আয়নায় হৃদি নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে এই শাড়ীতে কি মানাচ্ছে না ! আজ তাকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর মেয়েটি মনে হতে হবে… নীল শাড়ীটা পরবে? নাহ ! ওটা পরা যাবে না । ওটা তোলা থাক ওটা পরে সে সমুদ্রের তীরে তার হাত ধরে হেঁটে যাবে দূরে… জিয়ন আজ তাকে সকালে দেখা করতে বলেছে খুব নাকি জরুরী কথা আছে। হৃদি জানে কি বলবে, জিয়ন বলবে ‘চলো, হৃদি আমরা বিয়ে করে ফেলি, তুমি আমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে পারবে না? ।’ আর সে বলবে ‘হাঁ , পারবো ।’ হৃদি আপন মনে একটু রাঙা হয়ে উঠে ।
ওই যে জিয়ন , যেখানে থাকার কথা সেখানেই অপেক্ষা করছে।
জিয়ন- হৃদি , তুমি আমাকে বিশ্বাস করো?
হৃদি – হাঁ, করি
জিয়ন – আমি খুব বড় একটা সমস্যায় পড়েছি, এই মুহূর্তে আমার বেশ কিছু টাকা লাগবে , তুমি দিতে পারবে না? জানি পারবে । তোমার নামে তোমার বাবা যে টাকাটা ব্যাংকে রেখেছে, সেটা হলেই চলবে । তুমি টাকাটা আমাকে তুলে দাও। আর শুনো, আমি কয়দিন খুব ব্যস্ত থাকবো সমস্যা কেটে গেলেই তোমার সাথে যোগাযোগ করবো। তারপর আমরা বিয়ে করে ফেলবো।
হৃদি জানে জিয়ন মিথ্যা বলছে। জিয়নের চোখ দেখেই সে বুঝতে পারছে, টাকাটাই জিয়নের কাছে মুখ্য । জিয়ন আর কোন দিনও তার সাথে যোগাযোগ করবে না। জিয়ন তাকে ভালবাসেনি কিন্তু সে তো বেসেছে ! তার ভালোবাসা কি করে টাকার কাছে হেরে যাবে! হৃদি টাকাটা দিবে, ঠকে গিয়েও নিজের কাছে জিতে যেতে চায় হৃদি ।
হৃদি আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো, এলো চুল খোঁপা করতে গিয়ে হৃদির হাত থেমে যায়, হাতের নির্লিপ্ততায় চুল গুলি আবার পিঠে ছড়িয়ে পড়ে… ‘ খোলা চুলে আপনাকে ভালো লাগে।’ ইফতি বলেছিলো । রাত ১২টা থেকে সে ছটফট করছে, এখন ২টার উপরে বাজে। আজ বিশেষ একটা দিন। পাশের রুমে ইফতি কম্পিটারের সামনে বসে আছে সম্ভবত ফেসবুকে চ্যাটিং এ ব্যাস্ত, এ সময়ে ওই রুমে হৃদির প্রবেশ ইফতি পছন্দ করে না , প্রথম প্রথম না বুজেই ডুকে যেতো আর ইফতির চেহারায় বিরক্তি প্রকাশ পেতো। আজ সে ইচ্ছে করেই ডুকে, ‘ইফতি, ঘুমাবে না? অনেক রাত হল তো।’ যথা রীতি বিরক্তি নিয়ে ইফতি তাকালো, তার আগে চ্যাটবক্স মিনি মাইজ করে নিলো। ‘হৃদি, তোমাকে তো আগেই বলেছি ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়বা , আমার জন্যে অপেক্ষা করবে না। ‘আজকের তারিখটা কি তোমার মনে নেই! আজ আমাদের ম্যারিজডে , ইফতি!’ ইফতির কণ্ঠে বিরক্তি আরও বাড়ে ‘সব সময় অতো দিন তারিখ নিয়ে পড়ে থাকো কেনো? যাও শুয়ে পড়ো আমার দেরি হবে।‘
