দেরি করে ফেলেছি অনেক। তবুও আজ হার মানবো না বলেই বসে গেলাম লিখতে।সোনেলার মিলনমেলা নিয়ে অনেক পোস্ট ইতিমধ্যে পোস্টায়িত হয়ে গেছে।

কি রকম দিন যাচ্ছে কেটে!
কেমনতরো হাওয়ার তোড়ে;
পারতেম যদি ধরতে –
সকল কিছু ছাপিয়ে গিয়ে
বসেই যেতাম কাগজবুকে লিখতে।

এই রকম আরকি!
গতবছর গেছে চলে এমনি করেই। নানা কারনে যেতে পারিনি সোনেলার মিলন আড্ডায়।এবার? বেঁচে থাকলে ইনশাল্লাহ্ যাবো।এমনটা বলে রেখেছি সবখানে।
নানা কৌশলে গভর্নিং বডির সভাপতি’কে আগেই জোর আর্জি দিয়ে রাখার কথা, সাত/পাঁচ ভাবতে ভাবতে অপেক্ষায় ছিলাম মোক্ষম সুযোগের! কখন কেমন করে বলবো।দিনটা তো শুক্রবার!!
সভাপতি সাহেব বাসায় থাকেন। আমি সাধারন গভর্নিং বোর্ডের ধর্তা কর্তার সহযোগী ডান হাত! ছুটি মিলবে কি মিলবে না, কি রকম রিএ্যাক্ট পাবো, তার ঠিক নেই !
অবশেষে এসেই গেলো মোক্ষম সুযোগ। সভাপতি সাহেব নিজেই আমাকে ছেড়ে যাবেন দাওয়াতে। সাথে সাথে বাণ ছুঁড়ে দিলাম আর কি! “তাইলে আমি সোনেলার প্রোগ্রামে যাবো আগামীকাল” ১০১টা প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পাবার পর তিনি প্রসণ্ণ চিত্তে ঘুম দিলেন। যেহেতু ছোট ছেলে আছে সাথে! তো নিশ্চিন্ত।

একদিনে তিনটা উৎসবের শহর সেদিন। ফেব্রুয়ারী মাস এমনিতেই হুজুগের মাস। সাত তারিখ থেকেই শুরু হয় এই হুজুগের কার্যবিধি। ব্লগার, সুলেখিকা সাবিনা ইয়াসমিনের পোস্ট থেকেই অবগত হয়েছি এসব ডে’র ব্যাপারে।
তায় সেখানে আরো এক উৎসবের যোগ আমাদের এই সোনেলা ব্লগের মিলন মেলা।

মূলত এই আড্ডা দুইটা উপলক্ষে একত্র করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। অষ্টম বর্ষে পদার্পণ এবং পৌষ সংক্রান্তি উৎসব প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন কারী  বিজয়ী লেখকদের সন্মাননা প্রদান।
(যদিও আমার ঘোরতর আপত্তি আছে এ ব্যাপারে। অষ্টম বর্ষ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র আলাদা অনুষ্ঠান আমাদের সকলের জন্য প্রাপ্য ছিলো।সেদিন সেখানে সেই বিষয় স্মরন রেখে ছোটখাটো একটা কেকের আয়োজন করাই যেত।)

আমি সাধারনত সবখানেই লেট লতিফ😊 মানে দেরি করে পৌঁছানো একটা নিয়মে বেঁধে গেছে। দুপুর ১টায় পৌঁছবার সময় বেঁধে দেয়া হলেও আমার অনেক পরেও যারা এসেছেন, বুঝে গেছি, আমি একাই লেট লতিফ নই, আরো আছেন আমার দলে। মিলনমেলায় সবার সাথে দেখা হবে, আড্ডা হবে, পরিচিতি হবে সেইসব সহলেখকদের সাথে, যাদের সাথে এক বছর সাত মাস দশ/বারোদিন বয়সী এই বন্যা লিপি একই উঠোনের রোদে বিচরন করছে!
কিছু প্রিয় মুখ দেখবো,পরিচিত হবো, বিনিময় করবো হাসি আনন্দ!
এ কথা বললেও সবাই বুঝেই যাবে যে, সবারই প্রতীক্ষা ছিলো– (১)সাবিনা ইয়াসমিন
(২)তৌহিদ ইসলাম
(৩)আরজু মুক্তা
(৪)শবনম মুস্তারী
এদের সাথে পরিচিত হবার অথবা দেখা হওয়ার। মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম সাবিনা ম্যাডাম আসবেন। কিভাবে নিশ্চিত ছিলাম?
কয়েকদিন আগেই কথা হয়েছিলো ম্যাডামের সাথে।
যদিও তিনি তাঁর প্রাপ্তি পোস্টে কিছু উল্লেখ করেছেন। আজ আমি উল্লেখ করছি সেন্সর্ড করে হুবহু—-
–শাড়ি পড়বে ২২ তারিখ?
–পড়তে বলছো?
–শিরীন বলছে, ও নাকি আসবে। তুমি কি বলো?
–বিথী,সুরাইয়া,যুথী,সুপর্ণা এরা আসবেই
যদিও আমি শাড়িতে অভ্যস্থ্য নই। ঝামেলা লাগে।
আরজুও আসবে
–আমারো ঝামেলা লাগে শাড়িতে। আরজু না বললো, পারবে না আসতে!
–আরজু পরে বলেছে, আসার জন্য খুব চেষ্টা করবে।তৌহিদ আর শবনম ও আসবে বলেছে।
–একটা ব্যাপার আমার খুব আশ্চর্য লেগেছে
–কি?
–এত বড় প্রোগ্রামে কারো চাঁদা ধরা হয়নি। খরচটা কে করবে এবং কেন করবে?
–সঞ্চালক কেন ধরেন নি জানিনা।তবে ধরা উচিত ছিলো।
–জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁকে, বললো পরেরবার ধরবে।
–আমার খারাপ লাগছে,কন্ট্রিবিউসন করতে পারলে খারাপ লাগাটা থাকতো না।
–তোমার খারাপ লাগাট এবারকার মতো আটকাও।আসতে হবে তোমাকে।আমাদের দেখা হোক আগে।
–আচ্ছা
–হ্যাঁ
—………..তুমি ক্রেষ্ট পাচ্ছো।আমাকে কিন্তু ট্রিট দিতে হবে!
–কি কও এইসব?ক্রেষ্ট মানে? মাপ চাই–মানে কিরে ভাই?!!
—এটা টপ সিক্রেট ছিলো ম্যাডাম!
–তুমি সিক্রেট ভেঙে দিলে😊
—…..!!!!!!তাইতো!!!সঞ্চালক যদি জানতে পারে! ট্রিট খাওয়ার লোভে আমি সিক্রেট ভেঙে দিয়েছি! আমার মডু পদ বাতিল করে দেবে😔😔
–হা হা হা হা…. না ময়না, চিন্তা কইরো না, আমি চমৎকার সারপ্রাইজড হবার নাটক করবো নে😊😊😊

