এক তরুণ ফার্মার “গ্যাব্রিয়েল ওক” নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে তার সমস্ত সম্বল বিনিয়োগ করে ফার্মিংএ। তার পাশের এক ফার্মেই খালার কাছে বেড়াতে আসে অপরূপ রূপসী “বাথসেবা”। প্রথম দেখাতেই ওক মুগ্ধ হয়ে যায় বাথসেবার রূপে- ভালোবেসে ফেলে। একদিন ওক তার ভেড়া পালনের জন্য যে ছোট্ট কুটির তৈরি করেছে সেখানে অসুস্থ হয়ে পরে- ধুয়ায় আক্রান্ত হয়ে। মরমর অবস্থা থেকে তাকে বাঁচায় বাথসেবা। এর পরই ওক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় বাথসেবার খালার কাছে। কিন্তু সেখান থেকে তেমন কোন সারা না পেয়ে যখন ভাঙ্গা মন নিয়ে ফিরে আসতে থাকে সেই সময়ই বাথসেবা ছুটতে ছুটতে আছে ওকের নিকট। কিছুটা আশার আলো দেখতে পায় ওক। কিন্তু সে আশার আলো নিভে যায় কদিন পরেই। কারণ এক দিন রাতে ভেড়া পালনে নবিশ এক কুকুরের ভুলে ওকের ২০০ গর্ভবতী ভেড়া মারা পরে। ফলে ওক-কে তার সমস্ত সম্পত্তি ও ফার্মটি বিক্রি করে ধার শোধ করতে হয়। বিবেচক ওক নিশ্চিত হয়ে যায় যে বাথসেবাকে বিয়ে করলে তাকে শুধু দুঃখ আর কষ্টের মাঝেই এনে ফেলা হবে।
অন্যদিকে, বাথসেবার এক বিরাট ধনী চাচা মারা যাওয়াতে তার বিশাল ফার্ম আর যাবতীয় সম্পত্তি এসে পরে বাথসেবার হাতে। আর আমাদের ওক চাকুরীর খোঁজে নিজের অজান্তেই এক সময় এসে পরে বাথসেবার ফার্মের নিকটে। তখন বেশ রাত, ওক দেখতে পায় একটু দূরেই কোন এক গুদাম ঘরের চালায় আগুন লেগেছে। তক্ষুনি সে ঝাঁপিয়ে পরে আগুন নেভানোর কাজে। ফার্মের হতভম্ব কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে আগুন নিভাতে সক্ষম হয় সে। এর পরেই বাথসেবার ফার্মে চাকুরী হয় তার।
বাথসেবার ফার্মের পাশেই রয়েছে আরেক মাঝবয়সী ফার্মার মি. বোল্ডউড-এর বিশাল ফার্ম। তিনি যেমনি ধনী তেমনি রাশভারী গম্ভীর প্রকৃতির লোক আর অবিবাহিতও বটে। একদিন হাটে বাথসেবা তার উৎপাদিত গম বিক্রি করতে গিয়েছে অন্য সব ফার্মারের মতোই। সে লক্ষ্য করে যে, সকল ক্রেতা আর বিক্রেতাই ঘুরে ঘুরে তাকেই লক্ষ্য করছে শুধুমাত্র মি. বোল্ডউডই ব্যতিক্রম। তাই মনে মনে কিছুটা রেগে যায় বাথসেবা।
ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে একটি কার্ড নিয়ে এসেছে বাথসেবা। কাকে দেবে ওক না মি. বোল্ডউড কে! টর্চে উঠে আশে মি. বোল্ডউড এর নাম। এবার বাথসেবা সেই কার্ডে লিখেছে ” আমাকে বিয়ে করুন”, আর পাঠিয়ে দিয়েছে মি. বোল্ডউড এর ঠিকানায়। শুধুমাত্র মজা করার জন্য কার্ডটি লিখে বাথসেবা, তাই কোন নাম বা ঠিকানা দেয় না। কিন্তু ঘটনাচক্রে মি. বোল্ডউড ঠিকই জেনে যায় বাথসেবার কথা। একাচোরা ভদ্রলোক হঠাৎ করেই