হিন্দু পুরানে কৃষ্ণ, শকুন্তলা, দময়ন্তি ও নলের প্রেম, উর্বসী সহ অনেক অনেক গল্প আছে। যেগুলো শুনলে বা জানলে কেবল রুপকথার গল্প মনে হয়। যাইহোক আজ অহল্যার গল্প বলি…
ব্রহ্মা এক অপরূপ রমনী তৈরি করলেন। তিনি সেই রমনীর নাম রাখলেন অহল্যা। অহল্যা রূপে অদ্বিতীয়া। দেবরাজ ইন্দ্র অহল্যাকে দেখেই প্রেমে পড়ে গেলেন। ব্রহ্মা ইন্দ্রের মনের কথা বুঝতে পেরে অহল্যাকে গচ্ছিত রাখলেন ঋষি গৌতমের কাছে। নির্দিষ্ট সময় পর গৌতম অহল্যাকে ফিরিয়ে দেন অক্ষত অবস্থায়। এত সুন্দরী একটি রমনীকে পেয়েও গৌতম তাকে ভোগ করতে চায়নি বলে খুব খুশি হলেন ব্রহ্মা। খুশি হয়ে গৌতমের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিলেন অহল্যার। গৌতম ফের অহল্যাকে নিয়ে ফিরে গেলেন মিথিলা উপবনে নিজের আশ্রমে। গৌতম সারাদিন পাহাড়ে বসে ধ্যান করেন। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেন। আর অহল্যা সারাদিন বনে বনে ঘুরে বেড়ায়। নদী তীরে হেঁটে বেড়ায়। আর ফুলবন থেকে ফুল তুলে ফুলের মালা গেঁথে এনে সাজিয়ে রাখে বিছানায়। ফুলসজ্জার জন্য। কিন্তু ঋষি গৌতম এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে। সারা রাত বিছানায় ফুলের গন্ধ নিয়ে ছটফটে রাত কাটে অহল্যার। সকালে সেই বাসি ফুল সে ফেলে দেয়। অথচ অহল্যার নিজ ফুলের কলি থাকে স্পর্শহীন আর সে কলি অবিরাম ফুল হয়ে ফুটতে চায়।
গৌতমের সাথে বিয়ে হলেও ইন্দ্র অহল্যাকে ভুলে না। তার চিন্তা জুড়ে কেবল অহল্যার রূপ। মনে মনে সে কামনা করে অহল্যাকে। একদিন ইন্দ্র নেমে আসে মিথিলা উপবনে। অহল্যা তখন ফুল তুলছিলো প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে। ইন্দ্র গৌতম সেজে অহল্যার কাছে এলো। এসে চুম্বন করলো। জড়িয়ে ধরলো ভালোবাসা দিয়ে বুকের মাঝে গভীর ভাবে। অহল্যা হয়তো বোঝে এ গৌতম নয়, ইন্দ্র। কিংবা হয়তো বোঝে না। সে ভাবে গৌতমই তো। বস্তুর বাহ্যিক আকার দেখে মানুষ তো বস্তুর পূর্ব নির্ধারিত নামেই চেনে। একটি আপেল যদি দেখতে হুবহু ডালিমের মতো হয়, লোকে দেখেতো তাকে ডালিমই বলবে। ভেতর না দেখে কেন সে অস্বীকার করবে গৌতমকে। আর গৌতমের ভেতরওতো সে জানে না। বাহ্যিক গৌতমরূপী এ ইন্দ্র তার কাছে গৌতম ভিন্ন আর কেউ নয়। গৌতমের চুম্বনে সে সাড়া দেয়। কুটিরে নিয়ে গিয়ে সে গৌতমরূপী ইন্দ্রের পূজা করে। গৌতমরূপী ইন্দ্রও তাকে পূর্ণ করে। এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন। দুপুরে গৌতম রূপী ইন্দ্র আসে কুটিরে। অহল্যার পূজা নেয়। তারপর চলে যায়। আবার রাতে গৌতম রূপী গৌতম আসে। বিছানায় ছড়ানো ফুল আর অহল্যার গন্ধ ছড়ানো ফুল পাশে রেখে