অবশেষে ময়না(সাবিনা ইয়াসমিন) এলেন না। আমাদের মিলনমেলা কিছুটা ম্লান করেই তৌহিদ ইসলাম,শবনম মোস্তারী,আরজু মুক্তা এরাও এলেন না।

যথারিতী পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে শুরু হলো মূল মিলনমেলার সূচনা। কত পরিচিত এই মুখগুলো! হালিম নজরুল, এম ইঞ্জা,মনির হোসেন মমি, অনন্য অর্নব,সুরাইয়া পারভীন, রেহানা বিথী, নিতাই বাবু,সুপায়ন বড়ুয়া, পাখি ভাই(অত্যন্ত দুঃখিত, পাখি ভাইয়ের নামটা এই মুহুর্তে মনে পরছে না।)

সন্মাননা প্রদানও শুরু হয়ে গেলো। এমন কিছু প্রাপ্তি আমার নেই খুব বেশি। যতটুকু পেলাম এখানে এসে, সত্যি আমি কৃতজ্ঞ ব্লগ কতৃপক্ষের প্রতি।

একটা ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ছে শেষ করার আগে –

নতুন বউ তখন আমি। দ্বিতীয়বারে শশুড়বাড়ি পৌঁছেই পড়লাম ভাগ্য পরীক্ষার মধ্যে। বরাবরই আমি পরীক্ষায় ভয় পাই।তারওপর আবার ভাগ্য পরীক্ষা!! আরো খারাপ।
সাহেবের বড় বোন, মামাতো ভাগ্নি, ছোট ননদ, ননদের বর,সবাই ঘরে ঢোকা মাত্র সোজা নিয়ে চললো রান্না ঘরে। সাজের পিঠা তৈরী হচ্ছিলো। মাটির সাজ,মাটির ঢাকনা। কাঠের চুলার তাপে সাজের সাথে মাটির সরা(ঢাকনা) বেকায়দা রকম আটকে গেছে। পিঠার সাজ যাতে না ভেঙে যায়, এমন করে সকলের চেষ্টা শেষ।কেউ খুলতে পারছে না ঢাকনা। নতুন সাজ ভাঙা যাবে না। যেমন করেই হোক অক্ষত ঢাকনা খুলতে হবে। সকল প্রচেষ্টা ব্যার্থ। এমন সময়, তাহাদের কোপানলে নতুন বউ এই আমি! মান ইজ্জতের প্রশ্ন! এরা কেউ পারেনাই, আমি কেমতে পারুম? নতুন বউয়ের ভাগ্য পরীক্ষা! পরখ করা হবে বউয়ের যোগ্যতা। যতই বলি অসম্ভব! পারবো না। কে শোনে কার কথা?
বিসমিল্লাহ্ বলে হাত তো দিলাম ঢাকনায়! ক্লক্ ওয়াইজ ২/৩ বার ঘোরাতেই ঢাকনা খুলে আমার হাতে চলে এলো……..😱😱😱😱
জোড় বাঁচা বেঁচে গেলাম সে যাত্রা।

জীবনে এরকম ছোট ছোট কিছু পর্ব এসেছে আমার ; প্রাপ্তিটুকু অসামান্য হয়ে ধরা দিয়েছে। বিশাল এই পরিসরে আমার অবদান নিতান্তই সাধারন। সন্মাননা ক্রেষ্ট অর্জন আমার জীবনে অসাধারন প্রাপ্তি।
ব্লগের সকল ব্লগার এবং এডমিন বৃন্দের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা,শুভ কামনা।
শুভ ব্লগিং 🌹🌹🌹🌸🌸🌸💕💕💕💕💓💓💓

৮৯৯জন ৭২০জন
0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