সভারের রানা ভবন ধ্বসে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৭৫। উদ্ধার করা হয়েছে দুই হাজারের বেশী আহতদের। আরো শত শত জীবিত মানুষ আটকে পরে আছে ভবনের বিভিন্ন তলায়। অগণিত মৃত মানুষ পরে আছে ভবনের মাঝে। উদ্ধার করা যাচ্ছে না , যন্ত্রপাতি , অভিজ্ঞতার অভাবে। উদ্ধার তৎপরতায় সাধারণ জনতা অংশ নিয়েছেন , তাঁদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী। সেনাবাহিনী , ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তেমন একটা ভুমিকা রাখছেন না। ধ্বসে পরা ভবনের মাঝে ঢুকতে এই সরকারী চাকুরীজীবি প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছেন। সাধারণ জনতা ভুমিকা না রাখলে উদ্ধার তৎপরতায় প্রাপ্তি কি থাকতো – সে প্রশ্ন এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
প্রশ্ন আছে আরো কিছু । ভবনের মালিকের নামটি খুব প্রচার করা হচ্ছে । যেন সব কিছুর মুল হচ্ছে ভবনের মালিক রানা।
প্রশ্ন : ভবন কার ?
উত্তর : রানার ।
প্রশ্ন : ভবনের গার্মেন্টস গুলোর মালিক কি রানা ?
উত্তর : না , রানা নয় ।
প্রশ্ন : শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করতে পারে কে ?
উত্তর : গার্মেন্টস মালিকদের কর্তা ব্যাক্তিরা ।
প্রশ্ন : গার্মেন্টস মালিকদের নাম কি ?
উত্তর : জানি না ।
প্রশ্ন : মিডিয়ায় একজনও গার্মেন্টস মালিকের নাম আসলো না কেনো ?
উত্তর : গার্মেন্টস মালিকরা মিডিয়াকে বিশাল অংকের টাকা দিয়েছে, তাই আসেনি।
প্রশ্ন : কোন যাদু মন্ত্রের বলে এই এই মালিকেরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে?
উত্তর নাই ……… তবে এর পিছনে যে আর্থিক লেনদেন জড়িত তা ধারনা করা যায়।
এর বাইরে এসব প্রশ্নের কোন উত্তর কি হতে পারে ?
তবে রানা সবচেয়ে বড় কালপ্রিট । বিল্ডিং কোড না মেনে বিল্ডিং করার জন্য। বিল্ডিং পরিত্যাক্ত ঘোষনা না করে।
দেখা যাক ঐ বিধ্বস্ত ভবনে কোন কোন গার্মেন্টস কোম্পানি ছিল।
পাচটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ছিল ওখানে।
নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড
নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড
ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেড
ফ্যানটম টেক লিমিটেড
ঈথার টেক্স লিমিটেড ।
নিউ ওয়েভ বটমস্ (সদস্য নং-৪৫৭৯) ও নিউ ওয়েভ স্টাইলের (সদস্য নং-৩৬৭৯) কারখানা ছিল ধসে যাওয়া রানা প্লাজায়। তবে নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলসের (সদস্য নং-১০৩১) কারখানার ঠিকানা লেখা আছে ৪৫, কল্যাণপুর, প্রধান সড়ক, ঢাকা। নিউ ওয়েভ বটমস প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৮ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে নিউ ওয়েভ স্টাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গ্রুপের প্রথম কারখানা নিউ ওয়েভ অ্যাপারেল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। বিজিএমইএর ডিরেক্টরিতে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে বজলুস সামাদের নাম উল্লেখ আছে। অন্য দুটি কারখানার পরিচালক হিসেবে আছেন তিনি।
ফ্যানটম অ্যাপারেলস (সদস্য নং-১৮৯৬) ও ফ্যানটম টেকের (সদস্য নং-৪৬৩৩) চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল ইসলামের নাম উল্লেখ আছে। এটির ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ফ্যানটম টেক বাংলাদেশের ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও স্পেনের টেক্সটাইল অডিট কম্পানি এস এলের যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠান। ঈথার টেক্স লিমিটেডের (সদস্য নং-৪৮৫৪) চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম উল্লেখ আছে।
রানা প্লাজার গার্মেন্টস এর ৩ জন মালিক এর কিছু তথ্য এবং ফোন নাম্বার
বাম দিক থেকে – আমিনুল ইসলাম , আনিসুর রহমান , বজলুস সামাদ
* ফ্যানটম টেক লিমিটেড
চেয়ারম্যান : মো: আমিনুল ইসলাম – ০১৮১৯২১২৬৯৯
সুত্র : BGMEA
* ঈথার টেক্স লিমিটেড
চেয়ারম্যান : মো: আনিসুর রহমান – ০১৯১১৩৬৬৮৫৭
সুত্র : BGMEA
* নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড
চেয়ারম্যান : বজলুস সামাদ ( আদনান ) – ১০৭১১৫৯৩৮৩৩ , ১০৮১৯২২৭২৫৯
সুত্র : BGMEA
একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে , ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার পরে ঐ ভবনে ভাড়া নেয়া ব্রাক ব্যাংক কিন্তু তাঁদের শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। আর এই গার্মেন্টস এর কর্মকর্তারা শ্রমিকদের ফোন করেও কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। এই মালিকেরা সবাই জানতো ঐ ভবনের ফাউন্ডেশন ৫ তলার উপযোগী , আর এটি জেনে শুনেই তারা ঐ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে।
