সবুজ হোক মন…

আমাদের বাঙ্গালীরা মারাত্মক মেধাবী। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাইনা কেন একেকজন একেক মেধা নিয়ে জীবনযাপন করছে। তবে আমাদের যে মেধাটাকে খুব বেশী প্রয়োগ করি, সেটা হলো, আমরা যা নই, সেটাই বলে বেড়াই। আগে যেমন দেশে থাকতে শুনতাম ছেলে বিদেশে থাকে। তা করে কি? এটার উত্তর হতো ওই তো বিদেশে থাকে। নিজেদের পেশাকে গোপন করার এই যে জঘণ্য মানসিকতা সেটা আজও আমরা পরিত্যাগ করতে পারলাম না। আর যারা নিজেদের পেশার কথা বলে, তাদের আবার বাড়িয়ে বলার প্রবণতা খুব বেশী। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কোম্পানিতে(ফ্যাক্টরি) চাকরী করেন, বলেন অফিস জব। কেউ ট্যাক্সি চালান, বলেন উনার ট্যাক্সির ব্যবসা। কেউ কিচেনে কাজ করেন, কিন্তু পরিচয়ের বেলায় বলবেন ক্যাশে আছেন। আবার ধরুন কেউ ডিপ্লোমা নার্স। তারা নিজেকে পুরোপুরি নার্স হিসেবে পরিচয় দেয়। কেউবা সার্টিফিকেটও পায়নি, কিন্তু ভাষার উপর দক্ষতা আছে। উনারা নিজেদেরকে দোভাষী হিসেবে তুলে ধরেন। সবচেয়ে মজার কথা হলো কেউ কেউ নিজেদেরকে এমন অবস্থানে নিয়ে যায়, হয়ে যায় সাইকোলজিস্ট। এক্সিডেন্টের পর বহু ডাক্তার, নার্স, সাইকোলজিস্টদের সাথে দেখা হয়েছে, যাদের আচার-আচরণেই বোঝা যায় তাদের পেশাগত পরিচয়। কেন আমাদের এমন বাড়িয়ে বলার প্রবণতা? আমার এক বন্ধু ডক্টরেট করেছে সাইকোলজি নিয়ে। সে একজন সার্টিফিকেটধারী কাউন্সিলর। অথচ কখনোই বলেনি। একদিন কথা প্রসঙ্গে জেনে যাবার পর অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আরেক বন্ধু যে কিনা এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি দুটোতেই মেধাতালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিলো, কখনোই নিজের থেকে বলেনি। আসলে যারা স্বশিক্ষিত, তারা এমনই হয়। তারাই নিজেদের পেশাকে গোপন করে কিংবা বাড়িয়ে বলে, যারা হীনমন্যতায় ভুগছে। তাদের জন্য কাউন্সিলিং দরকার। তবে খুব সাবধান আজকাল সকলেই নিজেদেরকে একেকজন কাউন্সিলর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

(y) বিশেষ দ্রষ্টব্য – লেখার ক্যাপশন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি বলে দু:খিত। আসল কথায় আসি। এই ওন্টারিও প্রভিন্সে একজনও বাংলাভাষী কাউন্সিলর পাওয়া যায়নি কাউন্সিলিং-এর জন্য। আমার ল’য়ার অবাক হয়ে গিয়েছিলো। অবশেষে হিন্দীভাষী জুটেছে। ইন্সুরেন্স তার বিল পেমেন্ট করেছে ২২০০ ডলার। তাও মাত্র দেড়ঘন্টার জন্য। তারপর জানতে পারলাম পৃথিবীর কোনো দেশেই কাউন্সিলিং-এর জন্য কোনো ডিপ্লোমা নেই। অবশ্যই সাইকোলজি নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স করতে হবে। আমি আমার পরিচিত সবাইকে বলেছি, কেউ যদি কানাডায় আসতে চায় অবশ্যই যেনো সাইকোলজি নিয়ে পড়ে। একজন অন্তত বাংলাভাষী কাউন্সিলর থাকুক।

হ্যামিল্টন, কানাডা
২৭ জুলাই, ২০১৮ ইং।

৪৭৪জন ৪৭৪জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