
আলফা আর ওমেগার ব্যাপ্তি খুঁজে পেতে শুন্যতায় ভাসমান পদচিহ্ন আঁকার সে মনুষ্য প্রয়াস, বারংবারই হয়েছে ব্যর্থ। হতেই হবে যে! তলাবিহীন গহ্বরের অতলে মিশে যাওয়া প্রাণহীন পিঞ্জর কখনো পায়না সত্যিকার মৃত্তিকার সংস্পর্শ। নিঃসন্দেহে বোকা মানুষ তারা, এসব সত্যি জেনেও করে না জানার ভাণ।
জীবিত আর জীবাশ্মের দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান আমি-তুমি, কেইবা অনুভব করে সে বিশাল শুন্যতা? অথচ অন্ধকার কুঠুরি থেকে তারা ডাক দেয়, বাতাসে মিশে থাকে ধূপের নোনা ঘ্রাণ। চিৎকার করে শোনাতে চায় তাদের অব্যক্ত যন্ত্রনার গুঞ্জন। হায়! আমি যে নিজেই রক্তে মাংসে গড়া লিকলিকে তালপাতার সেপাই। জীবাশ্মের আহাজারি শোনার সেই শক্তি কি আমার আছে?
অনন্তকালের মহাপ্রলয়ে ঘূর্ণায়মান ধুলিকণারা সপাটে আঘাত করে প্রতিটি নিষ্প্রাণ দেহে। চুষে চুষে প্রাণরস বের করে পিপীলিকার সারি। ষোড়শপদী হায়নার দল মাংস খুবলিয়ে সাজে বহুরূপী ড্রাকুলা। ভালোবাসার পিঞ্জিরাটি লালাভ থেকে কালো, আবার কালো থেকে নীলাভে আচ্ছাদিত হয়। আকুন্ঠ অনুভাবী শবদৃষ্টি, কুয়াশার চাদরে ভিজে কালো গোলকধাঁধায় লুকোচুরি খেলে।
বিবর্তনের ধারায় আজন্ম যত্নে লালিত নিষ্পেষিত রুহে মরিচা ধরে। আটকুঠুরী নয় দরজার ছাওনী জরাজীর্ণতায় আক্রান্ত হয় বারংবার। শেষ বিদায়ে মানুষরূপী দো পেয়ে প্রাণ; তিন আজলা মাটি ছিটিয়ে দিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তাদের শেষকৃত্য সমাপিত হয় শেষ বিদায়ে- ম্যাড়মেড়ে দায়সারাভাবে।
দুমড়ে মুচড়ে ওঠা নিঃসাড় দেহে হুট করেই ভর করে কাঁটা জাগানো নিশ্চুপ শুন্যতা। শক্ত খাঁটিয়ায় শুয়ে থাকা অসীমের যাত্রী হিম আলিঙ্গনে চুপি চুপি আমার কানে কানে শিস কেটে বলে –
জানোনা কি? তুমিও যে শেষ পর্যন্ত আমারই মতন! প্রস্তুতি শুরু করে দাও বন্ধুবর; মহিরূহের এ অনন্ত যাত্রাপথে আমরা আবার মিলিত হবো, আলফা আর ওমেগার কোনও স্পর্শহীন অতলে।
তৌহিদ,রংপুর
৩০/০৬/২০১৯
(আলফা এবং ওমেগা- নতুন টেষ্টামেন্ট গ্রীক ধর্মশাস্ত্রে প্রথম এবং শেষ অক্ষরদ্বয় গ্রীক ভাষায় বর্ণিত রূপ ৷ ঐ ভাষায় আলফা এবং ওমেগা চিহ্ন স্বরূপ শুরু ও শেষ ৷ আলফা হচ্ছে জন্ম এবং ওমেগা হচ্ছে মৃত্যুর পরে অসীম যাত্রা।)
২৬টি মন্তব্য
শাহরিন
আমি এগুলোর ব্যাপারে কিছুই জানি না। আপনার লেখা আরো কয়েকবার পড়ে দেখি কিছু বুঝি কিনা।
তৌহিদ
লেখাটিই আসল আপু। পাঠকের জানার জন্য আলফা ওমেগার ব্যাখ্যা দিয়েছি। লেখা পড়ে মন্তব্য জানাবেন কিন্তু।
মাসুদ চয়ন
জন্ম মৃত্যুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে দূরত্ব কমে আসছে-সময় বয়ে চলছে কাল খেয়ায়।জীবন বড়ই সংক্্ষিপ্ত।খুব গভীর জীবন বোধ সিদ্ধ বহিঃপ্রকাশ।
তৌহিদ
আপনার মন্তব্যে ভালোলাগা রেখে গেলাম ভাই। শুভকামনা জানবেন।
মাছুম হাবিবী
খুব সুন্দর একটি বিষয়ে লিখেছেন ভাই। আলফা আর ওমেগা সম্পর্কে জানতাম নাহ। আজ জেনে অনেক খুশি হলাম
শুভ কামনা
তৌহিদ
ভালো থেকো মাছুম। শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