ঘুমায়। একদিন সত্যিকার গৌতম খেয়াল করে অহল্যার শরীর জুড়ে তৃপ্তির উজ্জ্বলতা ঠিকরে পড়ছে। তার সন্দেহ হয়। তাই চুপচাপ একদিন দুপুরে সে কুটিরে ফেরে। তখন অহল্যা বস্ত্রহীন হয়ে গৌতমরূপী ইন্দ্রের শরীরে ফুলের ঘ্রাণ ছড়াচ্ছিলো। প্রকৃত গৌতম এসে দেখে আরেক গৌতম। আধ বোজা চোখ মেলে অহল্যা দেখে দরজায় বিস্মিত চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গৌতম। প্রকৃত অর্থেই যখন দুইজন গৌতম একই সময়ে অহল্যার দৃষ্টিগত হয়, তখন তার উচিত হয় দৌড়ে এসে বস্ত্রদিয়ে নিজেকে আবৃত করা। এবং সে তাই করে। মুখোমুখি দুই গৌতমকে রেখে তার চোখ বিস্ময় প্রকাশ করে। যদিও সে জানে, কিন্তু সে জানাতো ছিলো মনে মনে একার। এখন এই জানাতো আর একার না, তিনজনের। সুতরাং তাকে বিস্ময় প্রকাশ করতেই হয়।
রাম অহল্যাকে মুক্তি দেয়
গৌতমরূপী ইন্দ্র অদৃশ্য হয়। গৌতমরূপী গৌতম অভিশাপ দেয় ইন্দ্রকে। ফলে ইন্দ্রের সারা শরীর ভরে যায় যোনীতে। গৌতম অহল্যাকেও শাপ দেন, “মমাশ্রমা সমীপতঃ বিনিধ্বংস”; অর্থাৎ অহল্যার চেয়েও অধিক সুন্দরী পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে তাঁর রূপের গৌরব খর্ব করবে। অহল্যা দাবী করে যে সে নির্দোষ। সে গৌতমেরই সেবা করছিলো। গৌতমই ছিলো তার মনে প্রাণে। ইন্দ্র যদি গৌতম রূপে আসে তবে তার দোষ কোথায়! এই ক্ষেত্রে ইন্দ্র কর্তৃক সে ধর্ষিত হয়েছে মাত্র। গৌতম আবারো অভিশাপ দেন ইন্দ্রকে, যুদ্ধে ইন্দ্রকেও ধর্ষিত হতে হবে, আর ইন্দ্র জগতে যে ধর্ষণ প্রথার সূচনা করলেন তাঁর অর্ধেক পাপ বহন করতে হবে ইন্দ্রকেই। তারপর গৌতম অহল্যাকেও পাথর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেয়। এবং সাথে সাথেই অহল্যা পাথরে রুপ নেয়। কেবল রাম এসে যদি কখনো অহল্যাকে স্পর্শ করে, তবেই সে অভিশাপ মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হবে। আর তখন নিষ্কাম হয়ে আবার গৌতমের সাথে সংসার করতে পারবে। এভাবে অহল্যা কুটিরে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যুগের পর যুগ। আর গৌতম পাহাড়ে থাকে ধ্যান মগ্ন। অনেক দিন পর রাম আর লক্ষণ যখন এই কুটিরের আতিথ্য গ্রহণ করেন। কুটিরে ঢুকে অহল্যার পা স্পর্শ করেন রাম, তখন অহল্যার পাথর জীবন শেষ হয়।
*** তানভীর আশিক এর লেখা থেকে সংগ্রহ…
আমি লেখতে বসার পর ভাবলাম গোগল করে দেখি আগে কেউ লিখছে কিনা। তো দেখলাম যে উনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লেখছে। তাই আমি আর লেখলাম না। উনার লেখাটাই কপি-পেষ্ট করলাম……
পাঠকদের ভাল্লাগ্লে পরবর্তীতে এমন পোষ্ট আরো দেয়ার ইচ্ছা আছে… 🙂
২৩টি মন্তব্য
সাবরিনা
আর ইন্দ্রের কি হল?
