কটকা জামতলার খালে নৌকায় ঘুরছি। চোখের নজর দুইধারের গাছ-গাছালিতে। কখন কোন পাখি টুপ করে বসে সেই লোভটাই কাজ করছে। সবুজাভ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে সু্ন্দরী,কেওড়া, গড়ান ও গোলাপাতা গাছ। চোখ ফেরানো অসম্ভব। ভোরের সূর্যের আলো সেই সুবাজাভের রূপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে হরেক প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেন তানপুরার সূরকেও হার মানায়। সব মিলিয়ে বিভোর হয়ে পড়ি বর্ষায় সুন্দরবনের যৌবন দেখে। নদীতে ভাটা চলছে। খালের দুই ধারের পানি সরে কাদামাটি সূর্যের আলোতে চিকচিক করছে। হঠাৎ চোখ যায় এই চিড়িং মাছ, ডাকুর মাছ বা ডাকার মাছের দিকে। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগলো। বেশ কয়েকটি ছবি নিলাম।
চিড়িং মাছ,ডাকুর মাছ বা ডাকার মাছ (ইংরেজি = Mudskipper) Gobiidae পরিবারের Oxudercinae উপপরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি উভচর মাছ। এই মাছেরা তাদের বক্ষদেশীয় পাখনার সাহায্যে মাটিতে চলাচল করতে পারে। যে এলাকা জোয়ারের সময় পানির নিচে এবং ভাঁটার সময় পানির উপরে থাকে সেখানে অন্যান্য মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল বা জোয়ার-ভাটার ফলে তৈরি জলাশয়ে আশ্রয় নিয়ে জোয়ার-ভাটার প্রভাব থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করে। কিন্তু চিড়িং মাছ এই পরিবেশে টিকে থাকার জন্য অভিযোজন ঘটিয়েছে। জলাশয়ের বাইরে এরা নিজেদের অঞ্চল রক্ষা, খাদ্য গ্রহণ সহ বিভিন্ন কাজে সক্রিয় থাকে। ক্রান্তীয়, উপক্রান্তীয়, ক্রান্তীয় ও মেরু অঞ্চলের মধ্যবর্তী এলাকা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আফ্রিকা মহাদেশের সংলগ্ন আটলান্টিক তীরে এদের পাওয়া যায়।
Gobiidae পরিবারের অন্যান্য সদস্যের তুলনায় চিড়িং মাছ অদ্ভুত শারীরিক ও আচরণিক অভিযোজন প্রদর্শন করে যা উভচরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:
দৈহিক ও আচরণিক অভিযোজন যা তাদের জলজ এবং স্থলজ উভয় পরিবেশে গমনে সাহায্য করে। পেশীবহুল দেহের সাহায্যে এরা নিজেদের ভূমি থেকে ২ ফিট ( ৬০ সেমি.) উচ্চতায় ওঠাতে পারে।
এই মাছ ত্বকের সাহায্যে এবং মুখের মিউকোসা পর্দা ও গলার ফ্যারিংস এর সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারে তবে এটি তখনই সম্ভব যখন মাছের দেহ ভেজা থাকে। চিড়িং মাছের ফুলকা এর আকার অনেক বড় হওয়ায় তা প্রচুর পরিমাণ বাতাস ধারণ করতে পারে এবং জলাশয়ের বাইরে দৃঢ় ভাবে বন্ধ থেকে মাছকে জলাশয়ের বাইরেও টিকে থাকতে সাহায্য করে।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিড়িং মাছ নরম মৃত্তিকা স্তরে গর্ত তৈরি করে বসবাস করে এবং এই গর্তেই ডিম দেয়
চিড়িং মাছ দেহগহ্বরে একটি বায়ুথলির ব্যবস্থা রাখে যা দেহ দূষিত পানিতে নিমজ্জিত হলেও স্বল্প অক্সিজেন ঘনত্বেও মাছকে শ্বাস নিতে সাহায্য করে
চিড়িং মাছের সবচেয়ে পরিচিত গণ Periophthalmus। এখন পর্যন্ত ১৮ টি প্রজাতির বর্ণনা দেওয়া গেছে।Periophthalmus argentilineatus একটি বহুল পরিচিত প্রজাতি। ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র এবং কর্দমাক্ত সমতল বা মাডফ্ল্যাট এ এদের পাওয়া যায়। পূর্ব আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, সুন্দরবন এর পূর্বাংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্ব চীন এবং জাপান এর দক্ষিণাংশ, সামোয়া এবং টোঙ্গা দ্বীপ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। এদের দৈহিক বৃদ্ধি ৯.৫ সেমি. পর্যন্ত হয় এবং এরা মাংসাশী। এরা কাঁকড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। Periophthalmus barbaru একমাত্র oxudercine goby যাদের বাসস্থান পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল।
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এইডাও দেখছি!!
কমন পড়ে যাচ্ছে। তবে এতসব বিস্তারিত জানি না! এখন পড়লাম, কিন্তু মনে থাকবে না।
শামীম চৌধুরী
হেলাল ভাই, মনে রাখতে হবে যে..!! ধন্যবাদ
শাহরিন
আমি শুরুতে ভাবছিলাম চিংড়ী লিখেছেন। তাই ছবিতেও চিংড়ী মাছ খুজছিলাম ভাইয়া। রাগ করেন না ভাইয়া আমার মত গাধা পাঠক দেখে। শেখার শেষ নেই। অনেক ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানতে পারছি আপনার কাছ থেকে।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা… আমিও আপনার মতন গাধা বনে গিয়েছিলাম প্রথম এই মীছের নাম পড়তে যেয়ে। 😂
আরজু মুক্তা
খাওয়া যাবে না?
শামীম চৌধুরী
নাহ আপু। বিষাক্ত। পোটকা মাছের মতন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনার ফেইসবুক ওয়ালে যখন এই ছবিটা দেখেছি, চমকে উঠেছিলাম। এটা যে মাছ হতে পারে আমার ধারনা ছিলো না। শরীর মাছের মত আবার চোখগুলো অন্যরকম! এটা চিড়িং আর চিংড়ী শব্দটা প্রায় একই রকম শোনালেও মাছ দুটোর মাঝে পার্থক্য অনেক!!
ভালো লাগলো, এই মাছটি দেখে, এর সম্পর্কে জেনে। ভালো থাকুন ভাইজান। শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ আপু। আপনিও ভালো থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
এ এক নতুন বিষয় জানলাম।চিড়িং মাছ আমি প্রথমে ভেবেছিলাম বিরল জাতি চিংড়ি মাছ কিন্তুু এর দেহ গঠন দেখে মিলাতে পারছিলাম অতপর ভাল করে লেখাটা দেখলাম …….হা হা হা
খুব ভাল উপাস্থাপনা।
শামীম চৌধুরী
আমিও প্রথম যেদিন এটির আইডি বের করি তখন চিংড়িই পড়েছিলাম মমি ভাই। হা হাহা
তৌহিদ
এই মাছ দেখেছি ভাইয়া, তবে এটা যে চিংড়িমাছ তা জানতামনা। এই বিশাল সৃষ্টি জগতের কত কিছুই আমরা জানিনা। আপনার লেখার মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারছি।
ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য। শুভকামনা রইলো।
শামীম চৌধুরী
হুম এটা তোমাদের ওখানে আছে।
শিরিন হক
এটার নাম জানতাম না দেখেছি অনেক। চিংড়ি শুনে বোকাবনে গেলাম।এটাও চিংড়ি। বাট জীবন আচার ভিন্নতর। বেশে লাগলো তথ্য গুলো পড়ে।
শামীম চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো।
খুরশীদা খুশী
এমন চিংড়ি এই প্রথম দেখলাম।ধন্যবাদ আপনাকে।