জীবনের শুরু আর শেষ এক সূত্রে বাঁধা।
আমরা শুধু ভুলে যাই, ভুলে থাকতে চাই, ভুল ভাবে।
তৌহিদ
আমরা প্রত্যেকেই এই একই ভুল বারবার করি। ধন্যবাদ জানবেন ভাই।
ইঞ্জা
আমিই আলফা, আমিই ওমেগা, ফেইসবুকে প্রথম যখন দুলাইন লিখলেন তখন এতো কিছু চিন্তা করিনি, কিন্তু যখন আপনার এই লেখা পড়লাম সত্যিই ভাবনাতে নিমগ্ন হলাম ভাই।
যাস্ট অসাধারণ লিখলেন ভাই। 👍
তৌহিদ
হঠাৎ মনে আসলো, আর বুঝি বেশি সময় নেই হাতে দাদা। মনটা ভীষণ খারাপ হলো। লিখতে বসে একটানা লিখেই ফেললাম।
ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলাম দাদা। ভালো থাকবেন।
শামীম চৌধুরী
আমাদের মাঝে আলফা ওমেগা হয়ে নয় ভাই হয়ে থেকো। অসাধারন লিখা তৌহিদ।
তৌহিদ
দোয়া করবেন ভাইজান। আপনিও ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
আমি জন্মের প্রয়োজনে বড় হয়েছিলাম,এখন মৃত্যুর কারণে ছোট হচ্ছি।
তৌহিদ
একদম ঠিক বলেছেন আপু। ধন্যবাদ।
সঞ্জয় মালাকার
জীবনের শুরু আর শেষ একি সূত্রে গাঁথা,
পরে বেশ ভাল লাগলো ,
শিখতে পারলাম আলাপ ওমেগা।
তৌহিদ
শুভকামনা দাদা
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
আজই খুউব ভোরো কোনো এক কারণে সহসাই মনে হয়ে ছিল,ইশ্, জীবনের শুরুটার মতো একই মিল রেখপ শেষ হতো তাহলে তো বেশই হতো,,আপনার লেখার গভীরতা এখন অন্য কিছু মনে করিয়ে দিল,,অসম্ভব সুন্দর লেখা
তৌহিদ
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
মনির হোসেন মমি
আলফা ওমেগা
নামেই চমক আর লেখায়তো বিশ্বকাপ জয়।
জীবনের শুরু এবং শেষ
একই সুত্রে গাথাঁ।কেউ ভাবে কেউ ভাবায় কেউ বা ভাবাতে চায় কিন্তু সবশেষে ফলাফল শুন্য হয়তো আবারো জীবে ফিরে আসার অপেক্ষায়।
তৌহিদ
জন্মালে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে, এটাই বাস্তব। ধন্যবাদ ভাইটি।
শিরিন হক
“আটকুঠুরির নয় দরজা”,প্রথমে গল্পটা পড়েছি বুঝতে পারিনি তখন তারপর আবার পড়ি আপনার লেখাটা আবার ও পড়তে হবে।
তৌহিদ
হ্যা আপু, সময় করে পড়বেন কেমন? শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
অসাধারন শব্দ চয়ন আর শব্দের বিন্যাসে লেখাটিকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
আর একটি এমন সুন্দর শব্দ চয়নে লিখেছিলেন।
মাঝে মাঝে আপনার কোয়ালিটি প্রকাশ করছেন আমাদের মাঝে।
জীবনের শুরু আর শেষ অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত,
আমাতেই শুরু আমাতেই শেষ,
যেন ভুলে না যাই।
শুভ কামনা ভাই।
তৌহিদ
মাঝেমধ্যে যখন রেগে থাকি তখন এরকম লেখা মাথা থেকে বের হয়। মন খারাপ থাকলেও হয়। কি যে করি! ভালো লেখার জন্য কি আর মুড অফ করে বসে থাকা যায়?
ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন ভাই।
রেহানা বীথি
শুরু করি, সাজাই গোছাই। অথচ অচেনা সব। চেনার ভান করে, সাজিয়েছি সুন্দর করে এই আত্মতৃপ্তি পেলাম কি পেলাম না, মিলিয়ে যাই অসীম শূন্যতায়।
অপূর্ব এক বোধের চমৎকার প্রকাশ।
তৌহিদ
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম আপু। পাশে থাকবেন।