আধুনিক বাংলা সাহিত্য কার কাছে সবচেয়ে বেশী ঋণী ? এ ব্যাপারে প্রচুর খ্যাতিমান গবেষক অনেক লিখেছেন — আমার পড়ার ও জ্ঞানের পরিধি একটি ক্ষুদ্র বালিকণাসম ।। তবুও তাদেরি লেখাগুলোর থেকে খানিকটা নির্যাস আহরণ করে আমি বিদ্যাপতির কথাই বলতে চাই ।।
প্রাচীন সাহিত্য চর্যাপদ এর ভাষা খুবই দুর্ভেদ্য আর চর্যার সংখ্যাও অপ্রতুল। সে কারনেই বোধ হয় বাংলাভাষায় এর তেমন কোন প্রভাব পরিলক্ষ্যিত হয়না।
দ্বাদশ বা ত্রয়োদশ শতকে কবি জয়দেব এর গীতগোবিন্দ সত্যিই একটি শ্রেষ্ঠ অবদান — তবে এটি সংস্কৃত — পরবর্তীকালের বাংলাভাষার ক্রমবিকাশে এর প্রভাব অবশ্যই অনস্বীকার্য ।।
এরপর আসি বড়ু চন্ডীদাসের ” শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন ” এটা বর্তমানকালেও অনবদ্য সৃষ্টি বলে বিবেচিত হলেও মাত্রাতিরিক্ত স্থুল শারীরিক উপমার কারনে অনেকটাই অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট ।।
কবি বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের কবি। ( আনুমানিক ১৩৮০-১৪৬০ সাল) তিনি ছিলেন মিথিলার রাজার সভাকবি । তার প্রচলিত ভাষা ছিল ব্রজবুলি ।। তিনি বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। পদাবলী ছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন।
তুলনামূলক ব্রজবুলি ভাষা কিছুটা সহজ হওয়াতে বাংলাভাষায় বিদ্যাপতির প্রভাব সবচেয়ে বেশী ।।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ভানুসিংহের পদাবলী ” তে এ ভাষা তিনি ব্যবহার করেছিলেন ।।
—
অনকুর তপন তাপে যদি জাবর
কি করব বারিদ মেহে |
এ নব যৌবন বিরহে গোঙায়ব
কি করব সো পিয়া লেহে ||
হরি হরি কো ইহ দৈব দুরাশা |
সিন্ধু নিকটে যদি কন্ঠ শুকায়ব
কো দুর করব পিয়াসা ||
চন্দন তরু যব সৌরভ ছোড়ব
শশধর বরিখব আগি |
চিন্তামনি যব নিজগুন ছোড়ব
কি মোর করম অভাগি ||
শ্রাবণ মাহ ঘন বিন্দু না বরিখব
সুরতরু ঝাঁঝকি ছন্দে
গিরিধর সেবি ঠাম নাহি পাওব
বিদ্যাপতি রহু ধন্ধে ||
*******
*******
আমার কথা : এ বিশ্লেষণ টি আমার ব্যক্তিগত। সহায়ক হিসেবে “বঙ্গ ভারতীর ” কিছু লেখার সাহায্য নিয়েছি ।। তবুও বোদ্বা পাঠকের দ্বিমত থাকলে সবিনয়ে মার্জনা কাম্য।
১০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ যে অনেক জটিল বিষয় তুলে ধরেছেন ।
তেমন জানিনা এ বিষয়ে , কাজেই ভুল ত্রুটি ধরার প্রশ্ন আসছে না ।
স্বপন দাস
ধন্যবাদ ছাইরাছ হেলাল, আসলে এর আগে একটা funny লেখা লেখাতে রাস্তার মোড়ের ফালতু আখ্যা পেলামতো । । ভেবেছিলাম সোনেলা শুধু কবিতা আর গল্পের ব্লগ নয় — বৈচিত্রময়। দেশের নাম করা শ্রেষ্ঠ সব পত্রিকাতেই, — নারীকে সুখী করার ১৩ টি উপায়,– বসকে খুশি রাখার ৯ টি উপায়, দাম্পত্যকলহ রোধের ১৯টি পন্থা — ইত্যাদি আজাইরা লেখা বের হয় । । তাই আমিও বৈচিত্র্য আনতেই চুমু বিষয়ক লেখাটি দিয়েছিলাম যা অনেকেরই বিরক্তি উৎপন্ন করেছে ।। আমি এডমিন কে উক্তলেখাটি মুছে ফেলার অনুরোধ জানাচ্ছি ।
মশাই
সশ্রদ্ধে প্রথমেই পোষ্টের ব্যাপারে না গিয়ে গত পোষ্ট নিয়ে কয়েকটা কথা বলি। রাস্তার মোড়ের কথাটা আমিই উল্লেখ করেছিলাম। তবে হয়তো আপনাকে আমি কথাটা বুঝতে পারিনি বলে আপনি ভুল ভেবেছেন। আপনাকে ফালতু বলার দৃষ্টতা আমি কোনোদিনই দেখাবো না। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ আপনি বললেন fun করে লিখেছেন বৈচিত্রতা আনার জন্য, তাই দু একটি কথা বলার জন্য আসলাম।
রবীন্দ্রনাথ বলতেই আমরা কেন জানি সব সময় গুরুগম্ভীর সিরিয়াস মানুষ হিসাবে দেখি। ওনার হাস্যরসাত্মক লেখাগুলো কেন জানি কম পঠিত। রবীন্দ্রনাথের “খ্যাতির বিড়ম্বনা” পাঠ্য ছিল। ওই যে উকিল দুকড়ি দত্ত আর কাঙালিচরণ। উকিল বাবু চাদা দিতে অস্বীকার করাই কাঙালীচরন পত্রিকায় তাকে হেনস্থা করতে ছেপে দিয়েছিল “”গানোন্নতি বিধায়িনী’ সভায়” উনি পাঁচ হাজার টাকা দান করেছেন। তার পরেই দুকড়ী দত্ত পড়েন খ্যাতির বিরম্বনায়। দলে দলে লোক আসতে থাকে চাদা চাইতে। শেষমেষ মামার বাড়ী পালাতে হয়। নিশ্চয় মনে পড়ে গেছে, উনার আরেকটি নাটিকা ছিলো যেখানে কেবলরাম ও চণ্ডীচরণ দুটি চরিত্রকে তিনি হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। যাইহোক, আর এখন দেশের কিছু কিছু পত্রিকার কথা আর নাই বললাম এর চেয়ে কাজের কথায় চলে যাই।
পোষ্টি নিঃসন্দেহে একটি ভালো এবং পরিশ্রম-লব্ধ অর্জন বলা যায়। শুভেচ্ছা রইল। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, চর্যাপদ এসব বিষয়ে তেমন জানা নেই আমার, তবে আপনার প্রয়াস ভালো লেগেছে অনেক। পোষ্টের সাবলীলতাই পাঠক খুব দ্রুতই অবগাহন করতে পারে। চালিয়ে নেবার অনুরোধ করবো। এসব বিষয়ে জানা আমাদের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনার পোষ্ট দেখেই কিন্তু আমি চর্যাপদ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ঢু মেরে এসেছি কয়েকটি স্থানে যাক মোটামোটি একটি ধারনাও জন্মেছে সেজন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। -{@
ব্লগিংটা আসলে এজন্যই করা, নূতন কিছু শেখা আর সাথে নিজেকে শোধরে নেয়া। তবে সাহিত্য নিয়ে তেমন আলোচনা, সমালোচনার কোনো সুযোগ তেমন একটা এখন আর পাওয়া যায় না। যাদের সাহিত্য সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে তাদের সাথে কোনো সমালোচনা করতে যাওয়া মানে বয়সের একটা পার্থক্য সৃষ্টি করা। বয়সের ব্যবধানের প্রসঙ্গ টেনে আনে বলেই খুব বেশি বড়দের পোস্টে মন্তব্য করতে যাই না। কে ছোট বা কে বড় তা কেবলমাত্র শালীনতা কিংবা শ্রদ্ধা প্রকাশেই থাকুক না। এখানে আমরা লিখছি। পরিচয় লেখক আর এ পরিচয়ের মধ্যে থাকলে আলোচনা চলে নতুবা নয়। আমি এখানে একজন পাঠক হিসেবে আমার অভিমত জানিয়েছি। আর যে কোন আলোচনা চালাতে হলে ভাবনার উদারতা প্রয়োজন হয়, আর যার অভাবে পিছিয়ে রয়েছে আমাদের মত অনেক অনেক তরুণ। আমরা আর কার কাছে শিখবো যার কাছেই যাই উঠে আসে বয়সের প্রসঙ্গ। যাই হোক অনুরোধ করবো যাতে চালিয়ে যান একটি আলোচনার সুযোগ করে দিন। পাশে থাকবো নিজের অভিমত জানাবো, মতামত, পরামর্শ গ্রহণও করবো। এগিয়ে চলুক সাহিত্য চর্চা, সমৃদ্ধ হোক পথ চলা , শুভ কামনা রইল আবারও। -{@
স্বপন দাস
ধন্যবাদ মশাই, আপনার দীর্ঘ প্রত্ত্যুত্তর এর জন্য । আপনার জানার পরিধি বেশ বিস্তৃত — পড়াশুনা ছাড়া এটা সম্ভব নয় ।।
আমি ভাই নিতান্তই একজন ছাপোষা চাকুরীজীবী ।। আজীবন বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম — চাকুরীতেও তারই বেচাকেনা ।। সাহিত্যের ব্যাপারে আমার জ্ঞান ডোবারও নয় — ঘরের কুনোব্যাঙ এর সমপর্যায়ের ।। — তবে ছোটবেলা থেকেই পড়বার নেশা ভীষন। আর বাংলা সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ আরো বেশী । । পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দু একটা ব্যাপার সবার সাথে ভাগ করে আলোচনা করে নিজের জানার পরিধিটা একটুখকানি বাড়ানোর ইচ্ছেতেই হঠাত মাঝে মাঝে লিখি — পঠনযোগ্য হয় কিনা জানিনা ।। তবুও আপনার কথাগুলি ভাল লেগেছে ।। ভালো থাকবেন ।।
স্বপন দাস
প্রিয়, এডমিন, আমার এই লেখার শিরোনামে একটা মারাত্মক বানান বিভ্রাট করে ফেলেছি — আধুনিক লিখতে আধুনিকা হয়ে গেছে — দংশোধন করে দেয়া সম্ভব কি ??
মশাই
আপনি নিজে চাইলেই তা করতে পারেন। সম্পাদনাতে ক্লিক করে ঢুকতে পারেন অথবা নিয়ন্ত্রণ কক্ষতে গিয়ে।
মশাই
একটু ব্যস্ত আছি, পরে আসছি আবার।
স্বপন দাস
ভাই আমি এইসব ব্যাপারে একেবারেই আনাড়ি, মোবাইল দিয়েই সব লেখালেখি করি। নিয়ন্ত্রনকক্ষে শুধু নতুন লেখা আর লগ আউটের অপশন — আমার দ্বারা সম্ভব না।
শুন্য শুন্যালয়
এ বড় কঠিন বিষয়, কোন লেখা পড়া হয়নি ওনাদের।। রবীন্দ্রনাথের এই লেখা খানিও বড়ই কঠিন লাগলো, তবে আপনার এ ব্যাপারে পড়াশোনা আছে বোঝা গেলো। লিখুন আরো, আমরাও একটু জানি । ভালো থাকুন।
স্বপন দাস
শুন্য শুন্যালয়, ধন্যবাদ আপনাকে ।। আমি যে খুব বেশী জানি তা কিন্তু নয় । তবে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য আমাকে বিমোহিত করে, তাই একটু পড়তে চেষ্টা করি ।। আর হ্যাঁ, আপনি লেখাটার শেষে দেয়া পদাবলীটির কথা সম্ভবত বলতে চেয়েছেন ।। না এটি রবীন্দ্রনাথ এর নয় । স্বয়ং বিদ্যাপতির ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদাবলী এটি । আমি অবশ্য বাংলায় অনুবাদ করেছি — তবে দেয়া হয়নি ।।