আজ ভাদ্র মাসের আমাবশ্যার রাত ।
‘ আজ ঘুটঘুটে অন্ধকারে তন্ত্র সাধকেরা বের হবে। তারা যাবে শ্মশান এবং কবরস্থানে । খুঁজে বের করবে অশুভ কাজে ব্যবহারের জন্য মাথার খুলি , হাড্ডি গুড্ডি , নাভি । আজ রাত ডাকিনীদের রাত । আজ ভাত খাওয়া নিষেধ । ভাতের পরিবর্তে আগুনে ভাজা রুটি খেতে হবে।’
ভাদ্র মাসের আমাবশ্যার রাতে এই ছিল ছোট বেলার জ্ঞান । আমাকে শিখিয়েছেন আমার বাবা মা , বাবা মাকে শিখিয়েছেন তাঁদের বাবা মা । যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই জ্ঞান , সংস্কার। ছোট বেলায় এই রাত এলেই সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে ফিরেছি। ভয় আতংক উত্তেজনাময় ছিল ছোট বেলার সেই Dark Night .
বিনা প্রশ্নে এই কথা মেনে নিয়েছি , বিশ্বাস করেছি। এখনো এই আধুনিক যুগেও আমি এবং আমাদের পরিবার এই সংস্কার মেনে চলি। দুইদিন আগে ছিল ভাদ্র মাসের আমাবশ্যা। রাতে ভাত খাইনি। রুটি খেয়েছি বাসার সবাই। আমার সন্তানদের শিখিয়েছি এটা।
এই বিশ্বাস , সংস্কার আমার এবং আমার পিতা , পিতামহ , পূর্ব পুরুষদের অমানুষ করেনি। আমাদের জীবন যাত্রায় কোন প্রভাব ফেলেনি। ‘ অন্ধ এবং যুক্তিহীন বিশ্বাস প্রগতির অন্তরায় ‘ – এটি সত্যি কথা হলেও , এই সংস্কার আমাদের বিচার , বুদ্ধি , বিবেককে স্তব্ধ করতে পারেনি।
থাকুকনা কিছু অতিহ্য আমাদের মাঝে , যা এই মাটি ও আলো বাতাস থেকে উঠে এসেছে আমাদের জীবনে । আমরা খুজতে যাবোনা এটি সত্যি কি মিথ্যা । অন্ধকার রাতে উপলব্দি করবো – এই সেই রাত যে রাতে আমাদের উৎস , আমাদের শিকড় , আমাদের পূর্ব পুরুষগণ এমনি কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকতেন , রাতে ভাত না খেয়ে রুটি খেতেন , চোখ বুঝে সেই হাজার বছর আগের শিকড়দের দেখি , খাচ্ছেন তাঁরা মাটিতে বা কাঠের চৌকিতে বসে।
মাটি বা পিতলের বাসনে ।
৩১টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এমন কিছু থাকলে সমস্যা নেই তবে পেয়ে বসলে অসুবিধে আছে ।
জিসান শা ইকরাম
পেয়ে বসবে না
সদা সতর্ক আছি 🙂
অপরাজিতা সারাহ
ছাইরাছ হেলালের সাথে সহমত,পেয়ে না বসলেই হল।
লীলাবতী
অপরাজিতা আপু, কতদিন পরে আসলেন আপনি। মিস করি আপু আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
পেয়ে বসবে না
সদা সতর্ক আছি
ক'রেখেলা_কাটেবেলা
সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের অনেক বিশ্বাস, আচার, আচরণ বিলুপ্ত প্রায় | প্রগতি বজায় রেখেও পারিবারিক আচার চর্চা করে আপনি আপনার সন্তানদের পারিবারিক সংস্কারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে যেভাবে শিক্ষা দিলেন তা দৃষ্টান্ত যোগ্য |
উপলব্ধিতে শিকড়ের মানস দর্শন আপনার এক সুন্দর দার্শনিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে |
শভেচ্ছা রইল |
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে ।
যে সংস্কার আমাদের জীবনে তেমন একটা প্রভাব ফেলেনা
কিছু অন্ধ বিশ্বাস থাকুক না আমাদের সাথে মিশে – সমস্যা তো নেই এতে ।
খসড়া
ফিরে চল মাটির টানে যে মাটি আচল পেতেছে। শিরোনাম পড়ে এই লাইনটা মনে পরল।
পোস্ট পড়ে তো ভয় পেয়ে গেলাম।এমনিতেই আছি একা একা দেড়’শ বছরের পুরানো বাড়িতে।
