আত্মমগ্ন

জিসান শা ইকরাম ৯ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ১১:২২:৫৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৫৩ মন্তব্য

দীর্ঘ অন লাইন জীবনে অনলাইনে পরিচিত মানুষদের সাথে কম মেলামেশা হয়নি। ব্লগে লেখালেখির কারণে বিশাল একটি সমাজ পেয়েছি, পাচ্ছি। সমমনা বন্ধু ভক্ত অনুরাগীর সংখ্যাটি ইর্ষনীয় ছিল বলা যায়। এই পরিচিতির সুবিধাও পেয়েছি বা পাচ্ছি। দেশ বা বিদেশের যে কোন স্থানে গিয়েছি, জিসান নাম এর পরিচিতির কারণে ভ্রমন, সময় কাটানো অত্যন্ত সহজ হয়ে গিয়েছিল, হচ্ছে। তা দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম বা বিদেশের কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর হোক না কেন।
এই পরিচিতি বা অত্যন্ত চেনা জানা আপন মানুষদের প্রকৃত সংখ্যাটি হঠাৎ করেই কমে যায় ব্লগীয় এক ক্যাচালে, ক্যাচালটি ছিল মূলত রাজকারকারদের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান। যা স্বাভাবিক ভাবেই অন্য রঙ চড়ানো হয়েছিল। যাদের একান্ত আপন ভাবতাম, যারা জিসান অন্ত প্রাণ ছিল তাঁদের একটি অংশ দূরে ছিটকে গেলো।

দ্বিতীয় ধ্বসটি নামে  শাহাবাগ গণজাগরণ মঞ্চের মাঝা মাঝি সময়ে, যখন বিএনপি এই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, হেফাজতের পাঁচ মের অবস্থানের সময়। অনেক আপন ভাবা মানুষ, বন্ধু চলে যায় আমার বিপক্ষ মেরুতে।

শাহাবাগ আন্দোলনের সময় আমরা যারা ব্লগিং করি তারা নাস্তিক ট্যাগে ভূষিত হয়ে যাই। অনেক শিক্ষিত লোকও এখনো ব্লগাররা নাস্তিক এমন ধারনা পোষন করে। সোনেলা ব্লগের সাথে সাথে ফেইসবুকেও তখন প্রচুর লেখা আরম্ভ করি। আবার সমমনা অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়। ভালোই উপভোগ করতাম ফেইসবুক তখন।

সময়ে অনেকেরই ভিতরের মানুষের সাথে পরিচিত হতে থাকি। যাদের একসময় আদর্শ, দেশাত্মবোধ, সমাজ চিন্তা, নারীর সন্মান, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় নীতি ইত্যাদি প্রশ্নে সমমনা হওয়ায় বন্ধু ভাবতাম তাঁদের অনেকেরই বিভিন্ন ইস্যুতে চরম প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থান দেখে বিস্মিত হই। ধীরে ধীরে এদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেই। একটি সত্যি উপলব্ধিতে উপনীত হই যে ফেইসবুকে লিখে লাইক কমেন্ট পাওয়া যায়, মানুষকে মোটিভেট করা যায় না। ২০১৭ থেকে ফেইসবুকে লেখা বাদ।

বন্ধুত্বের স্বরূপ চেনা জানার সংজ্ঞা পালটে যেতে থাকে আমার। বন্ধুর মৃত্যুতে করুণ স্ট্যাটাস দেয়া, মনে হয় যেন বন্ধুর মৃত্যুতে তার হৃদয়ের অর্ধেক মৃত্যু হয়েছে। পরক্ষণেই অন্য বন্ধুর হাসি ঠাট্টার লেখায় গিয়ে ফুর্তি করা। এসব দেখি আমি আর ভাবি, বন্ধুর মৃত্যু তার লাইক কমেন্ট বৃদ্ধির একটি পন্থা মাত্র, আর কিছু নয় (অবশ্য সবাই এমন নয়)। এদের থেকেও নিজেকে দূরে রাখি।

সাম্প্রতিক ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ নিয়ে উন্মাদনা চলছে ফেইসবুকে। নিজস্ব পরিচিত জনেরা যখন অত্যন্ত কুৎসিত ভাবে এ বিষয় নিয়ে লেখে, মন্তব্য করে তখন খুব অসহায় লাগে নিজেকে। ফটো এডিট করে তা মডেলের ছবিতেই প্রকাশ করা হয়। ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ এটি তো একটি শ্লোগানই ছিল মাত্র। পথে ঘাটে বাসে নারীরা যে চরম অস্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করে এটি তো সত্যি। গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর লোকের কি অভাব আমাদের দেশে? যেখানেই ভিড় সেখানেই তো নারীদের আতংক নিয়ে চলাচল করতে হয়। বাঙালীর ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখেও নারীদের চলাফেরা সীমিত হয়ে গেছে প্রায়। এই শ্লোগানটি আমরা পজেটিভ ভাবে নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারতাম।
মেয়ে মডেল দুজন টি-শার্ট গায়ে দিয়ে এই মডেলিং করেছে। আপত্তিটা বা সমালোচনাটা এই প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকলে হতো।  টি-শার্ট পরিধান করে আমাদের দেশের মেয়েরা বাইরে বের হন না। সেলোয়ার কামিজ ওড়না নিয়ে চলাচল করেন অধিকাংশ মেয়ে নারী। ইদানিং অবশ্য বোরকা/ হিজাবের প্রচলন হয়েছে খুব। টি-শার্টের পরিবর্তে কামিজ বা বোরকার উপরে এই শ্লোগান লিখলেও সমালোচনা হতো। কারণ নারীর প্রতি হিংস্রতা আমাদের ভিতরেই রয়ে গিয়েছে।

আশে পাশের অনেক কিছুই এখন আর নিতে পারছিনা আজকাল, প্রচন্ড অসুস্থ বোধ করছি। আমিই বেমানান হয়ত এসবে। নইলে সবাই সহ্য করতে, মেনে নিতে পারলে আমি কেন পারছি না? তারচেয়ে বরং নিজেকে অপছন্দের বিষয় থেকে সরিয়ে এনে নিজের মাঝেই থাকি।

১২৭০জন ১০১৫জন
0 Shares

৫৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