দেশ টা বাংলাদেশ। এই দেশের প্রতিটা মানুষ বাংলাদেশী। তারা সবাই দেশের নাগরিক। কোন সন্ত্রাসী যদি গণহারে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিতে শুরু করে তবে কারা এগিয়ে যাবে তাদের দমন করতে ? আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি একটিভ না থাকে পুরোপুরি তবে কারা প্রতিবাদ জানাবে ?
দেশের অন্যান্য নাগরিকরাই তো জানাবে ? তেমনটাই তো হওয়া উচিত ? তাই নয় কি ?
ধরুন আপনি এই ভেবে গেলেন না, আপনি নিজে নিজের পরিবার নিয়ে ঠিক আছেন, কি দরকার নিজের খেয়ে অন্যের মোষ তাড়ানোর ? আচ্ছা, আপনি যে নিজের খাচ্ছেন, শুধুমাত্র পরিবার পর্যন্তই কি সীমাবদ্ধ ? আপনি যে দেশে থাকছেন, যে দেশের খাবার খাচ্ছেন, হোক কিছু কিছু বাইরে থেকে আমদানিকৃত, তবুও এই দেশে থেকে, খেয়ে পড়ে, কাজ করে বেঁচে আছেন।
এই দেশ কি আপনার না ? এই দেশের প্রতি, এই দেশের জনগণ এর প্রতি কি আপনার নিজস্ব কোন দায়িত্ব নেই ?
হুম, জানি, সবাই পারে না এই দায়িত্ব নিতে, গণতন্ত্র বললেই হয়ে যায় না, নিজ নিজ ধ্যান জ্ঞান ঠিক থাকতে হয় গণতন্ত্র সম্বন্ধে। দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকার কে, কিন্তু দায়িত্ব দিয়েই খালাস হয়ে গেলেন, সরকার যে নিজ স্বার্থ রক্ষা করবে না, এইটা কি করে জানেন ?
আপনি নিজেও জানেন, সরকার সর্বদা আগে নিজ স্বার্থ দেখবে, তবুও আপনি খালি হতাশ হয়ে একটা কথাই বলেন, রাজনীতি খারাপ, সরকার একটাও ভালো না, এইরকম আরও কত রকমের মন্তব্য। সামনে এগিয়ে দেশ এর জন্য কিছু করতে চায় কয়জন ? মন্তব্য তো সবাই করতে পারে। আমার কথা বলবেন ?
আমি জানি আমি কিছু করতে পারি না, আমার কাজ বলা। বলতে জানি, হয়তো দু একজন কে উৎসাহিত করতে জানি, হয়তো কাওকে ভাবাতে জানি। কিন্তু, সচেতন ভাবে ভাবার এবং সাহস করে সামনে এগিয়ে আসার মানুষ কি নেই ?
এবার আসি যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, সে কথায়। আরে ভাই, নির্দ্বিধায় হিন্দু/মুসলিম/বৌদ্ধ/খ্রিষ্টান যাই বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক যারা, তাদের কে আলাদা করে সংখ্যালঘু কেন ডাকতে হবে ? আপনার নিজের কি বিবেক নেই ? আপনার প্রতিবেশীর ঘর পুড়লে সে যদি হিন্দু হয় আর আপনি যদি মুসলিম হওন, আপনি কি যাবেন না তাকে সাহায্য করতে ? দেশটা আগে, দেশ এর নাগরিক হওন আগে।
ধর্ম সার্বিক ব্যাপার। এটা পুরো পৃথিবী জুড়ে, নানা ধর্মের , নানা মতের মানুষ আছে। কিন্তু দেশ কিন্তু আমাদের একটাই আছে। এই বাংলাদেশ। সংখ্যালঘু শব্দ ত্যাগ করুন। নাগরিক ভাবুন ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন জাতের মানুষগুলোকে। প্রতিবাদের ভাষা বদলান। দেশের নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করুন। কোন সংখ্যালঘু নিয়ে না। ধরুন পাশাপাশি তিনটা বাড়ি, মাঝে মুসলিম, দুপাশে হিন্দু। দুপাশের হিন্দু বাড়ি পুড়লে, মাঝের মুসলিম বাড়ি যে পুড়বে না, এর নিশ্চয়তা কি ? হিংস্র সন্ত্রাসীরা যখন এসব করে, তখন কি তারা আগে ঘর যাচাই বাছাই করবে ? নাকি আপনি মুসলিম না হিন্দু গিয়ে যাচাই করবে ? কিভাবে ? যদি আপনার মাথায় টুপি না থাকে ? মুখের কথায় বিশ্বাস করবে ?
আপনার লুঙ্গি/প্যান্ট খুলে যাচাই করতে হবে না ? যদি হিন্দু হয়েও মুসলিম ভান ধরে থাকেন বাঁচার জন্য ? আমি কে বা কারা পুড়চ্ছে, তাদের নিয়ে বলতে বসিনি। আমি বলতে বসেছি, দেশের সকল নাগরিক দের কে, সংখ্যালঘু বলে কোন কথা নেই। আমরা সবাই দেশের নাগরিক। কোন সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে দাড়াতে হলে আমাদের সবার এক হতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে এসে প্রতিবাদ করতে হবে। দেশের একজন নাগরিক যেখানে বিপদমুক্ত না, অন্যান্য নাগরিক ও যে বিপদে পরবে না, এর নিশ্চয়তা কি ????
আমি আহ্বান করবো, সবাই নাগরিক অধিকার নিয়ে, দেশের নাগরিকের ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করুন। সংখ্যালঘু দের প্রতি করুণা থেকে না, তারাও দেশের নাগরিক। তাই বলবো সংখ্যালঘু শব্দটি ভুলে যান। নাগরিক ভাবুন প্রথমে। দেশে থাকেন, দেশের নাগরিক। আপনি বাংলাদেশী। দেশটা এমনি এমনি আসেনি। যুদ্ধ করে অর্জিত হয়েছে। অনেক রক্তে রঞ্জিত হয়েছে দেশের মাটি। সেই ক্ষত কখনোই ঠিক হবার নয়। কিন্তু তার উপর দেশটা সুন্দর করে গড়ে তুলেই সেই ক্ষত কিছুটা প্রশমিত করা সম্ভব।
** সচেতন হওন নিজের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে, এগিয়ে আসুন দেশের স্বার্থে, ব্যক্তি-স্বার্থ এর থেকে দেশের স্বার্থটা অনেক বড়। নিজের নিরাপত্তা এবং আপনার সহ-নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন করুন, সংখ্যালঘু শব্দ টা মাথা থেকে ঝাড়ুন **
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
অবশ্যই এই শব্দটি ব্যবহার করা উচিৎ না
১৯৭১ এ ধর্মের বিরুদ্ধে দেশ ভাগ এর চিন্তা ভাবনার গোষ্ঠীকে পরাজিত করে দেশ স্বাধীন হয়েছে ।
বিভাজন টা ধর্মীয় , সুতরাং এটা আর বলা সাজে না ।
দেশের বিভাজন টা হবে – দেশের শত্রু এবং মিত্র ।
দেশের শত্রু রাজাকাররাই একমাত্র সংখ্যালঘু এই দেশে।
ভালো লেখা ।
রাতুল
ধন্যবাদ। সহমত পোষন এর জন্য। আশা করছি সবাই না বুঝুক আরো অনেকেই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন 🙂
লীলাবতী
এই শব্দটি শুনলেই খুব অসহায় লাগে ।
রাতুল
হুম, খুব বেশি বিরক্ত হয়েছি বলেই এভাবে লিখতে হয়েছে, অন্যথায় এসব ব্যাপার এভয়েড করি সর্বদা। কিন্তু মানুষ এত এত ছাগলামি করে যে বলার মত না। দিন দিন ছাগলামি বাড়ছে। সাইকো বাড়ছে !!! শিক্ষিত মূর্খ গুলো ও কিছু বলছে না। গোড়ামি নিয়ে পরে থাকে।
ছাইরাছ হেলাল
লঘু বা গুরু এটি কোন পরিসংখ্যানের মাপকাঠি হতে পারে না ।
অন্যায় অন্যায় ই । আমরা ধর্মের পরিচয়ে বন্ধুত্ব তৈরী করি না , করতে পারি না ।
রাতুল
একমত আপনার সাথে 🙂
খসড়া
আপনার সাথে সহমত। আমি অনেক আগেই অনেক মন্তব্যে এই কথা বার বার বলেছি।
রাতুল
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
শিশির কনা
সহমত (y)
রাতুল
ধন্যবাদ 🙂
নীলকন্ঠ জয়
বর্জন করবে কি কেউ। আশা নিয়ে বসে আছি। আর সহ্য হয় না।
রাতুল
আশা করি করবে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সবাই মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই
রাতুল
সহমত 🙂
শুন্য শুন্যালয়
না হয় করলাম বর্জন, তারপর? আমি চাই শাস্তি হোক এই অন্যায়কারীদের..উপযুক্ত শাস্তি..আর সহ্য হয়না 🙁
রাতুল
অসহ্য হলে তো শাস্তি দেওয়া সম্ভব না। তারা যেমন ঠান্ডা মাথায় মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে তাদের শাস্তি দিতে হলেও ঠান্ডা মাথায় দিতে হবে। তাড়াহুড়া করলে তো অনিয়ম হয়ে যাবে :p