প্রেমে পরে যায় বাথসেবার। এদিকে বাথসেবা নিজেই বুঝতে পারেনা সে কাকে ভালোবাসে। এক দিকে আছে প্রথম প্রেম নিবেদন করা ওক, যে কিনা কঠোর পরিশ্রম করে আর উন্নতি করে দিচ্ছে তার ফার্মকে, কিন্তু তার নিজের কিছুই নেই-একেবারেই দরিদ্র সহায় সম্বলহীন। আর ভ্যালেন্টাইন কার্ড পাওয়ার পর থেকেই মি. বোল্ডউড প্রেম নিবেদন করে যাচ্ছে বাথসেবার কাছে। কাকে বেছে নিবে সে! ওক-কে পছন্দ করে কিন্তু ঠিক ভালোবাসে না, আর মি. বোল্ডউড-কে ভালোবাসে না কিন্তু কার্ড পাঠিয়ে নিজেই তাকে উসকে দিয়েছে। কি করবে সে? আর সবচেয়ে বড় সমস্যা ওক এখন আর বাথসেবা-কে ভালোবাসার কথা বলে না, সাধারণ এক কর্মচারীর মতোই কাজ করে যায় মনিবানির হুকুম মতো।
এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মাঝেই একদিন মি. বোল্ডউড-কে কথা দেয় তার প্রস্তাব ভেবে দেখবে। মি. বোল্ডউড ব্যবসার কাজে কয়েক সপ্তাহের জন্য চলে যান দূরে। কথা থাকে সেখান থেকে ফেরার পরেই পাকা কথা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মি. বোল্ডউডের, তিনি সফরে থাকা কালীন সময়েই বাথসেবার পরিচয় হয় এক তরুণ সৈনিক সার্জেন্ট ট্রয় এর সাথে। নারী ঘেঁষা চরিত্রহীন ট্রয় তার মধুর কথায় ভুলিয়ে ফেলে বাথসেবাকে। ওক আর মি. বোল্ডউডকে ভুলে গিয়ে ট্রয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে বাথসেবা। তার কানে ট্রয়ের চারিত্রিক দুর্বলতার কথা আসে টিকই কিন্তু প্রেমের মোহো আর ট্রয়ের মনভোলানো কথা সব ভুলিয়ে দেয় তাকে।
আর কিছু ঘটনা প্রবাহের মাঝেই বিয়ে করে ফেলে ট্রয় আর বাথসেবা সকলের অগোচরে। কিন্তু কিছুদিন পরেই বাথসেবা কিছুটা হলেও তার ভুল বুঝতে পারে। ট্রয় ঘোড়ার রেসে অকাতরে হারতে থাকে ফার্মের প্রয়োজনীয় অর্থ। কিছুদিন পরেই সে জানতে পারে ট্রয়ের আসল রূপ, জানতে পারে ট্রয়ের আরেক প্রেমিকার কথা। ট্রয় এখন আর ভালোবাসে না বাথসেবাকে, ফিরে যাবে তার আগের প্রেমিকার কাছে। কিন্তু মারা যায় ট্রয়ের সেই প্রেমিকা, সাথে তার বাচ্চাও। সবকিছু জানার পরেও ট্রয়ের জন্য মন কাঁদে বাথসেবার।
ট্রয় তার জামা কাপড় সাগর পারে রেখে সাঁতরাতে নামে সাগরে আর ভেসে যায় স্রোতের টানে। একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে আর সে সেই জাহাজেই চাকুরী নিয়ে চলে যায় দুর দেশে। এদিকে এসব কথা কেউই জানতে পারে না, শুধু সাগর পারে ট্রয়ের জামাকাপড় দেখতে পেয়ে ও তার কোন খোঁজ খবর না পেয়ে তাকে মৃত বলে ধরে নেয়া হয়।
