হিমাংশুর আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ। মিথ্যে বলতে তার একটুও ভালো লাগেনা, তবুও মিথ্যা বলতেই হয়। এইত সকালে বাড়িওয়ালাকে বলতে হল দুই তিনদিনের মধ্যেই ভাড়া টা দিয়ে দিবে। মার চিঠি এসেছিলো, ছোট ভাই টার পরীক্ষার ফিস লাগবে। চিঠির উত্তর হাতে হিমাংশু বের হয়েছে। চিঠিতেও মিথ্যে বলতে হয়েছে, টাকা পাঠিয়ে দিবে দুই-তিন দিনের ভিতরে। সেই গত বাধা একই কথা, এ কথা গুলো যেন না বললেই নয়।
ওদের অবস্থা এমন ছিলোনা, অনেক গুলো হিন্দু পরিবার নিয়ে গ্রামে বসবাস ছিল, বিশাল বাড়ি ছিলো, ছিলো শান বাধানো পুকুর ঘাট। চেয়ারম্যান এর অত্যাচারে ধীরে ধীরে সবাই গ্রাম ছেড়ে দেয়। অনেকেই নাকি কলকাতায় চলে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার শহরে এসে ঠাই গুজে নিয়েছে। হিমাংশুর বাবাই একটু কেমন যেন। নিজেদের ভালো বুঝেনা। এখানে থেকে যেতেই হবে। একটা একটা করে ঘর দখল নেওয়ার পর শুধু হিমাংশু দের বাড়ি তাই বাকি ছিলো।
সেই রাতের কথা হিমাংশু কখনো ভুলতে পারেনা, বাবার সাথে হাট থেকে ফিরছিল, ফিরার পথে কারা যেন তার বাবাকে জাপটে ধরে। হিমাংশুর কানে একটা কথাই ভাসছিল। “হিমাংশু তুই পালা”। আর কত গুলো চিৎকার ভেসে আসছিল, মালাউনের বাচ্চা টাকে আটকা । সারা রাত ডোবার ঠাণ্ডা পানির মধ্যে কাটায় হিমাংশু।পর দিনই চেয়ারম্যান এর লোকেরা কি সব কাগজ পত্র নিয়ে এলো। এ জায়গা নাকি চেয়ারম্যান এর। গ্রামের কোনে এক কুড়ে ঘরে ঠাই হয় ওদের।
এসব কথাই ভাবছিল হিমাংশু , পকেটে মাত্র পাঁচশ টাকা। এ মাসের টিউশনির টাকা পরের মাসে একসাথে দিবে বলেছে। এতদিন কিভাবে চলবে আর কি করবে কিছুই মাথায় আসছেনা তার।
টনক নড়ল এক লোকের কথায়, ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে পারি?
জী বলেন… হিমাংশু শুধায়। লোকটার কথায় জানতে পারলো, লোকটা উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছে ঘুরতে, মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়ায় এখন আর ফিরে যেতে পারছেনা। আহারে বেচারা ! হিমাংশুর মন কেঁদে উঠলো। পকেটের পাঁচশ টাকাই সে লোকটাকে দিয়ে দিল। হিমাংশু আবার হাটছে। ফিরে তাকালে দেখতে পেত লোকটা আরেক জন কেও ঠিক একই কথা বলছে। কিন্তু হিমাংশু আর পিছনে ফিরে তাকায়না , সে হাঠতেই থাকে।
৮টি মন্তব্য
নীহারিকা
মিথ্যের কাছেই পরাজিত মিথ্যে। জীবনের গল্প ভালো লেগেছে।
ইকু
ধন্যবাদ আপনাকে… সুন্দর মন্তব্য এর জন্য । ভালো থাকবেন
আমীন পরবাসী
আপনাদের লিখার চুতুরতার তারিফ করতেই হয়। গল্পের আড়ালে আপনারা বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি একে দিতে পারেন অনায়াসে। মানুষের রূপ দেখে আসলেই অবাক হয় মাঝে মাঝে। কত ধরনের মনের মানুষের বিচরণ যে রয়েছে তা মুশকিল। কেউ তার আপনজনকে আশাহত করতে চায় না বলে শূন্য পকেটে আসার বাণী শুনায় যে দুই একদিনের ভিতর টাকা পাঠিয়ে দিবে পরক্ষণে দেখা যায় তারই মোট একটু মানুষ রাতের অন্ধকারে কেড়ে নেই জীবনের সব সম্বল। আবার দেখা যায় মানুষ পকেটের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে এগিয়ে যায় অন্যের পাশে দাড়াতে পক্ষান্তরেই অবলোকিত হয় অসহায়ত্বের অভিনয়কে পুঁজি করে মানুষ ঠকানোর পায়তারা। চিনে নেই প্রতিনিয়ত সেই সব পশ্বাধমদের আমরা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে জনাব ইকু। লিখাকে এগিয়ে নিয়ে যান। সর্বাত্মক পাশে থাকার সহমত পোষণ করছি। ভালো থাকবেন সবসময়। আপনারা ভাল থাকলেই আমরা ভালো থাকব। ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি। -{@
ইকু
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এত দারুন একটি মন্তব্য করার জন্য। এমন আলোচনা মুলক মন্তব্য একদম দেখা এ যায়না 🙂 শুভ কামনা রইলো ।ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
ইচ্ছে বা অনিচ্ছায় আমরা এমন মিথ্যেতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি। কেউ মিথ্যে বলি উপায়হীন হয়ে, কেউ প্রতারনার জন্য।
ছোট লেখাটি ভালো লাগলো খুব।
ইকু
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
শুন্য শুন্যালয়
বাস্তবতার লেখা গুলো বড়ই কঠিন হয়, এর থেকে রূপকথার মিথ্যে গল্পই ভালো… 🙁
ইকু
হুম… একদম ঠিক বলেছেন 🙁