জিসান শা ইকরাম
দেড়শ বছরের পূরানো বাড়ী ? এই বাড়ীর ইতিহাস দিয়ে কিছু লিখবেন ।
জানতে ইচ্ছে করছে ।
ভয়ের কিছু নাই ।
অপরাজিতা সারাহ
দেড়শ বছরের পুরনো বাড়ি?বলেন কি?!!একটা রাত সকল সোনেলা ব্লগারদের নিয়ে ওই বাড়িতে ভুত দেখার আয়োজন করা হোক,কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাচ্ছি। :p তবে তার আগে আপনার কোন অভিজ্ঞতা থাকলে জানাতে ভুলবেন না।কতটা রিস্কি না জেনে যাই কি করে? :p :p
জিসান শা ইকরাম
অপরাজিতা সারাহর প্রস্তাবটা ভালোই (y)
স্বপন দাস
নস্টালজিক করে দিলেন ।। থাক না কিছু মিথ আমাদের এই ডিজিটাল জীবনে ।। সেই সংগে একটু আফসোস হচ্ছে একজন সংগী থাকলে — আজ রাতে কোন মহাশ্বশ্মানে একটা দারু এডভেঞ্চার এ বেড়োতাম ।।
জিসান শা ইকরাম
আপনি তো আবার পরী খুজতে ভালোবাসেন 🙂
স্বপন দাস
🙂
জিসান শা ইকরাম
🙂
অন্তরা মিতু
লেখাটি পড়ে, মনের মধ্যে অল্প অল্প বিষাদ জমলো… চোখে দেখিনি অথচ যাদের রক্ত বহন করে চলেছি ধমনীতে, তাদের ভেবে…..
জিসান শা ইকরাম
আমি যা বলতে চেয়েছি সঠিক ভাবেই বুঝতে সক্ষম হয়েছেন আপনি—
নিশিথের নিশাচর
আমি তো কত রাত বেরাত ঘুরেছি।
কত বট গাছের উপরে বসে ছিলাম।
কিন্তু ভূত পরী কিছুই পাইনি।
দেখি ও নাই।
তয় আপনি সাবধানে থাকেন
ভুতে ধরতে পারে।
জিসান শা ইকরাম
আমি সাবধানে থাকি 🙂
শুভাকামনার জন্য ধন্যবাদ -{@
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে খুব (y)
জিসান শা ইকরাম
এই অনুভূতি গুলো ধরে রাখতে ভালো লাগে আমার ।
মিসু
ফেইসবুকে শেয়ার দেখে পড়তে এলাম পোষ্ট । আপনার এমন লেখার সাথে পরিচয় ছিলো না আমার। আরো লেখুন দাদা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
আজ এই লেখাটা ফেইসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম।
লিখলাম আজকে আবার ।
শিশির কনা
লেখাটি আগে পড়া হয়নি। পড়ে নিলাম। লেখার কত ক্ষেত্র আছে, আমরা কতটুকুই বা জানি ? এমন লেখা আরো বেশি চাই, এই পোষ্টের প্রায় এক বছর পরে এর দ্বিতীয় অংশ দিলেন, এটা উচিৎ না।
জিসান শা ইকরাম
লেখার চেষ্টা চলছে। অপ্রচলিত বিধায় একটু কষ্টকর । চন্দ্র বছর গননায় এক বছরের ২ দিন আগে।
শুন্য শুন্যালয়
বেশ গোছানো লেখা। Dark night এর ফিলিংস টা পাচ্ছি। আর কিছুদিন পরে দ্বিতীয় টি দিলে একবারে বর্ষপূর্তি পালন করতে পারতাম ।
জিসান শা ইকরাম
চন্দ্র বছর গননায় এক বছরের ২ দিন আগে ২ য় টি দিলাম। এটি দিয়েছিলাম ভাদ্র মাসের আমাবষ্যার দুদিন পরে, ২য় টি অমাবষ্যার দিন ।
কৃন্তনিকা
হঠাৎ তন্ত্রসাধনা নিয়ে… ?
তাও একান্ত অনুভূতি!
জিসান শা ইকরাম
এসব আমাদের অস্ত্বিত্তেরই অংশ
এটি ধারাবাহিক ভাবে লিখতে চেয়েছিলাম
কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।
আজকের লেখাটি সহ ৩ টি মাত্র লিখলাম এ দুবছরে
একান্ত অনুভূতিই হবে এটি।
মোঃ মজিবর রহমান
এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমার এব্যাপারে কোন শিক্ষা নাই। বা কেউ আমারে কিছু বলেনি
সুতরাং তন্ত্রমন্ত্র আমার অজানা।
তবে অতীত কিছু কাহিনী গল্প থাকায় ভাল ।
জিসান শা ইকরাম
এসব অনেক পুরানো বিষয়
অনেকেরই অজানা।