খৃষ্টপূর্ব ৩১৫০ এ আমার আর মুগ্ধতার বিয়ে সম্পন্ন হয় বেশ ধুমধাম সহকারেই। স্বর্গের অধিকর্ত্রী নাট দেবীর বিশেষ স্নেহধন্যা মুগ্ধতার বিয়ের আয়োজন তিনিই করেছিলেন। পরমা সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে আমার দিনগুলো স্বপ্নের মতই সুন্দর ছিল। ফুল, পাখি, জোছনা, ঝরনা শোভিত পারিপার্শ্বিকতায় স্বপ্ন ময় মুহূর্তগুলো কেটে যাচ্ছিল। ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে আনন্দ, সুখে পূর্ন ছিল সে জীবন। তখন আমার নাম ছিল অসিরিস, আর মুগ্ধতা্র নাম আইসিস।
হঠাৎ কোনো এক বেখেয়াল রাতে ভালোবাসাবাসিতে মত্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি। ভোরের আলোয় পাশে শায়িত মুগ্ধতাকে কাছে টানতে গিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় যেন আমার মাঝে। এতো মুগ্ধতা নয়, এই শয়ন কক্ষ তো আমাদের নয়। যার সাথে রাত কাটিয়েছি সে তো মুগ্ধতার ছোট বোন স্নিগ্ধতা। দুবোনের চেহারা শরীর প্রায় একই রকম। আমি না হয় বেখেয়ালে ভুল করলাম, কিন্তু স্নিগ্ধতা? তার তো বুঝতে পারার কথা। স্বর্গের অধিকর্ত্রী নাট দেবীর শাসন। নারীরা ইচ্ছেকে ভালভাবেই প্রাধান্য দিত বলে এটি প্রায় স্বাভাবিক ছিল তখন। ঘুমন্ত স্নিগ্ধতাকে না জাগিয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটে যাই আমাদের শয়ন কক্ষে। ঘুমিয়ে আছে আমার মুগ্ধতা, স্বর্গের অপ্সরা যেন। কান্নায় চোখ মুখ বুক ভাসিয়ে সবকিছু বলি তাঁকে।
= জানু আমি মহা অন্যায় করে ফেলেছি, আমি মহা পাপী। তুমি আমাকে শাস্তি দাও, ছুড়ে ফেলে দাও তোমার জীবন থেকে। ”
– জানি আমি জান, তুমি স্নিগ্ধতার সাথে রাত কাটিয়েছ। ইচ্ছে করেই ডাকিনি।
= কেনো জানু কেনো ডাকোনি? অনুতপ্তের অনলে পুড়ে কতটা কষ্ট পাচ্ছি আমি বুঝতে পারছ তুমি?
– হ্যাঁ পারছি জান। কিছু সিক্রেট ব্যাপার আছে যা তোমার না জানলেও ক্ষতি নেই।
দিন যায় রাত যায় আমার নিদ্রাহীনতায়। চোখের জল আমার বাধ মানে না। এই অবিশ্রান্ত চোখের জলের কারনেই মুগ্ধতার কাছে আমার নাম হয়ে যায় জল। বোনকে সন্তান উপহার দেয়ার জন্য আমার মুগ্ধতার পরিকল্পনার একটি চরিত্র হয়ে গিয়েছিলাম আমি সেই রাতে। অবশেষে আমার আর স্নিগ্ধতার ছেলে সন্তান যার নাম মৃত্যুদূত ভূমিষ্ঠ হয়। আর এই সন্তান জন্মের পরেই সবকিছু এলোমেলো হয় যায়। অক্ষম পুরুষ স্নিগ্ধতার পতি সে রাতকে ভুলতে পারেনি। সব কিছুই সেও জানতো। অবশেষে এক পরম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাকে জীবন্ত কফিনে আবদ্ধ করে কফিন ভাসিয়ে দেয় নীল নদে। আমার আর স্নিগ্ধতার সন্তান আসার পরে আমার মৃত্যু হওয়ায় সন্তানের নামই হয়ে যায় মৃত্যুদূত। আমার মৃতদেহ সমেত কফিনটি ভেসে ভেসে সিরিয়ার উপকুলে এক সৈকতে আঁটকে যায়। আর কফিন সহ আমি একটি গাছে পরিনত হই। যে গাছ থেকে অদ্ভুত সুন্দর সুগন্ধ বের হতে থাকে।
