-হেলো!

-কে বলছেন?

-সূস্মিতা

-ও হে…কেমন আছো তুমি?

-ভালো নেই,

-কেনো?কি হইছে?

-কিছু অর্থের প্রয়োজন।

-কত?

-তিন হাজার ডলার প্রায়।

এত টাকা!আমার সাধ্যের বাহিরে।সুস্মিতা ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে।কাজ করেন একটি ফ্লাট বাড়ীতে আয়া হিসাবে। মাসে পাচঁ’শ ডলার বেতন।সে মোটা মোটি ভালই শিক্ষিত সে দেশের মেট্ট্রিক পাশ।আমার সাথে প্রথম সাক্ষাত হয় লাকী প্লাজায় একটি কসমেটিকস স্টলে।সেখানে সে কিছু কেনা কাটা করছে আমার কাছাকাছি এসে হঠাৎ সে অজ্ঞান পড়ে যায়। আমি হতভম্ভঃ থ’ হয়ে সেখানে দাড়িয়েই রয়েছি…মেয়ে মানুষ বলে তাকে সহায়তা করা যদিও কর্তব্য ছিল কিন্তু কেনো জানি করিনি হয়তো মনে হয়েছিল তার সঙ্গী কেউ আছেন এখানে অথবা সিঙ্গাপুরের নারী কেলেঙ্কারীর আইন প্রয়োগের কঠোরতা মন আমাকে বাড়তে দেয়নি কিন্তু অবস্হা বে-গতি দেখে সপিংমলের সিকুরিটিদের ডাকতে বাধ্য হলাম।সিকুরিটি এসে কোন কিছু বলার আগেই মেয়েটিকে ধরাধরি করে দ্রুত একটি টেক্সি ক্যাবে আমাকে সাথে দিয়ে আরো দু’জন সিকুরিটি সহ পাঠিয়ে দেয় নিকটস্হ তান্ তক সিন জেনারেল হাসপাতালে।হাসপাতালে ইমারজের্সী বিভাগে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে ডাক্তাররা মেয়েটির কোন আত্ত্বীয়স্বজন আছে কি না তা জানতে চাইলে সিকুরিটিরা আমাকে দেখিয়ে দেন।আমি সেই মুহুর্তের জন্য চুপচাপ ছিলাম কিন্তু কেনো আমি নিজেও জানি না।আমাকে ডাক্তার সাহেবের সাথে দেখা করতে সিকুরিটিরা নিয়ে গেল।ডাক্তার সাহেব বেশ ভদ্রলোক বলে বিনয়ের সাথে আমাকে মেয়েটির সম্পর্কে আমাকে যা উপদেশ দিল তাতে আমি বিস্মিত অপ্রস্তুত।

-সমস্যা নেই মেয়েটি ভাল আছে,ভয়ের আর কোন কারন নেই…তবে এ সময় একটু সাবধানে রাখবেন।

আমিতো অক্কার মা ঠক্কা হয়ে গেছি।বলে কি ডাক্তার সাহেব।উৎসাহী হয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছিল।সে যা বলল তাতে আমি অবাক হলাম।

-কি হয়েছিল?

-কিছু না মেয়েরা যখন মা হন তখন এমন সমস্যা হবেই।তবে সাবধান থাকলে ভয়ের কিছু নেই।সে কি হয় আপনার?

এবার আর সত্য না বলে থাকতে পারলাম না।

-কিছুই না স্যার।

-আপনার পরিচিত?

-তাও না স্যার….ঐ সপিংয়ে হঠাৎ সে আমার কাছাকাছি লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে।

-বড় চিন্তার বিষয়।

ততক্ষনে সিকুরিটিরা চলে গেছেন যার যার কর্তব্যে।এমন সময় এক নার্স এসে মেয়েটির একটি হ্যান্ড ব্যাগ আমার হাতে দেন।ব্যাগটিকে সার্চ করে একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড এবং একটি ভিজিটিং কার্ডপাওয়ায় চিন্তামুক্ত হলাম।ডাক্তার সহ মেয়েটির কাছে গিয়ে দেখলাম মেয়েটি এখন সম্পূর্ণ সুস্হ্য।হাসপাতাল তাকে রিলিজ দেন।মেয়েটি আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানান।মেয়েটির ওয়ার্ক পারমিটের ঠিকানা দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটি বেলিষ্টার রোডে বি ব্লকে কাজ করেন।আমার বাসা হতে দশ মিনিটের রাস্তা।মেয়েটি আমাকে তার বাসায় পৌছে দেবার অনুরোধ জানান আমিও ভাবলাম আমার বাসা যেহেতু কাছাকাছি ঐ পথেই যেতে হবে তাই মেয়েটির সাথে টেক্সিতে উঠে মেয়েটিকে তার বাড়ীতে পৌছে দিতে গিয়ে অনেক কথার মাঝে ভাই বোনের একটি পাতানো সম্মর্ক তৈরী হয়।

