“একটা লাথি খাবি শয়তান”
কথাটা যে কাউকে যেমন বলা যায় না, তেমনি কোনো একজনকে অনায়াসে বলে দিতে পারি ভালোবাসার দাবিতে।
আবার বলতে পারি হারামি, কুত্তা,বান্দর,খবিস,ব্লাব্লা ব্লা।
তবে কেউ যখন আপনার সামনে বলবে “বরিশালের মানুষ খুব খারাপ!” এরা ভীষণ “ঠকবাজ ধান্ধাবাজ”।আপনি তর্ক জুড়ে দিলেন অথবা তাউল্লা গরম করে তার ছায়া মাড়াবেন না।কিন্তু তার সাথে বন্ধুত্ব? প্রশ্নই আসেনা। অমন মুখপোড়া নেগেটিভ মনের মানুষের সাথে আপনি কখনোই যেচে সখ্যতা করবেন না। বা করা উচিৎ নয়।
কারন সে তো ধরেই নিয়েছে আপনি যে শহরের মানুষ তার অভিজ্ঞতায় আপনিও তেমন বৈকি।
ছেলের প্রথম স্কুল। প্লে ক্লাসে ছেলেকে ঢুকিয়ে উৎকণ্ঠা আর উদ্দিপনা নিয়ে কতগুলো অচেনা গার্জেনের সাথে আমিও অপেক্ষমান। অনেকে অনেকের পরিচিত। তাই তারা তাদের বন্ধু মহলে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। হঠাৎই একটা কন্ঠ নজর কাড়লো। একজন বেশ জোর গলায় এবং নেতৃত্ব সহকারে কথা বলছেন। আমি বাকপটু হলেও নীরব দর্শক হয়ে দেখছি।
এর মাঝেই যারা নতুন বাচ্চা ভর্তি করেছি তাদের সবার পরিচয় পর্ব শুরু হল। যে যার মত বলে গেলো।
প্রায় সবাই ঢাকার। দু’তিনজন বাহিরের।
যিনি নেতা টাইপ ভদ্র মহিলা, তিনি খুলনার। আমি বরিশালের বলতেই একটা হাসি হেসে বললেন, “বরিশাইল্লা!” । তারপর নাক কুঁচকে বরিশালের মানুষ সম্পর্কে রীতিমতো তার বাক্যবান ছুঁড়তে লাগলেন। কেউ চুপ, কেউ আবার তাকে সমর্থন করছে। আমি সেদিন চুপ করে তার কথাগুলো গিলে নিয়েছিলাম।
দিনে দিনে সবার সাথে সখ্যতা বাড়লো।তার নাম জানলাম জেসমিন, ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স করা জানতে পারলাম, বিশাল বড়লোকের বৌ। যদিও ওর পোশাক আর কথায় ছিলনা তার ছাপ, যেনো খুব সাধারন। কথার ঝাঁজ তো টের পেয়েছি, তবে মনটা ছিল একদম হাস্যজ্জল, দিলখোলা। নিজেদের নাম ভুলে সেখানে সে খুলনা ভাবি-অার আমি বরিশাল ভাবি হয়ে পরিচিতি পেলাম। সাত জনের বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। একক জনের বাসায় খানাপিনা জমতো একেকদিন। তবুও বরিশাল যেনো বরিশাইল্লাই। দোষ যেনো অার শেষ হয়না। হাঁচি দিলেও দোষ, আমি তো বরিশালের।
একসময় বন্ধুত্বের ফারাক বাড়লো সাতজনের। কিন্তু খুলনা- বরিশাল মাছ, মাংস,ভর্তা,ডাল দেওয়া-নেওয়ায় রাত বারোটাকেও উপেক্ষা করেছে। ঢাকা গোপিবাগের মুদির দোকান, রেল লাইন বাজারের সবাই বলতো আমরা নাকি জমজ। একজন ছাড়া অন্যজন অচল। হুম অচলই ছিলাম বটে।কেউ কাউকে ছেড়ে বাজার, শপিং এ যেতাম না। ওর দ্বিতীয় বাচ্চা যখন জন্মায় সারাদিন ওকে সঙ্গ দেই। ডেলিভারির সময় আমিই প্রথম কোলে নেই ওর বাচ্চাকে। দুষ্টু হয়েছে বলে খোঁটা শুনি এখনো। আমি কোলে নিয়েছি, তাই নাকি আমার মত বাঁদর হয়েছে।
-“সর হারামি।
-লাথি মারবো শয়তান।
-এ বরিশাইল্লা।”
কখন যে মিষ্টি লেগেছিলো মনের অজান্তে মনে নেই, তবে ওর ভালোবাসার ডাকগুলো আজো মনে পড়ে।ওর মুখে বরিশাইল্লা কথাটা সত্যি অদ্ভুত সুন্দর ছিল।।
২০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব চমৎকার লাগলো ‘বরিশাইল্লা’ গালিটা। আগে তো খুলনা বিভাগের ছিলো বরিশাল। খুলনা বরিশাল তাই একি রকম বলা যায়। বন্ধুত্ব টা খুব ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন। ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন
তৌহিদ
এমন বন্ধুত্ব এখন আর পাওয়া যায় না। কি মিষ্টি ডাক- বরিশাইল্যা!!
ভালো লাগলো পড়ে।
শিরিন হক
ধন্যবাদ ভাই
সুরাইয়া পারভীন
যুগ যুগ বেঁচে থাকুক এমন বন্ধুত্বের বন্ধন।
বরিশাইল্লা একটা জেলাকে যেনো ভালোবেসে গালি শব্দে প্রকাশ করলো। চমৎকার উপস্থাপন
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপু
ফয়জুল মহী
লেখা পড়ে মোহিত হলাম।
শিরিন হক
ধন্যবাদ আপনাকে
সুপায়ন বড়ুয়া
মাঝে মাঝে বরিশাইল্লা কথাটা আদর করেও বলে
তখন খুব ভাল লাগে।
আপনি আবার বরিশাইল্লা বলে মনে অন্য কিছু নিয়েন না
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
শিরিন হক
মুই বরিশাইল্লা এয়া মোর অহংকার
প্রদীপ চক্রবর্তী
এমন বন্ধন অটুট থাকুক চিরকাল।
শুভকামনা দিদি।
শিরিন হক
শুভ কামনা
আরজু মুক্তা
বরিশাইল্লা আশি টাকা তোলা।
মনু ঠিক কইছি
শিরিন হক
হয় একছের ঠিক কইছেন
হালিম নজরুল
সবাই আসলে এক নয়। ভাল মন্দ মিলিয়েই মানুষ।
শিরিন হক
ভালো-মন্দের মিশ্রনে সব এলাকার মানুষ।
অনেকে তা বোঝেন না
কামাল উদ্দিন
আমাদের এলাকায় বড়িশাইল্লা এবং নোয়াখাইল্লা নিয়া ব্যপক গবেষণা হয়ে থাকে।
শিরিন হক
আপনি কোন এলাকার
কামাল উদ্দিন
নরসিংদী
জিসান শা ইকরাম
বন্ধুত্বের জয় হোক,
স্মৃতিময় বন্ধুত্বের লেখা ভালো লেগেছে খুব।
শুভ কামনা।