১৯৯৯ সালের ২৭ জুলাই…
মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের একটি মসজিদের পেছনে কনস্ট্রাকশনের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে বেড়িয়ে পড়লো পুরনো একটি কুয়ার মুখ। সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। খোলা হল স্ল্যাবের মুখ। সেখান থেকে বেরিয়ে এল তিনটি মাথার খুলি,হাড়গোড়। ধীরে মাটি খনন কাজ চলতেই লাগলো, উঠে আসতে শত শত মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড়। অনেকেই আসতে লাগলেন তাঁদের আপনজনদের অস্থি ’র সন্ধানে। সুমীতা দেবীও এসেছিলেন সেদিন, এসেছিলেন অনলও।২৯ বছর পর খুব কাছ থেকে পিতার অস্তিত্বের সন্ধানে এসেছিল অনল। কখনো কখনো ভেবেছিল এই বুঝি তাঁর পিতা তাঁর মাথায় হাত রাখবে।মিরপুরের খুঁজে পাওয়া শত মাথার খুলি থেকে একটি খুলিতে হাত রেখে সে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলো তাঁর পিতাকে। সে ভেবেছিলেন ডি এন এ পরীক্ষার শেষে ২৯ বছর পর হয়তো পিতার অস্থি ‘র সন্ধান মিললেও মিলতে পারে, কিন্তু নাহ্ অনল তাঁর পিতার অস্থি খুঁজে পায়নি। আমি জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানের কথা বলছিলাম…
“কুয়ার ভেতর থেকে খাকি পোশাকের অংশ পাওয়া গিয়েছে সেই সাথে পাওয়া গিয়েছে একটি মাথার খুলি, যার মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র আছে” – এমন কথা শুনে ছুটে এসেছিলেন জাহানারা খান লোদী; জিয়াউল হোক লোদীর মেয়ে। শুনেছিলেন তাঁর পিতাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিলো পাকি হায়নারা।হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন ২৯ বছরের পুরনো কংকালটার দিকে। তাহলে এই কি তাঁর পিতা?
……………………………………………………………………………………………………………
৩০ লক্ষ মানুষের অস্থি মিশে আছে এ দেশের মাটিতে। মিরপুরের নতুন বধ্যভূমিতে পাওয়া অস্থিগুলো বার বার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৪৪ বছর আগের প্রেক্ষাপটে। যখন সদ্য মানুষ হারিয়েছে স্বজন। লাশের সন্ধান পায়নি। আগে মানুষটিকে খুঁজেছেন। এখনো অনল রায়হানরা অস্থিতেই অনুভব করেছেন তাঁদের পিতার অস্তিত্বে…
হয়তো সেদিন এরকম কয়েকশো জন কিংবা কয়েক সহস্রজন ২৯ বছরের পুরনো করোটিগুলো থেকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিলো তাঁদের কাছের মানুষের করোটিকে।তাতে হাত রেখে বলতে চেয়েছিলো এই আমার পিতা, এইতো আমার ভাই, এইযে আমার বোন…
তাঁরা পারেনি!!!
তথ্যঃ-
০১/ পিতার অস্থি’ র সন্ধানে- অনল রায়হান।
৩২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এক অজানা ইতিহাসের পাতা।কে বা কারা এই বীরকে হত্যা করল তা আজও অস্পষ্ট। -{@
ফাতেমা জোহরা
এব্যাপারে অনেকগুলো প্রশ্ন আসে মনে, শুনেছিলাম জহির রায়হান নিখোঁজের ১৫ বছর পরে একজন আগুন্তক যেই এলাকায় জহির পত্নী থাকতেন সেখানের এক দোকানে এসে বলেছিলো -“জহির মরেনাই, জহির আসবে…”
পরবর্তীতে জহির রায়হানের পরিবারের লোকজন সেই আগুন্তকে আর খুঁজে পাননি এবং সে এখনো নিখোঁজ !! একবার ভাবি জহির রায়হান বুঝি মারা যায়নি আরেকবার ভাবি না সে নেই ! আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না। পাগলের মতো লাগে…
বৃষ্টিহত ফাহিম
শুনেছি বিহারীরা নাকি হত্যা করেছে। কোথায় যেন পরেছিলাম।
ফাতেমা জোহরা
হ্যাঁ এটা সত্যি কথাই শুনেছেন। ৩০ জানুয়ারি সকালে আজগর আলী নামের একজন লোক তাঁকে ফোন করে বলেন যে শহীদুল্লাহ কায়সারকে পাওয়া গিয়েছে। সেটা শুনেই তিনি মিরপুর চলে যায়। উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর দেশের সব জায়গা মুক্ত হলেও মিরপুর মুক্ত হয় না। সেখানে বিহারীদের আগ্রাসন চলতেই থাকে। আর যেদিন জহির রায়হান মিরপুরে যান, সেদিনই ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী মিরপুর মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। ফলে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উতপ্ত থাকে আগে থেকেই।যখন বিহারীরা বুঝতে পারে যে যৌথ বাহিনীর সাথে ওরা পেরে উঠবে না, ঠিক তখনই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জহির রায়হানকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। আর এতে পরাজিত রাজাকার পাকি হায়নাদের চূড়ান্ত মদদ ছিল কারণ জহির রায়হানের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যেসব ডকুমেন্ট ছিল তা ওদের অপরাধ প্রমাণে খুবই গুরুত্ববহ ছিল।এরজন্যই সেদিন তাঁকে হত্যা করা হয়…
