
রুহুল আমীন ভাই।
সাম হাও মাই হিরু, মাই ইন্সপাইরেশন।
আমার এক্স কলিগ। গত ডিসেম্বরের কনকনে শীতের সকালে অফিসে গিয়ে দেখি আমার পাশের ডেস্কে একজন অপরিচিত লোক বসা।
কিছুক্ষণ পরে চা পর্ব শেষে আমার ম্যানেজার আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো,
“ইমরান, রুহুল আমীন সাহেব আমাদের রিয়েল এস্টেটে জয়েন করেছে। এসসিটেন্ট ম্যানেজার হিসাবে “।
হাই হ্যালো হলো।
তখন হরতাল সাড়া দেশে। মানুষ পোড়ানু হচ্ছে, বাসে আগুন। অফিস থেকে নিষেধ জরুরী কাজ না থাকলে বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। স্টে সেফ ফার্স্ট।
তো, উনার সাথে প্রথম কয়েকদিন আলাপ করার সুযোগ হচ্ছিলনা। ভদ্রলোক ডেসিগ্নেশনে আমার সিনিয়র, বয়সেও। তাই আমি ডেস্কে বসে বসে ফেবু চালাইতাম।
আর মাঝে মাঝে ক্লায়েন্ট ফলোআপ করতাম। ফোনে যোগাযোগ রাখতাম। পি আর টা মেন্টেইন করতাম।
জ্বালাও, পোড়াও এটা সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে আমি, আমার ম্যানেজার, কলিগরা আড্ডা দিতাম। রুহুল ভাইও জয়েন করতো। বাট কথা কম বলতো।
ফেসবুকে শীতার্তদের নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টের কাজে বিকালে অফিস শেষে ফিল্ডে কিছু পোলাপাইন নিয়ে রাস্তায়, পার্কে ভিক্ষা করতাম।
মোবাইল টিপাটিপি দেখে রুহুল ভাই জিজ্ঞেস করলো, সাড়াদিন মোবাইলে কি করেন ভাই?
আমার ম্যানেজার বললো, ” রুহুল ভাই, ইমরান তো ব্লগার, লেখালেখি করে “।
রুহুল ভাই, চুখ বড় বড় করে তাকিয়া থাকলেন।
তারপরে প্রায়ই আমরা নীচে চা, সিগারেট খেতে যেতাম। ততোদিনে সম্পর্কটা ভাই-ব্রাদার হয়ে গেছে।
সে দিন, ইভেন্টের কাজে মিরপুর চিড়িয়াখানায় ভিক্ষা করার ডেট।
আমি রুহুল ভাই কে বললাম, ” রুহুল ভাই আমি আজকে একটু তাড়াতাড়ি বের হবো। আমার ইভেন্টের একটা কাজ আছে।
উনি খুব খুশি হলেন।
এইসব, অনলাইন ইভেন্টের কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনেত কম্পলিকেশন্স দেখা দেয়। কারণ, এখানে যারা কাজ করে, তারা কেও কারো পুর্ব পরিচিতো না। শুধু লাইক,কমেন্টের মাধ্যমে পরিচয়।
হৃদয়ের সম্পর্ক নাই কারো সাথে কারোর।
তাই, কাজ উদ্ধার করা এবং লক্ষে পৌছা খুব কঠিন হতো।
চলতেছিলো আমার মোটামোটি এভাবেই।
১৩ ডিসেম্বর সকালে, অফিসে একটু লেটে এসে শুনি রুহুল ভাই স্টার কাবা রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেছে।
চিন্তা করলাম, যাই একটু ঘুরে আসি।
বানানী পোষ্ট অফিসের কাছে এসে দেখি রুহুল ভাই ফুটপাথে কাধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা কিনতাছে।
পাশে একটা বুড়া মহিলা দাঁড়ানো, কুলে একটা ছেলে বাচ্চা।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ” কি করতেছেন ভাইয়া! ”
– দেখনা, ইমরান, এই মহিলার নাতিটার গায়ে একটাও শীতের জামা নাই। আমার হাতেও বেশি টাকা নাই, ভালো কোথাও থেকে জামা কিনে দেয়ার। তাই এইখান থেকে দিচ্ছি। ”
সন্ধ্যায় একসাথে বের হয়ে বনানী ১১ নাম্বারের দিকে হাটতেছি।
হঠাৎ, রুহুল ভাই এক বৃদ্ধা মহিলা কে দেখে তাকে থামালেন।
কাধের ব্যাগ থেকে, পুড়ানো একটা বার্মিজ শাল বের করে মহিলা কে দিলেন।
আমি যাষ্ট স্পিচলেস হয়ে গেলাম!