আমার নিখোঁজে পাগলপারা আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর জান জান আহাজারিতে স্বর্গ এবং মর্ত বিষাদে পরিপূর্ন হয়। কোনভাবে জানতে পেরে মুগ্ধতা নীল নদের তীরে হাঁটতে থাকে আমার কফিনের খোঁজে। পতি সন্ধানী মুগ্ধতার চোখের জলে নীল নদ এর জল উপচে দুকুল প্লাবিত হয়। তখন হতেই নীল নদের উপচে ওঠা জলে ফসলের আবাদ হয় এবং মিশরের সভ্যতার পত্তন ঘটে। মুগ্ধতা আর আমি পরবর্তিতে জন্ম নিয়ে বেহুলা লক্ষিন্দর নামে বাংলাদেশের বগুড়া্র আধিবাসী হই। সে ইতিহাস না হয় আর একদিন বলা যাবে। এই সুগন্ধি গাছের সংবাদ জেনে সিরিয়ার রাজা গাছটি কেটে নিয়ে তার বাড়ির একটি খাম্বা বানিয়ে রাখেন যাতে সমস্ত রাজবাড়ি সুগন্ধে মৌ মৌ করতে। প্রিয়তম পতিকে খুঁজতে খুঁজতে মুগ্ধতা অবশেষে পৌছায় সিরিয়ায়। রাজবাড়ির কাছাকাছি হতেই সে সুগন্ধ পেয়েই বুঝে যায় এটি তার জল এর সুগন্ধ। যেভাবেই হোক তার জানকে তার চাইই চাই। রাজকন্যাকে দেখভাল করার চাকরী নেয় মুগ্ধতা। রাজকন্যার সেবায় সে এতই মগ্ন হলো যে রাজকন্যার জন্মদিনে রাজা মুগ্ধতার কাছে জানতে চান কি উপহার চাই তার। মুগ্ধতা একটুও অপেক্ষা না করে জানিয়ে দেয় যে এই সুগন্ধি যুক্ত খাম্বাটি তার চাই। রাজার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া গাছটিকে নিয়ে মুগ্ধতা ফিরে চলে আমাদের সুখের সেই বাড়িতে। পথে আমরা মিলিত হলে মুগ্ধতার গর্ভে আসে আমাদের প্রথম সন্তান মিশু। এই মিশু হোরাস নামে দেবতা হিসেবে পরিচিতি পায়। সবাই জানে মুগ্ধতার পতি আমি নিহত, আমি যে গাছের খাম্বা হয়ে আছি তা তো আর কেউ জানে না। স্বামী ব্যতীত সন্তান জন্ম দেয় মুগ্ধতা, মিশুর জন্মের পরে সে হয়ে যায় দেবতা। পরবর্তী এক জন্মান্তরে মুগ্ধতা জন্ম নেয় মরিয়ম/ মেরী হয়ে। তখন আমাদের সন্তান জন্ম হয় যীশু।
এভাবেই আছি আমরা জন্মান্তরের সাথী হয়ে। কখনো আমরা জন্ম নেই জল-মুগ্ধতা হয়ে, কখনো অসিরিস-আইসিস, কখনো বেহুলা- লক্ষীন্দর, কখনো ওসিন- মেরী/মরিয়ম হয়ে।
আর এখন?
— প্রাচীন মিশরীয় মিথ অবলম্বনে।
======================
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ৫
৩৮টি মন্তব্য
মিষ্টি জিন
শুধু সিরিয়ায় না লেবাননের ভূমধ্য সাগরের তীরে এসেও তো জান জানু করে কত কান্না কাটি করলো , আমি ই তো বলে দিলাম সিরিয়ার দিকে যেতে ।
এঁখন জিসান- জিসানী হঁয়ে জন্ম নিয়েছেন।
তা বৈধ অবৈধ ভালবাসার ফসল কি শুধু আপনাদের পুত্র ই হয়? কন্যা সন্তান হয়নি কোন জন্মে ?
পারেন ও মশাই!!!
:D) :D) :D) :D)
জিসান শা ইকরাম
তা লেবাননে আপনি কি একবেলা খাইয়েছেন আমার মুগ্ধতাকে?
