জানি তুমি অনেক সুখেই আছো। সুখে থাকাটাই স্বাভাবিক।
তোমার স্বামী অনেক বড় ব্যাবসায়ি! টাকা পয়সার কোন অভাবই থাকার কথা না।
তুমিতো চেয়েছিলেই তোমার বিয়ে হোক কোন বড়লোক টাকা ওয়ালা ছেলের সাথে। তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে।
আমার মত চাল চুলোহীন ছেলে তোমাকে কি বা দিতে পারতো?
ভালোই করেছো আমাকে ত্যাগ করে।
তুমি সুখে থেকো সব সময় এই দোয়ায় করি “সৃষ্টি কর্তার” কাছে!
শুধু পুরনো কিছু সৃতি আজো ভুলতে পারিনা।
মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটায় চাঁপা ব্যাথা অনুভব করি।
ছন্নছাড়া জীবনে আমার আছেই বা কি বল?
স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বাঁধবো।
যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউই থাকবেনা।
আমাদের দুজনের একটা নতুন পৃথিবী হবে, যে পৃথিবীতে শুধু তুমি আর আমিই থাকবো। স্বপ্নের পৃথিবীটাকে লাল, নীল রঙে সাজিয়ে রঙ্গিন করে দিবো।
আমাদের আকাশটাতে কখনো দুঃখের মেঘ জমবেনা,
শুধু আলো আর আলোই থাকবে। কিন্ত সেই স্বপ্ন আজ স্বপ্নেই থেকে গেলো।
আজ আমার পৃথিবীটাতে দুঃখ আর কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নেই।
স্বপ্নের আকাশটাতে দুঃখের অন্ধকার মেঘ জমেছে।
কষ্ট গুলো আজ দু চোখের পাতায় ভর করেছে।
মাঝে মাঝে দুঃখ গুলো বৃষ্টির ফোঁটার মত অশ্রু হয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে।
জানো যে আমাকে সব থেকে বেশী ভালোবাসতো,
যে তোমার মাথায় হাত রেখে বলেছিল বেঁচে থাকো মা’ সব সময় সুখে থেকো।
সেই বাবা আজ আমার পাশে নেই।
২ মাস আগে আমার বাবা আমাকে একা করে চলে গেছে না ফেরার দেশে!
বাবা সব সময় একটা কথা বলতো,
জীবনে কখনো ভেঙ্গে পড়বেনা, সব সময় নিজেকে সামলে রাখবে! পরাজয় মেনে নেয়ার নাম জীবন না” হাঁসি কান্নার মাঝে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে জীবন।
আজ আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।
আমার মন খারাপ থাকলে বাবাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতো।
আজ আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত পাশে কেউই নাই!
আমি বোধহয় বাবার কথা গুলো রাখতে পারলাম না।
নিপা” আমি আজ সত্যিই হেরে গেছি। জীবন যুদ্ধে আমি এক পরাজিত সৈনিক। ভালোই করেছো আমার মত ছেলের সাথে সম্পর্কে না জড়িয়ে।
ভার্সিটিতে আমাদের এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে সবাই হিংসা করতো।
সবাই বলতো তোরা অনেক সুখি হবি।
তোমার কি মনে আছে নিপা?
তোমার যেদিন জ্বর হয়েছিল সেদিন আমি সারা রাত তোমার বাড়ির সামনে বসে ছিলাম তোমাকে একবার দেখব বলে।
তোমার বাবার ভয়ে বাড়িতে ঢুকতে পারিনি,
সকালে কাজের মহিলাকে দিয়ে তোমার কাছে খবর পাঠিয়েছিলাম।
পরে তুমি কি রাগটায় না করলে আমার উপরে।
বলেছিলে আমি একটা “পাগল”
সত্যিই নিপা আমি একটা পাগল, যে তোমাকে এখনো পাগলের মত ভালোবাসে।
শুধু তোমার সৃতি ভুলতে না পেরে আজো কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারিনি।
আর কখনো পারবেও না। বিয়ে করে কি বা করতাম বল?
আমি কি সেই মেয়েটাকে ভালবাসতে পারতাম?
ওই মেয়েটা কি সুখি হতো?
আর আমার ছোট খাটো চাকরীতে হয়ত মেয়েটার পোষাতোও না।
মেয়েটার তোমার মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্নও থাকতে পারতো।
আমার মত ছেলের জন্য বিয়ে না! আমার মত ছেলের কপালটায় এমন।
আর কার জন্যই বা বিয়ে করবো বল?
বাবা-মা কে দেখা শোনার জন্য?
তুমিতো জানোই নিপা, আমি খুব ছোট থাকতে আমার মা মারা গেছে!
মায়ের ভালোবাসা যে কি জিনিস সেইটা আমি বুঝিনা।
মায়ের আদর আমি পাইনি। আর বাবা তো চলেই গেলো।
তোমাকে এসব বলেই বা কি হবে?
তোমার তো কোন কিছুর অভাব নেই। তোমার তো সবই আছে।
বাবা-মা, স্বামী, সংসার। তুমি সুখে আছো। আরো সুখে থাকো।
তোমার জীবনে কখনো যেন কোন আঁধার নেমে না আসুক
আমি “সৃষ্টি কর্তাকে” সেটা বলবো।
ও তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি, এটাই আমার তোমাকে লেখা শেষ চিঠি!
এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা, আমি জানিনা।
কে পৌঁছাবে বল? আমিতো এই পৃথিবীতে আর অল্প কিছু সময় বেঁচে আছি!
জানো? আমি ৩০ টা ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেছি! যে ছেলে কখনো,
কোন নেশা বা ঘুমের ওষুধ খেতে ভয় পেতো সেই ছেলে আজ
এতো বড় সাহস করে ফেলেছে।
আজ এই অরণ্য চিরতরে পৃথিবীকে বিদায় জানাবে।
আমার মাথাটা না ঝিম ঝিম করছে! তুমি যদি এই চিঠিটা পাও
তবে আমাকে দেখতে এসোনা।
আমি তখন অনেক দূরে থাকবো।
ওই নীল আকাশ জুড়ে থাকবো!
তোমার পাশেই ছায়া হয়ে থাকবো।
কখনো তোমার স্বামীর মনে দুঃখ দিওনা, প্লিজ!
তাকে অনেক ভালোবাসা দিও।
সব সময় ভালো থাকবে। আর আমার কথা মনে করে কখনো যেন তোমার চোখে
এক ফোঁটাও পানি না জমে!
তাহলে কিন্ত আমি অনেক কষ্ট পাবো।
“সৃষ্টি কর্তার” কাছে আমি অনুরোধ করবো তিনি যেন, কখনো তোমার জীবনে দুঃখের ছায়া না দেই। আমার বোধহয় যাবার সময় হয়ে গেছে। বাবা-মা আমাকে ডাকছে, বিদায় জানাচ্ছি তোমায়, কখনো ভুলোনা আমায়…
ইতি, তোমাকে যে মৃত্যুর পরো ভালোবেসে যাবে।।
অরণ্য”
২০টি মন্তব্য
সিকদার
বোকারা আত্মহত্যা করে । প্রেমও করে বোকারা । চালাকেরা নিপা হয় ।
রাসেল হাসান
অনেকটা তাই! ধন্যবাদ আপনাকে।
অনিকেত নন্দিনী
হা হা হা। ৩০ টা ঘুমের বড়িতে কিস্যু হয়না, উপরন্তু সবার হাসির পাত্র হতে হয়।
অভিমান করা ভালো তাই বলে এতোটা বেশি অভিমান দেখানো ভালোনা যা নিজেকেই উপহাসের পাত্রে পরিণত করে দেয়।
সিকদারের সাথে একমত। চালাকেরা নিপা হয়। লিঙ্গ পরিস্থিতিভেদে বিবেচ্য। এই নিপারা কখনো নর কখনোবা নারী।
রাসেল হাসান
😀 কাল্পনিক লেখায় এগুলিই হয়।
পারভীন সুলতানা
আসলেই তিরিশটা ঘুমের বড়িতে আজকাল আর কেউ মরে না শুধু কস্ট পায় । আর প্রেমের জন্য যারা আত্মহত্যা করে তারা আসলে নিজের উপর অবিচার করে । কেননা অনেক প্রেম পরিনয়ের পরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । তা ছাড়া এই জীবনটা কি শুধু প্রেমে পড়ার জন্য ?
রাসেল হাসান
মোটেও নয়। শুধু প্রেমের জন্যই জীবন না!
হিলিয়াম এইচ ই
(y)
রাসেল হাসান
🙂
জিসান শা ইকরাম
ঘুমের বড়ি খাওয়া ভালো না
চিঠি ভালো হৈসে।
নিপারা খুব নিষ্ঠুর নাকি ? 🙂
শুভ কামনা -{@
রাসেল হাসান
ধন্যবাদ “বড় ভাই। আসলেই নিপারা খুব নিষ্ঠুর!
খেয়ালী মেয়ে
আত্মহত্যার পথ বেচে নেয় শুধুমাত্র কাপুরুষরা……..
অরণ্যর বাবা ঠিকই বলেছেন, পরাজয় মেনে নেয়ার নাম জীবন না” হাঁসি কান্নার মাঝে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে জীবন…….
রাসেল হাসান
সহমত। এভাবে আত্মহত্যা করার কোন মানেই হয়না! যেহেতু কাল্পনিক, তাই এরকমই ঘটে। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালোবাসা না পেয়ে আত্মহত্যা!!!
তাহলে তো আমার আজ এ পৃথিবীতে নাম-গন্ধই থাকতো না :p
যে ভালোবাসা বোঝেনা, তার জন্যে মৃত্যু নয়, তাকে দেখানো উচিৎ কিভাবে আমি বাঁচতে পারি। আফসোস করুক ওসব নীপা নামের কূ-প্রেমিক/প্রেমিকেরা।
রাসেল হাসান
ঠিক বলেছেন। সহমত। ধন্যবাদ আপু।
শুন্য শুন্যালয়
অরন্যের জন্য টিপস্ 30 প্যারাসিটামল ইজ মোর ডেঞ্জারাজ দ্যান সিডেটিভ। 🙂
যাই হোক শেষ চিঠি ভাল্লাগছে। 🙂
রাসেল হাসান
🙂 সত্য কইছেন! পাঠে শুভেচ্ছা থাকবে আপু।
মেহেরী তাজ
যাক কদিন ঠিক মত ঘুম হবে আর কি।
এতো অভিমান ভালো না…..
চিঠি ভালো লেগেছে।।।।
রাসেল হাসান
🙂 ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
চিঠি ভাল হয়েছে খূব।
রাসেল হাসান
ধন্যবাদ। “সজীব” ভাই। 🙂