জামিল মিয়া আগে লেবার দের সর্দারি করতেন । এখন পেট্টোল বোমা মারা কন্টাক নেন । অল্প পরিশ্রমে বেশী ইনকাম । কাজের আগে অর্ধেক পরে বাকিটা ।
আগে মানুষ তাঁকে দেখলে ঠিকমতো কথা বলত না এখন অনেকেই দেখলে সালাম দেয় । ইনকাম পাতি ও ভাল হচ্ছে । দেশ নিয়ে এত চিন্তা করার সময় তাঁর নেই । দেশ নিয়ে চিন্তা করার জন্য বড় বড় মাথাওয়ালা লোক আছে । ইদানিং কি সমস্যা হয়েছে সবাই আগের মত জামিল মিয়াকে সম্মান করে না ।
এই তো সে দিন ছোট মেয়েটা এসে বলল
বাবা বাবা আমাকে কেউ খেলতে নেয় না । ওরা বলে তুমি নাকি খারাপ মানুষ । বাবা ওরা তোমাকে খারাপ বলে কেন ? তুমি ওদের বকা দিবা ।
যা এখান থেকে , সব সময় খেলা আর খেলা ।
বড় ছেলে
বাবা দোকানী বলেছে আজ থেকে আমাদের কাছে আর কোন কিছু বিক্রি করবে না ।
ঠিক আছে যা , আমি বাজার করে আনব ।
হঠাৎ গ্রামের মানুষরা আমার পিছনে লাগল কেন ? বুঝেছি আমি যে এত টাকা রোজগার করছি ওদের সহ্য হচ্ছে না । আমার টাকা কম নেই শহর থেকে বাজার করে আনব । কয়েকদিন ছেলেমেয়ে কে ওদের মামাবাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে ।
কেয়ার মা কই গেলে
শোন তোমরা সবাই কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আস । ছেলেমেয়েরাও অনেকদিন মামার বাড়ি যায় না ।
কিন্তু সামনে ওদের পরিক্ষা ।
রাখ তোমার পরিক্ষা ,আগে দেশ শান্ত হোক তারপর সব কিছু । তাঁর আগে কোন পরীক্ষা হবে না ।
রাতের গাড়িতে জামিল মিয়া বউ আর ছেলেমেয়ে কে ওদের মামা বাড়ি পাঠিয়ে দিল ।
সকাল দশটা ।
জামিল্লা বাসায় আছোস নি ?
কে ?
বাইরে আয় আমি রশিদ ।
কি হয়েছে রশিদ ভাই ! নতুন কোন কাজের অর্ডার পেয়েছ নাকি ?
আল্লাহ ই জানে তোর ভাগ্যে কি আছে !
কেন ? পুলিশ আমাদের খুঁজছে নাকি !
না রে কাল তুই যে বাসে তোর বউ বাচ্চাদের পাঠিয়ে ছিস ঐ গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে । ১০ জন স্পট ডেড বাকিদের অবস্থা ও ভাল না ।
জামিলের বড় ছেলে আর বউ কে পাওয়া গেছে দুজনের শরীরের অর্ধেকের বেশী পুড়ে গেছে । কিন্তু ছোট মেয়ে কেয়াকে পাওয়া যায়নি । জামিল মর্গের পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ গুলোর বাম পায়ের আঙুল খুঁজে দেখছে । কেয়ার বা পায়ের একটা আঙুল ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে কাটা পড়েছিল । সব লাশের শেষে ছোট্টো একটা পোড়া কঙ্কাল পাওয়া গেল কঙ্কাল টার বা পায়ের একটা আঙুল নেই । এটাই ছিল কেয়ার লাশ । কিন্তু হায় জামিল তাঁর মেয়েকে একবারের জন্য ছুঁয়েও দেখতে পারলেন না । যে মমতা মাখা মুখে এতদিন আদর করেছেন সেখানে এখন বিভৎস পোড়া মাংশ আর আধা পোড়া হয়ে যাওয়া অস্থি ছাড়া কিছুই নেই ।
যে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে জামিল অবৈধ টাকা উপার্জন করত সেই বোমা ই তাঁর সব স্বপ্ন পুড়িয়ে অঙ্গার করেছে ।
জামিল এরপর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে ।
বিচারে জামিলের যাবৎজীবন কারাদন্ড হয় ।
কিন্তু রায় হওয়ার দুই মাস পরই জামিল নিজের গায়ে পেট্রোল দিয়ে আত্মহত্যা করে ।
মৃত্যুর পর জামিলের বেডের নিচে একটা চিরকুট পাওয়া যায় ।
মা তুই যতটা কষ্ট পেয়ে মরেছিস আমিও আজ সেভাবেই মরব । আমি আজ আসছি তোর কাছে । কতদিন তোর মুখে বাবা ডাক শুনিনি ।
১২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গল্পটি সত্যি কি না জানি না তবে বিষয় বস্তু বেশ মারাত্ত্বক। -{@
সঞ্জয় কুমার
ঘটনা সত্যি নয় হয়ত ।
অনেক সময় জীবন হয় গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর ।
লীলাবতী
বেদনাদায়ক হলেও উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।
সঞ্জয় কুমার
পাপ বাপ কেও ছাড়েনা ।
ধন্যবাদ আপু ।
আবু জাকারিয়া
আমরা যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই। এটাই হওয়া উচিৎ আমাদের জাতীয় স্লোগান।
সঞ্জয় কুমার
সহমত । ।
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই । ।
খসড়া
কবে আর হবে থাকিতে জীবন বোধদয়।
সঞ্জয় কুমার
দারুণ বলেছেন তো ।
সবার শুভ বোধের উদয় হোক ।
জিসান শা ইকরাম
আল্লাহ মানুষকে বুঝিয়ে দেন
তবে তখন আর করার কিছুই থাকেনা।
ব্লগারের এই লেখাটা অন্যান্য লেখা থেকে একটু আলাদা এবং ভালো লেখা মনে হচ্ছে আমার কাছে।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মামা ।
প্রজন্ম ৭১
ভালো লিখেছেন সঞ্জয় ভাই।এমন লেখা আরো চাই।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ ।
অবশ্যই লিখব ।
শুভকামনা ভাল থাকবেন ।