নাকি একখান শুকনা বিস্কুট আর চা খাইয়ে বিদায়? 🙂
ভালবাসার ফসল শুধু পুত্র নয় কন্যা সন্তান হবারও প্রচুর উদাহরন আছে পুরাণে।
মন্তব্যে দারুণ মজা পাইছি 🙂
মিষ্টি জিন
আমি সল্পাহারি, দিন শুরু হয় রং চা আর শুকনা একটা বিস্কুট দিয়ে, তো আপনার মুগ্ধতাকেও এর চেয়ে বেশী দেই কেমনে? যদিও সে আরো দুটো বিস্কুট চেয়ে নিয়েছিল। :@
জিসান শা ইকরাম
আমার মুগ্ধতারে আপনি চা আর শুকনা বিস্কুট দিয়েছেন?
পতিরে খুঁজতে খুঁজতে কত ক্লান্ত ছিল আপনি দেখেননি? একটুও মায়া হলো না তারে দেখে? 🙁
ছাইরাছ হেলাল
এ লেখার সুবাদে আমাদের কিছু মিথ জানার সুযোগ হলো, তা না হলে হয়ত এমন করে জানা
হতো না,
অনেক ভাবেই আছেন দেখতে পাচ্ছি,
এখন ইবনেবতুতার বেশ নিয়েছেন তা তো ‘পাছার ছেনি’ পড়েই বুঝতে পেরেছি।
জিসান শা ইকরাম
ভাল কথা মনে করিয়েছেন,
ইবনে বতুতা, মনে রাখলাম তার নাম 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
কি শুনাইলেন ভাই, আপনার গল্পকারেরা প্রচুর মাথা ঘামান। বুঝা যায়। তাই আপনারা গপ্লপকার।
পারেন নো আপনি।
জিসান শা ইকরাম
আমি গল্পকার না ভাই,
যা মনে আসে তাই লিখে ফেলি।
শুভ কামনা।
আবু খায়ের আনিছ
তথ্যসুত্রটাই আমাকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিল, মূল লেখার কথা ভুলেই যাাচ্ছিলাম ডাল বেয়ে যেতে যেতে।
জিসান শা ইকরাম
আমি একটা লেখার জন্য গুগলে সার্চ দিতে গিয়ে একটি লিংক পাই,
এরপর একটার সাথে আর একটা,
এত জড়িয়ে গেলাম যে এটি লিখে ফেললাম।
ইকরাম মাহমুদ
আর এখন মর্ত্যে জনাব-জনাবা জিসানের সুখে শান্তিতে বসবাস।
জিসান শা ইকরাম
হ্যাঁ ঠিক 🙂
নিহারীকা জান্নাত
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসে একটু কান্নাকাটি করে যান।
দেখি আপনাদের দুজনকে।
প্রেমিক-প্রেমিকার বিবর্তনটা খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।
জিসান শা ইকরাম
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এমন কাহিনী কি আছে? খুঁজতে হবে,
তবে বেহুলা লক্ষ্মীন্দর নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে।
নিহারীকা জান্নাত
খুঁজতে থাকুন। পেয়েও যেতে পারেন।
অপেক্ষায় থাকলাম।
বায়রনিক শুভ্র
বেহুলারা কখনো বিধবা হয় না, বাট লক্ষিন্দরেরাই কেন মরে?
জিসান শা ইকরাম
আরে এটি তো কখনো ভাবিনি!!
ভাবতে হবে 🙂
রুম্পা রুমানা
ভূতে ধরলো জিসান ভাইরে ! কোন দিকে যায়তেছে ! পরে দেখি মিশরে । ভাল্লাগছে পড়তে।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
শুন্য শুন্যালয়
মুগ্ধতা তে ক্লিক করেই তো তব্ধা খেলাম, আমাকে উইকিপিডিয়া তে নিয়ে যায় কেন? তবে কী জলের মুগ্ধতা এখন উইকিপিডিয়া পর্যন্ত চলে গেছে! পরে দেখি মাথায় শিং ওয়ালা এক মুগ্ধতা। আইসিস রূপী মুগ্ধতার ভালোবাসা জলে ভেসে যায়নি, জ্বলজ্বল করে রূপান্তরিত হচ্ছে যুগের পর যুগ। আহা! বেঁচে থাকুক জল, মুগ্ধতা পালাবদল হয়ে সকল প্রেমিক – প্রেমিকার মাঝে।
ইতিহাস লিখলেন এমন করে যেন এ আপনারই গল্প, তাই আমি আমি না, কী করে বিশ্বাস করি বলুন?
