মিথ্যে

ইকু ১৭ মার্চ ২০১৪, সোমবার, ০৩:৩৮:২০অপরাহ্ন গল্প ৮ মন্তব্য

হিমাংশুর আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ। মিথ্যে বলতে তার একটুও ভালো লাগেনা, তবুও মিথ্যা বলতেই হয়। এইত সকালে বাড়িওয়ালাকে বলতে হল দুই তিনদিনের মধ্যেই ভাড়া টা দিয়ে দিবে। মার চিঠি এসেছিলো, ছোট ভাই টার পরীক্ষার ফিস লাগবে। চিঠির উত্তর হাতে হিমাংশু বের হয়েছে। চিঠিতেও মিথ্যে বলতে হয়েছে, টাকা পাঠিয়ে দিবে দুই-তিন দিনের ভিতরে। সেই গত বাধা একই কথা, এ কথা গুলো যেন না বললেই নয়।

ওদের অবস্থা এমন ছিলোনা, অনেক গুলো হিন্দু পরিবার নিয়ে গ্রামে বসবাস ছিল, বিশাল বাড়ি ছিলো, ছিলো শান বাধানো পুকুর ঘাট। চেয়ারম্যান এর অত্যাচারে ধীরে ধীরে সবাই গ্রাম ছেড়ে দেয়। অনেকেই নাকি কলকাতায় চলে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার শহরে এসে ঠাই গুজে নিয়েছে। হিমাংশুর বাবাই একটু কেমন যেন। নিজেদের ভালো বুঝেনা। এখানে থেকে যেতেই হবে। একটা একটা করে ঘর দখল নেওয়ার পর শুধু হিমাংশু দের বাড়ি তাই বাকি ছিলো।

সেই রাতের কথা হিমাংশু কখনো ভুলতে পারেনা, বাবার সাথে হাট থেকে ফিরছিল, ফিরার পথে কারা যেন তার বাবাকে জাপটে ধরে। হিমাংশুর কানে একটা কথাই ভাসছিল। “হিমাংশু তুই পালা”। আর কত গুলো চিৎকার ভেসে আসছিল, মালাউনের বাচ্চা টাকে আটকা । সারা রাত ডোবার ঠাণ্ডা পানির মধ্যে কাটায় হিমাংশু।পর দিনই চেয়ারম্যান এর লোকেরা কি সব কাগজ পত্র নিয়ে এলো। এ জায়গা নাকি চেয়ারম্যান এর। গ্রামের কোনে এক কুড়ে ঘরে ঠাই হয় ওদের।

এসব কথাই ভাবছিল হিমাংশু , পকেটে মাত্র পাঁচশ টাকা। এ মাসের টিউশনির টাকা পরের মাসে একসাথে দিবে বলেছে। এতদিন কিভাবে চলবে আর কি করবে কিছুই মাথায় আসছেনা তার।

টনক নড়ল এক লোকের কথায়, ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতে পারি?

জী বলেন… হিমাংশু শুধায়। লোকটার কথায় জানতে পারলো, লোকটা উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছে ঘুরতে, মানিব্যাগ হারিয়ে যাওয়ায় এখন আর ফিরে যেতে পারছেনা। আহারে বেচারা ! হিমাংশুর মন কেঁদে উঠলো। পকেটের পাঁচশ টাকাই সে লোকটাকে দিয়ে দিল। হিমাংশু আবার হাটছে। ফিরে তাকালে দেখতে পেত লোকটা আরেক জন কেও ঠিক একই কথা বলছে। কিন্তু হিমাংশু আর পিছনে ফিরে তাকায়না , সে হাঠতেই থাকে।

৫৭৪জন ৫৭৪জন
0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