম এর সাথে আর কিছু যুক্ত করা যায়? ফেইসবুকের মত পুর্ন নাম। সাজেশন এটি, আপনার পছন্দ সবার আগে।
তৌহিদ
ছবি এটা দিব বলছেন? আর নামের সাথে কি যোগ করা যায় তাই ভাবছি। আপনারাও সাজেস্ট করেন সবাই। তবে আকিকা দিতে পারবোনা কিন্তু ☺☺
প্রদীপ চক্রবর্তী
আফসোস আমার আমি কে নিয়ে।
এমন প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরেছেন।
বেশ ভালো লিখলেন দাদা।
শুভকামনা।
তৌহিদ
আমার আমিকে নিয়ে আমি আফসোস করিনা। বরং এখন যেমন আছি সেটা নিয়ে আমি গর্বিত।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষের সবচেয়ে বড় গুন নিজেকে বোঝা। যে নিজেকে বুঝতে পারে সে সব সময় সব কিছুতেই জয়ী হয়। যে কাজে আত্মতুষ্টি না আসে তা করার কোনো মানে নেই। যার প্রতি সম্মান শ্রদ্ধাবোধ না আসে তাকে সেটা দিতেও নেই। আর যা কিছু পাওয়া হয় তা নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতেই পেতে হয়।
তিন গোয়েন্দা ! এখনো আমার সংগ্রহে আছে। একটা কৈশোর পার করেছি তিন গোয়েন্দার সাথে। আমার মুসা আমানের চরিত্রটা খুব ভালো লাগতো তখন।
মাসুদ রানার প্রেমে না পরারও কোনো কারন ছিলো না। 😊😊
যেমন আছেন তেমনই থাকুন। নিজেকে বদলে চারপাশ বদলাবে হয়তো, তবে নিজেকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
ভালো থাকুন। শুভ কামনা সব সময় 🌹🌹
তৌহিদ
হ্যা আপু, আমি যেমন তেমনই থাকতে চাই। শুধু সৃষ্টকর্তার নিকট প্রার্থনা আমার দ্বারা যাতে অন্যের কোনো ক্ষতি না হয়।
তিনগোয়েন্দা আপনিও পড়তেন? বাহ!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
নাজমুল আহসান
নিজেকে নিয়ে লিখতে সাহস লাগে ভাই। আর নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারাটাও বিরাট ব্যাপার।
সব বলে দিয়েছেন, ভালো করেছেন। আপনাকে চিনে রাখলাম। 😀
তৌহিদ
নিজের কাছে নিজে আমি স্বচ্ছ থাকতে চাই ভাই। নিজেকে না চিনলে অন্যকে জানবো কিভাবে? লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
শিরিন হক
এতো সুন্দর করে নিজেকে চিনলেন সত্যি সাধুবাদ জানাই। নিজে কী বলতে গিয়ে অন্যকে ও যে কিছু শিখালেন এজন্য গুরু মানতে হবে ভাই।দাড়ুন প্রকাশ।
তৌহিদ
লেখাটি পড়েছেন দেখে ভালোলাগলো আপু। পাশে থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
নিখাদ ভালবাসায়
থাকুক একটু মিথ্যে-মিথ্যি,
তবুও ভালোবেসে-ই ভালোবাসি
দিবানিশি।
তৌহিদ
হ্যা ভাই, তবুও ভালোবাসি।
রেহানা বীথি
এই কথাগুলো বোধহয় কমবেশি আমরা সবাই পুষে রাখি মনের মাঝে। আর স্বপ্ন, সে তো দেখি। স্বপ্নই তো বাঁচতে দেয় আমাদের।
ভীষণ সুন্দর পোস্ট
তৌহিদ
স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি আপু। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
ভাইটি আপনার ঐ রাগ কমানোর কৌশলটা বেশ মনে ধরেছে। আর জীবনের পথে ঝুকি আসবেই সে জন্য থেমে গেলেও চলবে না।সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সাফল্য আসবেই।লোকে কি বলে তা নয় নিজের উপর কনফিডেন্ট রাখতে হবে ১০০ ভাগ। আমার ভাল কিছু বন্ধুদের মাঝে আপনিও অন্যতম।ভাল থাকবেন।
তৌহিদ
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম ভাইয়া। আপনিও আমার প্রিয় বড়ভাই, বন্ধু।
ভালোবাসা জানবেন।
শাহরিন
ধন্যবাদ আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। অনেক সাহসিকতার পরিচয় দিলেন। সবার সাহস থাকে না নিজেকে অন্যের সামনে মেলে ধরার। ধন্যবাদ।
তৌহিদ
নিজেকে চেনার অবিরাম চেষ্টার এটি একটি সামান্য প্রয়াস আপু। পাশে থাকবেন সবসময়।
শুভকামনা রইলো।