ভবনের মালিক অবশ্যই অপরাধ করেছে ড্রইং না মেনে ভবন তৈরী করেছে , তার চেয়ে বেশী অপরাধ করেছে গার্মেন্টস মালিকরা এবং এর কর্মকর্তারা যারা ঐ দিন শ্রমিকদের বাধ্য করেছে কাজ করাতে।
এই পোস্ট লিখতে সহায়তা নিয়েছি ব্লগার নিম চাঁদ , অথৈ সাগর এবং ছোট মির্জার বিভিন্ন মন্তব্য এবং ফেইসবুকের লেখা থেকে।
আপডেট : ২৮/০৪/২০১৩
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে অবশেষে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাব। তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বিস্তারিত পড়ুন এই লিংকে ।
যেভাবে রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে
এর আগের দিন ২৭/০৪/২০১৩ তারিখে গ্রেফতার করা হয়েছে রানা প্লাজায় অবস্থিত গার্মেন্টস এর দুই মালিক বজলুস সামাদ আদনান (৪৫) ও মাহমুদুর রহমান তাপস কে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
সরকার ইতমধ্যে রানা ও পাঁচ গার্মেন্টস মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছেন।
১৯টি মন্তব্য
যাযাবর
জানলাম অনেক কিছু। অবিলম্বে গ্রেফতার চাই এই তিন অর্থ লোভীর। মিডিয়া ম্যানেজ হয়েছে বুঝা যায়।
জিসান শা ইকরাম
মিডিয়া ম্যানেজ না হলে এটা সম্ভব নয়।
শিশির কনা
মিডিয়ার প্রচারে একমাত্র ভিলেন রানা । এই তিন জনকে খুজে বেড় করা হোক।
জিসান শা ইকরাম
রানার চেয়েও দোষী এই তিন জন।
নীহারিকা
কে কি করেছে জানিনা। এর সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
জিসান শা ইকরাম
শাস্তি চাই , কিন্তু শাস্তির কোন উদাহারন নেই।
ছাইরাছ হেলাল
ভুলে যেতে আমরা খুব একটা বেশী সময় নেব না , ঠিক আগেরটির মত ।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , আমরা ভুলে যাবো এবং আর একটি এরকম দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করবো।
বনলতা সেন
ছাইরাছ হেলাল বলেছেনঃ ভুলে যেতে আমরা খুব
একটা বেশী সময় নেব না , ঠিক
আগেরটির মত ।
একমত
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , আমরা ভুলে যাবো এবং আর একটি এরকম দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করবো!!
saiful
Jemon desh temon besh……… 🙁
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , এমন এক দেশে আমাদের বসবাস ।
"বাইরনিক শুভ্র"
বিজিএমই গ্যাং এর কাছে সবাই অসহায় ।
জিসান শা ইকরাম
ইতিহাস বলে , বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস সেক্টরে যত দুর্ঘটনা হয়েছে , তাতে গার্মেন্টস মালিকদের কোন শাস্তি হয়নি। সব কিভাবে যেন ম্যানেজ হয়ে যায়।
গাজী ফরহাদ
এ লেখা পড়ে মনে হচ্ছে, কোথাও খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, দুর্ঘটনা বা দূর্নীতি হলে সবগুলো গণমাধ্যম ৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার সাথে যে বা যারা জড়িত যে তাকে বের করে ফেলে, এরপর শুরু হয় দরকষাকষি। যার কাছ থেকে টাকা পয়সা পাওয়া যায়, তার খবর মানুষ জানতে পারেনা, আর যাদের পাওয়া যায়না তাদেরটাই ছাপা হয় বা অন এয়ারে আসে। এই বিদ্যা নিয়া ঘুমান ক্যামনে ভাই। আসেন, ৬ মাস কোন মিডিয়ায় কাজ করেন। বাংলাদেশে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া, কতটা কষ্টকর তা আপনার মতো বলদরে বলে লাভ নেই। খালি স্বপ্ন দ্যাখেন, আমরা কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি করতাসি…..আবালের আবাল..
যাযাবর
১০০ টাকা দিয়ে সাংবাদিক কেনার অভিজ্ঞতা আছে আমার । বুঝেছ ছাগল ?
সাংবাদিকতা শিখাতে আসবা না । এত কিছু বুঝ তাইলে বলে দাও – মিডিয়ে কেনো এদের নাম বলে নাই।
জিসান শা ইকরাম
ভাষার ব্যাবহার দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের একজন যোগ্য উত্তরাধিকার। আপনার প্রজ্ঞা দেখে আমি অবিভুত। আমার না বলা কথা কিভাবে আপনি জেনে গেলেন। ৫ মিনিটের মধ্যে এই ধারনাটা আপনার মধ্যে জন্ম নিয়েছে দেখে আমি অবিভুত।
সাংবাদিক হবার মত সামান্য তম ইচ্ছে আমার নেই। তবে যে কোন মিডিয়ার একজন মালিক হবার ইচ্ছে আছে- যেখানে আপনার মত প্রজ্ঞাবান কিছু মানুষকে নিয়োগ দেব।
১০০ টাকায় ঠিক না , তবে আমি ১০০০ টাকায় অনেক সাংবাদিক কিনে কিছু কিছু নিউজ করিয়েছি আমার স্বার্থে।
ভালো থাকবেন।
আদিব আদ্নান
ওদের ও স্বাদ-আহ্লাদ আছে , এটা এড়ানো একটু কঠিন ।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা হা , ঠিক ঠিক , ওদেরও স্বাদ-আহ্লাদ আছে ।