এটা খুবই সংক্ষেপে বললাম। আশাকরি এ বিষয়ে সামনে বিস্তারিত একটা পোস্ট আপনারা পাবেন।
প্রহেলিকা
এমন লেখা পড়তে গেলে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে আমাদেরই কিন্তু যাদের পিতা, যাদের সন্তান তাদের না জানি কতটুকু কষ্ট হয়। মাথার মাঝে একটি ছিদ্র উফ!! কেমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো তাদের। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো মহান শহীদদের প্রতি। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
ফাতেমা জোহরা
অনলের পুরো লেখাটা পড়লে কোন স্বাভাবিক মানুষ চোখের পানি আটকে রাখতে পারবে নাহ্।
জিসান শা ইকরাম
এসব কাহিনী শুনলে খোভে ঘৃণায় মন ভার হয়ে যায়।পারিনি আমরা এই সুর্য সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার করতে। শকুনেরা এখন আরো শক্তিশালী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের মাঝে।
ফাতেমা জোহরা
এর চাইতে বড় ব্যর্থতা আর হতে পারে না…
হৃদয়ের স্পন্দন
যুদ্ধ নিয়ে কিছু পড়ার আগে পাকিদের একবার ঘৃণার সাথে স্বরন আমার অভ্যাস, অজানা জানলাম, এমন পোষ্ট আরো করুন
ফাতেমা জোহরা
অবশ্যই… 🙂
সাইদ মিলটন
ওয়েল ডান ফাতেমা জোহরা ।
অস্তিতের ইতিহাস জানিয়ে যাব যতখন দেহে আছে প্রান
প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিয়ে যাবো স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটির ইতিহাস
ফাতেমা জোহরা
“অস্তিতের ইতিহাস জানিয়ে যাব যতখন দেহে আছে প্রান
প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিয়ে যাবো স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটির ইতিহাস”…………… (y) (y)
মোঃ মজিবর রহমান
বর্তমানে এই শকুন চেনা বড় কঠিন সবাই মুখোশ পড়া।
সবাই সাধু আবার কেউ সাধু না।
কি ভাবে চিনব?
ফাতেমা জোহরা
যে যতো সাধুই হোক না কেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে বিরধীতা করেই তাঁদের স্বরূপ চিনিয়ে দেয়। কিন্তু ৪৪ বছরে এদের ডালপালা ছড়িয়েছে বহুদূর, তাই এখনো এরা মাথা উঁচু করে চলতে পারে।
লীলাবতী
লেখাটি পড়ে কান্না পাচ্ছে আপু।
ফাতেমা জোহরা
লিখতে সময় আমারও খুব কান্না পেয়েছিলো আপু। কিছুতেই চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলাম নাহ্… 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছ না।বড় কষ্টের।
ফাতেমা জোহরা
আসলেই নিদারুণ কষ্টের উপাখ্যান এগুলো… বড্ড কষ্টের…
নুসরাত মৌরিন
লেখাটি পড়তে পড়তে আমিও যেন দাঁড়িয়ে আছি সেই বদ্ধভূমির সামনে,স্বজনের খোঁজে এত বছর পর।
করোটি ছুঁয়ে পিতা,কিংবা পুত্র কিংবা স্বজনকে স্পর্শ করার সেই সুতীব্র বাসনায় আমিও যেন কাঁপছি থরথর করে।
আমি জানিনা কেন জানি আমারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে জহির রায়হান মরে নাই,তিনি হয়ত কোন একদিন ঠিক ফিরবেন…।
ফাতেমা জোহরা
হ্যাঁ আসলেই খুব কষ্ট বিশ্বাস করতে, খুবই কষ্ট…
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
Touchy post…
ফাতেমা জোহরা
🙁 🙁 🙁
রকিব লিখন
আমার ধিক্কার আসে নাভিমূল হতে মাতৃভূমি হয়নি এখন বর্জ মুক্ত।।
পাইনি বিচার কোন শহীদের, আজও অম্লান আমাদের মাঝে…………….
ফাতেমা জোহরা
আক্ষেপ লাগে খুব আক্ষেপ লাগে ভাই এসব চিন্তা করলে।
ব্লগার সজীব
কত জীবন চলে গিয়েছে আমাদের স্বাধীনতার জন্য।স্বজনেরা তাঁদের আর খুঁজেই পেলেন না (y)
ফাতেমা জোহরা
তাঁরা মিশে আছে বাংলারই মাটিতে…
শুন্য শুন্যালয়
পড়তে পড়তে শিউরে উঠতে হয়। কতো নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড ঘটেছিল সেদিন, এরপরেও আমরা আশ্রয় দিয়ে রেখেছি খুনিদের। যাদের পিতা, মা, ভাই, বোন তারাই শুধু জানে কোথায় পোড়ায়…
আপু পারলে অনল রায়হানের লেখার লিঙ্কটা একটু দেবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এমন শেয়ারের জন্য।
ফাতেমা জোহরা
কেন নয় ! অবশ্যই… এই লিংক থেকে অনল রায়হানের লেখাটা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন-
http://www.liberationwarbangladesh.org/2014/12/blog-post_25.html
স্বপ্ন নীলা
লেখাটি পড়ে মনটা কষ্টে ভরে উঠলো
ফাতেমা জোহরা
🙁 🙁
কৃন্তনিকা
পড়ছি… আর ভাবছি… শিউরে উঠছি…
ফাতেমা জোহরা
আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিলো।