সাভার রানা প্লাজা ধ্বসের পরে উদ্ধার অভিযান চলছে । উদ্ধার অভিযানে সারা দেশের সমস্ত প্রান্তের মানুষ যে যেভাবে পেরেছেন অংশ নিয়েছেন। মানুষের জন্য মানুষ কি পারে তা এই বিপর্যয় উদাহরন হয়ে থাকবে। জীবনে যে কোনদিন রক্ত দেয়নি , ভয় পেয়েছে সারাজীবন ইনজেকশন নিতেও , তাঁকেও দেখা গিয়েছে শাহাবাগে রক্ত দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে। চাহিদা জানার সাথে সাথে মানুষ অক্সিজেন , মাস্ক , ওষুধ , টর্চ লাইট , রড কাটার সরঞ্জাম , এয়ার ফ্রেসনার , জেনারেটর ইত্যাদি নিয়ে ছুটে গিয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার সাথে অংশ নিয়েছেন সাধারণ জনতা । নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে , অজানা অচেনা মানুষকে উদ্ধারে নেমে গিয়েছে ভবনের বিভিন্ন তলায়। এদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে , সংকটে বিপদে তাঁরা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জানে। উদ্ধার কার্যক্রম এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছু আমরা দেখেছি টিভি , পত্রিকা এবং অনলাইনের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। সবার জানা বিষয় নতুন করে আর বলার অবকাশ রাখেনা।
কিন্তু যে বিষয়টি আমার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে তা হচ্ছে – উদ্ধার কাজে নাকি হেফাজত ইসলাম এর অংশ গ্রহণ ছিল। যদি এটি সত্যি হয় তবে তা অবশ্যই অস্বাভাবিক। সম্পূর্ণ ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় আচ্ছন্ন হেফাজত ইসলাম এর এই কাজ তাদের নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় । তাদের এক নেতা বলেছেন ‘ ওখানে আল্লাহ্র গজব পরেছে ‘ । হেফাজতি উদ্ধার কর্মীরা কি তাদের নেতার এই কথা শুনেনি ? যদি শুনে থাকে , তাহলে তো জীবিত সবাইকে তাদের হত্যা করা উচিৎ ছিল। খুজে খুজে গলা টিপে অথবা পেটে ছুরি বসিয়ে খতম । আল্লাহ গজব নাজিল করার পরেও কেন বেঁচে থাকবে এরা ?
হেফাজতি উদ্ধার কর্মীরা কি জীবিত কাউকে উদ্ধার করার পূর্বে জিজ্ঞেস করেছেন ‘ আপনি কি মুসলমান ? কলেমা পড়ে প্রমাণ দিন ‘ এরপরে সন্তুষ্ট হয়ে উদ্ধার করেছেন ?
অথবা উদ্ধার করার পূর্বে বাছ বিচার করেছেন , কোন মেয়ে ইসলামী শরীয়ত মেনে পর্দা নিয়েছেন। শুধু তাঁদেরকেই উদ্ধার করেছেন ? যাদের পর্দা নাই , তাঁদেরকে রেখে এসেছেন ঐ মৃত্যু কুপে ।
বেপর্দা জীবিত মেয়েদের সুরঙ্গ থেকে হাত ধরে টেনে তুলতে তাঁদের কি এত বছরের হেফাজতি শিক্ষার কথা মনে হয়নি ?
গতরাতে শুনলাম , কোন এক হেফাজতি উদ্ধার কর্মী অসুস্থ হয়ে পরেন। তাঁকে দ্রুত নেয়া হয় শাহাবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ফিল্ড হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা করেন নাস্তিক বলে পরিচিত শাহাবাগ কেন্দ্রিক ডাক্তারগণ। তাঁর ঘামে ভেজা পোষাক পাল্টে পরিধান করিয়ে দেয়া হয় শাহাবাগ জনজাগরণ মঞ্চ লেখা পোষাক। উনি সুস্থ হবার পরে চলে যান।
যদি এসব ঘটনা সত্যি হয় – তবে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া হেফাজতের কর্মীদের কি বহিষ্কার করা হবে তাদের সংগঠন থেকে ?
অবিশ্বাস্য এসব উদাহরন। সবাই উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন , মানুষকে বাঁচানোর জন্য। এখানে ধর্মীয় কোন ভেদাভেদ ছিল না। কে হিন্দু , কে মুসলমান বা বৌদ্ধ , খ্রিস্টান – এই প্রশ্ন উপেক্ষিত ছিল। সবাই প্রমাণ করেছেন – মানুষের জন্য ধর্ম , ধর্মের জন্য মানুষ নয়।
উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সবার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন ।
১৪টি মন্তব্য
নীহারিকা
জীবন বাজী রেখে উদ্ধার কার্যে অংশ নিয়েছে সবাই এবং এখনো নিচ্ছেন। সবার জন্য অনেক অনেক দোয়া আর শুভকামনা।
জিসান শা ইকরাম
এই উদ্ধার অভিযান জাতির একাত্মতার প্রমান হয়ে থাকবে ।
যাযাবর
সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপরে নাই।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপরে নাই ।।
শিশির কনা
‘ এখানে ধর্মীয় কোন ভেদাভেদ ছিল না। কে হিন্দু , কে মুসলমান বা বৌদ্ধ , খ্রিস্টান – এই প্রশ্ন উপেক্ষিত ছিল। সবাই প্রমান করেছেন – মানুষের জন্য ধর্ম , ধর্মের জন্য মানুষ নয়।’………
জিসান শা ইকরাম
সবাই মিলে মিশে মানবতাকে জিতিয়ে দিয়েছে।
ছাইরাছ হেলাল
অকুতোভয় অদম্য যোদ্ধাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ।
জিসান শা ইকরাম
শুভেচ্ছা সবাইকে ।
বনলতা সেন
সাভার প্রমান করেছে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই ।
জিসান শা ইকরাম
ঠিক ।
আদিব আদ্নান
আমাদের পরীক্ষিত মানবিকতা আরও একবার প্রমাণিত ।
জিসান শা ইকরাম
সংকটে বুঝা যায় আমাদের জাতির একাত্মতা ।
"বাইরনিক শুভ্র"
“আমি চেষ্টা করলে হয়ত একটা মানুষ বাঁচবে” এরকম পরিস্থিতে যে কোন মানুষই সাহায্য করার জন্য আগাবে । এই শিক্ষা কোন ধর্ম বা সমাজ দিতে পারে না , মানুষ জন্ম নেয় এই গুণটি নিয়ে ।যার প্রতিফলন আমরা সাভারের ঘটনায় দেখলাম ।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা , ” এই শিক্ষা কোন ধর্ম বা সমাজ দিতে পারে না , মানুষ জন্ম নেয় এই গুণটি নিয়ে ।”
তবে কিছু অমানুষ এই মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে রাজনৈতিক স্বার্থ খোজে। যাদেরকে মানুষ বলতে লজ্জা হয়।