অনিকেত নন্দিনী
অহল্যা তো রামের প্রণামে জীবন্ত হলো কিন্তু গৌতমের অভিশাপের পর দেবরাজ ইন্দ্র তার সমস্ত শরীরে গজানো ১০০১ যোনি থেকে কিভাবে রেহাই পেলো সেইটাও অন্তর্ভুক্তিতে গেলে ভালো হতো না?
আর্বনীল
অই যে গৌতম অভিশাপ দিচে….
হিলিয়াম এইচ ই
আগে ধারণা ছিল, এবার আরো কিছু হল।
আর্বনীল
আশা করি আরো হবে… 🙂
খেয়ালী মেয়ে
অহল্যার গল্প ভালো লেগেছে 🙂
আর্বনীল
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
হিন্দু পুরান নিয়ে আমার আগ্রহের সীমা নেই,অসীম আগ্রহ।
অহল্যাকে জানলাম —
ছবিগুলো আর একটু বড় হলে ভালো হতো।
এমন পোষ্ট আরো চাই।
শুভ কামনা।
আর্বনীল
ধন্যবাদ ভাইয়া…
এসব ব্যাপারে আমারও আগ্রহের সীমা নেই। আপনার আগ্রহের কথা জেনে আরো ভাল্লাগল।
আর ছবিগুলো গোগল থেকে নেয়া। এর চেয়ে ভালো ছবি চোখে পড়েই নি…
শুন্য শুন্যালয়
হুম গল্পটা আরো লিখুন। ইন্দ্রের কথা। এরপর অহল্যার কি হলো? এই গল্পগুলো চুম্বকের মত টানে। আপ্নি লিখলে একটু ভিন্নতা তো থাকতোই, তাইনা?অবশ্যই আরো আরো লিখুন।
আর্বনীল
আসল কথা হল একটা গুছানো লেখা দেখে ফেলার পর নতুন করে আর গুছিয়ে লেখা যায়না। আমি লেখলে হয়তো এর চেয়ে ভাল গুছিয়ে লেখতে পারতাম না…
ধন্যবাদ আপনাকে……
শুন্য শুন্যালয়
কি একটা পোস্ট দিছিলেন রে ভাই, ধাক্কাধাক্কি করেও টপলিস্ট থেকে সরাতে পারিনা। 🙂
আর্বনীল
নিষিদ্ধ বই এর পোষ্ট??
এই পোষ্ট এর ব্যাপারে জিসান ভাইও বলেছিল…
এত পাঠকের নজরে এটা পড়বে আমার ধারনাই ছিল না…
মিথুন
অহল্যার এই ঘটনা নিয়েই বুঝি মুভি দেখেছি কোলকাতার। এসব পড়তে ভালো লাগে। আরো লিখবেন অবশ্যই…………
আর্বনীল
আমি মুভিটা দেখিনি…… মুভির নামটা অবশ্যই বলবেন…… না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাব না…
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর ভাল লাগ ল
কিন্তু ইন্দ্র কি ঐ অবস্থায় থাকবে?
আর্বনীল
ইন্দ্রকে প্রথমে অভিশাপ দেয়া হইছিল তার সারা শরীরে যৌনি গজাবে… তারপর আরো একটা অভিশাপ দেয়া হইছে যে, যুদ্ধে যেন সে ধর্ষিত হয়… এরপরে হয়তো কোন যুদ্ধে ধর্ষিত হয়েছিল। কিংবা হয়নি… এসব আর তেমন ভাবে জানতে পারিনি…। 🙂
ইমন
সুন্দর পোষ্ট 🙂
আর্বনীল
ধন্যবাদ…
নুসরাত মৌরিন
পৌরাণিক গল্পগুলো পড়তে ভাল লাগে।
আরো লিখুন
আর্বনীল
ধন্যবাদ… আর অবশ্যই আরো আরো অনেক লিখতে চাই… 🙂
ব্লগার সজীব
জানলাম।আরো লিখুন এসব কাহিনী।কপি পেষ্ট দিলে মুল লেখার লিংক দিলে ভাল হয়।
আর্বনীল
যেহেতু মুল পোষ্টের প্রায় সম্পুর্নই কপি-পেষ্ট করা। আর পোষ্ট দাতার নামও মেনশন করে দিয়েছি। তাই আর লিংক দেইনি…
যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে…