
“ ও মন, রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”- আর একদিন পরেই খুশির ঈদ। ত্রিশদিন রোজা রাখার পর ঈদ সত্যিই উপভোগ্য। নতুন পোশাকে ও নানা বাঙ্গালী সাজে আত্নীয়- স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে ঈদ পালন করা হয়। তার আগে কেনাকাটাও হয়, বিশেষ করে তরুন সমাজ সবচেয়ে বেশি আপ্লুত থাকে।
ঈদের আগের দিন মেয়েদের মেহেদী দিবস হয়। বাঙ্গালী মেয়ে মানেই চাই নানা রঙ্গের-ঢঙ্গের মেহেদীর সাজ। এ সময় বিউটি পার্লারগুলোতে মেহেদী লাগানোর ভীর লেগে থাকে। তবে যারা বাড়িতে মেহেদী লাগান তাদের অন্যান্য কেনাকাটার সাথে টুক করে মেহেদী কিনে ফেলাও খুব জরুরী। চাঁদরাতে কোনকারনে মেহেদী পাওয়া না গেলে অনেকেই আবার ছোটেন মেহেদী কিনতে। তা না হলে ঈদের সাজ যেন মাটি। আর সারাবছরের অপূর্ণ ঈদের খচখচানি যেন থেকেই যায়।
ছোটবেলায় মা-খালাদের সাথে আমরাও মেহেদী পরতাম পাটায় ডলে ডলে। তখন যেহেতু বাজারে মেহেদীর এতো বাহার ছিলো না তাই ঈদের দুদিন আগে থেকেই শুরু হতো মেহেদী আয়োজন। তাই তখন প্রায় সব বাড়িতেই মেহেদীর গাছ ছিলো।
গাছের পুষ্ট পুরাতন পাতায় রঙ বেশী হয় তাই সেগুলোই বেছে বেছে তোলা হতো। তারপর ধুয়ে পাটায় মিহি করে বেঁটে লাগানো হতো। যতো মিহি ততো রঙ। নখে, হাতে-পায়ে যাতে বেশি রঙ হয় সেজন্য হাত-পায়ের নখ চুন, সোডা দিয়ে পরিস্কার করা হতো। এরপর ছোট ছোট চিকন কাঠি দিয়ে মেহেদীতে হাতে- পায়ে নানা শৈল্পিক আঁকিবুকি হতো। যার রঙ যতো গাঢ় তার মন নাকি ততো ভালো। এ কথার সত্যতা না থাকলেও সবাই রঙ না হবার ভয়ে সিটকে থাকতাম। অনেক সময় দুতিনবার করে মেহেদী লাগিয়েও রঙ বানানো হতো।
দৈব ক্রমে কারও হাতে রঙ না হলে উহ! কি নিদারুণ যন্ত্রনা। অন্যদের খোঁচা আর বাঁকা বাক্য বানে জীবন একেবারে অতিষ্ঠ। মেহেদী শুকিয়ে গেলে তুলে সরিষার তেল মেখে দেয়া হতো। এতে রঙ অনেকদিন থাকতো।
অনেক বছর পর করোনার কবলে মেহেদী কেনা না হওয়ায় পুরোনো ঐতিহ্য জায়গা পেলো। মেহেদী পাতা তোলা বাটা শেষ, পঙ্গপালের দল সব মেহেদী সাজের জন্য তৈরি।
নিজেদের মতো করে হাত পরিস্কার করে লাইন হয়ে বসে পড়েছে। সিনিয়র সদস্য একে একে মেহেদী লাগিয়ে দিলেন। ইচ্ছেমতো নিজেদের হাত-পা মেহেদীতে সাজিয়ে সবাই বেশ খুশি।
কখন শুকাবে আর কখন উঠিয়ে দেখা হবে কার রঙ বেশি হয়েছে। এ নিয়ে তাদের ভেতরের উত্তেজনার শেষ নেই। হাগু- মুতুর পালা শেষ করে মেহেদীতে বসলেও কিছুক্ষন পর শুরু হলো সমস্যা। তা হলো, কারও পিট চুলকায় কারও মাথা চুলকায়, কারও পাছা চুলকায়। মহাবিপদ সবার হাতেই মেহেদী। এখন এতো সব চুলকানির দায়িত্ব নেবে কে?
এ সবের পেছনে আরও অন্য কারণ লুকায়িত তা হলো, বাজারের রেডিমেট মেহেদীর বদৌলতে আমরা সব ডিজিটাল হয়ে গেছি। মেহেদী লাগিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকা ভালো লাগে না। পাঁচমিনিটে ঘন কালো রঙ যেখানে পাওয়া যায় সেখানে কেন দুঘন্টা বসে থাকবো। তাই সবার এতো চুলকানির সমস্যা।
বাড়িতে তৈরি বাটা মেহেদী কষ্টকর হলেও তার রঙ দীর্ঘদিন স্বায়ী হয়। বাজারের কেনা মেহেদী যেমন পাঁচমিনিটে রঙ দেয় তেমনি ক্ষনস্থায়ী, দুদিন পরেই শেষ। তাই মাঝে মাঝে প্রাচীনে ফিরে যাওয়াতেও মহা আনন্দ!
এবার ঈদ তেমন আয়োজনে নেই। কেনাকাটা না হোক, না হোক ঝটপট মেহেদীর রঙে সাজ। যতটুকু বাড়িতে রাঙানো হয়েছে তাতেই খুশি অফুরান। কারণ ঈদ শুধু কেনাকাটা,স্থানান্তর বা বেড়ানোতেই পূর্ণতা পায় তা নয়। ছোট ছোট বিষয়ে আত্বতৃপ্তিতেও হতে পারে।
তাই পার্লারে, বাজারে অযথা ভীর না করে চলুন আমরা এবারের ঈদ মেহেদী আয়োজন নিজের বাসায়, হাতেই করি। তাতেই বরং আনন্দ ঢের বেশি।
ভীর এডিয়ে ভালো থাকি, সুস্থ থাকি। দেশকে বিপদমুক্ত রাখি। সবাইকে আগাম “ঈদ শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক”।
ছবি নেটের
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদুল ইসলাম
একেতো করোনা, তার উপরে যাতায়াতের ঝক্কিঝামেলা। এর কারনে ঈদের আনন্দ অনেকাংশেই মাটি হয়েছে গতবার থেকে। মেহেদি লাগানো, রান্নাবান্নারর আয়োজন, পোষাক নির্বাচন চাঁদরাত থেকে শুরু হওয়া আনন্দ চলতে থাকে যা অনেকটাই স্থিমিত হয়ে পড়েছে।
তবুও সকলের ঈদ কাটুক আনন্দে এটাই প্রার্থনা। শুভকামনা ও শুভেচ্ছা আপনাকেও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কষ্টের মাঝেই অনাবিল সূখ খোঁজার চেষ্টা আরকি!
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা রইলো
সাবিনা ইয়াসমিন
তাজা মেহেদী পাতার রঙে রাঙ্গা হোক এবাবের ঈদ।
ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা আপনাকে। ঈদ মুবারক 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন সবসময়।
আরজু মুক্তা
মেহেদী রেডি করেন। কিছু না হোক মেহেদি টা অন্তত পরি।
ঈদ মোবারক। ঈদ ভালো কাটুক
রোকসানা খন্দকার রুকু
অবশ্যই! এটাই প্রথম সাজ। দুধের স্বাধ খোলে মেটানো যায় অসুবিধা কি? ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
🥰🥰🥰
বোরহানুল ইসলাম লিটন
লেখায় প্রাণ আছে
অনায়াসে শৈশবে নিয়ে যায়
মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা চঞ্চলা দিনগুলির কথা
যদিও আজ সবই কালের গর্ভে।
ভীষণ ভীষণ মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
সে সময় ছোট বড় সবায় কম বেশী মেহেদী লাগাত।সেই এক উৎসব উৎসব ভাব ছিলো।
ঈদ শুভেচ্ছা রইল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম বাটা মেহেদি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহ্ ঈদের আনন্দ টাই কেমন জানি ম্যারম্যারে হয়ে গেছে গত বছর থেকে। ঈদের সাজে মেহেদী উৎসব টা খুব উপভোগ্য। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল মেহেদী নষ্ট হবার ভয়ে হাতে পলি পেঁচিয়ে ঘুমাতাম, চুলকালে মা, পিসিকে বলতাম চুলকিয়ে দিতে 😁😁। ঈদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও ঈদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
ঈদের পুর্বে মেহেদী দিয়ে হাত পা রাঙানো আমাদের ঐতিহ্য।
রেডিমেড মেহেদীর চাহিদার কাছে, বাটা মেহেদী পরাস্ত। বাটা মেহেদী হাতে দিয়ে দুই ঘন্টা বসে না থেকে রেডিমেড মেহেদী দিয়ে পাঁচ মিনিট বসে থেকে হাত পায়ের মেহেদীর ছবি তুলে ফেসবুকে দিলে অনেক লাইক হাসিল করা যায় 🙂
ভালো হয়েছে পোস্ট, শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা একদম ঠিক। বাটা মেহেদী পরাস্ত।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
সব ই বোধগম্য হলো কিন্তু বিশেষ এবং ব্যাপ্ত চুলকানির তো কোন সমাধান দিলেন না।
কে কাকে কীভাবে উপকৃত হলো/করলো!!
জয়তু মেহেদী উৎসব, ফিরে ফিরে আসুক বারে বারে, রূপে-গুণে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা এ চুলকানির দায় কেউ নেয় না। নিজেই সমাধান বের করতে হয়। আর তা হলো আশেপাশের গাছ, দরজা, শক্ত যা কিছু পাওয়া যায় আরকি!
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।