রুহুল ভাই আমার হাত ধরে বললেন ” ইমরান, আমি বহু মানুষের সাথে মিশেছি, কিন্তু তোমার মত ছেলে খুব কম এসেছে আমার জীবিনে। তুমি, চাকরী, লেখালেখি, সোস্যাল রেস্পন্সিবিলিটি, পারিবারিক দায়বদ্ধ্যতা একসাথে কিভাবে করো! আমি ভাই, তোমার বয়সে তোমার মতই ছিলাম। তোমার আদর্শ আর আমার আদর্শ এক।”
রুহুল ভাই বলতেছেন ” আমি, শীতের সময়ে সবসময় কাধে একটা ব্যাগ রাখি। অফিস শেষে বাসায় ফিরার সময়ে প্রতিদিন একটা বন্ধুর বাসায় গিয়ে তাদের পুড়ান শীতের জামা সংগ্রহ করি।
তারপরের দিন, ব্যাগ নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুরি, আর সত্যিকারের দঃস্থদের খুজে দিয়ে দেই।
ইমরান, তুমি আর তোমরা যেটা করতেছ, সেভাবে অনেকেই তোমাদের ইভেন্টে লাইক দিবে, কিন্তু অংশগ্রহণ করবে খুব কম।
কিন্তু যদি তোমরা এইভাবে, প্রতিদিন নিজেরা একজনের বাসা ভিজিট করো, দেখবা ডেইলী একজন শীতার্তকে জামা দিতে পারবা ”
আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো তার ইউনিক আইডিয়া শুনলাম।
পরদিন থেকে আমি কাধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে আমার বন্ধু, আত্ত্বীয় স্বজন্দের বাসায় ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন জামা উঠাতাম।
আর দুজন মিলে মনের সুখে রাস্তায় হাঠতাম আর মানুষ্কে দিতাম।
আমাদের চেয়ে বেশি সুখে সম্ভবতো দুনিয়াতে তখন কেও ছিলোনা।
মাস ছয়েক হয়ে গেলো রুহুল ভাই আমাদের কম্পানী থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে।
কিন্তু রয়ে গেছে রুহুল ভাইয়ের ভালোবাসা, শিক্ষা, আর সেই ডাক ” ইমরান “!
কিছক্ষন আগে রুহুল ভাই ফোন দিয়ে বলতেছে ” ইমরান, আপনি কালকে একটু আমার অফিসের দিকে আসবেন! আপনাকে বহুদিন ধরে জড়িয়ে ধরিণা। বহুদিন ধরে, সিগারেট শেয়ার করিনা আপনার সাথে।! ইফতারীর পরে একটু আসবেন, ইমরান! ”
ইদানিং খুব ভয়ে থাকি, দিন দিন ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে!
আমি কি পাড়বো তাদের প্রাপ্য প্রতিদান দিতে!
আচ্ছা, ভালোবাসার কি প্রতিদান হয়।
I love you man!
২৬টি মন্তব্য
নাজমুল আহসান
-{@
ইমন
ধন্যবাদ (y)
অনিকেত নন্দিনী
দুই হিরোর জন্যই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা -{@
ইমন
আপনাকে ধন্যবাদ আপু 😀
সিকদার
হিরোরাই হিরা হয় , এরাই করে মানুষের ভালবাসা জয় ।
ইমন
হ্যা। ঠিক বলেছেন ভাইয়া। 🙂
মেহেরী তাজ
আপনাদের কাজের জন্য দুজনকেই অসংখ্য ধন্যবাদ।
এমন কাজ কজন করে? আপনারা ভালো কাজের সুচনা করলেন।
ইমন
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ 😀
মোঃ মজিবর রহমান
-{@
ইমন
🙂
খেয়ালী মেয়ে
আপনাদের এমন মহৎ উদ্যোগের কথা জেনে ভালো লাগলো—দুজনের জন্য অনেক শুভকামনা রইলো……..
ইমন
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
I love you man!শেষের এই উক্তিই মন্ত্র মানুষকে ভালবাসলে মানুষ আপনাকেও ভালবাসবে আর যেখানে ভালবাসার ছড়াছড়ি সেখানে স্রষ্টার বসবাস।ধন্য আপনার জীবন।এ রকম কয়জন পারে।
ইমন
যেখানে ভালবাসার ছড়াছড়ি সেখানে স্রষ্টার বসবাস।
এটাই আসল কথা ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে , এতো সুন্দর একটা কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। 🙂
ব্লগার সজীব
রুহুল আমীন ভাইকে শুভেচ্ছা -{@
ইমন
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
লীলাবতী
একজন ভাল মানুষ সম্পর্কে জানলাম।ধন্যবাদ আপনাকে।
ইমন
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভালোবাসার দায় ভালোবাসা দিয়েই শোধ হয়।
রুহুল আমীন ভাইকে সালাম। এমন ভালোমানুষ হাতে গোনা কয়জন, যারা গোপনে মানুষকে ভালোবেসে সহযোগিতা করে।
-{@ লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
ইমন
আপ্নাকেউ লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। -{@
ছাইরাছ হেলাল
আপনই ভাগ্যবান এমন একজনকে সাথে পেয়েছেন বলে।
আপনাকেও ধন্যবাদ। এ প্রচেষ্টা চালু থাকুক তা কামনা কি।
ইমন
রুহুল ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ জেনো ভালো রাখে উনাকে। আপ্নাকেউ অশেষ ধন্যবাদ। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
ভালো লাগলো দুজন গ্রেট মানুষের কথা শুনে। ফেসবুক ইভেন্টে হয়তো হাজার হাজার লাইক পরে, তবু আমি ফেসবুকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এসব ইভেন্ট থেকে একজন দুজন হলেও সত্যিকারের মানুষ ইন্সপায়ার্ড হচ্ছে। দুজনকেই অশেষ ধন্যবাদ।
ইমন
সহমত আপনার সাথে আপু। 🙂
রিমি রুম্মান
ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসার প্রতিদান হয়। শুভকামনা দুজনকেই ।
ইমন
অশেষ ধন্যবাদ। 🙂