এখন কী হয়ে ফিরে এসেছেন? জান – জানু?
অনেকদিন পর ফিরে পেলাম আপনাকে লেখায়। এ জিসান ভাইয়েরই লেখা। অসাধারণ -{@
জিসান শা ইকরাম
মন্তব্য দিয়ে লেখককে কিভাবে উৎসাহিত করতে হয়, তা আপনি জানেন।
আর একারণেই আপনার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করি 🙂
আমি কি আসলেই আমি, আস্ত আমি কি থাকি আমরা?
প্রশ্নটি কেন জানি হঠাৎ হঠাৎ এসে যায়।
এ নিয়ে কিছু লেখা হয়ত লিখতে পারি,
আবার নাও লিখতে পারি।
জল- মুগ্ধতা কি নামে আছে বর্তমানে বলবো কেন?
জেনে আবার কি না কি মন্ত্র দেন মুগ্ধতার কানে,
অতএব সাধু সাবধান।
ইলিয়াস মাসুদ
Craze পাঠকের জন্য এই লেখা খুব মুশকিল,নিজে তো কয় প্যারা লিখে খ্যামা দিছেন কিন্তু আমরা তো পড়তাইছি পড়তাইছি
লেখাতে মুগ্ধতা রইল
জিসান শা ইকরাম
আপনারো মুগ্ধতা আছে নাকি?
লেখায় মুগ্ধতা দিলেন 🙂
ধন্যবাদ মাসুদ ভাই
প্রবাসে ভাল থাকুন।
ইলিয়াস মাসুদ
মুগ্ধতার মাঝেই বেঁচে আছি, নাই মানে ?
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পড়লাম কিন্তু কি লিখবো বুঝতে পারছি না।
প্রেম অমর হোক। প্রাচীন মিশরীয় মিথ সম্বন্ধে একটু আইডিয়া পেলাম।
তেমনি পাছারছেনি পড়েও মজা পাইসি কিন্তু কিছু লিখে উঠতে পারিনি।
জিসান শা ইকরাম
প্রেম অমর হোক, সমবেত ভাবে এটি বলি আমরা।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
অসাধারণ এক মিথ শুনলাম ভাইজান, দারুণ। (y)
জিসান শা ইকরাম
লিংক তিনটিতে ক্লিক করে একটু পড়ুন,
জানার আছে অনেক কিছু।
ইঞ্জা
জি ভাইজান পড়েছি আর জেনেছি, ধন্যবাদ।
রিফাত নওরিন
অসাধারন ভাইয়া, বোঝার জন্য কয়েকবার পড়লাম…!!
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে,
ভাল থাকুন প্রবাসে।
মৌনতা রিতু
আমি একটা বই কিনেছি গ্রীক মিথ। এখনো পড়ার সময় পাইনি। এই লেখাটা পড়ে পড়ার ইচ্ছে হলো।
তা ভাইয়া, বগুড়ায় গেলাম, বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসর ঘরও দেখলাম। তাই তো বলি! চেনা চেনা সুবাস চারদিকে।
খুব সুন্দর অন্যরকম এক লেখা পড়লাম।
জিসান শা ইকরাম
তুমি তো আজকাল বড় লেখা বাদই দিয়ে দিয়েছ।
কত ভাল হয় তোমার লেখা।
প্রচুর পড়াশুনা করে লেখো তুমি, একারনে তথ্য সমৃদ্ধ হয় তোমার লেখা।
তোমার লেখার জন্য অপেক্ষা করি -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি সবাইকে খুব মিস করছি। খুউব বেশী। ব্লগে রোজ আসি, পড়ে আবার চলে যাই। এখনও ঠিক হয়নি শরীর তুমি তো সেটা জানো। নানা সবাইকে বলে দিও, কেউ যেনো না ভাবে, আমি জ্বালাতে আর আসবো না। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো। 😀
ভালো থেকো। -{@
জিসান শা ইকরাম
সোনেলা তোর অন্য একটি আত্মা তা আমরা সবাই জানি -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তাইতো তোমাকে ভালোবাসি(না)। 😃
রিমি রুম্মান
জল মুগ্ধতা, ভালো লেগেছে। দারুন এক মিথ জানলাম।
জিসান শা ইকরাম
জল মুগ্ধতা নিয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছে আছে দিদি ভাই।