শরীরের আনাচে কানাচে কারো হাতের আনাগোনায় হৃদির ঘুম ভেঙ্গে যায়। ইফতি আজো নেশা করেছে , রোজই করে। হৃদি বাঁধা দেয় ‘ ইফতি, প্লীজ আজ না … আমার শরীর ভালো লাগছে না।‘ ইফতি ধমকে উঠে ‘ ন্যাকামি করবা না , তোমাকে বিয়ে করছি কেনো ! তোমার এই শরীরের জন্যেই… ‘
হৃদির প্রচণ্ড গরম লাগছে। তার দু’রুমের এ বাসাটায় খুব গরম । এটাকে বাসা না বলে গুহা বলাই ভালো। গুহাটাকেই হৃদির খুব পছন্দ, একেবারে নিজের । জানালা দিয়েও কোন বাতাস আসে না বড় বড় বিল্ডিং বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে … একটা ফোন কলের অপেক্ষা করছে সে , প্রতিদিন করে… রাত ১ টার পর কলটা আসে। বহু বহু কাল পর সে আবার ভালবাসতে শুরু করেছে, আবার বিশ্বাস রেখেছে … হৃদি আয়নার সামনে, একে একে শরীরের সব কাপড় খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, আয়নায় তার শরীরের প্রতিবিম্ব। শরীর দেখা যায়, মন কেনোদেখা যায় না !
৪০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
তিনটি ভিন্ন সত্ত্বাকে লেখার মাঝে তুলে আনাটা একটু কঠিন
কঠিন বাস্তব
কিন্তু এড়াবার উপায় নেই।
তবুও জীবন বহমান
জীবন চলুক আনন্দের নৌকায় ভেসে ভেসে ।
ভালো লেগেছে লেখা ।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ জিসানদা 🙂 //জীবন চলুক আনন্দের নৌকায় ভেসে ভেসে । // এই শুভকামনা কি আমার জন্যে নাকি গল্পের প্রধান চরিত্রের জন্যে ? 🙂
জিসান শা ইকরাম
গল্পের হৃদির জন্য ।
আপনার জন্য আরো বেশী শুভকামনা । সমস্ত চাওয়া গুলো পূর্ণ হোক। অমঙ্গল যেন স্পর্শ করতে না পারে আফ্রি আয়েশাকে ।
আফ্রি আয়েশা
জিসানদা , আপনি আমারে আপনি করে বলছেন কেনো 🙁
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা তুমি করে বলবো এখন থেকে 🙂
আফ্রি আয়েশা
🙂 🙂 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
কিছু সত্যি ফুটে উঠেছে লেখায় , জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারিত হতে হয় ।
হৃদি যেন মন দেখতে পায় আবার -{@ ভালো লিখেছেন ।
আফ্রি আয়েশা
প্রত্যাশা করি কেউ যেনো ভালোবাসার নামে প্রতারিত না হয় … ধন্যবাদ নীল আপুন 🙂 ‘ নীল ‘ ডাকলাম আপনার অনুমতি ছাড়াই 🙂 শুভকামনা জানবেন ।
ব্লগার সজীব
এমন উপলব্দি আসলে কষ্টের খুব। (y) (y)
আফ্রি আয়েশা
গল্পটি পড়ে কষ্টের উপলব্দি করেছেন… ধন্যবাদ 🙂
তুমি আমি এক
বেশ ভালো লাগলো । আমি যদি লিখতে পারতাম এমন সুন্দর করে -:-
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্যে 🙂 ভালো থাকবেন
মর্তুজা হাসান সৈকত
‘শরীর দেখা যায়, মন কেনোদেখা যায় না !’ আরে এ জিজ্ঞাসাতো আমারও । ভালো লিখেছেন আপি ।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂 শুভকামনা যেনো এ জিজ্ঞাসার জবাব পান ।
শুন্য শুন্যালয়
শুধু এই লেখাটির জন্যই লগইন করা …ভালো থাকুন আফ্রি…আশা করি আপনার লেখা মিস করবোনা কখনো …
