পিতার অস্থি’র সন্ধানে …

ফাতেমা জোহরা ১৯ জানুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ০৮:২৯:৪০অপরাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ ৩২ মন্তব্য

১৯৯৯ সালের ২৭ জুলাই…

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের একটি মসজিদের পেছনে কনস্ট্রাকশনের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে বেড়িয়ে পড়লো পুরনো একটি কুয়ার মুখ। সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। খোলা হল স্ল্যাবের মুখ। সেখান থেকে বেরিয়ে এল তিনটি মাথার খুলি,হাড়গোড়। ধীরে মাটি খনন কাজ চলতেই লাগলো, উঠে আসতে শত শত মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড়। অনেকেই আসতে লাগলেন তাঁদের আপনজনদের অস্থি ’র সন্ধানে। সুমীতা দেবীও এসেছিলেন সেদিন, এসেছিলেন অনলও।২৯ বছর পর খুব কাছ থেকে পিতার অস্তিত্বের সন্ধানে এসেছিল অনল। কখনো কখনো ভেবেছিল এই বুঝি তাঁর পিতা তাঁর মাথায় হাত রাখবে।মিরপুরের খুঁজে পাওয়া শত মাথার খুলি থেকে একটি খুলিতে হাত রেখে সে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলো তাঁর পিতাকে। সে ভেবেছিলেন ডি এন এ পরীক্ষার শেষে ২৯ বছর পর হয়তো পিতার অস্থি ‘র সন্ধান মিললেও মিলতে পারে, কিন্তু নাহ্‌ অনল তাঁর পিতার অস্থি খুঁজে পায়নি। আমি জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানের কথা বলছিলাম…

“কুয়ার ভেতর থেকে খাকি পোশাকের অংশ পাওয়া গিয়েছে সেই সাথে পাওয়া গিয়েছে একটি মাথার খুলি, যার মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র আছে” – এমন কথা শুনে ছুটে এসেছিলেন জাহানারা খান লোদী; জিয়াউল হোক লোদীর মেয়ে। শুনেছিলেন তাঁর পিতাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিলো পাকি হায়নারা।হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন ২৯ বছরের পুরনো কংকালটার দিকে। তাহলে এই কি তাঁর পিতা?

……………………………………………………………………………………………………………

৩০ লক্ষ মানুষের অস্থি মিশে আছে এ দেশের মাটিতে। মিরপুরের নতুন বধ্যভূমিতে পাওয়া অস্থিগুলো  বার বার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৪৪ বছর আগের প্রেক্ষাপটে। যখন সদ্য মানুষ হারিয়েছে স্বজন। লাশের সন্ধান পায়নি। আগে মানুষটিকে খুঁজেছেন। এখনো অনল রায়হানরা অস্থিতেই অনুভব করেছেন তাঁদের পিতার অস্তিত্বে…

হয়তো সেদিন এরকম কয়েকশো জন কিংবা কয়েক সহস্রজন ২৯ বছরের পুরনো করোটিগুলো থেকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিলো তাঁদের কাছের মানুষের করোটিকে।তাতে হাত রেখে বলতে চেয়েছিলো এই আমার পিতা, এইতো আমার ভাই, এইযে আমার বোন…

তাঁরা পারেনি!!!

তথ্যঃ-

০১/ পিতার অস্থি’ র সন্ধানে- অনল রায়হান।

 

১জন ১জন
0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