এদিকে বছর খানেক পার হয়ে যাবার পরে মি. বোল্ডউড আবারো বাথসেবাকে প্রেম নিবেদন করে জানায় বিয়ে করতে চায় তাকে। বাথসেবা সময় নেয়। বাথসেবা আর মি. বোল্ডউড যায় একটি সার্কাস দেখতে পাশের এক অঞ্চলে। সেই সার্কাসেই ট্রয় খেলা দেখায় ঘোড়সওয়ারের। দূর থেকে ট্রয় ঠিকই চিনতে পারে বাথসেবা আর মি. বোল্ডউড কে। কিছুদিন পরেই ট্রয় সার্কাসের চাকুরী ছেড়ে চলে আসে বাথসেবার ফার্মে। সেদিনই মি. বোল্ডউড এর বাড়িতে একটি অনুষ্ঠান ছিল, উপস্থিত ছিল সকলেই সেখানে। মি. বোল্ডউড বাথসেবাকে আংটি পড়াই আর তার পরেই সেখানে উপস্থিত হয় ট্রয়। মি. বোল্ডউড রাগে আর দুঃখে গুলি করে ট্রয়কে, মারা যায় ট্রয়। গ্রেফতার হন মি. বোল্ডউড হত্যার দায়ে।
এই ঘটনার অনেক দিন পর, উকিলের পরামর্শে ওক মি. বোল্ডউড-এর ফার্ম লিজ নিয়ে নেয়। তারপর এক দিন বেথসেবার সাথে আলাপ কালে দুজনেরই আবার মনে পরেযায় পুরনো দিনের ভালোলাগার কথা। মুখে আর ভালোবাসার কথা বলেনা কেউ কাউকেই, কিন্তু মনে মনে জানে দুজনেই দুজনার ভালোবাসার কথা। বিয়ে আর অফুরন্ত ভালোবাসার মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই কাহিনী।
সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত টমাজ হার্ডির-র লেখা এই বইটি অনুবাদ করেছেন কাজী শাহনূর হোসেন।
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ রাজ্য আমার অচেনা, তবুও কিছু কিছু চোখ বুলিয়ে রাখলাম।
মরুভূমির জলদস্যু
ভালো বলেছেন।
আবির
পড়ার ইচ্ছাতো জাগছে ভালোই , বইটা এখন কই পামু? তবে দু’দিনের মইধ্যেই জোগার করে নিবো। সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে জানেন আপনি।
মরুভূমির জলদস্যু
ধন্যবাদ আপনাকে মতামতের জন্য।
নওশিন মিশু
উফফফফফফ্ কি জটিলতা ….!!!
সুন্দর বইটির রিভিউয়ের জন্য ধন্যবাদ … 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ
সায়ন্তনু
আমি তেমন পড়ূয়া না।
মরুভূমির জলদস্যু
সবাই পড়ুয়া হলে চলবে কি করে?
স্বপ্ন
বেশি ভালোবাসা ভালো না, মরে যেতে হয় 😀 ভালো লেগেছে।
মরুভূমির জলদস্যু
হা হা হা :D) :D)
ব্লগার সজীব
ভালো লেগেছে।সেবার ওয়েষ্টার্ন পড়ে ওয়েষ্টার্ন মুভির ভক্ত হয়েছি আমি।
মরুভূমির জলদস্যু
সেবার ওয়েষ্টার্ন খুব বেশী পড়িনি, তবে খারাপ লাগে না।
লীলাবতী
বুক রিভিউ ভালোই লেখেন আপনি।
মরুভূমির জলদস্যু
মতামতের জন্য ধন্যবাদ।।
বনলতা সেন
সেবার বই তেমন পড়িনি।
মরুভূমির জলদস্যু
পড়ে দেখতে পারেন, বিশেষ করে অনুবাদ গুলি।
শুন্য শুন্যালয়
বাপরে এতো জটিলতা!!! পড়ার আগ্রহ থাকলো এবার সুযোগের অপেক্ষায়। আপনি তো ভালোই রিভিউ লেখেন দেখছি…
মরুভূমির জলদস্যু
পড়ার আগ্রহ জন্মাতে পেড়ে আমি ধন্য।
সাইদ মিলটন
পছন্দের একটা বই 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
-{@ ধন্যবাদ -{@