আফ্রি আয়েশা
এতো সুন্দর মন্তব্য ! ধন্যবাদ। আপনার দেয়া উৎসাহ ধারন করবো। খুব ভালো থাকবেন 🙂 ।
খসড়া
কাল রাতের মন্তব্যটা কই। ডিলিট করে দিয়েছেন কি? যাই হোক আবার লিখছি।
অন্য ভাবনা র অনন্য প্রকাশ।
আফ্রি আয়েশা
নাহ তো ! আমি কখনো কোন মন্তব্য ডিলিট করি না , সেটা যত কঠিন সমালোচনাই হোক না কেনো , খুব অবাক হলাম ! সার্ভারের প্রবলেম হতে পারে … তবুও দুঃখ প্রকাশ করছি । ভালো থাকবেন।
আদিব আদ্নান
মন দেখা গেলে কিন্তু সমস্যা ছিল ।
আফ্রি আয়েশা
মন দেখা গেলে কি সমস্যা হতো ? অন্তত প্রতারিত তো হতে হতো না কাউকে… ধন্যবাদ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
সত্যি সত্যি নিজের মুখোমুখি হওয়া কঠিন হলেও
এড়িয়ে কিন্তু আমারা যেতে পারি না ।
আফ্রি আয়েশা
হুম , এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই । ভালো থাকবেন শুভকামনা 🙂
লীলাবতী
হৃদিকে হৃদিদের এমনি অবস্থার মাঝে দিন কাটাতে হয় । হৃদি যেন ভালো থাকে। ভালো লিখেছেন আপু -{@
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ আপুন । ভালো থাকবেন 🙂
স্বপন দাস
আসলে লক্ষ হৃদিরা এভাবেই গুমড়ে মরে দু বা তিন কামরার কোন গুহায় — আবার হয়তোবা স্বপ্ন দেখে নতুনের ।।
সুন্দর হয়েছে — শুভকামনা ।।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্যে । ভালো থাকবেন 🙂
বনলতা সেন
হৃদিদের জন্য সামান্য সমবেদনা ।
এমন করে মেনে নেয়া ঠিক না ।
আফ্রি আয়েশা
হৃদি কিন্তু হার মানেনি , সে শুধু নিজের ভালোবাসাকে সম্মান করে গেছে … শুভকামনা বনলতা আপুন 🙂
নিশিথের নিশাচর
ভালো লিখেছেন
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂 শুভ কামনা জানিও
নীল প্রান্তর
আসলেই লিখাটা অসাধারন হয়েছে ।
হৃদির চরিত্রটা অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। -{@
মনতো দেখা যায় না। যদি দেখা যেত তাহলে ইফতি বুঝতে পারতো হৃদির মনে কতটা কষ্ট।
ইফতি আসলেই অনেক খারাপ ।
শুভ কামনা রইলো আপু। 🙂
আফ্রি আয়েশা
নীল তুমি সোনেলায় আসছো ! খুশি হলাম তোমাকে পেয়ে । ধন্যবাদরে সুন্দর কমেন্ট 🙂 ভালো থেকো ।
তওসীফ সাদাত
অবশেষে তোমার গল্পে মন্তব্য করতে পারলাম !! 😀 😀
আফ্রি আয়েশা
অবশেষে তোমার মন্তব্য পাইলাম 😀
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার উপস্থাপনা। শুভকামনা নিরন্তর।
আফ্রি আয়েশা
শুভকামনা আপনার জন্যেও। ভালো থাকবেন 🙂
রকিব লিখন
আপনার লেখার হাত তো খুব সুন্দর।। আমি অভিভূত।। গল্পটা অসাধারণ।।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন 🙂
প্রিন্স মাহমুদ
ভাল লেগেছে তবে তোমার কবিতায় থাকা উচিত বলে আমি মনে করি ।
আফ্রি আয়েশা
ঠিক আছে পরামর্শ মেনে নিলাম 😀 । ভালো থেকো 🙂