ফোনে কথা বলে বুঝতে পারলাম গর্ভে তার আগত সন্তানকে নিঃশেষ করতেই টাকার প্রয়োজন।তাকে সহায়তা করতে আমি আপ্রান চেষ্টা করি।পরিচিত বিভিন্ন দেশীয় লোকদের কাছ থেকে একটি মানবীয় দাবী তুলে প্রায় দেড় হাজার ডলার কালেকসন করে মেয়েটির কাছে পৌছে দেই।মানুষের কান্নার অনেক প্রকারভেদ আছে…দুঃখে মানুষ কাদেঁ এটা স্বাভাবিক কিন্তু সূখেও যে কাদেঁ তা বোধ করি অস্বাভাবিক।সে দিন সেই সূখেই সে কেদেঁ কেদেঁ বলেছিল তার জীবনের অপ্রকাশিত ইতিহাস।

সে আমাদের স্ব-দেশীয় একটি ছেলেকে অনেক ভালবেসে ছিল।খোজঁ নিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটি ছিল টাঙ্গাইল রাজ বাড়ীর পাশে।প্রায় আট দশ বছর যাবৎ সিঙ্গাপুরে ফ্রি ভিসায় থাকেন।সিঙ্গাপুরে সে সহ তিন জন মেয়ের সাথে ছেলেটির সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির মতে প্রেমের আত্ত্বার সম্পর্ক কিন্তু পক্ষান্তরে ছেলেটির কাছে তা ছিল দৈহিক সম্পর্ক।ছেলেটির দেশের বাড়ীতে বৃদ্ধ মা বাবা না খেয়ে ঋণ করে কোন মতে জীবন চালায় আর এ দিকে ছেলে মহা আনন্দে যৌন ক্ষুধা মেটাতে মাস শেষ না হতেই ঋণ করে মাসিক আয়কৃত বেতনেরও বেশী।তাহলে কি ভাবে সে বাডীতে তার বৃদ্ধ মা বাবার কাছে টাকা পাঠাবে।প্রথম কয়েক মাস ভাল টাকাই পাঠিয়ে ছিল কিন্তু বছর গুড়তে না গুড়তেই সিঙ্গাপুরে ব্যাবসার নাম করে তার পাঠানো টাকা এবং শেষ সম্ভল রাখা কিছু জমি বিক্রি করে তার বাবা ছেলের কাছে বেশ কয়েক লাখ টাকা পাঠান।তারপর ছেলেটি তার বাবা মার কথা আর মনে রাখেনি।রঙ্গীন পানি,জুয়া,আর যৌনতার মাঝে নিজেকে বিকিয়ে দেয়।হঠাৎ একদিন,সেই ছেলেটি আমার মাছ মাংসের কাচামালের দোকানে এসে হাজির।আমি তখন দোকানের ভিতরে একেবারে পাকা কসাইয়ের মতন ইউনিফর্ম পড়ে বিশাল কাতলা মাছ প্রায় সাত আট কেজিতো হবেই ।মাছ কাটার চাপাটি দিয়ে দ্রুত টুকরো করছি,ছেলেটি প্রায় অনেকগুলো এলোমেলো ডলার আমার কাছে ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বুঝতে পারলাম এ জুয়ার টাকা পুলিশের তারা খেয়ে এসেছে ।এমন আরো ছেলে ছিল যারা সারা দিন ঘুমিয়ে রাতভর জুয়া খেলত।তারপর থেকে ছেলেটির সাথে আবার দেখা হয় প্রায় এক বছর পর।সে তখন সম্পূর্ণ ভদ্র পোষাকে মার্জিত ভাবে আমার কাছে জানতে চায় সেই ডলারগুলো আছে কি না।আমিও তাকে সায় দিলাম রেখেছি যতনে ব্যাংকে।ছেলেটির দু’চোখ দিয়ে পানি আপনা আপনিই গড়িয়ে পড়ছে কারন ছেলেটিকে আজই তার  সিঙ্গাপুরী এজেন্ট বস্  পারমিট রি-নিউ করতে পারেনি বলে রাত দশটার ফ্লাইটে নিজ দেশে চলে যেতে হবে।যাবার বেলায় তার কাছে জমানো টাকা বলে কিছুই ছিল না।তাই আমাকে স্বরণ করে আমার কাছে আসা।আমি ছেলেটিকে নিয়ে চলে এলাম ব্যাংক বুথে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা উঠিয়ে তার টাকা তাকে ফেরত দিলাম।প্রায় দেড় হাজার ডলার, পচানব্বই ডলার কম।বাংলাদেশী টাকায় তখন প্রায় পয়তাল্লিশ হাজার টাকার মত।ছেলেটি কেদেঁ কেদেঁ বলল…

-ভাই আমি যখন দেশে ছিলাম তখন একটি বিড়িও জুটেনি,এখানে এসে মার্লব্রো খেয়েছি এখন বাড়ীতে গিয়ে কি করব ভেবে পাচ্ছি না।

-কি আর করবি আবার বিড়ি টানবি,এ জ্ঞানটা আগে কই ছিল?যাক,দেশে যা আগে তারপর দেখি তোকে আবার নিয়ে আনতে পারি কি না।

তখন আমাদের কয়েক জনের  পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরে প্রথম স্কিল পাস ছিল আর সে সময় স্কিল পাস বইয়ের খুব চাহিদা ছিল ।ফ্রিতে সিঙ্গাপুর যাওয়ার সুযোগ ছিল অহরহ।

চলবে…

অতৃপ্ত জীবন…প্রবাসী১১

৭৩৭জন ৭৩৭জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