নিশি ছাড়া ইরার তেমন কোন বন্ধু নেই। ইরার যা কিছু কথা, যা কিছু ব্যাথা সব নিশির সাথেই। আজকে কলেজ ছুটির পর শুভ নামের এক ছেলে নিশির হাতে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে গেছে। নিশির জন্যে প্রেমপত্র, সাথে একটা গোলাপফুল। প্রেমের প্রথম ফুল গোলাপের কলি দিতে হয়, তারপর প্রেম হলে ফুটন্ত গোলাপ। সেই গোলাপের আবার নানা রকম কালার কোড আছে। ভুল করে অন্য কালারের গোলাপ দেয়া যাবে না। লাল দিতে হবে, নয়ত প্রেম ভেস্তে যাবার সম্ভাবনা আছে। শুভ নামের ছেলেটা নিশিকে দেখতে কলেজের একটু দুরেই দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিদিন। রাস্তাটার মোর ঘুরতেই আজকে নিশির হাতে চিঠি দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেল।
নিশি বেশ খুশি, একেবারে লাফালাফি অবস্থা। ইরাকে জোর করে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, দুজনে একসাথে চিঠি পড়বে বলে। টি এন্ড টি থেকে ফোন করে ইরার মাকে জানিয়ে দিল ইরা ওর বাসায় বিকেল পর্যন্ত থাকবে। রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে চিঠির খাম ছিড়লো নিশি, ইরা পাশে বসে আছে। নিশি ইরাকে চিঠি পড়ে শোনায়। ছেলেটা একটা কবিতা লিখেছে,
প্রিয় নিশি,
তোমায় আমি ভালোবাসি,
ভাসি দিবানিশি।
প্রিয় নিশি,
তুমি কৃষকের হাসি,
রাখালের বাঁশি,
তোমায় আমি ভালোবাসি।
নিশি তোমার হাসি বড় সুন্দর, যাদুর মন্তর,
তোমার জন্যে আনচান, আমার এই অন্তর।
-ইতি তোমার শুভ
নিশি মনে হয় খুশিতে পাগল হয়ে গেছে। একলাইন দুইলাইন চিঠি পড়ে আর একাএকা হাসে। পাশে বসে থাকা ইরার দিকে খেয়াল নেই। ইরা নিশির দিকে তাকালো, জানালা দিয়ে বাইরের আলো ওর মুখে এসে পরছে। সেই আলোতে নিশি একটু পরপর ফিকফিক করে হাসছে, ওকে খুব সুন্দর লাগছে। ইরা অবাক হলো, শুভ ছেলেটা মিথ্যে বলেনি, সত্যিই তো নিশির হাসি খুব সুন্দর!
ইরা ভরদুপুরে একা একা বাসায় ফিরলো। শহরের এই কোনার ইরাদের বাড়িটা বেশ পুরোনো, পুরো বাড়িতে শুধু ইরা আর ইরার বাবা-মা থাকেন। ইরা মা কে গোছল করার পানি দিতে বলে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। ইরার রুমটা বেশ সাজানো গোছানো, পড়ার টেবিল, বুক শেলফ, একটা খাট, খাটের ঠিক পাশেই একটা আলমারি, আলমারীর পাশেই একটা জানালা। ইরার প্রিয় জানালা। এই জানালা দিয়ে ইরা আকাশ দেখে, বাতাস দেখে, বৃস্টি হলে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে পাশের কদম গাছের ফুল ছেড়ে।
ইরা ঠিক জানে না ওর হাসিটা সুন্দর কিনা। কেউ কখোনো ওকে বলেনি,
“ইরা তোমার খুব সুন্দর হাসি,
তোমার হাসি দেখে আমি,
ভালোবাসায় ফাসি।“
কেউ যদি এরকম কবিতা লেখে, ইরা তাকে ফাসি হতে দিবে না। পাশেপাশে রাখবে। ইরা জানালা খুলে দিয়ে আলমারির বড় আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়নায় আরেকটা ইরাকে দেখা যাচ্ছে। ও এখন হাসবে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসবে। হাসলে যদি আয়নার ইরাকে সুন্দর দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ওর হাসি সুন্দর, নিশির হাসির মতো সুন্দর।
কথা কম বলা, কারো সাথে মিশতে না পারা ইরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে। হাসতে হাসতে ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ইরা দুঃখী দুঃখী মন আর চেহারা নিয়ে জোর করে সুখি সুখি হাসি হাসছে, তাই চোখের পানিও সমানুপাতিক হারে টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে।
আজকের বিকেলটাতেও পৃথিবীর সবচে সুন্দর হাঁসিটা কেউ দেখতে পেল না। তাই পৃথিবীর সকল প্রেমিকদের জন্যে আফসোস //
০১/০৮/১৩, মিরপুর।
১৪টি মন্তব্য
আফ্রি আয়েশা
//আজকের বিকেলটাতেও পৃথিবীর সবচে সুন্দর হাঁসিটা কেউ দেখতে পেল না। তাই পৃথিবীর সকল প্রেমিকদের জন্যে আফসোস// – দারুন লাগছে 🙂
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
লেখক নিশ্চয়ই দেখে ফেলেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসিটি , হতে পারে তা বাস্তবে বা অনুভবে।
ভালো লিখেছেন
আরো লিখুন এমন সুন্দর স্নিগ্ধ লেখা ।
শুভকামনা ।
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
আফরী তোমাকে ধন্যবাদ 🙂
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
জিসান ধন্যবাদ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
অভিনন্দন এখানে লেখার জন্য ।
সুন্দর গল্প ও কবিতা ।
অভাগা প্রেমিকদের আফসোসই ভরসা ।
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
প্রজন্ম ৭১
সুন্দর গল্প (y) (y)
নীলাঞ্জনা নীলা
পৃথিবীর সব প্রেমিকদের জন্য আফসোস 🙂 সুন্দর লিখেছেন (y)
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
ধন্যবাদ নীলা এবং প্রজন্ম
প্রিন্স মাহমুদ
শেষ লাইনটি মারাত্মক । ভাল ভাল ভাল লেগেছে ।
খসড়া
🙂
প্রিন্স মাহমুদ
ভাই , কি হইল আপনার ?
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
আছি ভাই
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
\|/